মাননীয় সড়কমন্ত্রী, ব্যাটারিচালিত বাহনগুলো নিষিদ্ধ করুন

নিতাই বাবু
Published : 8 Nov 2017, 02:45 AM
Updated : 8 Nov 2017, 02:45 AM

এই ছবিটি নারায়ণগঞ্জ হাজীগঞ্জ ফেরিঘাট থেকে তোলা। এই রোডটি নারায়ণগঞ্জ টু ডেমড়া ভায়া চিটাগাং রোডের একটা মোড়। যানজট এই মোড়ের নিত্যদিনের সঙ্গী। এই রোডে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক ইজিবাইক চলাচল করে। সাথে আছে ব্যাটারিচালিত রিকশাও।

মাননীয় সড়কমন্ত্রী,

আমি এই স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক। বাপ-দাদার ভিটেমাটি আগে ছিল নোয়াখালীর একটা গ্রামে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছি নারায়ণগঞ্জে। আমি ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তা দিয়ে রিকশা চলতো। শোনা যেতো ট্রিং-ট্রিং আওয়াজ। রিকশায় থাকতো কোনও মহল্লার মা-বোন। সেই রিকশাটা থাকতো শাড়ি কাপড় দিয়ে মোড়ানো। যেন কোনও অপরিচিত পরপুরুষ তাদের মুখ না দেখে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পর, রিকশাওয়ালা আড়ালে সরে যেত। তারপর পর্দানশিন মা-বোনেরা রিকশা থেকে নেমে ঘরে যেত। রিকশা ছিল দেহ-চালিত, যা প্যাডেল মেরে চালাতে হতো। সন্ধ্যার পর রিকশার নিচে জ্বালানো থাকতো হারিকেন। সন্ধ্যার পর হারিকেন ছাড়া, আর কেউ রিকশা চালাতে পারতো না। এটাই ছিল তখনকার সময়ের আইন। সেটা শহরে হোক, আর শহরের বাইরেই হোক। তখনকার সময়ও মহল্লার রাস্তার লাইটপোস্ট ছিল। কিন্তু_তেমন একটা লাইট জ্বালানো থাকতো না। তখন টাকার খুবই মূল্য ছিল, তাই। সন্ধ্যার পর অনেক রাস্তাই থাকতো অন্ধকার। মানুষের সুবিধার্থে রিকশার নিচে জ্বালানো থাকতো হারিকেন। সেসময়ে শহর আর মহল্লার বাহনই ছিল, একমাত্র রিকশা। গ্রামের রাস্তাগুলোতে গাড়িয়াল ভাইয়েরা চালাতো গরুর গাড়ি। সন্ধ্যার পর গ্রামের রাস্তায়, গরুর গাড়ির ভেতরেও হারিকেন জ্বালানো থাকতো।

মাননীয় সড়কমন্ত্রী,

এখন আমরা পা রেখেছি ডিজিটাল যুগে। রাস্তায় চলাচল করছে কতরকমের যানবাহন। আছে ইজিবাইক, সিএনজি, ট্রাক, বাস, টেক্সি, মাইক্রোবস, লেগুনা, টেম্পো। এসবের মধ্যে মরার উপর খরার ঘাও ইজিবাই আর ব্যাটারিচালিত রিকশা। দিন-দিন বেড়েই চলছে এই দুইপ্রকারের ছোট বাহনগুলো। কিছুতেই এসব বাহনগুলো রোধ করা যাচ্ছে না। এগুলোর জন্য সৃষ্টি হচ্ছে শহরের যানজট। তেমনি নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য। সাথে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। আবার এগুলোর জন্য হচ্ছে শব্দদূষণ ও আলো দূষণ। প্রতিনিয়ত যেখানে সেখানে ঘটছে দুর্ঘটনা। আবার দৈনিক চুশে খাচ্ছে, হাজার হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। অন্যদিকে শহরের আনাচে কানাচে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসবের গ্যারেজ। ওইসব গ্যারেজের মধ্যে বেশিরভাগ গ্যারেজের বৈধ বিদ্যুৎ মিটার নেই। যা আছে, তা হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র। ওইসব গ্যারেজগুলো দিনেরবেলায় থাকে বন্ধ। তাদের ভাড়া আদায়ের জন্য সন্ধ্যার পর থাকে খোলা। এর কারণ হলো, বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারীদের ভয়, দিনের বেলায় বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরা গাড়ি নিয়ে আনাগোনা করে, তাই।

এই ছবিটি একয়া এলাকার বাজারের মোড়। এই মোড়েও ভোরবেলা থেকে শুরু হয় ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত রিকশার মহড়া।

মাননীয় মন্ত্রী,

আমি দেশের অন্যান্য জেলাশহরের কথা বলবো না। সেটা বর্তমানে সবাই জানে এসব বাহনগুলোর উপদ্রবের কথা। আমি বলতে চাই আমাদের নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। কারণ, আমি ছোটবেলা থেকেই নারায়ণগঞ্জে বসবাস করছি। তাই নারায়ণগঞ্জ শহরের কথাই আগে বলতে হয়। ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত রিকশা বর্তমানে শহরের ভেতরে চলতে দেয় না। কিন্তু শহরের বাইরের রাস্তার দিকে কেউ আর তাকায় না। তাই ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলোর কারণে, শহরের বাইরে সবসময়ই লেগে থাকে যানজট। শহরের প্রতিটি মহল্লার রাস্তার মোড়েই থাকে এসব যানবাহনগুলো। মহল্লা থেকে শহরে প্রবেশ করার মতো অনেকগুলো রাস্তা আছে। সেসব রাস্তাগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো: খাঁনপুর, ডন চেম্বার, চাষাঢ়া, আমলাপাড়া, প্রেসিডেন্ট রোড, মিশনপাড়া, রামবাবুর পুকুরপাড়, গলাচিপা, উকিলপাড়া, দুই নং রেলগেইট, দেওভোগ পাক্কা রোড, জিমখানা, নিতাইগঞ্জ চৌরাস্তার মোড়। এসব রাস্তার মোড়েই, বসে থাকে ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলো। প্যাসেঞ্জারের পেলেই দ্রুতগতিতে ছুটে চলে বাহনগুলো। শহরের ভেতরে প্রবেশ নিষেধ থাকা স্বত্বেও, সুযোগ বুঝে এরা শহরে ঢুকে পড়ে। ট্রাফিক পুলিশের কাছে ধরা পড়লেই, দিতে হয় মাসহারা। মাসহারা বা চাঁদা না দিতে চাইলেই, ট্রায়ার ফুটো। এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন প্রতিরোধ করার জন্য, সিটি কর্পোরেশনের লোকও আছে। তবু পারছে না এদের রুখতে, এরা কোনকিছুর তোয়াক্কা করে না।

ছবিটি একটা খেয়াঘাট থেকে তোলা। এমন প্রতিটি মোড়ে মোড়েই লাইন ধরে বসে থাকে যাত্রীর আশায়। এগুলো সবই ব্যাটারিচালিত রিকশা। বর্তমানে সেই আগেকার সময়ের দেহচালিত প্যাডেল মারা রিকশা নাই বললেই চলে।

সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকা লোকদের নজরে পড়লেও মাসোহারা দিতে হয়। মাসহারা না দিতে চাইলেও বিপদ। তখন সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে আটকে রাখা হয়। নারায়ণগঞ্জ শহর ছোট একটা ঐতিহ্যবাহী শহর। যা আপনি নিজেরও জানা আছে, মাননীয় সড়কমন্ত্রী। নারায়ণগঞ্জ শহরের মাঝখান দিয়ে দুইটি রাস্তাই শহটির প্রাণ। একটি হলো নিউ মেট্রো সিনেমাহল থেকে টান বাজার রোড। অন্যটি হলো, চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ রোড। যা বঙ্গবন্ধু সড়ক নামে সবার কাছে পরিচিত। শহরের এই দুইটি রাস্তা এমনিতেই সবসময় জ্যাম লেগেই থাকে। কারণ হলো, একদিকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে মরণব্যাধি বাসস্ট্যান্ড। অন্যদিকে নগর ভবের সামনে ঘড়ে ওঠা অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড। আমি এসব নিয়ে কিছু লিখছি না, আমি লিখতে চাইছি ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে।

মাননীয় সড়কমন্ত্রী,

শহরের ভেতরে এসব ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক আর রিকশা সামাল দেবার লোক আছে। আছে ট্রাফিকপুলিশ, আছে সিটি কর্পোরেশনের বেতনভোগী কর্মচারী। নেই শুধু শহরের বাইরের আনাচেকানাচে মহল্লাগুলোতে। এই ইজিবাইক আর রিকশার জন্য যানজট লেগে থাকে, শহরের সংযোগ সড়কগুলোতে। শুধু দিনেই নয়, সকাল থেকে অর্ধরাত পর্যন্ত যানবাহনের জট লেগেই থাকে। শহরে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিটি মোড়ে থাকে ট্রাফিকপুলিশ। কিছুটা হলেও এদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু শহরের বাইরের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। বর্তমানে ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত রিকশার কাছে, বড়বড় গাড়িগুলো পর্যন্ত জিম্মি। এরা মানে না কোনও নিয়ম, বোঝে না কোনও ট্রাফিক আইন। এদের খেয়াল খুশিমতো এলোপাথাড়িভাবে চালাচ্ছে, এদের গাড়ি।

মানে না কারোর আদেশ-নির্দেশাদি, তোয়াক্কা করে না কারোর। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বাজায় ইলেক্ট্রনিকস হর্ন। এসবের হর্ণের কারণে, মানুষ শ্রবণ প্রতিবন্ধী হতে আর বেশি সময় লাগবে না। সন্ধ্যা হতে না হতেই মনের আনন্দে জ্বালিয়ে রাখে, হাই পাওয়ারের হেড লাইট। ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত রিকশায় যেসব হেড লাইটগুলো ব্যবহার করে, সেগুলো ওয়েল্ডিং-এর আলোর মতো তীক্ষ্ণ, যা জনসাধারণের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ওইসব হেড লাইটের আলোতে চোখ পড়লেই, অন্তত দুই-চার-পাঁচ সেকেন্ড চোখে কিছুই দেখা যায় না। আবার রাতের বেলায় রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলেও বিপদ! কেননা, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো হাই পাওয়ারের হেড লাইট জ্বালিয়ে রাস্তায় চলে। ওইসব লাইটের কারণে, রাস্তার সামনে কিছুই দেখা যায় না। বাধ্যতামূলক সামনে থেকে আসা রিকশাটি চলে না যাওয়া পর্যন্ত, রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সময় সময় রাতের বেলায় রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ আচমকা দুর্ঘটনার শিকার হয়।

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহর সারাদেশের উন্নয়নের মডেল। শহরের প্রতিটি রাস্তার লাইট পোস্টে ডিজিটাল যুগের এনার্জি লাইট লাগানো আছে। রাতেরবেলায় যেন দিনের আলোর মতো দেখা যায়। এই ফকফকা আলোতেও এরা এই পাওয়ার-এর হেড লাইটগুলো জ্বালিয়ে রাখে। যা মানুষের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

শুধু রাতেই নয়, মাননীয় সড়কমন্ত্রী। এসব বাহনের কারণে, দিনদুপুরেও দুর্ঘটনার শিকার অনেকেই হয়। কারণ, এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্রেক খুবই হালকা। হাতে চাপা ব্রেক, খুব জোরেশোরে চেপে ধরলেই ছিঁড়ে যায়। রিকশা আর থামানো যায় না, তখনই হয় দুর্ঘটনার শিকার। মহল্লার ভেতরের রাস্তা, পাশে থাকে কম। মানে চিকণ রাস্তা। রাস্তার পাশেই থাকে জনসাধারণের বসতি ঘরবাড়ি। থাকে বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া। ছোটছোট ছেলেমেয়েরা বাসা থেকে এসে রাস্তায় করে হাটাহাটি। অনেক সময় এই ছোট দ্রুতগতির যানটি আঘাত হানে ছোট শিশুদের উপর। এসব রিকশায় ব্যাটারি থাকে চারটি করে। যা ৯০/৯৫ পাওয়ারের শক্তিশালী। এগুলো ঠিকমত স্পীডে চললে, এগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে না একটা সিএনজিও। প্রতিটি মহল্লার রাস্তায় এরা এভাবেই দ্রুতগতিতে চালায়। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরের পার্শ্ববর্তী মহল্লায় কোনও ভাঙ্গাচুরা রাস্তা নেই। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের ছোঁয়ায় সব রাস্তাই এখন সিমেন্টের ঢালাই করা রাস্তা। এই সুন্দর রাস্তা পেয়ে রিকশা ড্রাইভাররা দিশেহারা। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চালায়, তাদের স্বাদের রিকশা। আবার প্রত্যেক রাস্তার পাশেই লাইটপোস্টে লাগানো আছে এনার্জি লাইট। রাতেরবেলা থাকে দিনের আলোর মতো, তবুও এরা জ্বালিয়ে রাখে তাদের রিকশার হেড লাইট। যা মানুষকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী করতে আর বেশিদিন সময় লাগবে না।

এই সেই চোখ খোয়া মরনফাঁদের লাইট। এই লাইটের আলো চোখে লাগার সাথে সাথে দুই-চার-পাঁচ সেকেন্ড ঝিম ধরে বসে থাকতে হয়। এসব লাইটগুলো চোখের রুগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই লাইটগুলো আইন করে নিষিদ্ধ কারা একান্ত জরুরি।

মাননীয় সড়কমন্ত্রী,

আমিও একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের মতো চোখের রোগী। কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হয়ে গেলাম ঢাকা চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে। সেখান থেকে যৎসামান্য চিকিৎসা নিয়ে এখন মোটামুটি ভালো। রাতার বেলায় রিকশার এই হেড লাইটগুলো আমাকে আবার চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে পাঠাবে। কারণ, আমার অফিসের বেশিরভাগ কাজই থাকে সন্ধ্যার পর রাত ১০ পর্যন্ত। কাজ থাকে রাস্তার ধারে দোকানগুলোতে, আর মার্কেটে। ইদানীং বহু ব্যাটারিচালিত রিকশা রাস্তায় নেমেছে। তার মানে, প্রতিদিনই নতুন-নতুন রিকশা ইজিবাইক রাস্তায় নামছে। যা কাগজে কলমে আর হাতেগুণে শেষ করা যাবে না। সন্ধ্যার পর রাস্তায় বেরুলেই রিকশার হেড লাইটের আলো, যেন বিষমাখা এক তীর। রিকশা আর ইজিবাইকের হেড লাইটের আলো চোখে লাগার সাথে-সাথেই চোখ দুটো যেন ছিটকে পড়ে। সাথে ইলেক্ট্রনিক হর্ণ-এর তীব্র আওয়াজ তো আছেই। অনেক সময় দেখা যায়, এই হর্ণ-এর আওয়াজে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মা-বোনেরাও চমকে উঠে। তাদের সাথে থাকা ছোট শিশুরা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। কেউ কেউ তীব্র আওয়াজ সয্য করতে না পেরে, দুইহাতে নিজের দুকান চেপে ধরে রাখে। অনেক সময় রাতার বেলা এই হেডলাইটের আলোর কারণে দুইদিক থেকে আসা রিকশা সংঘর্ষও হয়। তখন রিকশায় থাকা প্যাসেঞ্জার ছটকে রাস্তায় পড়ে যায়। ভাঙ্গে হাত, ভাঙ্গে পা, ক্ষতবিক্ষত হয় সমস্ত শরীর। তবুও এদের দমানো যায় না, শোনে না কারোর কথা। মনের আনন্দে চালাচ্ছে রোড পার্মিশন ছাড়া এই যানবাহনগুলো।

কারোর কথা এরা শুনবে-ই-বা কেন, মাননীয় সড়কমন্ত্রী? এরা-তো আসলে রিকশাওয়ালা নয়! এরা কেউ বিশাল বিত্তশালী, কেউ সরকারি কর্মচারী। কেউ আবার নানারকম ব্যবসায়ী। এদের পোষাক দেখে বোঝা যায় না যে, এরা একটা ইজিবাইক আর রিকশা ড্রাইভার। দেখে মনে হয় কোনও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী। এদের পড়নে থাকে জিন্সের প্যান্ট, চোখে চশমা। গলায় সোনার লকেটযুক্ত হার, গাতে হাত ঘড়ি। ব্যাঙ্কের ডিউটি শেষ করে সন্ধ্যার পর ইজিবাইক আর রিকশা নিয়ে নেমে যায় রাস্তায়। ডিউটি চলাকালীন সময়ে অপরের কাছে প্রতিদিন ভাড়া দিয়ে দেয়। এমনও দেখা যায়, কারোর বাড়িতে ১৫/২০টি করে ভাড়াটিয়া। সে ব্যক্তিও আজ স্বাদের ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত রিকশা ড্রাইভার, মাননীয় সড়কমন্ত্রী। তা হলে কি এরা কাউকে তোষামোদ করে রাস্তায় রিকশা চালাবে? মোটেই নয়। এসব ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত রিকশা ড্রাইভাররা সময়সময় বড়বড় বাস-ট্রাকের ড্রাইভারকেও ধরে মারে। অথচ এই ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক আর রিকশার কোনও রোড পার্মিশন বা কোনও লাইসেন্স নেই। তবুও তারা বর্তমানে বঙ্গদেশের সব জেলাশহরের রাস্তায় কিং। দাপটের সাথেই এই বাহনগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অবৈধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশাগুলো কি আইন করে বন্ধ করা যায় না, মাননীয় সড়কমন্ত্রী?

মানবিক দৃষ্টিতে হয়ত এসব বন্ধ আপনি করবেন না, জানি। তবু জনসাধারণের সুবিধার্থে বিদেশ থেকে এসব ইজিবাইক আমদানি বন্ধ করুন। বন্ধ করে দিন, ব্যাটারিচালিত রিকশার সকল প্রকার স্পিয়ার পার্টস আমদানি রপ্তানি। তা হলেই এসব বাহনগুলোর স্পিয়ার পার্টস-এর অভাবে একদিন এমনিতেই বন্ধ হবে। তখন আর বন্ধ করতে আইনের প্রয়োজন হবে না। এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলোর ড্রাইভাররাও ভাতে-কাপড়ে মরবে না। যখন এগুলো ছিল না, তখন কি কেউ না খেয়ে থেকেছে, মাননীয় সড়কমন্ত্রী? থাকেনি।

ব্যাটারিচালিত এই বাহনগুলো বর্তমানে আমাদের দেশে একটা মরণব্যধি। দিনদিন কচুগাছের মতো গজাচ্ছে এই বাহনগুলো। নারায়ণগঞ্জ থেকে ডেমড়া ১৪ কিলোমিটার। যাতায়াতে সময় লাগার কথা, মাত্র ২০ মিনিট। অথচ এই ব্যাটারিচালিত বাহনগুলোর জন্য, সময় লেগে যায় দেড় ঘন্টা, মাননীয় সড়কমন্ত্রী। আসা-যাওয়ার পথে, হাজীগঞ্জ ফেরিঘাট, আইইটি স্কুল মোড়, পাঠানটুলি, চৌধুরীবাড়ি, ২ নং ঢাকেশ্বরী, আদমজী সোনামিয়া মার্কেট, আদমজী ইপিজেড, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল, চিটাগাং রোড-সহ সর্বত্র যানজট আর জ্যাম। এই দুর্বিসহ যানজট থেকে আমাদের মুক্তি দিন। অনতিবিলম্বে এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন নিষিদ্ধ করুন, মাননীয় সড়কমন্ত্রী।