রোবট সোফিয়া এবং আমরা

নিতাই বাবু
Published : 9 Dec 2017, 03:44 PM
Updated : 9 Dec 2017, 03:44 PM

  রোবট সোফিয়া

আজ আমরা হেরে গেলাম এক প্লাস্টিকের রোবট মূর্তির কাছে। এটি তথ্যপ্রযুক্তির কম্পিউটারভিত্তিক ইলেক্ট্রনিকস প্লাস্টিক মূর্তি। নাম তার রোবট সোফিয়া। সোফিয়া হচ্ছে হুবহু মানুষের মত দেখতে রোবট মূর্তি। যেটি তৈরি করে হংকং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হ্যানসন রোবটিকস। নির্মাতা হলেন ডেভিড ফ্রাঙ্কলিন হ্যানসন। ডেভিড হ্যানসন ফ্রাঙ্কলিন জুনিয়র একজন আমেরিকান রোবট প্রস্তুতকারক ও উদ্যোক্তা। এখন এই প্লাস্টিকের মূর্তি সোফিয়াকে নিয়ে সারাবিশ্বে কতোনা তেলেসমাতি চলছে। চলছে বর্তমানে আমাদের দেশেও।

এখন কথা হল, যিনি এই রোবট সোফিয়াকে তৈরি করেছেন, তিনি কে? তিনি কি ভিনগ্রহ থেকে আসা এলিয়েন? না কি স্রষ্টার প্রেরিত আমাদের মতন একজন মানুষ? হ্যাঁ, আমারা সবাই জানি, তিনি আমাদের মতনই স্রষ্টার সৃষ্টি একজন মানুষ। তাহলে এই রোবট সোফিয়ার চেয়ে বুদ্ধি ও ক্ষমতা কার বেশি? নিশ্চয়ই মানুষের বুদ্ধিই বেশি। অথচ স্রষ্টার সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে আমরা এতো মূল্যায়ন করি না। যা এখন করছি প্লাস্টিকের তৈরি রোবট সোফিয়াকে।

অথচ এর চেয়েও বেশি মেধাশক্তি সম্পূর্ণ স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষ আমাদের দেশেও খুঁজে পাওয়া যাবে। যেসব মানুষ এর চেয়েও আরও উন্নতমানের সোফিয়াকে তৈরি করতে পারবে। কিন্তু আমরা তা খুঁজে দেখি না। আরও খুঁজে দেখি না, সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবদেবীর মূর্তি ভাঙ্গা লোকদের। যেসব মূর্তিতে স্রষ্টার প্রেরিত কিছু মানুষেরা নিত্যদিন পূজার্চনা দিয়ে থাকে। সেগুলোও মূর্তি, রোবট সোফিয়াও একটা মূর্তি। আজ হিন্দুদের সেসব মূর্তিগূলো জাগায় জাগায় ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলছে, কিছু দুষ্কৃতিকারী। তাদের খোঁজ বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারছি না। দুঃখ শুধু থেকেই যায়।

আবার মানুষের তৈরি রোবট সোফিয়াকে দেখে অনেকেই রীতিমত অবাক হয়ে যাচ্ছে। তারা শুধু রোবট সোফিয়াকেই নয়ন ভরে দেখছে। দেখছে না তাদেরই আশেপাশে থাকা দুঃখী মানুষদের। ফিরে থাকাচ্ছে না, নিজেদের মেধাশক্তির দিকে। ভাবছে না, কীভাবে এরকম হাজার হাজার রোবট সোফিয়া তৈরি করা যায় সেই কথা। শুধু প্লাস্টিকের তৈরি রোবট সোফিয়াকে নিয়েই চলছে হৈ-হুল্লোর।

রোবট সোফিয়া আমাদের দেশে এসেছে একটা সুটকেসে করে। মানুষ মৃত্যুর পর যেমন করে কফিনে শায়িত থাকে। ঠিক তেমনি করেই রোবট সোফিয়া এসেছে আমাদের দেশে। সোফিয়া কথা বলছে, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি কম্পিউটারের ক্ষমতা দিয়ে। কথা বলছে তার ভেতরে থাকা যান্ত্রিক শক্তিতে। যাই হোক না কেন, আর নয় রোবট সোফিয়াকে নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা। আমারা ভাববো আমাদের নিয়ে। আমরা কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তিতে আরও অগ্রসর হতে পারি সেদিকে। আর একটি কথা না বললে আর হয় না। কথা হলো, মুসলিম জাহানের সেরা দেশ নামে খ্যাত সৌদিআরব নিয়ে।

যেদেশে অন্য দেশের একজন মানুষও নাগরিকত্ব পায় না। কতো দেশের মানুষ কতো রকমভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দিনাতিপাত করছে, তার কোনও হিসেব নেই। আবার যেদেশে কোনও জায়গায় একটা মাটির বা পাথরের মূর্তি পর্যন্ত নেই। সেদেশে মানুষের তৈরি একটা প্লাস্টিকের মূর্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলো! যা ২০১৭ সালের অক্টোবরে সৌদি আরব রোবট সোফিয়াকে নাগরিকত্ব দেয়। রোবট সোফিয়ার চেয়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণ কিছু কী মানুষ সৌদিআরব সহ সারাবিশ্বের কাছে পেতে পারে না? পারে, কিন্তু তা তারা দেয় না বা দিবেও না। কারণ, আজ আমরা হেরে গেছি তথ্যপ্রযুক্তির কাছে। হেরে গেছি নিজের বিবেকের কাছে। হেরে গেছি একটা প্লাস্টিকে তৈরি রোবটের কাছে। হেরে গেছি রোবট সোফিয়ার কাছে। পরিশেষে স্রষ্টার সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।

প্রথম প্রকাশ: জার্মান বাংলা নিউজ
দ্বিতীয় প্রকাশ: রেড টাইমস নিউজ

নিতাই বাবু

গোদনাইল, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।