ফেসবুক গ্রুপ ‘মা মাটি মানুষ’ এবং কিছু কথা

নিতাই বাবু
Published : 17 Dec 2017, 02:55 AM
Updated : 17 Dec 2017, 02:55 AM

ছবি ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে 'মা মাটি মানুষ' গ্রুপ এডমিন থেকে নেওয়া।

ফেসবুক, এটি বর্তমানে বিশ্ববাসীর ভোরের কাক, রাতের খাবার। তার মানে হলো সকাল বেলার নাস্তা, রাতের শেষ খাবার। এই ফেসবুক ছাড়া মানুষের নিত্যদিনের কাজেকর্মেই মন বসে না। ছেলে-মেয়ে, জোয়ান-বুড়ো সকল শ্রেণির সকল মানুষের কাছেই প্রিয়। এখন এটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বহুবিধ যোগাযোগ সাইট বা গণমাধ্যম। বর্তমানে ফেসবুকে আছে, যোগাযোগ, খবর, বিনোদন, বার্তা আদান-প্রদান, বিজ্ঞাপন, পাত্রপাত্রী সন্ধান সহ, বহুরকমের ব্যবসাবাণিজ্য সহ আরও অনেক সুব্যবস্থা।

ছবি ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে 'মা মাটি মানুষ' গ্রুপ এডমিন থেকে নেওয়া।

আমি ফেসবুক ব্যবহার করছি কয়েক বছর হলো। ২০১১ সালের শেষদিকে আরম্ভ। পুরোপুরিভাবে শুরু করি ২০১২ সাল থেকে। ফেসবুকে প্রথম প্রথম গ্রুপ ছিল না, ছিল পেইজ। ছিল না কোনও মেসেঞ্জার অ্যাপ। শুধু একটিমাত্র আপ্লিকেশন ছিল ফেসবুক। যা ফেসবুক অ্যাপ নামেই সবাই চিনতো-জানত। আর এখন বহুরকমের সফটওয়্যার, অ্যাপ বিনামূল্যে পাওয়া যায়। বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জন্য বহুরকম সুবিধাও আছে। আছে সাংবাদিকতা, ইতিহাস রচনা করা, ব্যবহারকারীর স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করে রাখার নোট। আবার আছে, হাজার হাজার ব্যবহারকারী নিয়ে সংগঠন বা গ্রুপ তৈরি করা।

যাইহোক এই নিয়ে আর আমাকে বেশিকিছু বলতে হবে না। ফেসবুক সম্বন্ধে আজকাল প্রথমশ্রেণী পড়ুয়া শিশুরাও অনেককিছু জানে। আলোচনা করতে চাই ফেসবুকের একটা গ্রুপ নিয়ে। গ্রুপের নাম মা মাটি মানুষ। গ্রুপটি আমাদের দেশের কিছু কবি, সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও লেখকদের সমন্বয়ে ঘটিত।

ছবি ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে 'মা মাটি মানুষ গ্রুপ' এডমিন থেকে নেওয়া।

এই গ্রুপটিতে অনায়াসে যে কেউ সদস্য হতে পারে না। আর গ্রুপে দায়িত্বে থাকা কমিটির সদস্যারাও কাউকে সদস্য করে না। অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর, গ্রুপের নীতিমালার ভিত্তিতে সদস্য করা হয়। তাও একজন দ্বিতীয়পক্ষ লোকের সুপারিশের ভিত্তিতে গ্রুপের সদস্যপদ দেওয়া হয়।

এই গ্রুপটিতে বর্তমানে প্রায় ৫০০ সদস্য অ্যাক্টিভেট আছে। গ্রুপটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে ৫ বছর আগে। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হলেন, জনাব রুহুল আমীন রুহেল। বর্তমানে এই গ্রপের এডমিন প্যানেলে অধিষ্ঠিত আছেন পাঁচজন।  গ্রুপ মডারেটর প্যানেল সদস্য আছে পাঁচজন। এ ছাড়াও উপদেষ্টামণ্ডলী আছে কয়েকজন।

ছবি ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে 'মা মাটি মানুষ' গ্রুপ এডমিন থেকে নেওয়া।

এখন আসা যাক আমার এই লেখার মূল বিষয় নিয়ে। বিষটি হল, আমি গত কয়েকদিন আগে এই স্বনামধন্য মা-মাটি মানুষ গ্রুপের সদস্য হয়েছি। এরমধ্যেই গ্রুপের একটা হেমন্তকালীন উৎসবের আয়োজন চলছিল। নেমন্তন্নও পেয়েছিলাম। কিন্তু-সময়ের দুরাবস্থার জন্য আর উৎসবে শরীক হতে পারিনি। এই ছিল আমার জন্য বিরাট বেদনাদায়ক। তবে আমার জন্য অবশ্য উৎসব থেমে থাকেনি। যথারীতি মা-মাটি গ্রুপের হেমন্তকালীন উৎসব ঠিকঠিক হয়েছে। উৎসবের তারিখ ছিল, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ইং। উৎসব আয়োজন করা হয়েছে, কাকরাইল আইডিবি ভবনে। আসলে এই উৎসবটি ছিল মূলত কবি, সাহিত্যিক ও গ্রুপের সম্মানিত সদস্যদের একটা মিলনমেলা। মা-মাটি মানুষ গ্রুপের প্রায় শ'দেড়েক সদস্যদের নিয়ে, এই হেমন্তকালীন উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল, দুপুর ২টায়, শেষ হয় রাত ৮টায়। অনুষ্ঠানে শিশু, বৃদ্ধ, তরুণ-তরুণীরা যেন এক ঈদের আনন্দে মেতে উঠেছিলো

অনুষ্ঠানে বিশেষ আয়োজন ছিল, গ্রুপ নিয়ে আলোচনা, বক্তৃতা, কনসার্ট, ম্যাজিক শো, কবিতা আবৃতি। সাথে ছিল, নামীদামী রেস্তরাঁ থেকে অর্ডার দেওয়া খাবার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মানিত জনাব জেবু নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মানিতা রাবেয়া রুবি।

গত ৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ সকাল থেকেই গ্রুপে পোস্ট। পোস্টগুলো ছিল, অনেক রঙের রাঙানো লেখা ও ছবি। যাচ্ছি, যাবো, কী আনন্দ হবে, মজা হবে, ছবি তুলবো আরও কতকিছু। অনুষ্ঠান শুরু থেকেই একের পর এক গ্রুপে পোস্ট আসতে লাগলো। হরেকরকম লেখা, হরেকরকম ছবি। আনন্দ থেকে মহানন্দ, হাসি থেকে গান। সেই সকাল থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছিল, স্বনামধন্য ফেসবুক গ্রুপ মা-মাটি মানুষের আনন্দমুখর উৎসব। ফেসবুকের মা-মাটি মানুষ গ্রুপের এই হেমন্তকালীন উৎসবটি ছিল, ফেসবুক প্রতিষ্ঠা হবার পর একটি স্মরণীয় ঘটনা। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিয়ে এমন উৎসব এটিই প্রথম বলে মনে হয়। এমন ঘটনা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিরল।

ফেসবুক গ্রুপ মা-মাটি মানুষ;

এই গ্রুপের মূল লক্ষ্য হলো, কবি, সাহিত্যিক ও গণ্যমান্য কলামিস্টদের সহযোগিতায় আরও কিছু কবি, সাহিত্যিক লেখক তৈরি করা। আরও একটা উদ্দেশ্য লক্ষ্য করা যায়, তা হলো গ্রুপের সবাইকে এক সংসারের ভাইবোনের মতন করে বেঁধে রাখা। মা যেমন সন্তানকে তার আঁচল তলে ঢেকে রাখে, বড়ভাই যেমন করে ছোট ভাইবোনদের ছাওয়া দিয়ে রাখে; ঠিক তেমন করে রাখা। এই স্বনামধন্য গ্রুপটিতে আছে একে অপরের জন্য মনখুলে ভালোবাসা দেওয়া। কাছে টেনে নেওয়া। এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে সহযোগিতা করা। মোট কথা এই গ্রুপে আন্তরিকতাই হলো মূল কথা। একজন সদস্য একটা পোস্ট আপলোড করার সাথে সাথে শুরু হয় লাইক কমেন্টের পাহাড় গড়া।

গ্রুপের নীতিমালার মধ্যেও এ বিষয়ে বলা আছে যে, একজনের পোস্টে আরেকজন বাধ্যতামূলক লাইক কমেন্ট করতে হবে। তাই একটা পোস্টে দেখা যায়, প্রায় শখানেক কমেন্ট পড়ে যায়। লাইকের সংখ্যাটা না-ই-বা বললাম। প্রতিদিন এই গ্রুপে মোট ৫ থেকে ৬টি পোস্ট আপলোড হয়। এই ৫/৬টি পোস্টের মন্তব্যের প্রত্যুত্তর দিতে দিতেই, একজন সদস্যের হাত ব্যথা হয়ে যায়। আমার এই লেখা পড়ে কারোর যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে অনুরোধ করবো গ্রুপটা ঘুরে দেখার জন্য। তাহলেই বুঝতে পারবেন আশা করি।

আরও আছে এক আনন্দের খবর। তা হলো, এই গ্রুপে প্রতিদিনকার একটিভেট থাকা সদস্যদের মূল্যায়ন করার নিয়ম। তা নিম্নরূপ:

সুপ্রিয় প্রাণের পড়শীবৃন্দ,
সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনারা জানেন সর্বাধিক এক্টিভ মেম্বরদেরকে আমরা প্রতিবছর মিলনমেলায় স্বীকৃতি দিয়ে থাকি। গ্রুপে মূল্যবান সময় দিয়ে গ্রুপকে সবসময় প্রাণবন্ত রাখতে যারা সচেষ্ট থাকেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। আমরা সেটাই করে থাকি। তেমনি গত এক মাসে পোস্ট, কমেন্ট ও লাইক দিয়ে যিনি প্রথম অবস্থানে ছিলেন, লাইক বাদে তার পোস্ট + কমেন্ট ছিল ৯০০ র উপরে। নিম্নে গত এক মাসের সেরা একটিভ মেম্বরের ছবি ও সেরা দশে থাকা মেম্বরদের নামসহ তালিকা দিলাম। আশা করি আমরা সবাই আগামীতে সেরা অবস্থানে আসার চেষ্টা করবো। গত এক মাসের সেরা একটিভ মেম্বর Sherali Sherbug ভাইসহ সেরা দশজনের জন্য রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

এ হলো গ্রুপে একটিভেট থাকা সেরা দশজন সদস্য।

এ ছাড়াও গ্রুপের প্রতিটি পোস্টের দিকে একটু নজর দিলেই, গ্রুপের চিত্র নিজের চোখের সামনে ভেসে উঠবে। ফেসবুকের এই স্বনামধন্য গ্রুপে কাউকে যোগদান করার জন্য বলছি না। বলছি গ্রুপটাকে ঘুরে দেখার জন্য। আমি নিজেও কোনও একসময় এই ফেসবুকটাকে ঘৃণা করতাম। কারণটা বলতে না পাড়লেও, বলতে পারবো এর প্রতি বিতৃষ্ণাই মূল কারণ। কেননা, নিজের ফ্রেন্ড লিস্টেও অনেক অনেক ফ্রেন্ড থাকে। কই কেউতো কারোর প্রতি এতো আন্তরিকতা দেখায় না? কেউ কারোর পোস্টের দিকেও তাকায় না। মূল কথা, ভালো মানুষের অভাবেই ফেসবুককে একসময় ঘৃণা করেছিলাম। আর এই ফেসবুক গ্রুপ, মা-মাটি মানুষ-এ সবেমাত্র সদস্য হয়েছি। এরমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে প্রায় প্রতিদিন কারো সাথে না কারো সাথে, মেসেজের মাধ্যমে আদান-প্রদান। তাই মা-মাটি মানুষ গ্রুপের পক্ষ থেকে, গ্রুপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়ে, আজকেরমত এখানেই শেষ করছি। জয় হোক ফেসবুকের, জয় হোক মা-মাটি মানুষ গ্রুপের। জয় হোক মানবতার।

নিতাই বাবু
গোদনাইল, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ