রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অস্তিত্ব হারাচ্ছে হাজীগঞ্জ কেল্লা

নিতাই বাবু
Published : 24 June 2018, 02:25 PM
Updated : 24 June 2018, 02:25 PM

নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ কেল্লা। গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে যাওয়ার পথে নবীগঞ্জ গুদারাঘাট সংলগ্ন হাজীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের পরই কেল্লাটির অবস্থান। নারায়ণগঞ্জ-চিটাগাং রোডে চলার পথে এই কেল্লাটি সবার চোখে পড়বে। কেল্লাটি এক সময় খিজিরপুর দুর্গ নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমান যথাযথ পরিচর্যার অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে প্রাচীন এ কেল্লাটি।

সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা কেল্লাটি চারকোণা আকৃতির। কেল্লাটিতে পাঁচটি প্রবেশদ্বার আছে। অধিকাংশই নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থান। প্রচলিত আছে, সে আমলে রাজা-জমিদারদের নৌযান থেকে নেমে অল্প সময়ের মধ্যে কেল্লায় পৌঁছার সুবধার্থে এসব নদীমুখী প্রবেশদ্বার তৈরি করা হয়েছিল।

প্রাচীরের ভেতরের দিকে প্রায় তিন হাত চওড়া একটি সরু রাস্তা আছে। এই রাস্তা দিয়ে সৈন্যদল হাঁটত আর কেল্লার সর্বত্র নজর রাখত। প্রাচীরে রয়েছে বন্দুক ঢুকিয়ে গুলি করা কিংবা বল্লম ছোড়ার উপযোগী ফোকর। চার কোণে আছে গোলাকার বুরুজ। এখানে বসেই কর্তব্যরত প্রহরীরা পাহারা দিত।

নিজ মোবাইল দিয়ে তোলা ছবিতে ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ কেল্লা

কেল্লাটির ভেতরে আছে বিশাল জায়গা। দেখে মনে হয় এ যেন এক ফুটবল খেলার মাঠ। মাঠের এক কোণে একটা সুরঙ্গপথ ছিল। জানা যায়, এই সুরঙ্গ পথ নাকি শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত বন্দর কেল্লার সাথে সংযুক্ত ছিল। বিপদের আশঙ্কা টের পেলে সৈন্যদল এই সুরঙ্গ পথ দিয়ে অন্য কেল্লায় পলায়ন করত। তবে বর্তমানে সুরঙ্গটি বন্ধ আছে।

কেল্লার দক্ষিণ পাশে আছে একটি খাল। এটি দিয়ে ঐ সময়ে রাজ প্রতিনিধিরা রাজকীয় নৌযান নিয়ে কেল্লায় আসত। তাই নারায়ণগঞ্জ টু ডেমড়া সড়কের মাঝে অবস্থিত এই খালটির নামকরণ হয়েছে কেল্লা খাল। আর মানুষ ও যান চলাচলের জন্য খালের উপরে তৈরি ব্রিজের নাম হয় কিল্লার পুল। পাশেই বিবি মরিয়মের সমাধিস্থান, যা বিবি মরিয়মের মাজার নামে পরিচিত। এই মরিয়মকে ঐতিহাসিকরা তৎকালীন বাংলার মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের কন্যা বলে ধারণা করেন।

দেশ স্বাধীন হবার আগেও কেল্লার চারপাশে ছিল সচল পাটের গোডাউন। সে সময় প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ পাট ও বস্ত্রশিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন সেই নামধাম না থাকলেও, কেল্লার চারপাশে গোডাউনগুলো ঠিকই রয়ে গেছে।

হাজীগঞ্জ কেল্লার উত্তর পাশে একটু দূরে আছে একটি মসজিদ। মসজিদটি এম সার্কাস শাহী মসজিদ নামে সবার কাছে পরিচিত। কেল্লার অধিবাসীরা এই শাহী মসজিদে নামাজ পড়ত। তাই মসজিদটি স্থানীয় মানুষের কাছে শাহী মসজিদ নামেও পরিচিত।

বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ কেল্লাটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীন হতে বসেছে। হাজীগঞ্জ গুদারাঘাট হতে কেল্লার প্রবেশ করার সিঁড়িটি খসে পড়ছে। প্রাচীরে শেওলা জমে একাকার অবস্থা। কেল্লার ভেতরে দিনের বেলা থাকে গরু-ছাগলের ভিড় আর ছেলেদের খেলার জায়গা। আর রাতে থাকে চোর-বদমাশ আর নেশাখোরদে আড্ডা। সন্ধ্যার পর কেল্লার আশেপাশে সৃষ্টি হয় এক ভূতুরে পরিস্থিতি। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো কোন একদিন নারায়ণগঞ্জের এই ঐতিহ্যবাহী কেল্লাটি পুরোপুরি ঝোপ-জঙ্গলে ঢেকে যাবে। হয়তো একদিন কেল্লাটি আর কারোর চোখে পড়বে না। হারিয়ে যাবে পুরোনো দিনের একটি নিদর্শন। তাই কেল্লার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ আশু জরুরি।