শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল চৌধুরীবাড়িতে ক্রেতাদের আনাগোনা
রোজার শুরু থেকেই ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। সামর্থবানরা ঈদের কেনাকাটা দেশে না করে সপরিবারে চলে যান দেশের বাইরে। মধ্যবিত্তরা দূরে কোথাও না গিয়ে দেশের বড়বড় শপিংমলগুলোতেই, ঈদের কেনাকাটা সেরে নেয়। আর খেটে খাওয়া মানুষেরা ধারেকাছের হাটবাজার অথবা হাতের কাছে থাকা মার্কেট থেকেই, যার যার প্রয়োজন মতো ঈদের কেনাকাটা করে থাকে।
নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে এই এলাকাটি প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার উত্তরে গোদনাইল চৌধুরীবাড়িতে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক বহুতল ভবন আর ছোটবড় বেশ কয়েকটি মার্কেট। আরও আছে কাঁচাবাজার, মাছ বাজারসহ প্রায় একশ মুদি দোকান।
ঈদ সামনে রেখে চৌধুরীবাড়ি মার্কেটগুলো জমে উঠেছে। এখানকার দোকার ঘুরে দেখা যায় কেনাকাটার ধুম, আর ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
গতবারের মতো এবারও উঠতি বয়েসের মেয়েরা লেহেঙ্গার দিকেই বেশি ঝুঁকছে। ছেলেরা ঝুঁকছে রেডিমেড পোশাকের দিকে। তবে বাহারি ডিজাইনের দেশীয় পোশাকই কিনছে সবাই। নারীদের জন্য বাহারি রংয়ের শাড়ি, সুতি ও জর্জেটের থ্রি পিস, ফতুয়া ও ছেলেদের আকর্ষণীয় পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট ছাড়াও বাচ্চাদের পোশাকেও চাহিদা রয়েছে দোকানগুলোতে।
কেনাকাটার ভিড় শুধু জামাকাপড়ের দোকানেই নয়, ভিড় দেখা যায় জুয়েলারির দোকানগুলোতেও।
আগে ঈদের কেনাকাটার জন্য স্থানীয়রা চলে যেত ঢাকা অথবা নারায়ণগঞ্জ শহরে। কিন্তু এখন চৌধুরীবাড়ির মার্কেটেই ভাল মানের পোশাক পাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা।
প্রতিদিনই সকাল থেকে শুরু হয় মানুষে কেনাকাটা। চলে রাত বারোটা পর্যন্ত। নারায়ণগঞ্জ-ডেমড়া-চট্টগ্রাম রোডের মাঝ পথেই চৌধুরীবাড়ি বাসস্টপ। রাস্তার দুই পাশেই রয়েছে ছোট-বড় অনেক দোকান।
চৌধুরীবাড়িতে যেসব ছোটবড় শপিং সেন্টারগুলো রয়েছে – এ আর কমপ্লেক্স, এম রহমান সুপার মার্কেট, নজরুল প্লাজা, বৈশাখী মার্কেট, আদর্শ বাজার চৌকি প্লাজা। এর সাথে রয়েছে আরও শতাধিক ছোট-বড় দোকান।
এম রহমান সুপার মার্কেটের 'অনামিকা বস্ত্র বিতান' এর মালিক অপু সরকার। বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "গতবারের ঈদের চেয়ে এবার অনেক ভালো। সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো হবে আশা করি।"
অপু সরকারের মত অন্যান্য দোকানিরাও এবারের 'বেচাবিক্রি' নিয়ে আশাবাদী।
চৌধুরীবাড়ি এম রহমান সুপার মার্কেটের অনামিকা বস্ত্র বতানে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়
চৌধুরীবাড়ি আদর্শ বাজার বৈশাখী মার্কেটের দোকানগুলোতেও ক্রেতা সমাগত যথেষ্ট দেখা যায়। এটি চৌধুরীবাড়ির নতুন মার্কেট। এই মার্কেটেও প্রতিটি দোকানেই সব বয়সী ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পোশাক রয়েছে।
বৈশাখী মার্কেটের দোকান মালিক ও কর্মচারীরা জানান, 'গতবারের চেয়ে এবার এই মার্কেটের বিক্রি অনেক ভালো।'
বৈশাখী মার্কেটে শুধু পোশাক আর কাপড়ের দোকানই নয়, আছে কসমেটিকসের দোকান, স্যান্ডেল, ও জুয়েলারি। সোনার গয়না, ইমিটেশনের গয়নার এবং কসমেটিকসের দোকানে ভিড় থাকলেও, স্যান্ডেলের দোকানে ভিড় তুলনামূলক কম।
দোকানিরা বলছেন, স্যান্ডেলের দোকানে ভিড় শুরু হবে জামাকাপড়, প্যান্ট-শার্ট কেনাকাটার পর।
চৌধুরীবাড়ি বৈশাখী মার্কেট। এই মার্কেটে চলছে ঈদের ধুম কেনাবেচা। ক্রেতার ভিড়ও অনেক বেশি
ছেলেদের পছন্দ রেডিমেড হলেও অনেকেই ঈদের পোশাক তৈরি করে থাকেন টেইলার থেকে। চৌধুরীবাড়িতে বেশ কয়েকটি টেইলার আছে। এসব টেইলারে রোজার শুরু থেকেই অর্ডার নেওয়া শুরু হয়েছে। সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে দর্জিরা খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পাল্লা দিয়ে কাজ করছে বালিশের কভার, বেডকভার তৈরির দর্জিরাও।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়তি ভিড় সামলাতে চৌধুরীবাড়ির দোকানিরা অতিরিক্ত লোকও নিয়োগ দিয়েছেন। এদিকে ভিড়ের কারণে রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও অসুবিধা হচ্ছে পথচারীদের। সৃষ্টি হচ্ছে রাস্তার যানজট।