শীতলক্ষ্যায় ভাসছে মরা শুশুক

নিতাই বাবু
Published : 12 July 2018, 10:13 AM
Updated : 12 July 2018, 10:13 AM

 শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসছে প্রায় তিন হাত লম্বা শুশুক মাছটি 

বিকালবেলা চিত্তরঞ্জন গুদারাঘাট যেতেই লোকমুখে শুনতে পাই হুং মাছ আর হুং মাছ। ঘটনা কী তা জানার জন্য সামনে এগুতে থাকি।

খেয়াঘাটের টোল আদায়কারী জয়রাম বর্মণ আমার পরিচিত। জয়রামকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কী?

জয়রাম বললেন, "মাঝ নদী মরা একটা হুং মাছ ভাসছে। কেউ নৌকা নিয়ে গিয়ে দেখছে, অনেকে বিষয়টি জানার জন্য নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।"

খেয়াঘাটে নদী পারাপারে নিয়োজিত থাকা প্রায় সব মাঝিই আমার পরিচিত এবং খুবই খাতিরের মানুষ। সালাউদ্দিন নামে এক মাঝিকে নিয়ে মাঝ নদীতে ভেসে থাকা মাছটির কাছে গেলাম।

আগে শীতলক্ষ্যা নদী পারাপারের সময় খেয়ানৌকার সামনে দেখা যেত, কী যেন একটা উঁকি মেরে আবার পানিতে মিশে যাচ্ছে। লোকে বলতো এগুলো হচ্ছে হুং মাছ। কেউ কেউ বলতো শিশু মাছ।

মাছের আবার শিশু নাম হতে পারে? অনেক সময় অনেককে জিজ্ঞেসও করেছি, এই মাছগুলোর নাম শিশু মাছ হলো কেন?

উত্তর পেতাম, এরা স্তন্যপায়ী মাছ। তাই এদের কেউ কেউ শিশু মাছ বলে। আবার কেউ বলতো শিশুক মাছ। আসলে এই মাছগুলোর প্রকৃত নাম হচ্ছে, শুশুক মাছ। দেখতে হুবহু ডলফিনের মতন।

এরা না কি প্রায় বছরকাল গর্ভধারণের পর মাত্র একটি বাচ্চা প্রসব করে। ডলফিন ও তিমির নিকটতম জ্ঞাতি স্তন্যপায়ী শুশুক মানুষের কোনও ক্ষতি করে না। বরং অনেক সময় উপকারই করে। সেটা আবার কীভাবে? জেলেরা বলতো, রাতের বেলায় যখন জেলেরা নদীতে জাল ফেলতো; তখন এই মাছগুলো নাকি জালের বাহির থেকে অন্যান্য মাছকে তাড়া দিয়ে জেলেদের জালে ঠেলে দিত।

সময়-সময় জেলেদের জালে শুশুক মাছ আটকা পরতো। তখন জেলেরা খুব সাবধানে অতি যত্নসহকারে আটকা পরা শুশুক জাল ছাড়িয়ে নদীতে ছেড়ে দিতো।

আগের দিনে কবিরাজদের মুখে শুনেছি, এই শুশুক মাছ না কি কেউ খায় না। তবে শুশুক মাছের হাড় ও তেল দিয়ে ওষুধ তৈরি হয়।  এক সময় নিজেও দেখেছি এই শুশুক মাছের তেল আর হাড় নিয়ে মানুষের কাড়াকাড়ি।

অনেক আগের কথা, সেসময় আদর্শ কটন মিলের ভেতরে থাকতাম। আদর্শ কটন মিলের প্রাচীর ঘেঁষা নদীর পাড়ে পঁচা-গলা একটা শুশুক পড়ে থাকে এবং এর পচে  যাওয়া তেল পানির উপরে ভাসতে থাকে।

এই খবর মুহূর্তের মধ্যে চারদিক ছড়িয়ে পড়ে। তখন আশেপাশের লোকজন শুশুকের হাড় ও তেল সংগ্রহ করতে কাড়াকাড়ি শুরু করে দেয়। ধারণা করা হয়, শুশুকের তেল  বাতের ব্যথার জন্য মহৌষধ।

কিছু কিছু  শুশুক মাছের লম্বা ঠোঁট আছে। আবার কিছু শুশুক মাছের লম্বা ঠোঁট নেই।  নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে অহরহ দেখা যেত ঠোঁটবিহীন শুশুক মাছ।

নীট গার্মেন্টসের বিষাক্ত কেমিক্যালে শীতলক্ষ্যাও বিষাক্ত। এই বিষাক্ত পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতায় নদীর মাছের বেঁচে থাকার কথা নয়। এ কারণেই হয়ত শীতলক্ষ্যা নদীতে এখন আর শুশুক নেই বললেই চলে।