গ্রামীনফোনে হচ্ছেটা কী? ষড়যন্ত্র নাকি অন্য কিছু?

সুলতান মির্জা
Published : 9 July 2012, 05:47 AM
Updated : 9 July 2012, 05:47 AM


বাংলানিউজ ২৪ ডট কম
"আমারে ছাড়িয়া রে বন্ধু কই গেলা রে" হা শুরু করছি নির্মাতা অমিতাভ রেজার জীবনের একটি অন্যতম বিজ্ঞাপন এর সুর দিয়ে। আরও বলতে হচ্ছে "দুরত্ব যতই হক কাছে থাকুন" গ্রামীণফোন। আসলেই কী আমরা গ্রামীণফোনের কাছে থাকতে পারছি ? মোটেই না। গ্রামীণফোন কে বলব স্লোগান উল্টিয়ে দিয়ে বলতে থাকুন "কাছে যতই থাকুন দূরে চলে যান আপনাদের এখন আর ভাল লাগে না"।

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, গত কিছুদিনের পত্র পত্রিকা ঘাঁটাঘাঁটি করলে গ্রামীণফোনের কিছু খবর চোখে পড়বে যা সত্যি বেদনাদায়ক বিশেষ করে আমাদের এই ঘুণে ধরা সমাজের জন্য। অথচ আমরা যারা সমাজপতি, উঁচুমহলের সম্মানীয় ব্যাক্তি তাদের কাছে তেমন কোনও গুরুত্ব বহন করছে না এইসব খবর গুলো। যা হতাশাজনক মনে হয় আমার কাছে। দেশের অন্যতম বৃহত্‍ এই মোবাইল সেবা কোম্পানিটি এত দিন গ্রাহক দের বিশাল নেটওয়ার্কের ঢোল বাজিয়ে গ্রাহকদের পকেটের টাকা হরণ করে এখন আমাদের দেশের মেধাসত্ত্বের বস্র হরণ করা শুরু করে দিয়েছে। যদি ও এই প্রক্রিয়াটি গ্রামীণফোন তার ব্যয়সংকোচন এর দোহাই দিয়ে ২০০৮ সালের প্রথম দিকে শুরু করে। যা এখনো ক্রমাগত ভাবে অব্যাহত রয়েছে। দিনে দিনে যেন রাক্ষুসে আকার করা শুরু করে দিয়েছে।

১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ৩৮ মিলিয়ন গ্রাহক ও ৫০ শতাংশের বেশি মার্কেট শেয়ার নিয়ে গ্রামীণফোন তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। প্রসঙ্গ সফলতার নয়। এই সফলতার পেছনে যাদের বিনিদ্র ও রক্তঝরা পরিশ্রম তাদের প্রতি অবিচারের কথা। অবিবেচনার অন্তরালে চাপা পড়ে আছে এই বিশাল কোম্পানির প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের আশা আকাঙ্খা। এখানে বিবেচনা করা হচ্ছে শুধু ব্যবসা।

সরকার ঘোষিত মুল্যস্ফীতি যেখানে ১১ শতাংশ সেখানে আজ গ্রামীণফোনের কর্মীরা শূণ্য থেকে ৫ শতাংশ মুল্যস্ফীতি নিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করছে। যা বাস্তবিকভাবে অসম্ভব। এখানেই শেষ নয়। ঘটনার ক্রম বিবর্তনে এলো কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া। অস্বচ্ছ ও বর্বর পন্থায় টরে (গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) ও ভাট্টি (মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হারুণ ভাট্টি) গং তাদের অসাধু ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করলো 'পি এন্ড ও' ডিভিশন থেকে। ধীরে ধীরে তা কমার্শিয়াল বিভাগ পর্যন্ত বিস্তার করলো। তালিকায় রয়েছে টেকনোলজি, ফাইন্যান্স ও অন্যান্য বিভাগের নাম। যেখান থেকেও কর্মী ছাটাই হবে খুব তাড়াতাড়ি। আর তাই সরকার কে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর যাতে একটি কর্মী ও চাকরি না হারায়। [বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম]

গ্রামীণফোন একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানী যাদের উত্পত্তি স্থল হলো নরওয়ে এর টেলিনর। বাংলাদেশে গ্রামীণফোন কার্যক্রম শুরু করে গত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে অর্থ্যাত ১৯৯৭ সালে। পাঠক গ্রামীণফোনের অভ্যন্তরীণ কিছু তথ্য শেয়ার করছি, এই ক্ষেত্রে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি আর সেটা হলো গ্রামীণফোনের এই স্বেচ্ছাচারিতার ব্যপারে ড.ইউনুস কোনও ভাবেই দ্বায় এড়াতে পারেন না। এই জন্যই পারেন না কারণ ৩৪.২% শেয়ারের অংশীদার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠাতা গ্রামীণ ব্যাংক-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম কর্পোরেশন যা ড.ইউনুস এর ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান, ৫৫.৮% শেয়ার-এর অংশীদার টেলিনর, ও অন্যান্য সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী গ্রামীণফোনের বাকি ১০% শেয়ারের অংশীদার। যদিও টেলিনরের সাথে ড.ইউনুসের কিছু দিন আগে সম্পর্ক তেমন একটা ভাল ছিল না। এর পিছনের কারণ ছিল ড.ইউনুস শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পড়ে পুরো গ্রামীণফোন এর একক মালিকানা হতে চেয়েছিল। সেজন্য বলা হয়ে থাকে নরওয়ে ড.ইউনুসের বিরুদ্ধে প্রথম দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে তোলপাড় করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন আর তা নেই এখন ড.ইউনুসের সাথে টেলিনরের সম্পর্ক খুব ভাল।

কথিত আছে এই টেলিনরের বাংলাদেশের বিনিয়োগের মূল কারিগর কিন্তু ড.ইউনুস না, সেই ব্যাক্তিটি হলেন ড.ইউনুসের বাল্যকালের দোস্ত যিনি নিউয়র্কে থাকেন। যদিও ওই বন্ধুটির সাথে ইউনুস বেইমানী করতে দেরি করেন নাই। বর্তমান গ্রামীনফোনের মূল মালিকানায় যদি ওই বন্ধুটি এখন থাকতেন তাহলে এত তা সমস্যা হতো বলে আমি বিশ্বাস করি না। পাঠক হয়তো বা বলবেন গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে ইউনুসের দোষ খুজি কেন? উত্তর হল কারণ রয়েছে যদি আবার কোনও দিন এই বিষয় নিয়ে লিখি তাহলে কথা দিলাম নিরাশ করব না। গ্রামীণফোন আজকে যখন এত সাহস দেখিয়ে যাচ্ছে, আমার দেশের নিরাপরাদ কর্মী কে ব্যয়সংকোচনের কথা বলে চাকরি থেকে বের করে দিচ্ছে। তখন আপনাদের মতামত কী ?

যাইহোক এবার মূল প্রসঙ্গে আসি,সাম্প্রতিক গ্রামীণফোনে চলমান কর্মী ছাঁটাইয়ে গত কয়েক দিনে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক কর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছেন। প্রতিবার চাকরি রক্ষার পরীক্ষার নামে অন্তত ৫০ জনের চাকরি গেছে। তাই 'পরীক্ষা' মানেই গ্রামীণফোন কর্মীদের কাছে এখন আতঙ্ক।[বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম]

এইখানে একটা তথ্য দিয়ে রাখি গ্রামীনফোনে যারা চাকরি করে তাদের চাকরির মেয়াদ কোনও ভাবেই দুই বত্সরের বেশি হয় না, অর্থ্যাত গ্রামীণফোন দুই বত্সরের বেশি চুক্তি করে না কার সাথে। যার কারণে কোম্পানিটি দুই বত্সরের পরে একটি পরীক্ষার আয়োজন করে যাকে বলা হয়ে থাকে চাকরি রক্ষার পরীক্ষা। এই পলিসি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এইবারই কোম্পানিটিতে সৃষ্টি হয়েছে চরম অস্থিরতা। যারা চাকরিতে রয়েছেন তারাও হতাশ ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছেন।গ্রামীণফোনে বর্তমানে ৪৮০০ লোকবল রয়েছে। যাদের বেশির ভাগ হল এই দেশের সন্তান।

যদিও এই প্রক্রিয়াটি গ্রামীণফোন শুরু করেছে ২০০৮ সালের প্রথম দিক থেকে সেই সময় আমার নিকট তিন বন্ধু চাকরি হারিয়েছিল, পরে এক বন্ধু আবার চাকরি ফিরে পেয়েছিল। আমি এখনো ভুলতে পারি না চাকরি হারিয়ে আমার সেই বন্ধু গুলো কেমন অসহায় হয়ে গিয়েছিল। গ্রামীণফোন হলো এমন একটি কোম্পানী যেখান থেকে চাকরি চলে গেলে পুনরায় অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে ছাকেই পাওয়া কপালের ব্যাপার হয়ে উঠে।

গ্রামীণফোনের এই রকম সেচ্ছাচারিতা দেখে আমাদের দেশের ভাই-বোনেরা প্রতিবাদী রূপ ধারণ করতে পেরেছে এইজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। যদিও গ্রামীণফোনের চাকরির বিধি মালা কোনও ধরনের সংগঠন নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপর ও কী আর করা দেয়ালে যে পিঠ থেকে গেছে। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গঠন করা হয়েছে কর্মীদের বিশেষ সংগঠন। তাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন ছাঁটাই হওয়া কর্মীরাও। বৃহস্পতিবার করেছে লিফলেট বিতরণ। নিচে দেখুন সেই লিফলেট

গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারাস্থ গ্রামীণ ফোন প্রধান কার্যালয়েই সভার মধ্য দিয়ে গ্রামীণফোন কর্মীদের ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। গত বৃহস্পতিবার লিফলেটও বিতরণ করেন কর্মীরা। এই লিফলেটে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ ও বর্বর বলে উল্লেখ করে। এতে বর্তমান মুল্যস্ফীতি পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করে ন্যায্য ও যৌক্তিক হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করা, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক যথাযথ সামাজিক/আর্থিক/মানসিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া, কোম্পানির কাছে ন্যায্য পাওনা বাবদ ৫ শতাংশ মুনাফা লভ্যাংশ বকেয়াসহ প্রদান করার দাবি জানানো হয়। কিন্তু বিধিবাম, ঘটে গেল অন্য কিছু। আর এ সংগঠনের নাম থাকা শতাধিক কর্মী রোববার কর্মস্থলে আসেন। কিন্তু তাদের কর্মস্থলে প্রবেশ করতে দেয়নি গ্রামীণফোন।[বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম। ]

গ্রামীণফোন পরিস্থিতি যে ক্রমান্বয়ে সংকট যে গভীর দিকে ধাবিত হচ্ছে তা কিন্তু ধারনা করা যায়, নিম্নে আমি কিছু কারণ উল্লেখ করছি

* গত পনের বছরের মধ্যে এই প্রথম গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে কর্মীদের আন্দোলন
* এই প্রথম কর্মীদের ভবনে প্রবেশ করতে না দেওয়া
* ঘন ঘন কর্মী ছাটাই যা ভবিষ্যত আন্দোলন কে প্রসারিত করতে সহযোগিতা করবে
* এক পর্যায়ে হয়ত বা সরকার কে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থায় যেতে হবে
* সরকারের গৃহীত অবস্থার কারণে নরওয়ে বা ইউরোপের সাথে আমাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে
* যা আরেক দফা ইউনুস নামা বলে বিবেচিত হবে(যেহেতু ইউনুস গ্রামীণফোনের অন্যতম একজন মালিক পক্ষ)
* ড.ইউনুস তখন আবার সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন ঢোল বাজাতে হিলারিকে দিয়ে বাংলাদেশ কে হুমকি দেওয়াবে
* সর্বোপরি স্বীকৃতি পাবে বাংলাদেশ এখন আর বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত স্থান নয়।

এখন প্রশ্ন হলো, গ্রামীণ ফোনের এই অসত্‍ কর্মকাণ্ডের পিছনে কী ড.ইউনুসের হাত রয়েছে ? আর যদি নাই বা থাকে তাহলে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশ এর শান্তিপ্রিয় কর্মচারীদের পক্ষ নিয়ে গ্রামীণফোনের সাথে আলাপ আলোচনা করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন ? নাকি ইউনুস মনে মনে চাচ্ছে সরকার আগে হস্তক্ষেপ করুক তারপর নিশ্বাস ছাড়বেন উনি ?

@সুলতান মির্জা