জিয়াউর রহমান এর বহুদলীয় ফর্মুলা ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পুনরুত্থান!

সুলতান মির্জা
Published : 3 Sept 2012, 07:12 PM
Updated : 3 Sept 2012, 07:12 PM

আজকে বিএনপি ও তাদের দোসর জামাতিরা চিত্কার করে গলা ফাটিয়ে ফেলছে, এই বলে যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমান। তবে ইতিহাস বলে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা নয়, বহুদলীয় ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রবক্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান ইতিহাসের পাতায় ঠাই করে নিয়েছে। যদি ও বা বিএনপি জামাতিরা তা শুনলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে। কিন্তু ইতিহাস কে অস্বীকার করার নৈতিক ক্ষমতা খালেদা জিয়া বা তার অনুসারী জামাতীদের রয়েছে। আমি ইতিহাস কে স্বাক্ষী রেখে বলতে চাই, জিয়াউর রহমান বহুদলের নামে ইসলামী জঙ্গীবাদ ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের রাজনীতি করার পথ সুরক্ষিত করে দিয়ে গেছেন। তাহলে কী সেটা ভুল হবে ? এখন বিএনপি-জামাতীদের সেটা নিয়ে বিতর্ক করতে পারে। যদিও বিএনপির মত রাজনৈতিক দলের পক্ষে এটা সম্ভব। এইজন্য সম্ভব যে বিএনপি জন্ম থেকে একটি অগণতান্ত্রিক দল, যাদের পক্ষে দেশ প্রেম এর নৈতিক সংগা উপস্থাপন করার মত কিছু নেই। অথচ মুখে বিএনপি ও তাদের সমর্থনকারী জামাতিরা বলে বেড়াচ্ছে বিএনপি নাকি গণতান্ত্রিক একটি রাজনৈতিক দল। কতটা নীলজ্জ হলে তা সম্ভব।

একবার চিন্তা করে দেখুন ভিবিন্ন কারণে বাংলাদেশের এর বর্তমাম রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও গণতন্ত্র নামের সোনার হরিণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, যেন এখনো পলাতক রয়ে গেছে। কেন এমন হল ? এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। একাত্তরে আবাল-বৃদ্ধ ভণিতা শোষণ বঞ্চনার আধার পেরিয়ে মুক্তির সোনালী দিনের আশায় বুক বেধেছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যাবে সোনালী দিন তো দূরের কথা এখনও সেই শোষণ-বঞ্চনার দিন এখনো শেষ করতে পারেনি স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনগণ, কিন্তু কেন ? একবার ও কী চিন্তা করে দেখেছেন কারা এইজন্য দ্বায়ী ?

ওপনৈবেশিক আমলের ন্যায় শোষণ বঞ্চনার ধারাবাহিকতা আরও ব্যপক আকার ধারণ করেছে স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। যা এখনো চলমান রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলে পরিচিত সাম্প্রদায়িক গুষ্টির ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ সদ্ধানির ভূমিকার ফলে। বলতে পারি এমন অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ নয় তৃতীয় বিশ্বের অনেক ক্ষুদ্র দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী পরিস্থিতি এখনো এইরকম রয়ে গেছে।

ইতিহাস নিয়ে ঘাটলে দেখা যাবে স্বাধীনতার পরে ১৯৭৫ পূর্ববর্তি সময় পর্যন্ত মনে হয়েছিল ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এর দিন মনে হয় শেষ হয়ে গিয়েছিল। তত্কালীন বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রাথমিক নীতি ও কর্মকাণ্ড সেই বিশ্বাসের সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু বাঙালির কপাল মন্দ ছিল খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি সেই সম্ভাবনার চিত্র। স্বাধীনতা বিরোধীদের তৈরিকৃত সুযোগ সন্ধানী প্রেক্ষাপট রাজনীতি ফাদে পা দিয়ে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধারা ধর্মের নামের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল ধর্ম ব্যবসায়ী স্বাধীন বাংলাদেশ বিরোধীদের।

ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির পুনরুত্থান বলতে যা বুঝায় তা মূলত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি হলো দ্বায়ী। সমালোচকেরা যদি ও তা মানতে নারাজ, এই ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে জিয়াউর রহমান নাকি বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথদ্রষ্টা। আমি এই বিষয়ে বলতে চাই জিয়াউর রহমান বহুদলের ডামাডোলের নামে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রাজাকার, আল-বদর ও তাদের ফলিত সাইনবোর্ড ইসলাম ধর্মের নাম সম্মবলিত ধর্ম ব্যবসায়ীদের রাজনীতি করার সুযোগ দান করেছে। ১৯৭৫ সালের সৃষ্ট পরিস্থিতির কল্যাণে বাংলাদেশে কার্যত ধর্ম নিরপেক্ষ সরকারের আনুষ্ঠানিক পতন হয়। সে বছর নভেম্বরে বাংলাদেশে ঘটে যায় আরেকটি সামরিক অভূত্থান যার নেত্রীত্তে ছিল খালেদ মোশারফ। এই দুই অভূত্থানের অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বায়িত্তে ছিল খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদ। তত্কালীন সময়ে শোনা গিয়েছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তন করে নাকী ইসলামী প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ রাখার প্রক্রিয়া চলছিল। যদিও সেটা বাস্তবায়িত আর হয়নি, তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সংবিধান সংশোধিত হয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতা বিদায় নিয়েছিল।

১৯৭৭ সালের ২১ শে এপ্রিল জিয়াউর রহমান রাষ্টপতি হিসেবে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। রাষ্টপতি হওয়ার পরে তত্কালীন জিয়াউর রহমান প্রথম যে কাজটি করেছিলেন আর তা হলো খন্দকার মোস্তাক এর অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংবিধান সংশোধিত হয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতার বিদায় এর বৈধতা নিশ্চিত করা। ওই সময় এটা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান থেমে থাকেনি। সে সময় বাংলাদেশে রাষ্টীয় স্বীকৃত ২১ টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৫ টি রাজনৈতিক দল জিয়াউর রহমানের এই সিদ্ধান্তের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন যুগিয়েছিল। দল গুলো ছিল, জামাত ইসলামী, মুসলিম লীগ,ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ,নেজামে ইসলাম, খেলাফত রাব্বানী। উল্লেখ থাকে যে উক্ত রাজনৈতিক দল গুলো মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকার জন্যে ১৯৭২ সালে, বঙ্গবন্ধু সরকার কতৃক নিষিদ্ধ হয়েছিল। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জিয়াউর রহমান এর আমলে এই দল গুলো রাজনৈতিক অঙ্গনে পুন:প্রতিষ্ঠা লাভ করে । সেই থেকে শুরু স্বাধীন বাংলাদেশে বহুদলের নামে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যা এখন মহামারী হিসেবে ধারণ করেছে। সৃষ্টি হয়েছে ধর্মীয় গোড়ামি,মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের মত পরিস্থিতির।

জিয়াউর রহমান এর আমলে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক ও তথাকথিত বহুদলীয় রাজনীতির বিস্তার কতটুকু হয়েছিল সেই নিদর্শক হিসেবে অনেকেই উদাহরণ টানেন ১৯৮১ সালের রাষ্টপতি নির্বাচনের হাফেজ্জি হুজুরের তৃতীয় স্থান দখল করার বিষয়টি কে সামনে নিয়ে এসে। যে হাফেজ্জি হুজুর রাষ্টপতি নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশে একজন অচেনা ব্যাক্তি ছিলেন অথচ সেই ব্যাক্তি কিনা প্রগতিশীল বামপন্থী ও আওয়ামীলীগ কে পিছনে ফেলে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। আমি জানতে চাই এই গঠনাটি কী বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ধর্মীয় রাজনীতির অগ্রযাত্রা কে প্রতিষ্ঠা করার সূচনা লগ্ন বলা যায় না ?

জানি বিএনপি সমর্থিত তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা এই পোস্ট পরে চিন্তা করছেন কী বলে গালি দেওয়া যায়। কিন্তু আপনাদের মনে নেই আমাকে গালি দিয়ে ইতিহাস কে অস্বীকার করতে পারবেন না। তারপর ও যা সত্য তা হলো বিএনপি কোনও গণতান্ত্রিক দল নয় আর গণতন্ত্রের ধব্জ্জাধারী কোনও বাক্য এই দলের মুখে মানায় না। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা নয়। জিয়াউর রহমান বহু দলীয় জঙ্গিবাদের প্রবক্তা।

ধন্যবাদ।
@সুলতান মির্জা
তথ্য সূত্র : একাত্তরের ঘাতক জামাতে ইসলামীর অতীত ও বর্তমান