আপডেট: রাজাকার ত্রিদিব রায়ের লাশ বাংলাদেশে আসছে না, এ জয় ব্লগারদের, এই জয় বিকল্প মিডিয়ার !

সুলতান মির্জা
Published : 25 Sept 2012, 04:37 AM
Updated : 25 Sept 2012, 04:37 AM


গত কয়েকদিন ধরে সরকারের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করছি, যে এটা কী করে সম্ভব ? একটি দেশ যে দেশ ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা বোনের ইজ্জত এর বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে, সেই দেশে একজন রাজাকারের প্রতি সজন প্রীতি মেনে নিতে পারতাম যদি বিএনপি-জামাত সরকার ক্ষমতায় থাকতো। কিন্তু না দেশে এখন রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেত্রীত্ব দানকারী সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামীলীগ। শুধু তাই নয় সেই দলের কান্ডারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। আমরা যারা স্বাধীনতা পন্থী হিসেবে নিজেদের কে এই দলের জন্য বিলিয়ে দিচ্ছি, তাদের মনবাসনাটা কিন্তু সর্বক্ষণ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষেই থাকবে ।

সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ঘটনার মাঝে ও রাজাকার ত্রিদিব রায়ের লাশ স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরত নিয়ে আসার ঘটনাটা কিন্তু ভার্চুয়াল জগতে যথেষ্ঠ আলোড়ন তুলেছে বিশেষ করে ব্লগ ও ফেসবুক এ। স্বাধীনতাপন্থী সকলে যারা আওয়ামীলীগের পক্ষে ব্লগে ও ফেসবুক এ সারাদিন কথা বলে গরম করে রাখছে। তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রকাশ করছে হতাশা, আমি ও তাদের মধ্যে একজন। কিন্তু অবাক হয়ে দেখেছি আমাদের সুবিধা পন্থী মিডিয়া কিন্তু এখনো সরব না এই বিষয়টা নিয়ে। যা সত্যিই লজ্জাজনক একটি ঘটনা।

রাজাকার ত্রিদিব রায় এর সম্মন্ধে যারা এখনো ভাল কিচ্ছু জানেন না তাদের কে পরামর্শ দিচ্ছি স্বাধীনতাপন্থী জনপ্রিয় ব্লগার অমি রহমান পিয়াল এর বিডিনিউজ ২৪ ডট কমের মতামত বিভাগে লেখা রাজা(কার) ত্রিদিব রায় : এ লাশ সইবে না বাংলার মাটি শিরোনামে প্রকাশিত আর্টিকেল খানা পড়লে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এই রাজাকার এর বিষয়ে।

এই রাজাকারের মৃত্যু নিয়ে পাকিস্তানী মিডিয়াতে ফলাও করে এসেছে বেশ কিছু খবর সেখানে বলা হয়েছে ত্রিদিব রায় একজন খাটি পাকিস্তানী। পড়ে দেখুন একটি আর্টিকেল The Raja who gave away his kingdom। সেই আর্টিকেল এর বিষয়ে মন্তব্য করেছেন বেশ কিছু পাকিস্তানী যেখানে ত্রিদিব রাযের প্রতি স্যালুট জানিয়েছেন এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিন্মে হুবুহ তুলে দিলাম,

Major ( R ) Muhammad Arif TI(M)
Sep 18, 2012 – 10:15AM
A salute to Raja Sahib, He had lot of sacrifices for Pakistan. Today people may not be knowing that at the time of creation of Bangladesh Raja Sahib was Pakistani envoy at UNO. Sheikh Mjeeb tried his best that Raja sahib should announce joining Bangladesh so that Pakistan may be humiliated and embarrass at UNO, but he rejected all offers of Mujeeb and chose to came Pakistan , To acknowledge his devotion and love for Pakistan and to give proper respect against all protocols, Mr Z.A Bhutto received and welcomed Raja Sahib at Rawalpindi air Port.

ওই সাইটে আরও রয়েছে বেশ কিছু শোক বার্তা। পড়ে নিবেন।

এই রাজাকারের পাকিস্তান প্রীতির একটা প্রমাণ দিচ্ছি, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে শ্রীলঙ্কায় একটি বার্তা নিয়ে যান এই রাজাকার ত্রিদিব রায়। দেখুন লিংকে

চাকমা রাজা রাজাকার ত্রিদিব রায় এর লাশ নিয়ে আসার জন্য যে সম্মতি দিয়েছে তার জন্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতি ঘৃণা আর ঘৃণা জানাই । অবাক হয়ে গেলাম বর্তমান সরকারের দয়ার শরীর দেখে। যে ত্রিদিব রায় ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের ঘোষিত একাত্তরের দালালেরা – বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতি আদেশ নং-৮) – এর অধীনে অভিযুক্তদের তালিকার আট নম্বর আসামি হিসেবে তালিকা ভুক্ত ছিল, যার নামে তত্কালীন দালাল আইনে সমন পাঠানো হয়েছিল কিন্তু পর পর ১১০ বার পাঠানো নোটিশের এর কোনও উত্তর দেয়নি সে বা তার পরিবারের কোনও সদস্য আর আজকে কেন হটাত্‍ তার মত একটা বিখ্যাত রাজাকার এর লাশ দেশে ফেরত নিয়ে আসার অনুমতি দিতে হলো?

যে ঠিকানায় নোটিশ গুলো পাঠানো হয়েছিল
নোটিশ নং- ১১০ – রাজ (৪) – ৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
রাজ ত্রিদিব রায়
পিতা- মৃত রাজা ননীনাক্ষ রায়
গ্রাম—রাজবাড়ি, রাংগামাটি, থানা- কোতওয়ালী
জেলা- পার্বত্য চট্টগ্রাম
আদালত- মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট পার্বত্য চট্টগ্রাম সদর, রাংগামাটি কোর্ট
হাজিরার তারিখ- ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ বেলা ৩ টা
তথ্যসূত্র: লিঙ্ক

যে ত্রিদিব রায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বাংলাদেশকে মেনে নিতে না পেরে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে ভুট্টোর মন্ত্রী সভায় যোগ দেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিভিন্ন দেশে কাজ করেন। বাংলাদেশের প্রতি চরম ঘৃণা প্রদর্শন করে তিনি মৃত্যুর আগে একবারের জন্যও বাংলাদেশে আসেননি, এমনকি আসার ইচ্ছাও প্রদর্শন করেছেন বলে জানা যায় না। সেই একটি ঘৃণিত রাজাকার কে আমাদের সরকার কী হিসেব করে স্বাধীন দেশে সমাহিত করার অনুমতি দিচ্ছে ?

ইতিমধ্যে স্বাধীনতা পন্থী ব্লগার ও ভিবিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ঢাকা ও চট্টগ্রামে রাজাকার ত্রিদিব রায় এর লাশ দেশের মাটিতে ফেরত নিয়ে আসার প্রতিবাদে পাদুকা দেখানো প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

আপডেটিং:২৭/০৯/২০১২ ইং

অবশেষে জয় হলো ব্লগারদের। জয় হলো স্বাধীনতাপন্থী সকল মানুষের। রাজাকার ত্রিদিব রায়ের লাশ আর আমাদের বইতে হচ্ছে না। এই রাজাকারের লাশের শেষ সমাধি পাকিস্তানে হচ্ছে। নিন্মে সে সংক্রান্ত একটি স্কিনশর্ট দেওয়া হলো যা আমাদের এক সহ ব্লগারের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।


ধন্যবাদ ।
=======
সুলতান মির্জা

ছবি সূত্র: ফেসবুক