ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি প্রতারণার চেইন শপ!

সুলতান মির্জা
Published : 17 April 2012, 02:48 AM
Updated : 17 April 2012, 02:48 AM

হায় হায় প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড। তাদের ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, সে এক জায়গা যেখানে একবার টাকা গেলে সেই টাকা রাতারাতি বাচ্চা দেয়। কিছু বোকা বাঙালিদের ।লোভনীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে এর আগে মাল্টিলেভেল কোম্পানি বিসিআই, আইটিসিএল, জিজিএন, যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি (যুবক) এবং সম্প্রতি ইউনিপে টু ইউ যেভাবে লাখ লাখ মানুষকে নিঃস্ব করেছে এবার তাদেরও সেই একই পরিণতি হতে যাচ্ছে। মানুষ কে বোকা বানিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই এমএলএম কোম্পানী ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি কথিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে পরিচালিত যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

ডেসটিনি লিমিটেড প্রতারণার মাধ্যমে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে মাধ্যমে ২০০১ সালের সমবায় সমিতি আইনের অজুহাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো আমানত সংগ্রহ করছে। যা প্রচলিত আইন বিরোধী। তাদের ওয়েবসাইট ঘেটে যা জানতে পারলাম, শুধু ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ব্যানারে ২০১১ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে দুই হাজার কোটি টাকা।

মূল আলোচনা :
ডেসটিনির প্রচারিত লিফলেট অনুযায়ী ডেসটিনি চলতি আমানত, সঞ্চয়ী আমানত, স্থায়ী আমানত, সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ আমানত প্রকল্প, মাসিক মুনাফাভিত্তিক আমানত প্রকল্প, শেয়ার মূলধন (যা সঞ্চয় আমানতেরই নামান্তর মাত্র) ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে থাকে। পদাধিকার বলে, ডেসটিনির সদস্য হলেই `ডিস্ট্রিবিউটরস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার` (ডিআইএন) ও `কাস্টমারস আইডেন্টিফিকেশন` (সিআইডি) দেওয়া হয়। বর্তমানে সিআইডি নাম্বারধারীর সংখ্যা ৬৮ থেকে ৭০ লাখ এবং ডিআইএন নাম্বারধারী ৪০ থেকে ৪৫ লাখ। ডিআইএন নাম্বারধারীরাই ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের সদস্য। ডেসটিনির কোম্পানী প্রোফাইলে দেওয়া রয়েছে, ৪০টি শেয়ারের একটি লট ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করবে এই ডিআইএনরা। শেয়ার বিক্রি করতে পারলে ৫০০ পয়েন্ট ভ্যালু (পিভি) অর্জন করা যায়। আশ্চর্যজনক যে, পরিবেশক করা হয় ডেসটিনি গ্রুপের মূল প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের। আবার এই পরিবেশক হওয়াই ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সদস্য হওয়ার পূর্বশর্ত। এখন কথা হলো, এই ব্লগে হটাত্‍ করে কিছু আজনবীর আবির্ভাব হয়েছে যারা নিজেদের মনে করে থাকে তারাই সবচেয়ে বেশি জানে এবং বুঝে। আসলেই কী তারা যানে?

ডেসটিনির কিছু হলে জলবে আগুন ঘরে ঘরে, বা রফিকুল স্যার একবার আমাদের হুকুম করুন দেখুন আমরা ডেসটিনির জন্য আমাদের নিজেদের জাহান, যৌবন সব কিছু হাসি মুখে দিয়ে দিব মার্কা কথা গুলো নিয়ে যে সকল আহাম্মক এর দল ব্লগ, ফেসবুক এ ডেসটিনির পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের অবগতির জন্য বলছি। আপনাদের প্রিয় রফিকুল স্যার, ডেসটিনির কোম্পানী প্রোফাইলে, আপনাদের জন্য কিছু চমক রেখেছে যা হয়তো বা আপনারা জানেনই না। ডেসটিনি তাদের কোম্পানীর, শেয়ার মূলধন ও শেয়ারহোল্ডারদের কে ও অত্যন্ত সুচতুরভাবে এর দায়দেনার সাথে সম্পৃক্ত করে রেখেছে। যা যদি কখনো কোম্পানী কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যায় বা আর্থিক লসের মুখে পড়ে তখন এই দায় দেনা শেয়ারহোল্ডার দের(মানে আপনাদের) কে যে পরিশোধ করতে হবে। এখন ডেসটিনি কোনও ভক্ত বা সমর্থক যদি আমার এই কথা পড়ে তাহলে আমাকে কিছুটা পাগল বা পন্ডিত টাইপেরি মনে করতে পারে। যা আমাদের সম্মানিত সিনিয়ার ব্লগার আবু সুফিয়ানের অনুসন্ধান: এমএলএম ব্যবসা পদ্ধতি ও ফেঁপে উঠা ডেসটিনির গল্প লিখিত ব্লগের মন্তব্য গুলো পড়লে কিছুটা অনুমান করতে পারবেন। অথচ এই ডেসটিনির সাথে যারা জড়িত রয়েছেন এমন লাখ লাখ শেয়ারহোল্ডার এ সম্পর্কে অবগত নন।

ডেসটিনির বেশিরভাগ আমানত প্রকল্প তফসিলি ব্যাংকগুলোর আমানত প্রকল্পের প্রায় অনুরূপ। প্রতিষ্ঠানটি এভাবে ব্যাংকের মতো চলতি, স্থায়ী, সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ, মাসিক মুনাফা, শেয়ার মূলধন ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করছে। এর জন্য প্রশিক্ষিত মাঠকর্মী তথা কমিশন এজেন্টদের ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শহরের আনাচে-কানাচে এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার শেয়ার সংগ্রহও আমানতেরই নামান্তর। ২০০৬-০৭ সালে ৭১ লাখ, ২০০৭-০৮ সালে ৭ কোটি ২ লাখ, ২০০৮-০৯ সালে ১৭ কোটি ৫৬ লাখ, ২০০৯-১০ সালে ২২২ কোটি ১৮ লাখ এবং ২০১০-১১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৫২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ৪৯২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা অর্থাৎ ৯৪ শতাংশ আমানতই দীর্ঘমেয়াদি আমানত। আমানতের বিপরীতে সুদ দেওয়া হয় সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ। সমবায় আইন অনুযায়ী আয়ের টাকা যেহেতু করমুক্ত, তাই সুদের এত উচ্চহার অস্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আমানত পরিশোধের দায়বদ্ধতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত শেয়ার ক্রয়ে জনগণকে প্রলুব্ধ করে তহবিল বাড়াচ্ছে।

আবার এক লাখ টাকার মেয়াদি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেও কোনো ব্যক্তি সদস্য হতে পারেন। পাঁচ বছর আগেও প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা ছিল (ওয়েবসাইটের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী) বর্তমানে তা ৩ হাজার কোটি টাকা, যা অস্বাভাবিক হারে হাতিয়ে নিয়েছে।

ডেসটিনি হল মাল্টি লেবেল প্রতারণা কোম্পানী। আর তাই ডেসটিনি কে না বলুন। ডেসটিনির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। ডেসটিনি কে সামাজিক ভাবে প্রতিরোধ করুন। দেশের অর্থনীতি কে দালাল মুক্ত রাখুন।

নিবেদনে
@সুলতান মির্জা