ইলিয়াস আলী গুম নাকি আত্মগোপনে!

সুলতান মির্জা
Published : 20 April 2012, 12:07 PM
Updated : 20 April 2012, 12:07 PM

আমাদের রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের চিরাচরিত নাটক হলো পরস্পরকে দোষারোপ করা। হোক সেটা গ্রহণযোগ্য বা অগ্রহণযোগ্য তাতে তাদের কিছুই করার নেই। যেমন আমরা অপেক্ষা করতে থাকি তারা কী বলে তা শুনতে, তেমনি তারা ও বসে থাকে কবে সেই সুযোগটা আসবে আমাদের কিছু বলবে বলে। ইলিয়াস আলী সিলেটের রাজনীতির মাঠে একটি সু পরিচিত নাম। এই বিএনপি নেতা নিখোজ হয়েছে যা অত্যান্ত দুক্ষ জনক একটি গঠনা। কিছু কথা বলার আগে একটা ছোট খাটো উপমা দিয়ে বলতে চাই, ঘুমন্ত কোনও মানুষ কে ডেকে সজাগ করা খুব সহজ, কিন্তু কোনও মানুষ যদি সজাগ থেকে ঘুমের ভান ধরে তাহলে তাকে ডেকে তোলা খুব কষ্ট সাধ্য একটি ব্যপার। সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর গঠনাটা হয়তো বা তেমনি কোনও একটি গঠনা হতে পারে। বিডি ব্লগের খুব পরিচিত একজন ব্লগার এর একটি লেখা দেখে আমি হতাশ না হয়ে পারছি না। উনি হয়তো বা আরও বিস্তারিত লিখতে পারতেন, কিন্তু উনি তা না লিখে সংক্ষেপে আমাদের কে বুঝিয়ে দিলেন যা পড়ে লেখক কে কিছুটা হতাশাগ্রস্ত মনে হলো আমার কাছে।

সম্মানিত লেখক কে উদ্দেশ্য করে বলছি,
ইলিয়াস আলীর এই নিখোজ হওয়া টা কে , মোটামুটি ৩ ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে যা আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে খুব স্বাভাবিক:

* সিলেটের রাজনীতিতে বিএনপির এই নেতার প্রভাব চোখে পড়ার মত, বলা যেতে পারে সাবেক সফল অর্থ মন্ত্রী জনাব সাইফুর রহমান এর সময় থেকেই এই ইলিয়াস আলী সিলেট এর রাজনীতি টা কে নিজের করে নিতে চেয়েছিলেন আর সে জন্য তিনি সাইফুর রহমান এর বিরাগভাজন হয়েছিলেন। আর তাই সিলেটের রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন অনেকটা কোণঠাসা ছিলেন । পরবর্তীতে জনাব, সাইফুর রহমান এর মৃত্যুর পর সিলেটের বিএনপির রাজনীতিতে ইলিয়াস আলী ফের সক্রিয় হয়ে উঠে। বলতে কোনও নিশেদ নেই খুব কম সময়ে এই ইলিয়াস আলী নিজেকে খুব ভাল অবস্থায় নিয়ে গেছেন। এবং বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করছে। শুধু তাই নয়, বেগম খালেদা জিয়া সিলেট এর রাজনীতি বিষয়ে তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে ইলিয়াস আলীকেই বেশি মূল্যায়ন করে থাকেন। যার কারণে সিলেট বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা এখন প্রায় কোণঠাসা। আর তাই প্রভাবশালী শত্রু বা ইলিয়াস আলীর ভাল চায় না এমন লোকের সংখ্যাটা ও কোনও অংশে কম না। হতে পারে ইলিয়াস আলী তাদের মাধ্যমে অপহরণ হতে পারে।

* আর একটা বিষয় নিয়ে ও চিন্তা করা যেতে পারে, বিএনপি আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করার জন্য ইলিয়াস আলী কে আত্তগোপন করার জন্য পরামর্শ দিতে পারে। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুখে ইলিয়াস আলী নিখোজ পরবর্তী বলা কথা শুনে আমি মনে করি,খালেদা জিয়ার নির্দেশে ইলিয়াস আলী আত্তগোপনে রয়েছে। এখন কথা হলো, খালেদা জিয়া দেখেছেন র্যাব ইলিয়াস আলীকে ধরে নিয়ে গেছেন,(উনি কেন ওই সময় র্যাব কে নিশেদ করেননি) ইলিয়াস আলীকে ফেরত না দিলে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের হুমকি,(ভাবনার বিষয় জাতির ক্রান্তি লগ্নে, শেয়ার বাজার লুট হলো,সাগর রুনি খুন হলো,আরও অনেক কিছু গঠেছে কিন্তু উনি আন্দোলনের ডাক দিতে পারে না অথচ ইলিয়াস আলীর নিখোজ গঠনায় হরতাল ডাকা) এই সব কিছু কী এমন কোনও ইঙ্গিত বহন করে না যে এটা সাজানো গোছানো কোনও নাটক হতে পারে। যা খালেদা জিয়ার আপন ইচ্ছাতে হয়েছে।

* আবার এমন ও হতে পারে সরকার দলীয় কোনও প্রভাবশালী মহলের রোশানলের শিকার হতে পারে ইলিয়াস আলী। আর তাই সরকার কে ও এই কাজের বাহিরে রাখা যাবে না।

মনে রাখা প্রয়োজন, শেখ হাসিনার সরকার বর্তমানে নিজেদের অবস্থা নিয়েই বেসামাল অবস্থায় রয়েছে। কেউ কেউ মন্তব্য করছে, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত থেকে অন্য দিকে চোখ ফেরানোর জন্য সরকার এটা করেছে। আমি তাদের কে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, ইলিয়াস আলী কে গুম করলে যে সরকার আরও বিপদে পড়বে এটা সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ভাল করে জানে, ইলিয়াস আলী রাষ্টের এমন কোনও গুরত্ত পূর্ণ কোনও ব্যক্তি ও না যে তাকে কে অপহরণ বা গুম করলে যে বিশেষ কোনও সুবিধা হবে। যদি খালেদা জিয়া গুম হতো তাহলে ব্যপারটি ঠিক ছিল যে সরকার এটা করেছে।

এখন কথা হলো, বিএনপি নেতাদের বেসামাল কথা না বলে সরকারের নিকট সহযোগিতা চাওয়া উচিত। আর সরকার যদি সেক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত না রাখে তখন না হয় ডালাও ভাবে মন্তব্য করা যেতে পারে। কিন্তু এই খানে কী তা হচ্ছে ? না হচ্ছে না বেগম খালেদা জিয়া তো এক প্রকার প্রকাশ্যেই কোনও প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়া সরকার কে দোষারোপ করা শুরু করে দিয়েছেন।

যা হোক বিএনপির সাবেক এই সাংসদ নিখোজ হয়েছেন বা আততগোপনে রয়েছেন।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেখানেই সে থাকুক না কেন, উনার অবস্থা টা যেন চট্টগ্রামের সেই ব্যবসায়ী জামাল চৌধুরীর মত না হয়।উনি যেন ভাল ভাবে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।

বলতে হয় ইলিয়াস আলী অনেকটা ধন্য, ইলিয়াস আলীর নিখোজ হওয়ায় তার নামের উপর একটি একদিনের হরতাল নামক একটা নক্ষত্রের পালক যোগ হলো। যদি বেচে থাকে আর বিএনপি যদি সরকার হতে পারে তাহলে ইলিয়াস আলী যেন মন্ত্রী হয় এই শুভ কামনায় শেষ করছি।

@সুলতান মির্জা