তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব: ভেঙে যাচ্ছে পরিবার, ছড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাস!

সুলতান মির্জা
Published : 11 May 2012, 03:18 PM
Updated : 11 May 2012, 03:18 PM

তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার রয়েছে দীর্ঘ যোগ সূত্রতা। সেই হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব এর ভারে আমরা ক্রমেই নুজ্য হয়ে যাচ্ছি বিবেকের কাছে কিন্তু টের পাচ্ছি না। আজ আর কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে,গত কয়েক বছরে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে। কেউ কেউ একে যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিপ্লব বলেও থাকেন। এ বিপ্লব একদিকে আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ঠিক, আবার অন্যদিকে ভয়াবহ অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে।

আলোচনা করতে চাই:

ইন্টারনেট:
বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন 'অনুষঙ্গ' হয়ে এসেছে ইন্টারনেট। ঘরে ঘরে কম্পিউটার ঠাঁই করে নিয়েছে। তারই ওপর ভিত্তি করে যোগাযোগের নতুন এই মাধ্যম সব জায়গায় ঢুকে পড়েছে। প্রথমে কম্পিউটার ভিত্তিক থাকলেও তার বিবর্তন ঘটছে দ্রুত। মোবাইল ফোন বা মুঠো ফোনের মাধ্যমেও আজ ইন্টারনেটের বিশাল জগতে ঢোকা যাচ্ছে খুব সহজেই। ইচ্ছা করলেই একটা ভাল মন্দ কাজ ইন্টারনেট দিয়ে করা যায়। সত্যিকার অর্থে ভাল কাজ এর পরিবর্তে আমাদের ব্যবহার কারিরা মন্দ কাজ গুলো ইন্টারনেট দিয়ে করতে ভালোবাসে। আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমাদের যে সকল নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতিদিন ইন্টারনেট মুখী হচ্ছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যবহার কারীদের প্রধান টার্গেট হল পর্নোফটো বা ভিডিও, দ্বিতীয় হল ফেসবুক বা সামাজিক ওয়েবসাইট, তৃতীয় হলো ব্লগ, মেইল আইডি ক্যাটাগরি।

ইন্টারনেট ব্যবহার কারী কারা ? স্কুল পড়ুয়া থেকে মধ্য বয়সী শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে বা নারী-পুরুষ।

মোবাইল ফোন
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের সবচেয়ে সস্তা প্রযুক্তি হলো মোবাইল। তার মানে সব সস্তা না দামিও আছে। সামর্থ অনুযায়ী যার যেটা পছন্দ সেটা। পাঠক-পাঠিকা মোবাইল ফোন এর উপর একটি পোস্ট লিখেছিলাম প্লীজ ইচ্ছা হলে একটু পড়ে নিবেন বিস্তারিত রয়েছে মোবাইল ফোনে প্রতারণার শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা!

টেলিভিশন
তথ্যপ্রযুক্তির পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী যার অবস্থান ছিল একসময়। যদিও এখন তা অন্য সেক্টরের কাছে ধরাশয়ী তারপরও প্রসার বেড়েছে উপগ্রহ টেলিভিশনের চ্যানেলের। এ ছাড়া, রেডিও-টেলিভিশন বা সংবাদপত্রের জগতে এসেছে অকল্পনীয় ও অভাবিত সব পরিবর্তন। যোগাযোগের এ সব ক্ষেত্র থেকে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নানা সাংস্কৃতিক পণ্য। নাটক, চলচ্চিত্র, টক শো, রিয়েলিটি শোসহ সংস্কৃতির নানা পণ্য বিনা বাধায় আজ আমাদের ঘরে ঢুকছে। যোগাযোগ অবারিত হওয়ায় শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ, শৈল্পিক ও বিনোদনের জগতে নানা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে মানুষের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ খুলে গেছে। তবে, যোগাযোগের এ পরিবর্তনকে কোনোভাবেই একচেটিয়া আশির্বাদ বলা যাবে না। বিজ্ঞানের আরো অনেক অবদানের মতো ভালোর সঙ্গে মন্দও লুকিয়ে আছে। বিজ্ঞানের কিছু কিছু অবদানের মতো ভালোর আড়ালে ওত্‍ পেতে রয়েছে ভয়াবহ মন্দ। অর্থাত্‍ সব মিলিয়ে আজকের পারিবারিক জীবন নতুন এক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এমনিতেই মানুষের পারিবারিক জীবনে পরিবর্তন ঘটেছে। আগের তুলনায় পরিবারে সন্তানদের সংখ্যা কমেছে। পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় পরিবর্তন এসেছে। সাংস্কৃতিক পণ্য এখন অনেক সহজলভ্য। পারিবারিক জীবনে তা সহজেই ঢুকছে। রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র সহজেই পরিবার জীবনে শিক্ষকের মহান ভূমিকা পালন করতে পারত। শিশু ও পরিবার জীবনের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারত। কারণ পারিবারিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হল শিশুদেরকে দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তোলা। পারিবারিক জীবনের অঙ্গন থেকেই ধর্মীয় বিশ্বাসের গোড়াপত্তন হয়। সামাজিকীকরণের সূচনাও হয় একই অঙ্গন থেকে। কিন্তু তা কী হচ্ছে ? আমাদের আধুনিক সমাজের আধুনিক মানুষ গুলো পরিবর্তনের সাথে পালা দিয়ে নিজেই পাল্টাপাল্টি হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে পরকীয়া, স্ত্রী বদলানো, আরও বিভিন্ন টাইপের ভয়ংকর সব কর্মকাণ্ড। উদাহরণ, গার্লফ্রেন্ড ও বয়ফ্রেন্ড পরিবর্তন, স্বামী-স্ত্রী পরিবর্তন।

এই যন্ত্রটা কিন্তু শিশু থেকে বুড়ি সবাই দেখতে পারে যদি চোখের কোনও সমস্যা না থাকে।

কম্পিউটার ভিডিও গেমস

আজকের যুগে গণমাধ্যম বা সংবাদ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এটা সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে। সমাজ বিষয়ক নানা ধরনের কিছু বিষয় খেয়াল করলেই বুঝা সহজ হবে যে, গণমাধ্যম সন্ত্রাস উস্কে দিচ্ছে, এই কথাটা কেন বললাম। এ সব কথা নতুন করে বলার কোনো দরকার নেই। যা না বললেই নয়,আমাদের নতুন প্রজন্মের বাবা-মায়েরা কিন্তু তাদের ছেলে-মেয়ে টা যেন বখাটে হয়ে না যায় সে জন্য, সব সময় চোখের সামনে রাখতে চায়। এখন কথা হলো এই চোখের সামনে বসিয়ে রাখার ফলাফল কিন্তু শিশুর ভবিষ্যত বিকাশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও আমাদের অভিবাবকদের সেই সম্বন্ধে সম্যক ধারনা টুকু পর্যন্ত নেই। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে আমাদের অভিবাবক গুলো তাদের সন্তানদের তথ্যপ্রযুক্তি পরিবারের সদস্য ইন্টারনেট তথা কম্পিউটার প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করে নতুন করে আরো কিছু বাড়তি সুবিধা যেন তাদের সন্তানেরা নিতে পারে। অথচ এই সম্পৃক্ত হওয়াটা কিন্তু মারাত্মক সংকট তৈরি করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা ও ভিডিও গেমস বিশেষ করে সহিংস ভিডিও গেমস খেলার কারণে শিশু-কিশোরদের দেহ-মন সংকটের মুখে পড়ছে।কম্পিউটার গেমসের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ একদিকে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে; তার শেখার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, এ ধরণের গেমসের মাধ্যমে সহজভাবে শিশু-কিশোর মনে পাচার করা যায়। তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে দূরে সরে যায়। তাদের মধ্যে দেখা দেয় মানসিক হতাশা। যার ফলে কিশোর ক্রাইম হয়ে যাচ্ছে খুব অনায়াসে।

এই খানে আরেকটা বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে বা অভিবাবকদের মনে রাখতে হবে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা ও ভিডিও গেমস খেলার ফলে শরীর কিন্তু অকেজো হয়ে যেতে পারে যদি না পর্যাপ্ত ব্যায়াম করানো হয়। উল্লেখ্য নিষ্ক্রিয় ও দৈহিক শ্রমহীন জীবন যাপন করা হলে মানুষের বিশেষ করে কম বয়সীদের জন্য তা মারাত্মক সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।

এখন কথা হল তথ্যপ্রযুক্তির সুফল-কুফল যিনি বা যাহারা ব্যবহার করে নিবেন তাদের কেই কিন্তু এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

সুলতান মির্জা – ১৯/০৩/২০১২ ইং