গণতন্ত্র বনাম অপরাজনীতি

আল নোমান কাজী
Published : 26 August 2017, 07:02 PM
Updated : 26 August 2017, 07:02 PM

ফিদেল কাস্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়ের সাথে তুলনা করেছিলেন। তাঁর ভাগ্য ভালো। কারণ হিমালয় এদেশে না।এদেশে হলে,নিঃসন্দেহে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করত(এদেশের সব কিছুই রাজনীতি,দলনীতি করে)।বোধহীন হিমালয় হয়ত চিন্তা করত আমি এত বড়।এত বৈচিত্র্যময়। আমার সাথে ক্ষুদ্র একটা মানুষের তুলনা! না,এর একটা বিহিত করতেই হবে! কারণ হিমালয় তো বঙ্গবব্ধুর হৃদয়ের উচ্চতা দেখতে পেতেন না।এই ভেবেই,টুক করে একটি মামলা টুকে দিতেন।এখন কথা হল, কাস্ত্রে কেন শেখ মুজিবকে এত বড় হিমালয়ের সাথে তুলনা করেছিলেন? কারণ, তিনি আমাদের নেতার গুণ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি দেশবন্ধুর আত্মত্যাগে বিস্মিত হয়েছিলেন।

সেদিন বিবিসির একটা খবরে দেখলাম, ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।জনগণের বন্ধুরা সেই মামলা তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্তণালয়ের অনুমতিতে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে চার্জশীট দিয়েছে আদালতে।শিক্ষকদের অপরাধ তাঁরা শেখ মুজিবকে বিএনপির একজন চেয়ারম্যানের সাথে তুলনা করেছেন। বেশ,কিছু কথা বলা দরকার।সেলিনা হোসেন তাঁর কাকতাড়ুয়া উপন্যাসে বঙ্গবন্ধুর সাথে এক অনাথ বালক বুধার সাথে তুলনা দিয়েছেন।তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্টদ্রোহিতার মামলা হবে না কেন? যখন আমি বহুকষ্টে জোগাড় করা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' ছেড়া লুঙ্গি আর গামছা গায়ে দিয়ে পড়ি আর ভাবি আমি বঙ্গবন্ধু হব। তিনিই আমার আদর্শ। আমার মত একটা চাষার ছেলের সাথে এত বড় নেতার তুলনা! সে কি? রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হবে না কেন? এরকম হাজারও কবি ও চাষার ছেলে আছে। যারা নিজেদের বঙ্গবন্ধু গড়ার স্বপ্ন দেখে। তাঁদের নামে কেন মামলা হয় না? শিক্ষক সাহেব তাঁর প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর সাথে এক চেয়ারম্যানের তুলনা দিয়েছেন।এতে দোষের কী হয়েছে? দোষটা তো সাম্প্রদায়িক কতিপয় নেতা ও প্রমোশন সন্ধানি পুলিশের মনে। তাঁরা এটাকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন। শিক্ষক যে চেয়ারম্যানের কাজ উল্লেখ করেছেন। তাঁর কাজ এলাকাভিত্তিক শিক্ষার্থীদের কাছে দৃশ্যমান ছিল। শিক্ষক তাঁর প্রণিত প্রশ্নে এই উদাহরণ দিয়ে ছাত্রদের ব্যবহারিক জ্ঞান দিয়েছেন। এতে ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পেরেছেন। আর চেয়ারম্যান একজন জনপ্রতিনিধি। তিনি কোন দল করেন তা বড় না। বড় হল তিনি জনগণের সেবক। এদেশের নাগরিক। তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভালো কাজ করেছেন এটাই। আর সে খারাপ হলেও,তাঁর এই ভাল কাজের তুলনা অনুরূপ ভাল কাজ করেছেন,এমন যে কারো সাথেই তুলনা দেয়া সম্ভব। আবার কেউ খারাপ কাজ করলে প্রচলিত প্রবচনেই তাকে মীর জাফর বলি আমরা।
আমি 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পড়ে জেনেছি, বঙ্গবন্ধু চাষার সন্ত্রান হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। আর আমি আওয়ামী লীগ করি না বলে বঙ্গবন্ধু কি আমার নেতা নয়? আসলে বঙ্গবন্ধু সবার। আমরা যদি তাঁকে শুধু কোনো দলের মনে করি,তা হলে তাঁকে বিতর্কে ফেলা হবে। তিনি সব বাঙালির। তবে কতিপয় দলবাজ নেতা এবং পুলিশ আমার প্রিয় নেতাকে নিয়ে যা শুরু করেছে তাতে মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে।আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মামলার অনুমতি দিয়ে,তাঁদের দায়িত্ব কতটা পালন করেছেন সেটাও একটা প্রশ্ন।দয়া করে,বঙ্গবন্ধুকে তাঁর নিজের দেয়া পরিচয় দিয়ে চলতে দিন।তাঁর স্থান আপনাদের মস্তিষ্কে (ব্যবহার করে নিজের উন্নতি) আর আমাদের শুধু হৃদয়ে। নিশ্চয় 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' কোনো কেন্দ্রীয় নেতার হাত থেকে নিয়েছেন।নিয়ে তো পড়েননি। নেতার হাত থেকে নেওয়ার ছবিটাই হয়ত শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। ভাই, আজ একটু পড়েন। মহান নেতাকে জানুন। আমি জানি, আমি বঙ্গবন্ধুর সামনে তাকে গালি দিলেও তিনি আমাকে বুকে স্থান দিতেন। আর এজন্যই তো তিনি একজন চাষীর ছেলের আদর্শ। হয়ত শিক্ষকরা এতটা ভেবে প্রশ্ন করেননি । গণতান্ত্রিক এই দেশে তাঁদের অপরাধ যদি শুধু এই তুলনা করাটাই হয়,তা হলে এটা ক্ষমার যোগ্য(আমার কাছে)। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব শিক্ষকদের মুক্তি চাই।