প্রানের শহর ঢাকা ও তার জঘন্য যাতায়াত ব্যবস্থা

নাজমুস চৌধুরি
Published : 3 July 2012, 08:18 AM
Updated : 3 July 2012, 08:18 AM

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। মাত্র ৮১৬ স্কয়ার কিলোমিটার আয়তনের শহর ঢাকা। প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস এই শহরটিতে। আরও প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় আসে এবং কাজ শেষে নিজের বাড়ি ফিরে যায়। এসব মানুষ ঢাকার নিকটবর্তী অঞ্চল গুলিতে বসবাস করে যেমন নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গি, গাজীপুর, সাভার ইত্যাদি এলাকায়। তার মানে ওয়রকিং আওয়ারে প্রায় ২ কোটি মানুষের আসা যাওয়া হয় এই শহরে।

কিন্তু এই শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার এতই দুরাবস্থা যে ভোগান্তি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। এই মানুষ গুলির সাথে কথোপকথনে জানা যায় যে শুধু মাত্র কাজের জন্যই তাদের আসতে হয় বা রাস্তায় বের হতে হয় নাইলে তারা কখনই রাস্তায় বের হত না।

আসুন আমরা এবার ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছু প্রস্থচ্ছেদ করি।
১ পাবলিক বাস(লোকাল)
২ পাবলিক বাস(সিটিং)
৩ লেগুনা
৪ টেম্পু
৫ সি এন জি
৬ ট্যাক্সি ক্যাব
৭ রিক্সা
মুলত এই ৭ ধরনের যানবাহন ঢাকা শহরে বিদ্যমান।
কিন্তু অফিস টাইমে এই সব ধরনের জান বাহন এর কোনটাই আপনি পাবেন না। যখন আপনার দরকার তখন আপনি এগুলি কিছুই পাবেন না। পাবেন শুধুই হয়রানি।
কারন গুলো দেখুন

১ লোকাল বাসে আপনি বসার জায়গা তো দূর, দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত পাবেন না। কারন আপনি বাস ধরতে ধরতেই আরও মানুষ বাস এর মধ্যে বাদুর ঝোলা হয়ে ঝুলে যাচ্ছে।
২ সিটিং বাস যেগুলোকে বলা হয় সেগুলিও ওই সময়ে লোকাল হয়ে যায় আর একই অবস্থা বিদ্যমান।
৩ টেম্পুর স্ট্যান্ডে গিয়ে আপনি দেখবেন বিশাল লাইন দিয়ে মানুষ দাড়ায় আছে কিন্তু টেম্পুর দেখা নাই। আবার সব লাইনে ওরা যায় ও না হয়ত আপনার গন্তব্যে ওরা না ও যেতে পারে।
৪ তিন নম্বর টাই এখানেও প্রযোজ্য।
৫ সি এন জি। আহ! ২১ শতকের নবাব বংশের লোকজন উনারা। তারা আপনার সাথে কথাই বলবে না। তারপরও দু একজন যদি দয়া করে কথা বলে তো ভাড়া এমন চাইবে যে ওই টাকা দিয়ে আপনার দু দিন এর চলার খরচ হয়ে যায়।
বলা বাহুল্য যে এই যান গুলো মিটারে চলার কথা থাকলেও তারা কোন দিন ই মিটারে যাবে না। যদিও রাজি হয় তাহলে ২০ টাকা ৩০ টাকা বেশি দিতে হবে। আর অফিস টাইমে তো কখনই যাবে না।
কিন্তু হটাৎ করে তারা যদি মিটারে যেতে রাজি হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন যে মিটারটা নির্ঘাত টেম্পার করা। যা ভাড়া উঠার কথা তার দিগুন তিন গুন ভাড়া উঠতে পারে কিন্তু আপনি এটা বুঝতেও পারবেন না।
৬ এখানেও ৫ নম্বর টাই প্রযোজ্য।
৭ রিক্সা। যেটাকে বলা হয় মধ্যবিত্তের বাহন। কিন্তু আমার দেখা মতে মধ্যবিত্ত এই রিক্সা ভাড়া বহন করার ক্ষমতা রাখে না। অফিস টাইমে এরাও রাজবংশীয় লোকজন। যাবেই না কোথাও। ১৫-২০ জন কে জিজ্ঞাসা করার পর কেও যদি আপনার প্রতি দয়া দেখায় তাহলে সে ভাড়া চাইবে আসল ভাড়ার দিগুন বা তিন গুন।

অগতির গতি তখন আপনাকে কোন একটা অপশন তো বেছে নিতেই হবে। কি করবেন সময় আপনার কাছে অনেক মূল্যবান।
কারও ক্লাস আছে আরও অফিস আছে কেও তার দোকান খুলতে যাবে। কারও ডাক্তার দেখাতে হবে। মানুষের প্রয়োজনের শেষ নাই। যেতেই হবে।
এত গেলো কাজের সময়ে বের হয়ে কাজে যাবার কথা। কিন্তু আপনি আপানার পরিবার নিয়ে বের হয়েছেন কোথাও হয়ত যাবেন সাথে আপনার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ছোট বাচ্চা আপনি এখন কন বাহন টা চাবেন? বলুন
কোন পাবলিক যানবাহন, আপনার মা, স্ত্রী আর বাচ্চা টা কি পারবে এই বাসে উঠার যুদ্ধ করতে?
না । পারবে না । তো আপনাকে রিক্সা, সি এন জি অথবা ট্যাক্সি দিয়েই গন্তব্যে যেতে হবে।
এবং আপনাকে গুনতে হবে বিশাল ভাড়ার অংক।

যা হোক এতো গেলো আমাদের কথা। এবার আসুন আমাদের সরকার কি বলে একটু সুনি?
আমাদের সরকারের একজন মন্ত্রি বলেছেন যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টকে জনপ্রিয় করতে হবে তাই প্রাইভেট গাড়ির দাম বাড়ানো হচ্ছে আর এক গাড়িতে একজন চরবে না। চরলে জরিমানা করা হবে।
আচ্ছা মানলাম, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কে জনপ্রিয় করার জন্যই এই উদ্যোগ। কিন্তু সরকার আদৌ কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কে জনপ্রিয় করার।

এই বাদুর ঝোলার জনপ্রিয়তা? ঢাকা যেই শহর এখান, এর রিমোট এরিয়া গুলির সাথে কানেকটেড এক্সপ্রেস রেল দরকার আর শহরের ভেতরে এক্সপ্রেস রেল দরকার যাতে মানুষ ঠিক সময়ে তার কর্মস্থলে পৌছাতে পারে। কই আছে এরকম কোন উদ্যোগ। নেই তো কি হল শেষ পর্যন্ত। ওই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।
আর প্রাইভেট কার কিজন্য বেরেছে? এটাও একটু চিন্তা করলেই আমরা বের করতে পারি।

একটু আগে বলেছিলাম যে আপনি আপনার পরিবার নিয়ে বের হয়েছেন কোন কাজে। এবার ধরুন আপনি মুটামুটি পয়সাওয়ালা যে ১০-১৫ লাখ দিয়ে একটা গাড়ি কিনতেই পারেন। তো আপনি কি বসে থাকবেন আর আপনার পরিবার কষ্ট করবে? না তা কখনই আপনি হতে দেবেন না। কিনে ফেলবেন একটা গাড়ি। ব্যাংক থেকে লোন করে হলেও। এই ঘটনা গুলিই ঘটেছে গত ৫ বছরে। যার কারনে মানুষ খুব তাড়াতাড়ি তার নিজের গাড়ি কিনে ফেলেছে, ফলে ঢাকায় গাড়ির চাপ দিগুন তিন গুন হয়ে গেছে। মুদ্রাস্ফিতির ফলে মানুষের হাতে পয়সা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যাওয়াতে, আর তার অনুপাতে এই দ্রব্য গুলার দাম সেই তুলনায় বারে নাই এই সুযোগে যারা কিনেছে বর্তমানে ঢাকার ৬০ ভাগ প্রাইভেট গাড়ির মালিক তারাই।

যাই হোক এতো গেলো প্রাইভেট গাড়ির কথা। কিন্তু আমাদের কি হবে? আমাদের তো গাড়ি নাই। সকালে ক্লাসে যেতে রিকশার জন্য দাড়ায় থাকতে হয় ১ ঘণ্টা। এরপর বাস স্ট্যান্ডে গেলে বাস থাকে না দাড়ায় থাকতে হয় আরও ১ ঘণ্টা। হয় ক্লাসে দেরি। টিচার জিজ্ঞাশা করে দেরি কেন বলি গাড়ি পাই নাই। সে বলে এটা কোন কারন না। যাও এই ক্লাস আর করা লাগবে না। আর যারা অফিসে যায় তাদের বস তাদের বলে যান আজ থেকে আপনার আর অফিসে আসতে হবে না।
দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ.।.।.।.।.।.।.।
আমাদের এই দুর্ভোগ কি আর কোন দিনও শেষ হবে না?