একটি ভ্রমন কাহিনী (যাত্রাবাড়ি টু গুলিস্তান)

নাজমুস চৌধুরি
Published : 4 July 2012, 10:41 AM
Updated : 4 July 2012, 10:41 AM

নাম সুমন। পেশায় ছাত্র। বাড়ি যাত্রাবাড়ী। সুমন পড়ছে ঢাকার একটি নামী কলেজে। প্রতিদিন তাকে যাত্রাবাড়ী গুলিস্তান রুট টা হয়ে যেতে হয় । প্রতিদিন ভোঁর সকালে উঠে তাকে ক্লাসের জন্য তৈরি হইতে হয়। ক্লাস যদি থাকে ৯ টায় তবে তাকে সকাল ৭ টা বাজে তৈরি হয়ে বের হতে হয় ক্লাস ধরার জন্য। কারন সকাল থেকেই রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকে তার উপর বাস পাওয়া যায় না। সে বাস পাবে কি পাবে না তার ও কোন নিশ্চয়তা নাই।

আজকেও তার ক্লাস ছিল এবং সে তৈরি হয়ে প্রতিদিন এর মত বের হল কিন্তু প্রতিদিন এর মতই বাসস্ট্যান্ডে বাস নাই, দাড়ায় থাকতে হইল প্রায় আধা ঘণ্টা তারপর বহু প্রতিক্ষিত বাস এর আগমন ঘটলো। বহু কষ্টে সে বাসে উঠল কিন্তু বসার জায়গা পেল না। যাই হোক দাড়িয়েই যাওয়ার প্রস্তুতি নিল।

যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু আগানোর পর বাস দাড়িয়ে গেলো সামনে বিশাল জ্যাম। এভাবে প্রায় আধা ঘণ্টা কেটে গেলো। তারপর ছাড়ল বাস। কিছুদুর যেতেই ঠিক জয় কালি মন্দিরের সামনের রাস্তায় এসেই হটাৎ একটা ঝাকি খেয়ে আধা কাত হয়ে গেলো বাসটি। যাত্রী রা সব আতংক গ্রস্ত হয়ে উঠল। কি হল কি হল??

শেষে দেখা গেলো বাসটির চাকা একটি গর্তে পরে আটকে গেছে এখন এটাকে টেনে তোলা ছাড়া উঠানো সম্ভব না। একে একে যাত্রী রা সব নেমে গেলো। কিন্তু নামবে কিভাবে রাস্তায় এক হাঁটু কাঁদা। তারপরও অনিশ্চয়তায় বসে থাকার চেয়ে নেমে যাওয়া ভাল। সুমন ও নেমে গেলো কিন্তু কাদায় তার প্যান্ট আর জুতা তলিয়ে গেলো। সে সেদিকে না তাকিয়ে ছুটল আরেক টি বাস ধড়তে কারন তার ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে ১ মিনিট দেরি হলে স্যার ঢুকতে দেবেন না। অবশেষে যাত্রা যুদ্ধ পার করে সে কলেজে উপস্থিত হল কিন্তু ইতিমধ্যে দেরি হয়ে গেছে প্রায় ১০ মিনিট।
সে ক্লাস টি পেল না।

এরকম তার সাথে প্রায় প্রতিদিন ই হয়। কলেজে যাওয়া মানেই যুদ্ধ। কখনও সে জিতে যায় আর বেশির ভাগ সময়েই সে হেরে যায়।

আব্দুর রহমান। উনার বাড়ি নারিন্দা। কাজ করেন একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে। তার ও অফিস ৯ টায় শুরু হয় এবং তাকেও এই জয়কালি মন্দির ও গুলিস্তান এর রোড ধরে যেতে হয়। আজকে তিনি সুমনদের বাস এর ঠিক পেছনে রিকশায় ছিলেন। বাস গর্তে পরে যাওয়াতে রাস্তায় বিশাল জ্যাম লেগে যায়। ফ্লাই ওভার এর কাজের জন্য রাস্তা এমনেই সরু হয়ে গেছে অন্য কোথাও দিয়ে যে বের হবে তার কোন উপায় নেই। তাই তার সেদিনও অফিসে দেরি হয়। এই রকম বিভিন্ন কারনে তার প্রায় প্রতিদিনই দেরি হয় অফিস যেতে। একদিন বেচারা তার চাকরি টাই হারিয়ে বসে।
এই যে সুমন, আব্দুর রহমান এরা কারা?
এরা আমরাই। যারা এই রাস্তা টা দিয়ে চলাচল করি।
আর আমাদের পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। যা বর্ণনাতীত।
বর্ষাকালে বৃষ্টিতে এই রাস্তাটা পার্থিব নরকে রূপান্তরিত হয়েছে। এবং এর ভুক্তভোগী আমি আপনি এবং আমরা সবাই যারা এই রাস্তা টা ব্যবহার করি নিজের কর্মস্থলে যাবার জন্য।
যাত্রাবাড়ী – গুলিস্তান ফ্লাই ওভার এর কাজ এবং এখন বি টি সি এল এর লাইন বসানোর কাজ যা এই রাস্তায় চলাচল কারি মানুষের অসীম দুর্ভোগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধু মাত্র এই প্রতিষ্ঠান গুলোর কাজের সমন্বয়হীনতার কারনে।
এই ভোগান্তির কি কোন শেষ নাই???