প্রযুক্তির ভাল ও মন্দ -৩

নাজমুস চৌধুরি
Published : 25 July 2012, 04:44 PM
Updated : 25 July 2012, 04:44 PM

প্রথম পর্বটি ব্লকবাস্টার হিট হওয়াতে মনে করেছিলাম যে পরের পর্ব হয়তবা মুটামুটি হিট করবে। কিন্তু তা ব্লগের দরবারে মুখথুবরে পড়ায় আর সাহস হয় নাই, এ ব্যাপারে আর লেখার। কিন্তু কি করব আমি বড়ই নির্লজ্জ টাইপের মানুষ। নিজের কথা গুলি বলে শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি পাই না। এতো সিকুয়েল মুভির ডিরেক্টরের মত হয়ে গেলো, প্রথম পর্ব হিট হওয়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় পর্ব। কিন্তু দ্বিতীয় পর্ব ফ্লপ হওয়াতে অনেক দিন কোন তৃতীয় পর্ব নাই। হটাৎ করেই তৃতীয় পর্ব রিলিজ দেয়। আমিও দিলাম। প্রথম পর্বটি তে এতো হিট পরায় মনে করেছিলাম যে ইন্ডিয়ানা জোন্সের মত ৭-৮ খান পর্ব বানায় ফেলব।

কিন্তু আপাতত তৃতীয় পর্ব লিখেই শেষ করার চিন্তা করছি।
প্রথম দুই পর্ব গুলাতে প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং সামজিক অবক্ষয়ের কিছু উদাহরন তুলে ধরে ছিলাম। যাই হোক আমি বড়ই হতাশ যে সামাজিক ভাবে আমরা যেভাবে এই ব্যাপার গুলি কে পাশ কাটায় চলে যাচ্ছি, ঠিক সেভাবেই ব্লগেও দেখলাম সবাই পড়ছে ঠিকই কিন্তু এব্যাপারে সবাই নো কমেন্টস অবস্থা।

আমরা এখন ফেসবুকিয়, ইউটিউবীয়ও জেনারেশন। যা করছি আপলোড করছি শেয়ার করছি। সাথে আমার ঘরের কিছু একান্ত বাক্তিগত ব্যাপার ও জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করে দিচ্ছি। কারন সেই পোস্ট গুলিতে পড়ছে সর্বাধিক লাইক আর কমেন্টস। বাড়ছে আমার জনপ্রিয়তা। বন্ধুমহলে,ভারচুয়াল জগতে, সব জায়গায় খালি আমি আর আমি। কিন্তু যার ব্যাপার গুলি পাবলিকলি শেয়ার করছি তার তো অবস্থা টাইট। মান সম্মান বাঁচানোর জন্য সে আর ঘর থেকে বের হয় না। রাগে দুঃখে, অস্বাভাবিক মানসিক যন্ত্রণায় দিন কাটায়, হয়ত বা এই লাঞ্ছনা সহ্য না করতে পেরে এক সময়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। ঝড়ে যায় একটি জীবন। আমরা তাকে গাল মন্দ করি, ছি ছি করি, থু থু করি। কিন্তু তার আপন মানুষ গুলির কথা চিন্তা করি না। সন্তান বিয়োগ একমাত্র তার বাবা মা ই বুঝতে পারে। বুঝতে পারে সেই ভাই যে হারিয়েছে একটি বোন।

সমাজের কি আসে যায় এতে। দুই দিন পর একই ঘটনা ঘটে আর একটি মেয়েকে নিয়ে। আবার শুরু হয় হইচই।
কিন্তু আসল ব্যাপারটার মুলে গিয়ে কেউ দেখে না। পূর্বের একটি লেখায় আমাদেরই এক বিজ্ঞ ব্লগার ভাই মন্তব্য করেছিলেন,
"মিথ্যার ভয়ে যদি দরজা বন্ধ করে রাখি, তবে সত্য বলে আমি কোথা দিয়ে ঢুকি"। সত্যি কথা বলতে আমি তাঁর এই জটিল মন্তব্য বুঝি নাই।
এতো দিন চিন্তা করে তাঁর এই কথার দুইটা অর্থ বের করেছি। এক, উনিও আমার মত সমাজের মানুষগুলার উদাসিনতা সম্পর্কে বলেছেন। তাহলে এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ সহমত প্রকাশ করছি। দুই, আমি খুব বেশিই প্রযুক্তির সমালোচনা করছি। তাহলে আমি বলবো ভাই, আমি সমালোচনা করছি ঠিকই কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহারের নয়, অপব্যবহারের।

আসলে আমরা ভালটাকে ভাল বলে গ্রহন এবং খারাপটাকে খারাপ বলে বর্জন করি না। ভালটাকে বোরিং বলে দূরে ফেলে রাখি আর খারাপটাকে ইন্টারেসটিং বলে গ্রহন করে নেই। আবার কোন এক মনিষী বলেছেন মানুষের নিশিদ্ধ জিনিষের প্রতি আকর্ষণ বেশি। কিন্তু আমি বলবো যে আকর্ষণ থাকবে সেটা স্বাভাবিক কিন্তু আমাদের তো বিচার বুদ্ধি আছে? বিবেক আছে? সেটার ব্যবহার কখন করব? অধঃপতনে যাবার পর?

এ থেকে আবার একটি কথা মনে পরে গেলো। আমরা পশ্চিমা বিশ্বকে অনুসরন করি। কারন তারা উন্নত জাতি। তাদের চাল চলন, আচার ব্যবহার, রঙ ঢং সব কিছু। মনে করি আহারে তাদের মত চলতে পারলেই আমরাও পশ্চিমা হয়ে গেলাম। কিন্তু এই সংস্কৃতির পাইওনিয়ার আমেরিকাও আজ ধ্বংসের মুখে। তারা তাদের এই ক্ষয়িষ্ণু সংস্কৃতির কারনেই ধ্বংসের মুখে। সেদিন একটা ছবি দেখলাম তাদেরই বানানো ছবি "গড ব্লেস আমেরিকা"। ওখানে দেখায় একজন সিরিয়াল কিলার কে যে একজন একজন করে মানুষ খুন করে। কাদের খুন করে?? যারা এই সুন্দর সমাজ কে কলুষিত করছে অপসংস্কৃতির প্রচার করে। এর মধ্যে আছে রিয়েলিটি স্টার, রিয়েলিটি পলিটিশিয়ান, ভণ্ড লোকজন, বেয়াদব সন্তান, সেই সন্তানের বাবা মা, যারা ওই মেয়েটি কে বেয়াদবি শেখায় ইত্যাদি ইত্যাদি। তো কি হল, খোদ বাবা এখন চায় না তাঁর এই জারজ সন্তান গুলো বেচে থাকুক। কিন্তু তাঁর দেশ থেকে মারার আগে এই গরিব দেশ গুলির মধ্যে এই বীজটা পোতা হোক। যাতে এই দেশ গুলি আনন্দ ফুর্তি নিয়ই ব্যস্ত থাকে।