ভুলে যাওয়াটা আমাদের জাতিগত সমস্যা

নুর ইসলাম রফিক
Published : 20 April 2016, 07:41 PM
Updated : 20 April 2016, 07:41 PM

জানি সবাই ভুলে গেছেন তাই সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছি একজন মানুষের কথা। যাকে কে বা কারা কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টমেন্টে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। যদিও মেয়েটার লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় তদন্ত কমিটি বলেছে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়নি।

জানি তো এখন ঠিকি মনে পরেছে আপনাদের। মনে তো পরবেই কারন আমরা সব সময়ই ভুলে গিয়ে আবার মনে করি বলেই আমরা বাংলাদেশি বলে মনে পরে মাঝে মধ্যে। না হয় কবেই ভুলে যেতাম যে আমরা বাংলাদেশী। যদিও আমরা বাংলাদেশী মনে পরার অনেক গুলি কারন আছে। যেমন ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ, পহেলা বৈশাখ, ১৬ই ডিসেম্বর ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই যে কদিন আগেই "তনু হত্যার বিচার চাই" ও "আমরা তনুর বোন তনুর ভাই, তনু হত্যার বিচার চাই" শ্লগান দিয়ে গলা ফাটিয়ে চৈত্রের ফাটা মাটের মতো করে আমাদের গলাকে ফাটিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু বৈশাখের বৃষ্টির পরশ পেয়ে যেমন মাটি চৈত্রের খড়ার কথা ভুলে যায় আমরাও তেমনি নববর্ষের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ভুলে গেছি তনুকে, ভুলে গেছি "আমরা তনুর বোন তনুর ভাই, তনু হত্যার বিচার চাই"। আরে ভাই মাথা চাপরে লাভ নাই । কারন এটা তো আপনার একার দোষ নয়, এটা আমাদের জাতিগত সমস্যা।

এখনো আইন শৃংখলা বাহিনী তনু হত্যার আসামি ধরতে পারেনি। আরে পারবেন কি করে? উনারা তো আসামী সনাক্তও করতে পারেননি। আর সনাক্ত করতে পারবেন কি করেই বা? উনারা তো এখনও তনু হত্যার কারনও জানতে পারেননি। আর কারন জানতে পারবেন কি করেই বা, উনারাও তো আমাদেরই জাতি। তাই হয়তো উনারাও ভুলে গেছেন। কারন ভুলে যাওয়া তো আমাদের জাতিগত সমস্যা।

আমরা আর কতো ভুলে গেলে ভুলে যাওয়া জাতির অপবাদ থেকে মুক্তি পাবো। কেউ কি বলতে পারেন?

"তনু হত্যার বিচার চাই" আন্দলনের সময় অনেকেই আমাদেরকে বলেছিলেন ভাই এতো চিল্লায়া লাভ নাই। তনু হত্যার বিচার পাইবেননা। বহুত তো চিল্লাইলেন অতিতে কোন বিচার কি পাইলেন? কোন লাভ কি হইলো চিল্লায়া?

তখন তো ঠিকি আমরা তাদের কথা প্রতিবাদ করে বলেছিলাম- আমরা আপনাদের মতো চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকবোনা। তনু হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবোনা। আমরা আপনাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেব আমরা বীরের জাতি।
কই এখন আমরা কি কথা রাখতে পেরেছি। না পারিনি। পারিনি বলে যে আমাদের লজ্জা বোধ হচ্ছে তা কিন্তু না। কারন আমাদের লজ্জা বোধটা এতো দুর্বলনা যে টুংক বিষয় নিয়েও আমরা লজ্জা পাবো। আমরা লজ্জা পাইনি অতিতেও। তবে মাঝে মাঝে অহংকারে বুকের পাজর টুকরা টুকরা করে ফেলি।

আজ প্রথম আলো'য় একটা সংবাদ দেখলাম 'এটি পরিকল্পিত হত্যা, জরিত তিন-চারজন"। তনুর পরনে থাকা কাপড়ের ডিএনএ টেস্ট করে তিনজনের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। বাহ বাহ ধারুন সংবাদ এটা। তনু হত্যার ১মাস এর মধ্যে আমাদের আইন শৃংখলা বাহিনী তনুর হত্যাকারী তিনজন বলে জেনেছেন।

কই আপনারা? আইন শৃংখলা বাহিনীর এক মাসের কর্মের এই সুফলে গর্বে অহংকারে বুকের পাজর টুকরা টুকরা করবেননা। আসেন আসেন আমি আপনাদের অপক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি।
লংমার্চ করবেন না। শাহবাগে মিষ্টি বিতরণ করবেন না।

মিষ্টি বিতরণ করলে আমাদেরকেও দাওয়াত দেবেন কিন্তু। আমরা মানে যারা তনু হত্যার বিচার চেয়ে কম্পিউটারের কি-বোর্ড চাপতে চাপতে হাতের দশ আগুল মাংস শূন্য করে ফেলেছি। অহে উনাদেরকেও দাওয়াত দেবেন যারা পত্রিকায় তনু হত্যার বিচার চেয়ে কলাম লিখে অনেক টাকা কামিয়েছেন। ভুলেই গিয়েছিলাম উনাদেরকেও দাওয়াত দেবেন যারা টিভিতে টক শো করেও বহুত টাকা কামিয়েছেন। আরো অনেকেরই অবদান আছে। আমার এই মুহূর্তে মনে পরছেনা উনাদেরকে। আপনারা কষ্ট করে মনে করে নিয়ে উনাদেরকেও দাওয়াত দেবেন কিন্তু।
এই সাফল্যতা আইন শৃংখলা বাহিনীর একার নয় কিন্তু আমার আপনার সবার। তাই শাহবাগে মিষ্টি বিতরণ কালে আমাদেরকে দাওয়াত না দিলে, আমরা কিন্তু আপনাদের বিরোদ্ধে আবার কম্পিটারের কি-বোর্ড চাপা শুরু করে দেব। কথাটা মনে থাকে যেন।