সরকারের কাছে ‘শিক্ষা খরচ নিয়ন্ত্রণে আনা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা’ একটি সময়ের দাবি

নুর ইসলাম রফিক
Published : 5 Dec 2016, 11:32 AM
Updated : 5 Dec 2016, 11:32 AM


শিক্ষার হার যে হারে বাড়ছে, তার চেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়ে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ড । হয়তো সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টানে বাচ্চাদের পড়াশুনার খরচ খুব সীমিত । শুধু যে খরচ সীমিত তা কিন্তু নয় । খরচ যেমন সীমিত তেমনি আসন সংখ্যা ও তুলনা মূলক ভাবে খুব সীমিত । যার কারনে ভর্তির সময় আসলে সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলিতে লেগে যায় ভর্তি যুদ্ধ । আর এই ভর্তি যুদ্ধে অল্প কিছু মেধাবী ছাত্রছাত্রী সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম খরছে ভালো মানের পড়াশুনার সুযোগ পায় । কিন্তু অধিকাংশ ভর্তি যুদ্ধা মেধাবী, অল্প মেধাবী ও মেধাহীন ছাত্রছাত্রীরা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টানে অল্প খরচে ভাল মানের শিক্ষার সুযোগ না পেয়ে ভর্তি হতে হয় এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারী (বাণিজ্যিক) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে । আর এখান থেকেই শুরু হয় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকের ভুগান্তি যাত্রা ।

একটি এমপিও ভুক্ত প্রাইমারী স্কুলে চার পাঁচ বছরের শিশুকে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করতে ভর্তি ফি দিতে হয় কমপক্ষে পাঁচ শত (৫০০) টাকা বা তার ও বেশী । আর প্রতি মাসে মাসিক বেতন দিতে হয় কম পক্ষে এক শত ত্রিশ (১৩০) টাকা বা তার ও বেশী ।

একটি এমপিও ভুক্ত প্রাইমারী স্কুলে ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি করতে ভর্তি ফি দিতে হয় কমপক্ষে এক হাজার চৌদ্দ শত (৭৫০) টাকা বা তার ও বেশী । আর প্রতি মাসে মাসিক বেতন দিতে হয় কমপক্ষে এক শত পঞ্চাশ (১৫০) টাকা বা তার ও বেশী ।

একটি বেসরকারী (বাণিজ্যিক) স্কুলে ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি করতে ভর্তি ফি দিতে হয় কমপক্ষে এক হাজার চৌদ্দ শত (১৪০০) টাকা বা তার ও বেশী । আর প্রতি মাসে মাসিক বেতন দিতে হয় কমপক্ষে দুই শত পঞ্চাশ (২৫০) টাকা বা তার ও বেশী ।

একটি এমপিও ভুক্ত হাই স্কুলে একজন ছাত্রকে ৬ষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি করতে ভর্তি ফি দিতে হয় কমপক্ষে দুই হাজার (২০০০) টাকা বা তার ও বেশি । আর প্রতি মাসে মাসিক বেতন দিতে হয় কমপক্ষে দুই শত (২০০) টাকা বা তার ও বেশী ।

একটি বেসরকারী (বাণিজ্যিক) স্কুলে ৬ষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি করতে ভর্তি ফি দিতে হয় কম পক্ষে তিন হাজার পাঁচ শত (৩৫০০) টাকা বা তার ও বেশি । আর প্রতি মাসে মাসিক বেতন দিতে হয় কমপক্ষে তিন শত পঞ্চাশ (৩৫০) টাকা বা তার ও বেশী ।

এটা যে শুধু স্কুলে তা কিন্তু নয় , আলিয়া মাদ্রাসা গুলিতেও এই একই দশা ।
তবে সর্বচ্চ ভর্তি ফি এবং মাসিক বেতন কতো টাকা দিতে হয় তা আমার জানা নেই । হয়তো তা আমার ধারনার বাহিরে তাই আমার জানা হয়নি । আর এই না জানাতে সম্ভবত আমার জন্য উপকার-ই হয়েছে। কারন আমি শারীরিক ভাবে খুব দুর্বল প্রকৃতি লোক । এই সংখ্যাটা জানলে সম্ভবত আমি কবেই হার্ট এটাক করে মারাই যেতাম । তবে আর আমি এই লেখাটি লিখতে পারতাম না । আর আপনারা পড়তেও পারতেন না। বলা যায়-"না জানাটাই আমার জন্য শুভাগ্য-ই"।

চলতি বৎসরের শুরুর দিকে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল দেশের অনেক গুলি শহরের অসংখ্য স্কুলের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ। চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ। সিলেটের ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ এবং স্কলার্স হোম স্কুল এন্ড কলেজ।

আগামি বৎসরের শুরুর দিকে যেন আবার গত বছরের মতো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্কুল কলেজের ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্থায় না নামতে হয়, সে দিকে সরকারকে নজর রাখা উচিত। আরো বেশী নজর রাখা উচিত সে সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর, যারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুঁজি করে শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন। এবং ঐ সব শিক্ষা ব্যবসায় পরিণত হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলিকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা উচিত। এবং সর্বচ্চ ভাবে সরকারের কাছে "শিক্ষা খরচ নিয়ন্ত্রণে আনা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা" সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।