চলচ্চিত্র শিল্পে ধস বনাম সম্ভাবনা

নুর ইসলাম রফিক
Published : 24 August 2017, 07:48 PM
Updated : 24 August 2017, 07:48 PM


জীবনের প্রথমবার সিনেমা দেখতে পুরো পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে ছিলাম ১৯৯০ সালের দিকে মায়ের কোলে চড়ে। সে সিনেমাটা ছিল বাংলা সিনেমার সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল সিনেমা। যে সিনেমাটি এখনো প্রবীণ সিনেমা প্রেমিদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। সেই সিনেমাটির নাম বেদের মেয়ে জোছনা। তারপর আর সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাওয়া হয়নি দীর্ঘ ১৫ বছরের মতো। সেই ১৫ বছর যে কোনো সিনেমা দেখা হয়নি তা মোটেও নয়। সেই সময়টায় অসংখ্য সিনেমা দেখেছি। বেশির ভাগ সিনেমা দেখা হয়েছে বিটিভিতে। এই ডিজিটাল যুগে এখনো আমাদের পরিবার বিটিভিতে বেশির ভাগ সিনেমা দেখে। অল্প স্বল্প কিছু সিনেমা দেখা হয় কম্পিউটারে। এখনো আমাদের শহুরে প্রতিবেশিদের মাঝে আমরাই একমাত্র যারা এখনো স্যাটেলাইট নয়, একমাত্র বিটিভি দেখছি।

সে সময় স্যাটেলাইট সংযোগ ছাড়া একুশে টিভি বিটিভির মতো স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলে আসতো । তখন একুশে টিভিতেও প্রচুর সিনেমা দেখা হয়েছে। বেশ কিছু দিন পর মামলা খেয়ে একুশে টিভি স্বয়ংক্রিয় ভাবে আসা বন্ধ হয়ে গেল। তখনকার সময় সিনেমা দেখার আরেকটা জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল ভিসিআর। ভিসিআরে বাংলা সিনেমা দেখার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। যদিও তখনকার সময় ভিসিআর কেনার সামর্থ্য বাংলাদেশি মানুষের তেমনটা ছিলনা। তবে  তখন ভাড়ায় পাওয়া যেত বলে সাধারণ সিনেমাপ্রেমিরা স্বল্প খরচে ভিসিআরে সিনেমা দেখতে পারতেন – ভিসিআর ও ক্যাসেট ভাড়ায় এনে। আমাদের এক মামার বিদেশ থেকে আনা ভিসিআর ছিল বলে আমাদের ভাড়ায় আনা লাগতো না। উনার বাসায় প্রায় সিনেমা দেখে নিতাম।

তখনকার সময় সিনেমা 'শোনার' আরেকটা দুর্বল মাধ্যম ছিল টেপরেকর্ডার। সেই টেপ রেকর্ডারেও কম বাংলা সিনেমা 'শোনা' হয়নি! এখনকার মতো তখনকার সময় স্যাটেলাইটের এতো এতো জনপ্রিয়তা ছিলনা। ছিলনা এতো বাংলা চ্যানেলের ছড়াছড়ি। হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা চ্যানেল ছিল। এই যেমন চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, একুশে টিভি। আর কোন বাংলা চ্যানেল ছিল কিনা মনে নেই। এতো বাংলা সিনেমা দেখার মাধ্যম থাকা স্বত্বেও সিনেমাপ্রেমিদের সিনেমা দেখার প্রধান আকর্ষণ ছিল সিনেমা হল। এই স্মৃতিচারণগুলো  বিংশ শতাব্দীর আগের। অর্থাৎ নব্বই শতকের সময়কার।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সিনেমাপ্রেমিদের জন্য আসলো নতুন সংযোজন ভিসিডি। যদিও ভিসিডির আগে এসেছিল সিডি। সেটা ছিল অডিও ভার্সন। আর ভিসিডি ছিল ভিডিও ভার্সন। তারপর ভিসিডির পুরাতন ভার্সন  ডিভিডি এলো। চলতি সময়েই চলে আসলো মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন। স্যাটেলাইটে বেড়ে গেল বাংলা টিভি চ্যানেল। তার ধারাবাহিকতায় বেড়ে গেল স্যাটেলাইটের জনপ্রিয়তা।

সিনেমা শিল্পের ধস

১) কপিরাইট ও পাইরেসি
বিংশ শতাব্দীর সিনেমা দেখার এই আধুনিক প্রযুক্তিগুলো ছিল সিনেমাপ্রেমিদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। সিনেমা নির্মাতা, কলাকৌশলী ও সংশ্লিষ্টরা তখন ভেবেছিলেন বাংলা সিনেমার দুয়ার আরো প্রসস্ত ও প্রসারিত হলো। প্রথম দিকে হয়েছিলও তাই। কিন্তু তখন মাথায় হাত পরলো একমাত্র সিনেমা হল মালিকদের। কারণ সিনেমাপ্রেমিরা ঘরে বসে এতো এতো আধুনিক প্রযুক্তির সিনেমা দেখার মাধ্যম ছেড়ে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে অনিচ্ছুক হয়ে পরলেন। কিন্তু তবুও সিনেমা নির্মাতা, কলাকৌশলী ও সংশ্লিষ্টরা মোটেও বিচলিত হলেন না। কারণ সিনেমা হলের ব্যবসা কমে এলেও কমেনি সিনেমার ব্যবসা। কারণ তখন ভিসিডি, ডিভিডি ক্যাসেটের ব্যবসা ছিল আকাশ ছোঁয়া। ছিল অহরহ স্যাটেলাইটে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল। সেখান থেকেই ভালই কামিয়ে নিতে পারছিলেন সিনেমা নির্মাতারা।

বাংলা সিনেমা দেখার এতো এতো আধুনিক প্রযুক্তি সিনেমার জন্য আশীর্বাদ নয় বরং অভিশাপ – সিনেমা হল মালিকদের মতো বুঝতে খুব একটা সময় লাগেনি সিনেমা নির্মাতাদের। বাংলা সিনেমার এতো প্রশস্ত দুয়ারে  হানা দিল নতুন ব্যাধি 'কপিরাইট ও পাইরেসি'। সদ্য নতুন কোন ছবি সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়ার পরের দিন কিংবা কয়েক দিনের মধ্যে চলে আসতো ভিসিডি ও ডিভিডি ক্যাসেট বাজারে। যেটা নতুন সিনেমাটির অবৈধ কপি। সিনেমা হল থেকে ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা হত সেই অবৈধ ক্যাসেট। অবৈধ ঐ ক্যাসেটগুলো সিনেমাপ্রেমিদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠলো 'হল প্রিন্ট' নামে।

হল প্রিন্ট সিনেমার ক্যাসেট ছিল অত্যন্ত নিম্ন মানের। তবুও সস্তায় পাওয়া হল প্রিন্ট সিনেমা, সিনেমাপ্রেমিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। আর ব্যবসায় খাবি খেতে লাগলেন সিনেমার হল মালিকদের মতো ক্যাসেট কোম্পানি ও সিনেমা নির্মাতারা। আর এর সম্পূর্ণ দায় দেওয়া হলো সিনেমা হল মালিকদের। বলা হতো হল কর্মচারী কর্মকর্তাদের মদদে একটা শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা হলে এসে ক্যামেরা দিয়ে সিনেমা কপি করে বাজারে ক্যাসেট আকারে ছেড়ে দেয়। অভিযোগ কিন্তু মিথ্যে নয়, সত্যই ছিল। তারপর সিদ্ধান্ত হলো সিনেমা হলে কেউ ক্যামেরা ও ক্যামেরাযুক্ত ডিভাইস কিংবা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সিদ্ধান্তটা প্রয়োগ করা হল ঠিকই কিন্তু কোন উপকার হলোনা সিনেমা হল মালিক ও ক্যাসেট কোম্পানি ও নির্মাতাদের।

ক্যাসেটের বাজার যখন কম দামি নিম্ন মানের অবৈধ ক্যাসেটে সয়লাব তখন সিনেমাপ্রেমিরা উচ্চমানের দামি বৈধ ক্যাসেট কিনতে অনাগ্রহী হয়ে উঠলেন। এর প্রধান কারণ কমদামি নিম্নমানের অবৈধ ক্যাসেট বাজারে আসে সিনেমা মুক্তির সাথে সাথে। আর উচ্চমানের দামি বৈধ ক্যাসেট বাজারে আসে সিনেমা মুক্তি পাওয়ার তিন থেকে ছয় মাস পর। যেহেতু সিনেমাপ্রেমিরা আগেই কমদামি নিম্নমানের অবৈধ ক্যাসেট দ্বারা নতুন সিনেমা দেখে নেন, সেহেতু তিন থেকে ছয় মাস পর উচ্চমানের দামি বৈধ ক্যাসেট কিনতে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয় সিনেমাপ্রেমিদের মাঝে।

সিনেমা হল থেকে ক্যামেরা দিয়ে ধারণ করা সিনেমাগুলো যে শুধু ক্যাসেট আকারে বাজারে ছড়িয়ে পরে তা নয়। এর কপিগুলো ছড়িয়ে পরে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, কম্পিউটার ও মোবাইলে। এতে সিনেমাপ্রেমিরা একেবারেই নাম মাত্র খরচে সিনেমা দেখে নিতে পারতেন। সিনেমা মুক্তির তিন থেকে ছয় মাস পর যে বৈধ ক্যাসেটগুলো বাজারে আসে ঠিক একই ভাবে সেই সিনেমার কপিগুলোও ছড়িয়ে পরতো বিভিন্ন ওয়েবসাইট, কম্পিউটার ও মোবাইলে। এটাই ছিল সিনেমা শিল্পের সবচেয়ে বড় ধসযাত্রা। যা এখনো এই ২০১৭ সালেও  কাটিয়ে উঠতে পারেনি সিনেমা হল মালিক ও নির্মাতারা। সরকারও সংশ্লিষ্ট কপিরাইট ও পাইরেসি আইন পাশ করেও এই সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারেনি আজ পর্যন্ত।

২) অশ্লীল ও অশালীন সিনেমা নির্মাণ
সাদাকালো বাংলা সিনেমার যুগকে বলা হয় রুপালি পর্দার সোনালি দিন। এবং রঙিন বাংলা সিনেমার নব্বই দশক এবং তার আগের দশকগুলোকে বলা হয় বাংলা সিনেমা শিল্পের স্বর্ণযুগ। তারপর বিংশ শতাব্দী থেকে শুরু হয় বাংলা সিনেমার অভিশপ্ত অধ্যায়। সেই অধ্যায় শুধুমাত্র একটা শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কপিরাইট ও পাইরেসি দ্বারা শুরু হয়নি। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল অশ্লীল ও অশালীন সিনেমা নির্মাণ।

অশ্লীল ও অশালীন সিনেমা নির্মাণের প্রাদুর্ভাব শুরু হয় বিংশ্ব শতাব্দীর শুরুর দিকে। আর এটা মহামারি আকার ধারণ করে অশ্লীল ও অশালীন সিনেমা নির্মাণের শুরুর দিকেই। তখনি মুখ থুবড়ে পরে সিনেমা শিল্প। যা সিনেমা শিল্প ধংসে কপিরাইট ও পাইরেসি চেয়ে কোনো অংশে কম অবদান রাখেনি!


বিদ্যুতের খুঁটিতে অশ্লীল ও অশালীন সিনেমার পোস্টার

আধুনিক প্রযুক্তিতে সিনেমা দেখার সুযোগে সিনেমাপ্রেমিদের যতটুকু হল বিমুখ হয়েছিলেন, তারচেয়েও বেশি বেশি বিমুখ হয়েছিলেন বাংলা সিনেমায় অশ্লীল ও অশালীনতা আসার কারণে।

নব্বই দশক ও তার আগে সিনেমা হলে সিনেমাপ্রেমিরা পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতেন। বিংশ শতাব্দীর আগে বাংলা সিনেমা ছিল বাস্তবমুখি সামাজিক পারিবারিক ও মুক্তিযুদ্ধের গল্পের উপর নির্মিত। তারপর বিংশ শতাব্দীতে আসা বাংলা সিনেমার গল্পে ঘটে ব্যাপক পরিবর্তন। বাস্তবমুখি, সামাজিক, পারিবারিক ও মুক্তিযুদ্ধের গল্প পরিবর্তন হয়ে আসে অতিরঞ্জিত কাহিনী। যার নাম দেওয়া হয় বাণিজ্যিক সিনেমা। আর সে সব সিনেমায় হয় অশ্লীল আচরণ, গালিগালাজ, অশালীন পোশাকের প্রদর্শন। যা পরিবারের সকল সদস্য নিয়ে সিনেমা হল কিংবা বাসায় দেখতে কুণ্ঠা হয়। ক্রমে ক্রমে সিনেমাপ্রেমিরা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেন। আর তখনি দর্শকের অভাবে স্থায়ী ভাবে তালা ঝুলতে শুরু হলো সিনেমা হলে। সিনেমা হলগুলোর সেই তালা  খোলার মতো পরিস্থিতিও আর ফিরে আসেনি।

৩) সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাওয়া
৯০ দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ১২'শয়ের কমবেশি। ২০১৫ সালের দিকে এসে যার সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৩২২টি। মাঝখানে দেড় দশক বা ১৫ বছরে বন্ধ হয়ে যায় ৯ শয়ের অধিক সিনেমা হল। বাংলাদেশি সিনেমার সবচেয়ে বড় বাজার রাজধানি ঢাকায় সে সময় সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৩৩টি। ২০১৫ সালে যার সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মাত্র ১৮টি তে। মাঝখানের ঐ সময়টায় বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার ১৫টি সিনেমা হল।


বহু বছর ধরে এভাবে বন্ধ হয়ে আছে সিলেটের প্রাচীন সিনেমা হল দিলসাদ

ধর্মভীরু মানুষের বিভাগীয় শহর সিলেটে ৯০ দশকের শেষের দিকে সিনেমার হলের সংখ্যা ছিল ৯টি। বর্তমানে সিলেটে সিনেমা হলের সংখ্যা মাত্র ১টি। কালের বিবর্তনে বন্ধ হয়ে গেছে বাকী আটটি সিনেমা হল।


সিলেটের একমাত্র টিকে থাকা নন্দিতা সিনেমা হল

বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে একই রকম টিকে আছে মাত্র ১টি সিনেমা হল। ঠিক একই ভাবে সারা বাংলাদেশের সব বিভাগীয় শহর জেলা শহর এবং উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হলের সংখ্যা কমে এসে বাংলাদেশ মোট সিনেমা হলের সংখ্যা ২০১৫ সালে দাঁড়ায় মাত্র ৩২২টি তে। নিশ্চয়ই চলতি দুই বছরে এ সংখ্যা আরো কমে গেছে।

কেন সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেল নিশ্চয়ই পাঠক বুঝে ফেলেছেন। যদিও এর বাইরেও আরো অনেক কারন আছে ৯ শয়ের অধিক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সিলেট ও ময়মনসিংহের সিনেমা হলে বোমা হামলা। যা হলমুখি সিনেমাপ্রেমিদের মধ্যে ভীতি জাগায়। তাতে কমে যায় সিনেমা হলের দর্শক। এবং বন্ধ হয়ে যায় কয়েকটি সিনেমা হল।

যখন অশ্লীল ও অশালীন সিনেমা নির্মাণ শুরু হয় তখন আবার শুরু হয় নকল ও কাটছাঁট সিনেমা নির্মাণ। বাংলা সিনেমায় গল্প, গান-বাজনা হিন্দি সিনেমা থেকে  নকল ও কাটছাঁট করে সে সময় বাংলা সিনেমা নির্মাণ করা হতো। এই নকল কাটছাঁট সিনেমা দেখতে অনাগ্রহী হয়ে অনেক সিনেমাপ্রেমিরা তখন বাংলা সিনেমা ও সিনেমা হল ত্যাগ করতে বাধ্য হোন। তাতে প্রভাব পরে সিনামা হল ও সিনেমা শিল্প ধংসে।

যখন সিনেমা হল ব্যবসার দুরবস্থা শুরু হয়ে গেছে তবুও তখন কিছু অতিরিক্ত সিনেমা প্রেমিরা হল মুখি ছিলেন। কিন্তু তখন হলের অবস্থা খুব খারাপ হতে থাকে। ভাঙাচোরা চেয়ার, জোড়াতালি পট্টি মারা স্ক্রিন, দেয়ালের রঙ নষ্ট, দুর্বল সিকিউরিটি সিস্টেম, আলোকসজ্জার অভাব, ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে অতিরিক্ত সিনেমাপ্রেমিদের একটা অংশ সিনেমা হলে আসা ছেড়ে দেন। তাতেও প্রভাব পরে সিনামা হল ও সিনেমা শিল্প ধংসে।

বাংলা সিনেমা যখন কপিরাইট ও পাইরেসি, অশ্লীল ও অশালীন সিনেমা নির্মাণ, অতিরিঞ্জিত কাহিনী আর অভিনয়,  নকল ও কাটছাঁট – এমনতর সমস্যার মধ্যে তখনি সিনেমা থেকে সরে যান অনেক নামিদামি বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ চেনাজানা দর্শকনন্দিত বাংলা সিনেমার সোনালি দিন ও স্বর্ণযুগের অভিনেতা, অভিনেত্রী, নির্মাতা ও কলাকৌশলিরা। সেটাও কম প্রভাব ফেলেনি সিনামা হল ও সিনেমা শিল্প ধংসে।

সিনেমা শিল্পকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা

বাংলা সিনেমা যখন প্রায় ধংসের শেষ প্রান্তে তখন কপিরাইট ও পাইরেসি আইন করা হয় সরকার সিনেমা নির্মাতা অভিনেতা অভিনেত্রী ও হল মালিকদের যৌথ উদ্যোগে। কিন্তু তা কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি সিনেমা শিল্পকে বাঁচাতে। আইন করেও বন্ধ করা যায়নি কপিরাইট ও পাইরেসি।

ঠিক সেই সময়টাতে অশ্লীল ও অশালীন, অশ্লীল আচরণ, গালিগালাজ, অশালীন পোশাক প্রদর্শন, নকল ও কাটছাঁট সিনেমা নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয় বাংলা সিনেমার সংশ্লিষ্টদের আন্দোলনের মাধ্যমে। যদিও সেটা অল্প-স্বল্প সময়ে হুটহাট করে বন্ধ হয়নি। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সফলতা পেয়েছিল সিনেমার সংশ্লিষ্টদের আন্দোলন। যদিও তাতেও সিনেমাপ্রেমিরা নতুন করে হলমুখি হয়ে উঠলেন না। খুললো না কোন সিনেমা হলের তালা।

একটা সময় সিনেমা শিল্প রক্ষায় আবার এগিয়ে আসলেন অনেক নামিদামি বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ চেনাজানা দর্শক নন্দিত বাংলা সিনেমার সোনালি দিন ও স্বর্ণযুগের অভিনেতা-অভিনেত্রী, নির্মাতা ও কলাকৌশলীরা। বাংলা সিনেমাকে শিল্পখাত ঘোষণা দিল সরকার। সারা দেশের ক্যাসেটের দোকানে শুরু হলো পুলিশি টহল। জব্দ করা হলো কোটি কপি অবৈধ কপিরাইট ও পাইরেসি ক্যাসেট। দুর্বল হয়ে গেল অবৈধ কপিরাইট ও পাইরেসি সমস্যা। পালটে গেল বাংলা সিনেমার চলমান গতানুগতিক ধারা। সিনেমার গল্পে গানে ও নির্মাণে আসলো পরিবর্তন। আসলেন নতুন নতুন অভিনেতা, অভিনেত্রী, কলাকৌশলী ও নির্মাতারা। নির্মিত হলো বেশ কিছু নতুন সিনেমা – ভাল গল্প, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও নির্মাতা নিয়ে। রাজধানী ঢাকার অভিজাত শপিংমলে নির্মিত হলো উচ্চমানের দুটি সিনেপ্লেক্স। বাংলা সিনেমায় আবার নতুন করে সুবাতাসের গুঞ্জন বইতে লাগলো। সিনেমা হলে আবার দর্শক কিছুটা বাড়তে লাগলো।

সেই সুবাতাসের গুঞ্জনও বেশি দিন স্থায়ী হলো না। কারণ ঠিক সেই সময়টাতে শুরু হলো সিনেমা শিল্প নিয়ে রাজনীতি। রেষারেষি শুরু হলো বিএফডিসি, সিনেমা নির্মাতা, সিনেমা প্রদর্শক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকৌশলীদের সংগঠন সংগঠনে। দোষারোপের ঝুড়ি ছুড়ে দিতে লাগলেন একজন আরেক জনের প্রতি। এক সংগঠন আরেক সংগঠনের প্রতি। কমে এলো নতুন সিনেমা নির্মাণ। বেড়ে গেল ছলচাতুরি।

দেশ ও জাতির চাহিদা উন্নত হলো। কিন্তু উন্নত হয়নি বাংলা সিনেমার প্রিন্ট, ক্যমেরা, লাইট, সাউন্ড সিস্টেম, সিনেমা হল।  নতুন নায়ক-নায়িকা ও নির্মাতাদের সিনেমার প্রিন্ট, সাউন্ড ভাল হলেও ভাল হতনা সিনেমার নির্মাণ, গল্প, অভিনয় ইত্যাদি। আর পুরাতন নায়ক-নায়িকা ও নির্মাতাদের সিনেমার প্রিন্ট ও সাউন্ড ৭০ দশকের মতো।  সিনেমা হলও সেই অনুন্নতই। যা মোটেও বর্তমানের উন্নত রুচির দর্শকের চাহিদা পূর্ণ করতে পারলোনা। আবার মুখ থুবড়ে পড়লো সিনেমা হল।

তারপর সিনেমা হল ও সিনেমা শিল্পকে বাঁচাতে শুরু হলো নতুন উদ্যোগ। কলকাতা-বাংলাদেশ সিনেমা আমদানি-রপ্তানি। বড় করা হলো বাংলা সিনেমার বাজার। বাংলাদেশের সিনেমা হলে কলকাতার নতুন ছবি মুক্ত পাওয়াতে বেড়ে গেল আবার সিনেমা হলের দর্শক। আশায় বুক বাঁধলেন হল মালিকরা। কলকাতার ছবি বাংলাদেশের সিনেমা হলে আসায় দর্শক বাড়ার কারণ বাংলাদেশি সিনেমার দুরবস্থা কালে  সিনেমাপ্রেমিরা এ দেশের সিনেমা থেকে মুখ তুলে নিয়ে কলকাতার সিনেমায় পিপাসা মেঠাতে শিখে নিয়েছিলেন। তাই বাংলা সিনেমার দুরবস্থার দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশি সিনেমাপ্রেমিরা কলকাতার সিনেমার প্রেমি হয়ে ওঠেন। আর কলকার সিনেমার গল্প, মান, সাউন্ড, অভিনয় – সব ছিল যুগোপযুগী। যদিও কলকাতার অধিকাংশ ছবি নির্মিত হয় ভারতের সিনে মিডিয়ার মুম্বাই, তেলেগু, তামিল, গুজরাট সিনেমা থেকে কাটছাঁট বা হুবুহু নকল করে। তবুও বাংলাদেশি দর্শকরা আসক্ত হয়ে পড়লেন কলকাতার সিনেমায়। তাই বেড়ে যায় বাংলাদেশি সিনেমা হলে কলকাতার সিনেমার দর্শক।

কিন্তু কলকাতার সিনেমা হলে বাংলা সিনেমার বেলা ঘটলো উল্টো ঘটনা। কলকাতার সিনেমাপ্রেমিরা বাংলা সিনেমা দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন না। কলকাতাতেও মুখ থুবড়ে পরলো বাংলা সিনেমা। বাংলাদেশি সিনেমা নির্মাতা, অভিনেতা, অভিনেত্রীর ও কলাকৌশলীরা অভিযোগ তুললেন বাংলাদেশে কলকাতার নতুন সিনেমা এলেও কলকাতায় যেত বাংলা পুরাতন সিনেমা। আন্দোলনে কলকাতার সাথে সিনেমা আমদানি-রপ্তানির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন বাংলাদেশি সিনেমা নির্মাতা অভিনেতা অভিনেত্রীর ও কলাকৌশলীরা। পালটা আন্দোলনে নামলেন বাংলাদেশি সিনেমা হল মালিকরা। আন্দোলনে সফলতা পেলেন বাংলাদেশি সিনেমা নির্মাতা, অভিনেতা, অভিনেত্রীর ও কলাকশৌলীরা। কিন্তু না তাতেও বাংলা সিনেমার কোন লাভ হলো না। বরং ক্ষতি হলো সিনেমা হল মালিকদের। এর থেকে আবার রেষারেষি শুরু হলো সিনেমা হল মালিক সংগঠনের সাথে সিনেমা নির্মাতা সংগঠনের।

এরপর শুরু হলো বাংলাদেশ কলকাতার যৌথ সিনেমা নির্মাণ। কিছুটা ফলপ্রসু হলো এই উদ্যোগ বাংলা সিনেমায়। কিন্তু না সেটাও স্থায়ী হলনা বেশি দিন। কলকাতা বাংলাদেশ যৌথ সিনেমা নির্মাণের প্রধান নিয়ম ছিল সব কিছুতে সমান সমান অর্থাৎ ফিফটি ফিফটি হতে হবে। সেটা গল্পের বেলা, স্থানের বেলা, নির্মাতার বেলা, অভিনেতা, অভিনেত্রীর বেলা, কলাকৌশলীর বেলাসহ সব ক্ষেত্রে। কিন্তু বাংলাদেশের অভিনেতা, অভিনেত্রী ও কলাকৌশলীরা অভিযোগ করলেন কলকাতা সব কিছুতে সমান সমান নিয়ম মানছে না। কিন্তু বাংলাদেশি নির্মাতারা যৌথ সিনেমার ব্যবসায় ভাল ভালবান হচ্ছেন বলে অস্বীকার করলেন এমন অভিযোগ। কলকাতার নির্মাতারাও তাল মেলালেন বাংলাদেশি নির্মাতাদের সাথে। বাংলাদেশের অভিনেতা, অভিনেত্রীর ও কলাকৌশলীদের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় কিছু দিন আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় বাংলাদেশ কলকাতার যৌথ সিনেমা নির্মাণ। এবারও ব্যর্থ হলেন বাংলা সিনেমা রক্ষা ও ঠিকিয়ে অর্থাৎ বাঁচিয়ে তোলার উদ্যোগতারা।

বাংলা সিনেমার এমন করুণ অবস্থায় বিএফডিসি নির্বাচনকে ঘিরে ঘটলো অপ্রীতিকর ঘটনা। এই নির্বাচন বিতর্কিত করলো বিএফডিসিকে। সমালোচিত হলো বিএফডিসি নির্বাচন ইলেকট্রিক/ প্রিন্ট মিডিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন পর্যায়ে। আবার বিএফডিসির নবনির্বাচিত কমিটি আর সিনেমা হল মালিক সংগঠনের মধ্যে ঘটলো অপ্রীতিকর ঘটনা। অভিযোগ উঠলো খ্যতিমান নায়কের বিরুদ্ধে সিনিয়র ও সম্মানিত নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পিদের অসম্মান ও মানহানিকর কথা বলার। শুরু হলো সিনেমা শিল্পে একে অন্যকে নিষোদ্ধ করার সংস্কৃতি। বাংলা সিনেমা এখন ধংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে!

সিনেমা শিল্পকে ধংসাত্মক থেকে বাঁচানোর উপায়
বাংলা সিনেমাকে হয় তো আর সেই সোনালি দিন কিংবা স্বর্ণযুগের পর্যায়ে নেওয়া যাবেনা। আবার নেওয়া যেতেও পারে সরকার, নির্মাতা, তথ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, অভিনয় শিল্পী, সিনেমা হল মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের যৌথ উদ্যোগ ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায়। কিন্তু তার আগে সিনেমা শিল্পকে ঠিকিয়ে রাখতে হবে। সিনেমা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বেঁচে থাকতে হবে সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার। এগিয়ে আসতে হবে সরকার, তথ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, সকল নতুন পুরাতন সকল প্রয়োজক-প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান, নির্মাতা, অভিনয় শিল্পি, কলাকৌশলীদের। এর চেয়েও গুরুত্ব সহকারে এগিয়ে আসতে হবে দেশের সকল দেশপ্রেমিক, সিনেমাপ্রেমি নাগরিকদের, সকল মিডিয়া, রাজনৈতিক দল, সংগঠনসহ গোটা বাংলাদেশিদের। বাংলা সিনেমাকে শতভাগ দালাল ও দুর্নীতি মুক্ত করে তুলতে হবে।

১) সিনেমা নির্মাণে পুঁজির সমাধান
বর্তমানে সিনেমা শিল্পকে বাঁচিয়ে বা ঠিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে পুঁজি। আবার এটা ভুল ধারণা সেটাও প্রমাণিত ভুল ভাবে। কারণ নতুন অনেক প্রয়োজক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান আছে বিশাল পুঁজিওয়ালা। কয়েকটা সিনেমার পুঁজি তাদের এক তুড়ির ব্যাপার। কিন্তু এই বিশাল পুঁজিওয়ালা প্রয়োজক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান নতুন এবং সিনেমা ব্যবসায় কম অভিজ্ঞ ও কম সাহসি। এর মধ্যে সিনেমার ব্যবসা একেবারে তলানিতে। তাই বিশাল ঝুঁকিপূর্ণ বর্তমানে এই ব্যবসা।  তারা পুঁজি খাটাবেন কিন্তু পুঁজি তোলার বা ব্যবস্য সফলতার জন্য নিজেরা উদ্যোগী না হয়ে, পরিচালকদের উপর ছেড়ে দিতে চান সকল দায়িত্ব।  সিনেমার এই ক্লান্তি লগ্নে পুঁজির দায় নেওয়ার মতো সাহসি পরিচালক কেউ নেই বর্তমানে। তাই নতুন পুঁজিওয়ালা প্রয়োজক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছেন না নতুন সিনেমা নির্মাণে। দুই-একজন নতুন পুঁজিওয়ালা প্রয়োজক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসায় আছেন বলে এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি এই সিনেমা শিল্পটি।

বর্তমানেও অনেক সিনেমা ব্যবসায় দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ ও সাহসি প্রয়োজক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান আছেন সিনেমা ব্যবসার বাহিরে। এর কারণ প্রয়োজক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পুঁজি হারিয়ে পথে বসে গেছে। তাই পারছেন না নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসকে কাজে লাগাতে। কিন্তু পুঁজি পেলে আবার এগিয়ে আসবেন নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসকে কাজে লাগাতে।

এই পুঁজির সমাধান হতে পারে সহজ শর্ত আর স্বল্প সুদে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে। সমাধান হতে পারে অনভিজ্ঞ ও কম সাহসি পুঁজিওয়ালা প্রয়োজক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজি হারা দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ ও সাহসি প্রয়োজক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে। আবার এই পুঁজির সমাধান হতে পারে সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান সিনেমা ব্যবসায় এগিয়ে এলে। আবার সমাধান হতে পারে সরকারের অনুদানের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ ও সাহসি প্রয়োজক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠানদের দিয়ে। আর এই সরকারি অনুদান হতে হবে মাসে কমপক্ষে ২টি সিনেমা নির্মাণের জন্য। সরকারি অনুদান যেন যেনতেন সুবিদাভোগিদের হাতে না পরে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্যান্য নিয়ম কানুন কিভাবে করতে হবে সেটা আমি নাইবা বললাম। কারণ এটা সরকার ও নির্মাতারা আমার চেয়ে ভাল বলতে ও উপলব্ধি করতে পারবেন।

আর যদি উপরে উল্লেখিত পুঁজির সমাধান সবগুলো এক সাথে হয়ে যায়, তবে তো ভেবে নিতে হবে সিনেমা ব্যবসায় পুঁজির বেলা স্বর্ণযুগ এসে গেছে। কিন্তু পুঁজির পরিমাণ যেন আহামরি না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পুঁজির পরিমাণ আহামরি হয়ে গেলে সিনেমা বাজারে পুঁজির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে। সিনেমা ব্যবসা এখন বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ। পুঁজির প্রতিযোগিতা করার এখন সিনেমা ব্যবসায় নেই। তাই পুঁজির প্রতিযোগিতা করে যেন নিজেরা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত না হোন।

২) বিএফডিসির সমস্যার সমাধান
বর্তমানে সিনেমা ধংসে বিরাট দ্বায় দেওয়া হয় সরকারের "বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)"কে। সে দায় এড়ানোর সুযোগ বিএফডিসির নেই। থাকারও কথা না। আমরা সমাধান নিয়ে যখন আলোচনা করছি, তখন বিএফডিসির দোষ-ক্রুটি নিয়ে আলোচনা না করাই শ্রেয়।

প্রথমত, এফডিসিকে একটু একটু করে ঢেলে সাজাতে হবে। একসাথে হুটহাট করে সাজাতে গেলে বিরাট অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন। যে দিক গুলি সময়ের দাবীতে বেশী প্রয়োজনীয় সে দিকে আগে নজর দিতে হবে। আমার দৃষ্টিতে অতি প্রয়োজনীয় কয়েকটা দিক তুলে ধরছি। ভালো ক্যামেরা আনতে হবে। মানসম্মত আধুনিক ল্যাব গড়ে তুলতে হবে। সাউন্ড কমপ্লেক্সের আধুনিকায়ন করতে হবে। ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড ব্যবস্থা যোগ করতে হবে। শুটিং ফ্লোরগুলোর অবস্থারও উন্নতি করতে হবে। উন্নত প্রিন্টার থাকতে হবে। একই সঙ্গে যুক্ত করতে হবে ডিজিটাল ছবি বানানোর পূর্ণাঙ্গ সুযোগ। তবে সব যেন হয় দীর্ঘ মেয়াদী। এখানে আমি অল্পকিছু সময়ের দায়ী উল্লেখ করেছি মাত্র। আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন আছে যা আমার চেয়ে ভাল বুঝতে বা বলতে পারবেন সিনেমার সাথে স্পংসৃষ্ট ও নির্মাতারা ও অন্যান্যরা।

৩)পরিচালক / পরিচালনা সমস্যার সমাধান
পরিচালক বা পরিচালনার বিরাট ব্যর্থতা আছে সিনেমা শিল্প ধংসে। আমরা এখন সে দিকে নাইবা গেলাম।
সুদীর্ঘ দিনের অবিজ্ঞ ও দর্শকদের চাহিতা বুঝতে পারা পরিচালকরা সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে অতিতের ব্যর্থতা ভুলে। প্রয়োজক / প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠানদের এমন পরিচালক নির্বাচন করতে হবে। সুদীর্ঘ দিনের অবিজ্ঞ ও দর্শকদের চাহিতা বুঝতে পারা পরিচালকরা হয়তো সিনেমা নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বুঝতে নাও পারতে পারেন। সে জন্য লজ্জা বোধ ভুলে জুনিয়রকে ছাড় দেওয়ার মন মানষিকতা নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বুঝতে পারা একজন পরিচালককে নিজের সঙ্গি করে নিতে হবে ভাল কিছু করার আশায়। অন্য দেশ থেকেও আনিয়ে নিতে পারেন। স্বল্প খরচে কি ভাবে ভাল সিনেমা নির্মাণ করা যায় সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ এখন সিনেমা ব্যবসা বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ। আর কি কি করতে হবে সেটা আমার চেয়ে অনেক ভাল বুঝবেন সুদীর্ঘ দিনের অবিজ্ঞ ও দর্শকদের চাহিতা বুঝতে পারা পরিচালকরা।

৪) সিনেমার গল্পের সমস্যার সমাধান
একটা সিনেমায় সবচেয়ে বেশী অবধান রাখে যেটা, সেটা হচ্ছে সিনেমার গল্প। সিনেমার গল্প লিখতে বা নির্বাচন করতে হবে বর্তমান সিনেমা প্রেমিদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে। এখনো সিনেমা শিল্পের ধংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে কয়েকটা সিনেমা সুপার হিট করেছে। এবং সুপার হিট করছে। এই হিট ও সুপার হিট সিনেমা গুলির উপর দৃষ্টি দিয়ে বর্তমান সিনেমা প্রেমিদের চাহিদা অনেকটা স্পষ্ট। বাংলাদেশী সিনেমা প্রেমিরা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ফ্লিম ইন্ড্রাস্টির সিনেমা দেখে নিজেদের রুচির পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। আর এই রুচিটা বুঝতে হলে অনুসরণ করতে হবে বাংলাদেশী সিনেমা প্রেমিরা যে যে দেশের যে যে ইন্ড্রাস্টির সিনেমা বেশী দেখছেন সে গুলিকে। এটা যেন বাংলা সিনেমার গল্পে অনুসরণ হয় অনুকরণ নয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান সময় ও দর্শকের চাহিদায় আর কি কি সিনেমার গল্পে প্রয়োজন সেটা আমার চেয়ে সিনেমার গল্পকার অনেক বেশী বুঝেন। তাই উনারাই এটা বেশী ভাল ভাবে বলতে পারবেন।

৫) অভিনয় শিল্পী সমস্যার সমাধান
এ দেশে এমন কোন নাগরিক নেই যে শৈশবে অভিনেতা অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেনি। শুধু তাই নয় একটা সময় মা বাবারা নিজেদের বাচ্চাদের নাম পর্যন্ত রাখতেন নিজেদের প্রিয় অভিনয় শিল্পির নামে। এখন পর্যন্ত অনেক অভিনয় শিল্পিরা প্রকাশ্যে রাস্তায় চলাচল করতে পারেন না নিজেদের নিজের জনপ্রিয়তার ভয়ে। সাধারণ মানুষ এবং সিনেমা প্রেমিদের কাছে একজন অভিনয় শিল্পির সম্মান একেকজন এমপি মন্ত্রীদের থেকেও অনেক বেশী। অভিনয় শিল্পি হওয়া কতোটা সম্মানের সেটা অমার চেয়ে অভিনয় শিল্পিরা বেশী অনুধাবন করতে পেরেছেন বা পারছেন।

অভিনয় করে এই সম্মান যে সিনেমা শিল্প থেকে অর্জন করেছেন সেই সিনেমা শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে সকল সম্মানিত সিনিয়র জুনিয়র অভিনয় শিল্পিদের। নিজের অভিনয় দাপট ও ক্ষমতায় আয়ের জন্য নয়, প্রিয় প্লাটফর্মকে বাঁচিয়ে তুলার জন্য আসতে হবে প্রাণবন্ত হয়ে। তারকা বহুল সিনেমা গুলিতে সিনেমা প্রেমিদের বেস চাহিতা অতিতে ছিল এখনো আছে। তারকা বহুল সিনেমা আবার সিনেমা শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে সিনেমা প্রেমি, সিনেমা নির্মাতা, সহ অনেকের ধারণা। আমি নিজেও এই ধারনাতে বেস আশাবাদি হয়তো আপনারাও তাই। সিনেমা নির্মাতারা এখনো ইচ্ছে প্রকাশ করেন তারকা বহুল সিনেমা নির্মাণের। কিন্তু স্বল্প পুজির ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্যবসায় তারকারের চাহিতা পূর্বক সম্মানি দিতে পারবেন না বলে ইচ্ছেটাকে বাস্তবে রুপ দিতে পারেন না। কিন্তু আপনারা যদি সম্মানি আদায়ে ছাড় দিতে পারেন তবে তারকা বহুল ছবি নির্মাণ আবার সম্ভব। আমার বিশ্বাস এমন মন মানষিকতা আছে আপনাদের নিজেদের প্রিয় সিনেমা শিল্পটাকে বাঁচানোর জন্য। আমার এ বিশ্বাসও আছে সিনেমা শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলতে সবচেয়ে বেশী অবদান রাখতে পারবেন আপনারা।

সিনেমা প্রেমিরা যেটা দেখে বা জেনে বেশী সিনেমার প্রতি ঝুকেন বা আগ্রহী হোন সেটা হচ্ছে অভিনয় শিল্পি। একজন দর্শক নন্দিত জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পি সিনেমার ১শ ভাগ পুজি তুলে নিতে পারেন তার নৈপুণ্য অভিনয় দিয়ে। যা বাংলা সিনেমায় প্রমাণিত করে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার লেখাতে একক ভাবে একজনের প্রসংসা করার জন্য। নাম উল্লেখ করার উদ্যেশ্য বিষয়টা ক্লিয়ার করা জন্য। যাই হোক এই জনপ্রিয় অভিনেতার সম্মানি পরিমাণ এতো বেশী দাড়ায় যে এই সম্মানি দিয়ে একটা নতুন সিনেমা নির্মাণ করা যায়। এতো সম্মানি আদায়টাও কিন্তু বাংলা সিনেমা শিল্প ধংসের একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

এখানে এই সম্মানি প্রসঙ্গ তুলার কারণ হচ্ছে। এ দেশে সিনেমা নির্মাণ হয় স্বল্প পুজিতে। তাও বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অভিনয় শিল্পিরা এদিকে খেয়াল করে যেন নিজেদের সম্মানি পরিমাণ নির্ধারণ করেন।

সিনেমার প্রচার, প্রসার ও অগ্রিম আয়
প্রচারেই প্রসার। যতো প্রচার ততো প্রসার। বর্তমান সময়ে প্রচারের সবচেয়ে সহজ, জনপ্রিয়, দ্রুততম মাধম্য হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন সিনামার সাথে জড়িত প্রয়োজক / প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান, নির্মাতা, অভিনয় শিল্পি, কলাকৌশলী, বিএফডিসি, সিনেমা হল মালিক এবং সিনেমা শিল্পের সাথে জড়িত যতো সংগঠন ব্যক্তিগত আইডি এবং পেইজে নিজেদের উদ্যোগে প্রচার করতে হবে। দর্শকদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে সিনেমাটি দেখার। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে নিজের ঢোল নিজে পিটানো না হয়।

প্রয়োজনা প্রতিষ্টানের নিজস্ব বাণিজ্যিক ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েবসাইট প্রচার প্রসার ও আয়ে বিরাট ভুমিকা রাখবে। ইউটিউবের চ্যানেলে সিনেমার বিজ্ঞাপন, ট্রেইলার, গান মুক্তি দিয়ে যেমন প্রচার করা যায় তেমন ভালো আয়ও করা যায়। ঠিক সেভাবে ওয়েব সাইটেও একি ভাবে বিজ্ঞাপন, ট্রেইলার, গান আপলোড করে সিনেমার প্রচার ও আয় করা সম্ভব। বর্তমান ডিজিটাল যুগের দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী অনলাইনে অডিও ও ভিডিও গান মুক্তি দিয়ে বেস ভালও আয় করা সম্ভব হচ্ছে বলে কন্ঠ শিল্পিরা ও অডিও ইন্ড্রাস্টিররা এই অনলাইন মাধ্যমটাকে বেছে নিয়েছেন। খুব সর্তক থাকতে হবে যে অনলাইনে যেন সিনেমা মুক্তি দেওয়া না হয়। কারণ অনলাইন থেকে সফটওয়ারের মাধ্যমে যে চ্যানেল ও ওয়েবসাইটে ডাউনলোড অপশন নেই সেখান থেকেও ডাউনলোড করে নেওয়া যায়। তবে অনলাইনে সিনেমা মুক্তি দেওয়া যেতে পারে সিনেমার সর্বশেষ মুক্তি হিসেবে। অর্থাৎ সিনেমা হল বা যে কোন প্রদর্শন কেন্দ্র, টিভি চ্যানেল, দেশ বিদেশের সকল প্রদর্শন শেষ হবার পর মুক্তি দিতে হবে অনলাইনে বিশেষ করে ইউটিউবে। মনে রাখতে হবে ইউটিউব চ্যানেল সিনেমার জন্য একটি লাইফ ইনস্যুরেন্স হতে পারে। যার আয়ের নির্ধারিত সীমা ও নির্ধারিত সময় নেই। তাই এটা সিনেমার সর্বশেষ ও পরবর্তী আয়ে বিরাট ভুমিকা রাখবে।

একটা সময় সিনেমার প্রচারের সব চেয়ে বড় মাধ্যম ছিল টিভি চ্যানেল। কিন্তু অনেক বছর ধরে টিভিতে আর সিনেমার প্রচার বা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়না। টিভি চ্যানেল এখনো আগের মতোই বাংলাদেশীদের বিনোদনের পঞ্চাশ ভাগ ক্ষুদা নিবারণ করছে। এই দিকটা মাথায় রেখে টিভিতে নতুন সিনেমার বিজ্ঞাপন প্রচার করা উত্তম পন্থা। তবে টিভি চ্যানেলে সিনেমা চলাকালিন সময়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করলে সবচেয়ে বেশী ভাল হবে। কারণ সিনেমা দেখেন যারা তারা অধিকাংশ সিনেমা প্রেমি দর্শক। তখন সিনেমা প্রেমিরা বিজ্ঞাপন দেখে খুব সহজে নতুন সিনামার খবর জেনে যাবেন। বাংলাদেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। এবং টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বেস ব্যয়বহুল। তাই সরকারকে সিনেমা শিল্প রক্ষার উদ্যোগে টিভি চ্যানেলে সিনেমার বিজ্ঞাপন স্বল্প খরচে প্রচার করার ব্যবস্থা বা আইন করে দিতে হবে।

প্রচার ও বিজ্ঞাপনের বড় আরেকটা মাধ্যম হচ্ছে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউস সাইট। এই দুইটা প্রচার মাধ্যম সিনেমার প্রচার ও প্রসারে বেস ভূমিকা রাখবে। নতুন সিনেমার বিজ্ঞাপন দৈনিক পত্রিকার বিনোদন পাতা ও অনলাইন নিউস সাইটের বিনোদন ক্যাটাগরিতে দিলে সহজেই সিনেমা প্রেমিদের নিকট পৌছে যাবে। তবে দৈনিক পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতায় বিজ্ঞাপন দিলে প্রচারটা শুধু সিনেমা প্রেমি নয়, সবার কাছে সহজে পৌছে যাবে। বাংলাদেশে টিভি চ্যানেলের মতো দৈনিক পত্রিকার সংখ্যাও এখন অনেক বেশি। এবং টিভি চ্যানেলে মতো দৈনিক পত্রিকাতেও বিজ্ঞাপন প্রচার বেস ব্যয়বহুল। তাই সরকারকে সিনেমা শিল্প রক্ষার উদ্যোগে টিভি চ্যানেলে মতো দৈনিক পত্রিকায় সিনেমার বিজ্ঞাপন স্বল্প খরচে প্রচার করার ব্যবস্থা বা আইন করে দিতে হবে।

সিনেমার প্রচার ও আয় ও অডিও গান মুক্তির জন্য আরেকটা ডিজিটাল মাধ্যম হচ্ছে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানি। যদিও মোবাইল কোম্পানি সিনেমার বিজ্ঞাপন এবং ভিডিও গান প্রচার করেনা। তবে অডিও গান প্রচার করে। এই অডিও গান ওরা রিংটোন, কলারটোন, মোবাইল অফারেটর রেডিও, মোবাইল অপারেটর মিউজিক ইত্যাদিতে প্রচার করে থাকে। এর থেকে তাদের বেস ভাল আয় হয়। এই আয়ের একটা অংশ দেয় গানের প্রযোজনা প্রতিষ্টান বা ব্যক্তিকে। তাই নতুন সিনেমার অডিও গান মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে প্রচার বা মুক্তি দিতে হবে। ওরা যখন গানটি প্রচার করবে সাথে সিনেমার নামটিও উল্লেখ করবে। যাতে প্রচার ও আয় দুটোই হবে। বর্তমান অডিও ইন্ড্রাস্টি এই মাধ্যম থেকে মোটামোটি ভাল কামিয়ে নিচ্ছে বলে মুক্তিদাতাদের কাছে এই মাধ্যমটি বেস জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

ছবির প্রচার ও আয়ের জন্য নিবেদক হিসেবে অথবা স্পন্সর হিসেবে বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানিকে নিয়োগ বা সুযোগ দিতে হবে। এতে বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানি নিজের বিজ্ঞাপনের প্রচারের জন্য ছবির প্রচার করবে। এবং ছবির নিবেদক বা স্পন্সর হিসেবে বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানি অবশ্যই আর্থিক সহযোগিতা করবে। এতে অনেক ভাল আয় হবে নিশ্চিত। আয় বৃদ্ধির জন্য ছবি পরিবেশনের সময় বিজ্ঞাপন দাতা কোন্মপানির দেওয়া যেতে পারে। সেটা হতে হবে ছবির সময় শুরুর আগে এবং বিরতির মধ্যে। অন্য যে কোন কৌশলেও বিজ্ঞাপন প্রচার করা যেতে পারে। তবে দর্শকরা যাতে বিরক্ত না হোন সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।

একটা সময় সিনেমা হল নতুন ছবির মুক্তির আগে রিক্সা বেবিতে মাইক পোস্টার লাগিয়ে এবং লিফলেট বিতরন করে নতুন ছবির প্রচার করতো। কিন্তু এখন যুগের পরিবর্তন ও খরচের কারণে করা হয়না। দেওয়ালে ও কারেন্টের খাম্বায় পোস্টার লাগিয়েও প্রচার করা হতো। এখনো তা করা হয় তবে খুব খুব সীমিত আকারে। সিনেমা হলের এমন প্রচার এখন আর যুগের সাথে মানায় না। তাই প্রচারে আনতে হবে পরিবর্তন।

তার জন্য উপযুক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্থানীয় পত্রপত্রিকা, স্থানীয় এফএম রেডিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রপত্রিকা প্রচার নিয়ে উপরে বেস আলোচনা করেছি। কিন্তু ভুল বশত এফএম রেডিও নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। এফএম রেডিও এখন সবার মাঝে বেস জনপ্রিয়। তাই পণ্যের প্রসারের জন্য বিজ্ঞাপন দাতা অন্য মাধ্যমের সাথে এই মাধ্যমটাকেও গুরুত্বের সাথে নিচ্ছেন। নতুন সিনেমার প্রচারের বেলা অবশ্যই এই মাধ্যমকে গুরুত্ব দিতে হবে। এবং রেডিও চ্যানেলে ছবির গান পরিবেশন করেও আয় করতে হবে।

সিনেমার প্রচার, প্রসার ও অগ্রিম আয় সম্পর্কে আমি হয়তো এখানে অল্প কিছু মাধ্যম তুলে ধরেছি। তবে এর থেকে আয়ের পরিমাণ একেবারে কম হবেনা। মোটামুটি ভালই আয় হবে। যেটা সিনেমার আয়ে বেস ভূমিকা রাখবে। সিনেমার সাথে সংসৃষ্ট এবং এর বাহিরের অভিজ্ঞ অনেকেই আছেন যারা সিনেমার প্রচার, প্রসার ও অগ্রিম আয় সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে আরো বেশ কিছু মাধ্যম তুলে ধরতে পারবেন। তাই এটা নিয়ে আরো আলোচনা করতে হবে অবিজ্ঞদের নিয়ে।

নতুন সিনেমা মুক্তির নতুন পদ্ধতি
বাংলা নতুন সিনেমার মুক্তি একটা সময় সিনেমা প্রেমিদের জন্য ছিল ইদ পূজা পহেলা বৈশাখের মতো আনন্দময় সংবাদ ছিল। কিন্তু এখন আর বাংলা নতুন সিনেমা মুক্তিতে সেই আনন্দ নেই। কারণ এখন বাংলা সিনেমা প্রেমি লোক খোঁজে পাওয়া বড়ই কঠিন। তবে সবার প্রচেষ্টায় আবার বাংলা নতুন সিনেমা মুক্তি সংবাদ আনন্দময় সংবাদ হয়ে উঠতে পারে।

যাই হোক বাংলা সিনেমা মুক্তির আইন কানুন বা নিয়মনীতির বিন্দুমাত্র ধারণা আমার নেই। কারণ আমি সিনেমা জগতের কেউ নই। আমি শুধুমাত্র একজন সাধারন সিনেমা প্রেমি।

সিনেমা মুক্তির চলমান গতানুগতিক দ্বারা পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমাবস্থায় এক সপ্তায় একটির বেশী সিনেমা মুক্তি দেওয়া যাবেনা। যাতে এক সাথে একটি ছবি সারা দেশের সব জেলা উপজেলার সিনেমা হলে মুক্তি পায়। তাতে সিনেমা নির্মাতাদের সিনেমা নির্মাণের ব্যয় ও ব্যবসায়িক লাভ উঠে আসার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে। তাতে সিনেমা প্রেমিদের মধ্যে দ্বিধাদন্ধ সৃষ্টি হবেনা কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখার। সব সিনেমা প্রেমিরা বিনা দ্বিধাদ্বন্দ্বে একটা ছবি দেখার সুযোগ পাবেন। যেই সুযোকটা সিনেমা ব্যবসার জন্য বেস প্রয়োজন। আর যদি সপ্তাহে একটির অধিক ছবি মুক্তি দেওয়া হয়, তবে নিজেরা নিজেরা ব্যবসায়িক সাফল্যতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পরবেন। কিন্তু বাংলা সিনেমার এই সময়টা প্রতিযোগিতার উপযুক্ত নয়। বাংলা সিনেমাকে যে ভাবেই হোক নিজেরদের নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা মুক্ত রাখতে। বাংলা সিনেমাকে বাঁচিয়ে রাখা বা সেই সোনালি দিন কিংবা স্বর্ণযুগের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে।

সপ্তাহে একটা ছবি মুক্তি দিলে যে সমস্যাটা সবচেয়ে বেশী হবে সেটা হচ্ছে অনেক জেলায় উপজেলায় একের অধিক সিনেমা হলে এক ছবি মুক্তি দেওয়া সম্ভব না। যেমন ঢাকায় বর্তমান সিনেমা হলের সংখ্যা ১৮টি। ঢাকার ১৮টি সিনেমা হলে তো একসাথে এক সপ্তাহে একটি সিনেমা মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। সম্ভব নয় সেটা নয়। মুক্তি দেওয়া সম্ভব। তবে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার ব্যবস্যা গড়ে ভাল হলেও সিনেমা হলের ব্যবসা ভাল হওয়ার কথা নয়। হয়তো কোন কোন সিনেমা হলের সপ্তাহের খরচ উঠাও কঠিন হয়ে পরবে। তাই সিনেমা হলের দূরত্ব অনুপাতে একটা জেলা ও উপজেলার কমপক্ষে ৫০ ভাগ সিনেমা হলে নতুন সিনেমা মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ ঢাকার ১৮টি সিনেমা হলের মাঝে দুরত্ব অনুযায়ী ৯টি সিনেমায় একটি ছবি একসাথে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। আমি দুরত্বটা বলতে এখানে বুঝাচ্ছি গাবতলির পর্বত সিনেমা হলে নতুন ছবি মুক্তি দিলে যেন টেকনিক্যাল মোড়ের এশিয়া সিনেমা হলে নতুন ছবির মুক্তি না দেওয়া হয়। কারণ দুইটা সিনেমা হল কাছাকাছি পর্যায়ে। তাতে দুটি সিনেমা হল ব্যবসায়ীক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন না। যা উভয়ের জন্য তথা বর্তমান সিনেমা শিল্পের জন্য ক্ষতিমুক্ত অথবা লাভজনক। তাই নতুন সিনেমাটি পর্বতের কাছাকাছি এশিয়ার মুক্তি না দিয়ে মিরপুর ১ নাম্বারের সনি সিনেমায় মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। ঠিক এরকম কাকরাইলের জোনাকিতে নতুন সিনেমাটি মুক্তি দিলে কারাইলের কোন এক গলির মুখের সিনেমাটি (হলের নামটি ভুলে গেছি সম্ভব রাজরানী) যেন মুক্তি দেওয়া না হয়। আশা করি বেপারটা আমি পরিস্কার করতে পেরেছি।

তবে ঢাকার ১৫টি সিনেমা হল বন্ধে হয়ে একটা আরেকটার থেকে যে দুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমার মনে হয় ঢাকার ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সিনেমা হলে একটি সিনেমা এক সপ্তাহে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। তবে অন্য জেলা উপজেলার বেলা নয়।

এখন এখানে একটা প্রশ্ন দাঁড়ায়, যে সিনেমা হলগুলোতে নতুন সিনেমা মুক্তি পাবেনা সেই সিনেমা হলগুলো এই এক সপ্তাহ কী করবে? আমার উত্তর সেগুলি গত সপ্তাহের বা আগের পুরাতন ছবি চালাবে। আর তাতে যদি ব্যবসায়িক লাভ না হয় তবুও চালাতে হবে দর্শক ধরে রাখার জন্য। যে সিনেমা হলগুলি চলতি সপ্তায় নতুন ছবি পাবেনা অবশ্যই সেই সিনেমা হলগুলিতে আগামি সপ্তাহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতি নতুন ছবি মুক্তি দিতে হবে। এ বিষয়ে আমার চেয়ে আরো ভাল সমাধান দিতে পারবেন সিনেমা হল মালিক ও সিনেমা শিল্পের সাথের সংসৃষ্টরা। এর জন্য দরকার অবশ্যই সবার উপস্থিতিতে মুক্ত আলোচনা।

তবে কোন সিনেমা মুক্তির এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও যদি দর্শকের চাহিদা থাকে অর্থাৎ ছবি হিট সুপার হিট হয়, তবে নতুন সপ্তাহে যেন নতুন ছবির মুক্তি দিয়ে দর্শকের চাহিদা ও ছবির হিট সুপার হিটকে খর্ব না করা হয়, সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রয়োজনে নতুন ছবির মুক্তি অপেক্ষামান রাখতে হবে, সিনেমা শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলার স্বার্থে। আর এতে ছাড় দেওয়ার মানষিকতা রাখতে হবে নতুন মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ছবির নির্মাতাদের। কারণ মনে রাখতে হবে সিনেমা এবং ইন্ড্রাস্টি আমার একার নয় সবার। সবাই মিলেই বাঁচিয়ে তুলতে হবে এই সিনেমা শিল্পকে।

ছবি মুক্তির বেলা প্রতি সপ্তাহে যেন নতুন ছবি মুক্তি পায়। যদি প্রতি সপ্তাহে নতুন ছবি মুক্তি না পায়, তবে দর্শক ধরে রাখা সম্ভব হবেনা। সে দিকে নজর রাখতে হবে।

সিনেমা হল মালিকদের করণীয়
বাংলা সিনেমার সবচেয়ে বড় আয়ের মাধ্যম বা ক্ষেত্র হল সিনেমা হল। সিনেমা হল মালিকদের যৌথ উদ্যোগে সিনেমা শিল্পকে বাঁচিতে তুলার লক্ষ্যে বেস অবধান রাখতে হবে। তাতে বাঁচবে সিনেমা শিল্প, সাথে বেঁচে উঠবে সিনেমা হল ব্যবসা। যে ব্যবসা এদেশে এ সমাজে অনেক সম্মান জনক।

সিনেমা হল মালিকদের প্রথম করণীয় বাংলাদেশের সকল জেলা উপজেলার সিনেমা হল গুলিকে সমবায়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যেমন ধরুন কৃষি জমি যে ভাবে সমবায়ের মাধ্যমে এক সাথে ফসল ফলিয়ে নিজেদের জমির পরিমাণ অনুযায়ী খরচ শেষে লাভ ক্ষতি ভাগাভাগী করে নেন। আবার যেমন ধরুন জেলা আন্তজেলা বাস সার্ভিস পদ্ধতি। একটা স্বল্প পুজির পরিবহন কোম্পানি বা সার্ভিস সংস্থা ভাল গ্রাহক সার্ভিস প্রদান, ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য অনেক ব্যক্তিমালিকা দিন বাস গাড়িয়ে নিয়ে আসেন সমবায়ের ভিত্তিতে নিজেদের পরিবহন কোম্পানি বা সার্ভিস সংস্থাতে। তারপর মাস শেষে পরিবহন কোম্পানি বা সার্ভিস খরচের হিসেব কষে লাভ ক্ষতির ভাগভাগি করে দেন প্রতিটি বাস গাড়ির মালিককে। এখানে যদিও আমি বলেছি লাভ ক্ষতির ভাগাভাগি। সত্যিকার্থে সমবায় ভিত্তিক ব্যবসাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতি নয়, অনেক লাভবান হন সেটা আমার চেয়ে ভাল উপলদ্ধি করতে পারেন আপনারা। কারণ আমি ব্যবসায়ী নই, একজন বাংলা সিনেমা প্রেমি মাত্র। আর আপনারা বিশাল অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী।

সিনেমা হল ব্যবসা সমবায়ের আওতায় আসলে আমার বিশ্বাস অনেক বন্ধ সিনেমা হলের তালা খুলে যাবে। সেটা সিনেমা হল ও সিনেমা ব্যবসা তথা সিনেমা শিল্পের জন্য হবে অবিশ্বাস জয়।

যেসব জেলা ও উপজেলায় একটিও সিনেমা হল চালু নেই সে, সব জেলা উপজেলাতে কমপক্ষে একটি সিনেমা হল চালু করে তুলতে হবে সমবায়ের আওতায় এনে। যাতে প্রতিটি জেলা উপজেলায় বাংলা সিনেমা পৌছে যায়। তাতে বাংলা সিনেমার বাজার দেশে বড় হয়ে আসবে। বাড়বে বাংলা সিনেমা ও সিনেমা হলের ব্যবসা।

বাংলা সিনেমা প্রদর্শন ও আয়ের নতুনত্ব পদ্ধদি
বাংলা সিনেমার আয় ও প্রদর্শন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন হল বা অডিটোরিয়ামে নতুন সিনেমা প্রদর্শন করতে হবে। তবে সেটা হতে হবে সিনেমা হল থেকে নতুন সিনেমার প্রদর্শন শেষ হওয়ার পরে। অর্থাৎ সিনেমা হলে অন্য কোন নতুন ছবি চলাকালে। এটা একেবারে নতুন পদ্ধতি নয়। এটা চলমান নতুন পদ্ধতি। যা বেস ফলফ্রসু বলে অনেক সিনেমা এভাবেই প্রদর্শন হচ্ছে বিভিন্ন হল বা অডিটোরিয়াম। যেমন জেলা উপজেলা অডিটোরিয়াম। শিল্পকলা একাডেমী অডিটোরিয়াম। শিশু একাডেমি অডিটোরিয়াম। বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়াম ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে হল বা অডিটোরিয়ামে যত্রতত্র নয়, বুঝে শুনে ছবি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন জেলা কোন উপজেলায় দর্শকদের উক্ত ছবির চাহিদা কেমন সেটা স্থানীয় সিনেমা হল এর উপর জরিপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উত্তম হবে। সিনেমা হলের উপর জরিপ কোন কঠিন কাজ নয়।

একই ভাবে দেশের বাহিরে অর্থাৎ বিদেশের হল বা অডিটোরিয়ামে নতুন সিনেমা প্রদর্শন করতে হবে। সেটাও যত্র যত্র নয়। যে দেশের যে শহরে বাংলাদেশি, কলকাতার বাঙ্গালী ও বাংলা ভাষাভাষি প্রবাসীর সংখ্যা বেশী সে দেশের সেই শহর গুলিতে এই পদ্ধতির সিনেমা প্রদর্শন করতে হবে। যাতে বিদেশের বাঙ্গালী ও বাংলা ভাষাভাষী সিনেমা প্রেমিরা বাংলা সিনেমা দেখার সুযোগ পান। এই সুযোগটা বাংলা সিনেমার প্রসার ও ব্যবসা বৃদ্ধি বেপক হারে।

এই প্রদর্শন সফল ও সার্থক অর্থাৎ ভালজনক করতে অবশ্যই প্রচারে গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলা সিনেমার বাজার বড় করার পদ্ধতি
এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনার শুরুতে প্রথমে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি হুমায়ুন আহমেদ স্যারের অসংখ্য নাটকের ইংল্যান্ড প্রবাসী সিলেটি অভিনেতা স্বাধিন খসরুকে। যিনি ইংল্যান্ডের লন্ডনের মতো উন্নত শহরের তিনটি সিনেমা হলে বাংলা ছবি মুক্তির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বা করে নিয়েছেন।

এই ভাবেই দেশের বাহিরে বিদেশের মাটির সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর সেটা করতে হবে বিদেশের বাঙ্গালী ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে।

এ ছাড়া "সিনেমার প্রচার, প্রসার ও অগ্রিম আয়", " সিনেমা হল মালিকদের করণীয়" ও "বাংলা সিনেমা প্রদর্শন ও আয়ের নতুনত্ব পদ্ধদি" এর আলোচনায় অগ্রিম আয় সম্বন্ধে যে আলোচনা করা হয়েছে সে গুলিও সিনেমার বাজার বড় করার পদ্ধতিতে অন্তর্গত।

শুধুমাত্র যে সরকার, শিল্প মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় বিএফডিসি, কলাকৌশলী, অভিনয় শিল্পি, চলচিত্র নির্মাতা, হল মালিক, প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান, চলচিত্রের সাথে সংসৃষ্ট সংগঠন প্রতিষ্টান ও ব্যক্তিদের চলচিত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলার দায়বদ্ধতা তা নয়। এই শ্লিল্পকে বাঁচিয়ে তুলার দ্বায়বদ্ধতা রয়েছে ইলেকট্রিক / প্রিন্ট / অনলাইন মিডিয়া, সাংবাদিক, নাগরিক সাংবাদিক, ব্লগার, সংস্কৃতি কর্মী সহ অনেকের। অর্থাৎ এই শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলার দ্বায়বদ্ধতা দেশ বিদেশের প্রতিটি বাংলাদেশী নাগরিকদের। তাই আমাদের দেশের প্রাচীন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজেদের অবস্থান থেকে সবার অবধান রাখতে হবে।

উপরোক্ত আলোচনা সিনেমা শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলার জন্য খুব সংক্ষিপ্ত আলোচনা আমি জানি। এই শিল্পকে নিয়ে আলোচনা করার জ্ঞান আমার খুবই সীমিত। তাই আমি আমার এই সীমিত জ্ঞানের আলোচনা সংক্ষিপ্ত রুপে উপস্থাপন করতে পেরেছি। যদিও আমি এই আলোচনাকে আরো প্রসারিত করতে পারতাম আমার সীমিত জ্ঞান দ্বারা। আমি অনুধাবন করছি প্রসারিত আলোচনাটা এই সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই সময় স্থান কাল পাত্র ও সুযোগ প্রসারিত আলোচনার উপযুক্ত নয়। এই সময় স্থান কাল পাত্র ও সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই আমার উক্ত আলোচনা আরো প্রসারিত করবো।

যাই হোক আমি আশাবাদী আমার সীমিত জ্ঞানের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপযুক্ত সময়ের, উপযুক্ত আলোচনা মনে করে এই আলোচনাকে আরো প্রসারিত করতে এই শিল্পের বড় বড় জ্ঞানী ব্যক্তি সহ মাঝারি ও খুদ্র জ্ঞানী তথা সংসৃষ্ট সবাইকে নিয়ে সিনেমা শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলার আলোচনার আহবান করা হোক। এবং চলমান সময়ে আমার উপরোক্ত আলোচনার বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দিয়ে সিনেমা শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলার লক্ষে চলচিত্র শিল্পের সংসৃষ্টরা উক্ত আলোচনাকে যেন আমলে নেওয়া হয়। আমার বিশ্বাস আমার উক্ত আলোচনা কার্যকর হলে চলচ্চিত্র শিল্প আবার উঠে দাঁড়াবে, ফিরে পাবে নতুন প্রাণ।