বিয়েতে ধর্মীয় পরিচয়

নুরুল ইসলাম খান
Published : 3 May 2012, 04:05 PM
Updated : 3 May 2012, 04:05 PM

দেশের শীর্ষ আলেমদের বিবৃতি ''বিয়েতে ধর্মীয় পরিচয় বাদ দিয়ে আইন করার সিদ্ধান্ত কুরআনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল'' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ বিষয়ে কোরান কী বলে

০১ মে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় বিষয়ে উল্লেখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শীর্ষ আলেমে দ্বীন মাওলানা মুহিউদ্দীন খানসহ সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, সরকার ও তার আইনমন্ত্রী বিয়ে-শাদী থেকে ধর্ম বাদ এবং সন্তানের কোন ধর্মীয় পরিচয় নেই বলে যে আইন করার ঘোষণা দিয়েছে তা দেশ থেকে ইসলাম নির্মূলের ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ। সরকারের এ আইন পবিত্র কুরআনের আইনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট যুদ্ধ ঘোষণা।

মতামত: আশ্চর্যের বিষয় হলো কথিত শীর্ষ আলেমগণ উক্ত সিদ্ধান্তকে কোরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বলে উল্লেখ করেন অথচ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিতে তাদের ঘোষণার পক্ষে কোরান থেকে কোন সূত্র উল্লেখিত হয়নি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিতে তাদের নিজস্ব দল-উপদলীয় মনগড়া ঘোষণাই স্পষ্ট হয়েছে। বিয়ে-শাদী বিষয়ে কোরান কী বলে দেখা যাক:

অল খবিছুনা-কারিম। [২৪:নূর-২৬] অর্থ: দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য, সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য-।

এখানে দল-উপ দলীয় সাম্প্রদায়িক ধর্ম বিবেচিত নয়। কোরানের এ বিধানে যারা ঈমান আনবেনা বা লঙ্ঘন করবে তাদের জন্য আল্লাহ বলেন:
আল-মিনাল খাছেরীন। [৫: মায়েদা-৫]। অর্থ:- এবং মুমীন সৎ চরিত্রা নারী, তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কেতাব দেয়া হয়েছে তাদের সৎচরিত্রা নারী তোমাদের জন্য হালাল করা হল। যদি তোমরা তাদের বিয়ের জন্য মোহর প্রদান কর। প্রকাশ্য ব্যভিচার ও উপ-পত্নী গ্রহণের জন্য নহে। এতে ঈমান না আনলে [অর্থাৎ এ নির্দেশগুলো মেনে না চললে] তার সকল কাজ-কর্ম ব্যর্থ হবে; অতঃপর পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।

আয়াতগুলোর প্রধান শর্ত হচ্ছে সতের সঙ্গে সতী, অসতের সঙ্গে অসতীদের বিয়ে-শাদী'র সম্পর্ক। অন্যথায় মুগ্ধ করলেও বিয়ে করা যাবে না। যেমন:
অলা-ইউমেনুন-। [২: বাকারা-২২১] অর্থ: মুশরিক নারী-পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করলেও ঈমান না আনা পর্যন্ত বিয়ে করো না। মুমীন ক্রীতদাস-দাসী তদপেক্ষা উত্তম। তারা অগ্নির দিকে আহবান করে কিন্তু আল্লাহ জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন-।

এখানে উল্লেখ্য যে, (সূত্র: কোরান বনাম শরিয়ত) সকল জাতির মধ্যেই বেশি-কম কাফের, মোশরেক, মোনাফেক বিদ্যমান হেতু প্রকৃতপক্ষে কে মোমেন আর কে মোশরেক! তা' নির্ধারণ করা মানুষের পক্ষে খুবই কঠিন। ইহুদি, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, শিখগণ প্রধানত মূর্তিপূজা করেন না যদিও প্রতিপালকে বিশ্বাস করেন; আর সকল হিন্দুগণই যেমন মূর্তিপূজা করে না যদিও প্রতিপালকে বিশ্বাস করেন তদ্রূপ সকল মুসলমানগণও শরিয়তী নামাজ-রোজা বা ৫ম স্তম্ভ মেনে চলে না যদিও প্রতিপালকে বিশ্বাস করেন; অর্থাৎ মুসলমান জাতির মধ্যেও মোনাফেক, মোশরেক, কাফের, ব্যভিচারী বা ভালো-মন্দ উভয়ই রয়েছে। অতএব সামাজিক বা যে কোনো বিষয় সম্বন্ধ-শান্তি স্থাপনে কোরানের ধারাগুলো মেনে সতের সঙ্গে সতী, অসতের সঙ্গে অসতীদের বিবাহ সম্পর্ক করা অত্যাবশ্যকীয়; অন্যথায় যাবতীয় ধর্ম-কর্ম বরবাদ হওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা রয়েছে।

উল্লেখিত কোরানের আয়াতসমূহ সকল জাতির সঙ্গে সকল জাতির বিবাহ বন্ধন বৈধ ঘোষণা করে। মানুষ-মানুষে সম্পর্ক করবে, একতাবদ্ধ হয়ে থাকবে, শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করবে আল্লাহতো তাই চান। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল পরস্পর বিদ্বেষ বশত: মানুষের মধ্যে বিভেদ-সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে চায়। সকল মানুষ একই জাত। মানবীয় ধর্মে কোন সাম্প্রদায়িকতা নেই। কোরান দেখুন:

[সুরা বাকারা, আয়াতা নং ২১৩] সকল মানুষ ছিল একই জাতি। অতঃপর আল্লাহ নবীগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেন। মানুষেরা যে বিষয়ে মতভেদ করিত তাহাদের মধ্যে সে বিষয়ে মীমাংসার জন্য তিনি তাহাদের সঙ্গে সত্যসহ কিতাব অবতীর্ন করেন এবং যাহাদেরকে তাহা দেওয়া হয়েছিল, স্পষ্ট নিদর্শন তাহাদের নিকট আসিবার পরে, তাহারা শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত সেই বিষয়ে বিরোধিতা করিত। যাহারা বিশ্বাস করে, তাহারা যে বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করিত, আল্লাহ তাহাদের সে বিষয়ে নিজ অনুগ্রহে সত্যপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।

দল-উপ দল নয় বরং সৎকর্মশীলদের জন্যই আল্লাহ পুরস্কারের ঘোষণা দেন:

[২: বাকারা-৬২; ৫: মায়েদা-৬৯] অর্থ: যারা মুসলিম হয়েছে এবং যারা ইহুদি, খ্রিস্টান, ছাবেঈন যারাই (যে কোনো জাতি) আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে প্রতিপালকের নিকট। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা শাস্তিও পাবে না।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এ আইন করে ধর্মবিশ্বাসহীন জারজ সন্তান পয়দা করার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশকে জারজ দেশে পরিণত করতে যাচ্ছে।

মতামত: আইন মান্য করে বৈধভাবে বিবাহ চুক্তি করার মাধ্যমে জারজ/অবৈধ হওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে বিবেচনা করবেন।
Please visit: www.youngmuslimsociety.com
বিনীত