বরকতময় দিনে আমাদের পুলিশ ও বিজিবি

নূরুল ইসলাম
Published : 5 August 2012, 07:26 PM
Updated : 5 August 2012, 07:26 PM

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও বাজার এতদঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম বানিজ্যিক এলাকা। আজ সকালে এই বাজারের কোথাও কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি, তুমুল ঝগড়া হয়নি ব্যবসায়ীদের মাঝে, কারো জমি দখল করেননি কোন ফার্নিচার ব্যবসায়ী কিংবা আগুন লাগেনি কোথাও । কিন্তু স্কুলে যাবার পথে দেখলাম, আমাদের বিজিবি ও পুলিশ ফার্নিচার রোডে সদলবলে হাজির । ব্যাপারটি পরিচিত বলে কারো কাছ থেকে জিজ্ঞেস করা হলো না। হয়তো কোটি টাকার মতো কাঠ/ফার্নিচার নিয়ে যাবেন ওঁরা কিংবা সর্বস্ব হারিয়ে পানসে হয়ে যাবে ভুক্তভোগীর আগামী ঈদ। হ্যাঁ প্রিয়, ব্যাপারটি এতদাঞ্চলে চলছেই নিরবধি।

আমাদের ঈদগাঁও বাজারে শ খানেক ফার্নিচারের দোকান, কাঠ বিক্রির দোকান এবং ৫/৬টি গাছ চিরাইযন্ত্র (স'মিল) রয়েছে। কয়েক মাস পরপরই দেখা যায়- বিজিবি কিংবা পুলিশ অথবা তাঁরা যৌথভাবে এই বাজারে গাছ উদ্ধারে আসেন। ট্রাক ভর্তি করে সারাদিন (অনেক সময় রাত অবধি) গাছ গুলি বনবিভাগের/ কাঠ উদ্ধারকারীদের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া চলে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেন, পয়সাওয়ালা নতুন ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে বাজারে। দেশপ্রেমিক (?) বাবুরা মাঝে মাঝে হানা দিয়ে অনেকের স্বপ্নগুলো কবর দেন।

আমরা দেখি, পাশ্ববর্তী ঈদগড় কিংবা আরো গহীন বন থেকে আমাদের বাজারে প্রতিদিন অনেক কাঠ, বাঁশ আসে ঈদগাঁও নদী দিয়ে। ব্যবসায়ী বন্ধুদের নিকট শুনেছি, গাছ/বাঁশ কাটার পর থেকে ঈদগাঁও বাজারে আসা পর্যন্ত ২/৩ অফিসে টাকা দিতে হয়। জানেনই তো, বনবিভাগ দেখাশোনা করার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অনেকেরই আজ ভুড়ি মোটা হয়ে অনৈতিকভাবে টাকা খাওয়ার সাক্ষ্য বহন করছে। বনের রাজা গণি মিয়ার টাকার বালিশের কথা কি এত সহজে ভুলা যায়। ঈদগাঁও পুলিশ বাদ যাবে কেন। খুব ভোর বেলা রুটি খেতে আমি যখন বাজারে যাই, তখন প্রায় প্রতিদিনই দেখি, পেট মোটা এক পুলিশ ঈদগাঁও খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে। খালের পাশে গোশত বিক্রির মাচানে বসে বসে দাঁত ব্রাশ করে, মাঝে মাঝে লুঙ্গি পড়া অবস্থায়ও দেখেছি। ভেবেছি, পুলিশ ভাইয়েরা অনেক ভাল, ভোর বেলা থেকে জনগণের খেদমত করেন। আহা রে! কত কষ্ট করেন ভাইয়েরা! কিন্তু একদিন জানলাম, ঐ পুলিশটি আসেন খুব ভোরে যারা খালে গাছ/বাঁশ আনেন, তাদের থেকে হাদিয়া নেবার জন্য। কেহ যাতে ভোর বেলা গাছ/বাঁশ বিক্রি করে পুলিশের টাকা ফাঁকি দিতে না পারে সে জন্য ভোরবেলার ঘুম হারাম। হৃদয়ে কষ্ট পেয়েছি।

বনবিভাগ দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অনেকে উৎকোচ নিয়ে বন থেকে গাছ আনতে দেন। পরে আবার উর্ধ্বতন মহলের চাপে কিংবা মাসোহারা না পেয়ে বাজারে হানা দিয়ে সেই গাছ আবার ট্রাক ভরে নিয়ে যান এবং জনগণকে নিঃস্ব করে দেন। সভ্য সমাজে বিষয়টি বেমানান। আমরা বিশ্বাস করি, বনবিভাগের দায়িত্ব নিয়োজিত ব্যক্তিরা স্রষ্টাকে ভয় করে দায়িত্ব পালন করলে বন থেকে অবৈধভাবে একটি গাছও বের হতে পারেনা, ঈদগাঁও পুলিশের মনে দেশপ্রেম সত্যিকারভাবে জাগ্রত হলে উৎকোচ গ্রহনের মাধ্যমে তাঁদের জীবিকার্জন অপবিত্র হবে না।