জাপানিজ পুলিশ এবং বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 24 August 2015, 06:28 PM
Updated : 24 August 2015, 06:28 PM

জাপানি পুলিশ । শব্দ দুইটা শুনলেই বিনয় এবং বন্ধুত্ব শব্দ দুইটিও সাথে সাথে চলে আসে। ইতিহাসে জাপানিজ নিয়ে অনেক গল্প আছে । কিন্তু আধুনিক এই বিশ্ব মানচিত্রে  জাপানিরা যে বিনয়ী এবং পরিশ্রমী জাতি তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । জাপানি পুলিশ  যে কতোটা নীরবে অপরাধী ধরে তার কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম । আর মুগ্ধ হলাম  ।  যে অপরাধী সে তো বুঝতে পারে না যার সাথে অপরাধ করেছে সে ও মাঝে মাঝে বুঝতে পারে না । কয়েক মাস  আগে আমি রাস্তা পার হচ্ছিলাম।গ্রিন সিগন্যাল ছিল হঠাৎ বাম দিক থেকে একটা কার আমাকে ক্রস করে ডান দিকে মোড় নিলো । গাড়ি চালনার নিয়ম অনুযায়ী গ্রিন সিগন্যাল থাকলে ঠিক ঐ ভাবে মোড় নিতে পারে । আমিও একটু জোরে হাঁটতে গিয়ে পরে যাই । এবং উঠে খুব সাধারন ভাবে আমার বাসার দিকে যেতে থাকি । দুই-তিন মিনিটের মধ্যে হঠৎ আমার সামনে পুলিশের গাড়ি থামল । সুমিমাসেন …সুমিমাসেন…। বাংলা অর্থ ক্ষমা করবেন …বলতে বলতে তিন জন পুলিশ একজন তরুন ছেলে নেমে এলো । আমি আচমকা ভরকে গেলাম । ওরা আমার সামনে অজিগি মানে মাথা নত করে রইল । ততক্ষণে আমি কিছুই বুঝলাম না । কয়েক সেকন্ড এর মধ্যে আরও একজন পুলিশ নেমে এলো সে ইংরেজিতে তার কার্ড দেখিয়ে বুঝাল সে কর্তব্যরত কর্মকর্তা । আমার কাছে জানতে চাইল আমি ঠিক আছি কি না! আমি তাতেও পরিস্কার না আসলে কী ঘটেছে। তারা ওই তরুন ছেলেটা যে অজিগি করে মানে মাথা নত করে আছে তার সম্পর্কে  জানাল  যে সে ভুল করে বেশি গতিতে গাড়ি চালিয়েছে । সে বুঝতে পারেনি। আমি যেন ক্ষমা করি । তখন আমি স্বভাবসুলভ ভাবে হেসে দিয়ে জানালাম আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি ।

তারা আমার আইডি দেখতে চাইল আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে চাইল । আমি আমার বাসা দেখিয়ে বললাম ওই যে আমার বাসা । সাথের মেয়ে পুলিশটা বাসার নিচের সিঁড়ি পর্যন্ত আসলো ।আবার অজিগি মানে মাথা নত করল। তারপর বাসার লক খুলতে খুলতে আড়চোখে নিচ তলার রাস্তার দিকে তাকালাম। দেখি ততোক্ষণ ওরা অজিগি মাথা নত করে আছে । আমি দরজা বন্ধ করলাম । এই হল জাপানি পুলিশ । কোন হাব ভাব নেই । বাতাস ও টের পাবে না ।কোন ফাঁকে ওরা লুকিয়ে থাকে । আমি ভাবতাম এত রাতে ফাঁকা রাস্তা মানুষ সিগন্যাল ক্রস করে না কেন?কারন পুরো শহরটা বিশেষ প্রযুক্তিতে মনিটর করা হয়। আইন ভাঙার আগেই আইন মানতে বাধ্য । আইনের প্রতি তখনই শ্রদ্ধা বাড়বে যখন কঠিন শাস্তি থাকবে । শাস্তি অপরিহার্য। অনেকগুলো অভিজ্ঞতা আছে জাপানিজ পুলিশ এবং তাদের দেশের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে। কোন সামাজিক মাধ্যম বা মিডিয়াতে খুব কম কিন্তু ওরা ঠিক ঠিক নিরবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যে সেখানকার মানুষ অপরাধ করেনা । কিন্তু আইন এর ব্যবহার এবং প্রয়োগ যথাযথ হলে অনেকটা অপরাধ করার প্রবনতা কমে আসে।

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আস্থা বাড়ানোর জন্য মিডিয়া এবং সামাজিক সচেতনতা অনেক দরকার । দিনে দিনে আমাদের দেশে যে পরিমানে মানুষের ভিতর অপরাধ করার  প্রবনতা বেড়েই যাচ্ছে। কিছু দিন পর এই দেশ মানুষের দেশ বলতেও ভয় লাগবে। কয়েক মাসের মধ্যে যে কয়টা ঘটনা ঘটেছে যা কিছু দিন হয়তো চলবে কিন্তু আবার সময়ের চাপে ঢাকা পরে যাবে । কোন মানুষ অপরাধ করলে তার ভয়াবহতা যে কতো ভয়ংকর হতে পারে সেটাও প্রকাশ করা উচিত। বাংলাদেশে  শত শত মানুষের সামনে শিশু হত্যার মতো জঘন্য ঘটে যাচ্ছে। বাংলাদেশে অপরাধ প্রবণতা অনেকটা মজা করার মতো । জ্ঞান এবং মানবিক চর্চার অভাব । আমাদের দেশে ছোট  শিশু কে ছোট বেলা থেকেই খুব হিংসাত্মক পরিস্থিতি দেখতে দেখতে বড় হতে হয় । মানুষের ভিতরের সূক্ষ্ম ভালবাসার অনুভূতি মানুষের মধ্যে নেই । যে কারনে আমাদের দেশে সবাই সবাইকে শাসন করতে চায় । একটা দেশ তখনই সুন্দর হয় যখন সে দেশের মানুষ গুলো দেশের পথে ধুলি কনা থেকে শুকনো পাতা কে আপন ভাবতে পারে। যখন দেশের সবাই কাজ কে ভালবেসে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে কাজ করতে  ঝাঁপিয়ে পরে। আমাদের দেশ কাজ করার চেয়ে কাজের সমালোচনা করার লোক বেশি ।সব দেশেই কিছু না কিছু সমস্যা আছে। কিন্তু আমাদের দেশের সমস্যা গুলো আমরাই সমাধান করতে পারি ।প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই দেশে  ভালোবাসার সংস্কৃতি তৈরি করি । কাজ কে অবহেলা না করে কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের পরিচয় খুঁজি । বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের নাম উজ্জল করি । নিজের দেশ, জাতি, মানুষ আইন, নিয়ম, অর্থনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই । তখন দেখব পত্রিকার অপরাধ পাতা হারিয়ে যাবে । আমরা মন থেকে দেশের মানুষ, সম্পদ, প্রকৃতিকে  ভালবাসতে শিখি । আমরা দেশের আইন নিয়ম কানুন মেনে চলি । আরও একটু সচেতন হই । আরও একটু মানবিক হই । সত্যি একদিন বাংলাদেশ সারা বিশ্ব  মানচিত্রে বিউটিফুল বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।