অভিজ্ঞতা: মৃত নারীদের গ্রাম পর্ব -২

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 28 Sept 2016, 07:07 PM
Updated : 28 Sept 2016, 07:07 PM


( হাজীগঞ্জ বাজার)

ঘটনাটা এক বছর আগের। হঠাৎ আবহাওয়া,সময় জায়গা পরিবর্তন এবং দীর্ঘ ভ্রমন আমার ভিতরেও কিছু সমস্যা দেখা দিলো। আমার সারা শরিরে এক ধরনের এলার্জি টাইপ কিছু দেখা দিল। ভয়ংকর যন্ত্রণা। যাইহোক সেদিন শুক্রবার। আমার বর আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। আমরা তখন হাজিগঞ্জ। ডাক্তার ভদ্রলোক ধানমন্ডি কোন এক ক্লিনিকে বসে। ঐ জায়গায় ভীষনভাবে লোকজনের কাছে চেনা। যাইহোক যাওয়ার সাথে এন্টিবায়োটিক সহ অনেক গুলো ওষুধ দিয়ে দিলো। প্রায় দুই তিন হাজার টাকার ওষুধতো হবেই। আমি বিরক্ত হলাম। এগুলো স্বাভাবিকভাবেই সময়ে চলে যেতো। বরাবর জায়গা পরিবর্তন হলে আমার ভেতরে মানসিক এবং শারিরীক সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমার চারপাশের মানুষ এবং পরিবেশ দুটোই বুঝে চলতে হয়। দুপুর বেলা। প্রচুর মানুষ জুম্মা নামায পড়ে বের হচ্ছে। আমি আর বর হাজিগঞ্জ বাজারে ভাল কোন রেস্তরা খুজছি। ডাক্তারের কান্ড নিয়ে কথা বলছিলাম। কিভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে ইচেছ মতো ওষুধ বিক্রির ব্যবস্থা করে যাচেছ।


(হাজীগঞ্জ বাজারের হাসপাতাল)

রাস্তায় এতো মানুষ যে হাটাই যাচিছল না। এমন সময় রাস্তার পাশে ড্রেনের উপর যে ঢাকনা দেওয়া থাকে তেমন এক রাস্তা। আমি হাটতে পারছিলাম না। বারবার পড়ে যাচিছলাম। হঠাৎ আমি আমার বরের কনুই ধরি।কিছুটা পথ ওকে ধরেই হাটি।হঠাৎ এমন সময় পেছন থেকে খুব জোরে এক মহিলা ধাক্কা দিয়ে আমাকে বলে, " বেডি শরম নাই। রাস্তায় বেডা লইয়া হাটস "
আমি বোকা হয়ে গেলাম। তাকিয়ে দেখি এক হিন্দু বৃদ্ধা মহিলা। কপালে সিদুর আর গলায় পইতা পড়া। পেছন থেকে মহিলার ধাক্কা খেয়ে প্রচন্ড রাগ উঠে গেল।কারন তার ধাক্কায় আমার যেকোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারতো। মেইন রোডে অনেক ব্যস্ত মানুষের মাঝে আমিও রেগে গিয়ে বললাম,"অসভ্য হিংসুট বুড়ি মহিলা আমি আমার জামাই নিয়ে হাটছি। তুই তোর জামাই নেয়ে হাট। "
মহিলা আর পেছনে তাকায়নি।

আমার বর লজ্জা পেয়ে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে বলে থামো। তুমি কি পাগল হয়ে গেছো। আমার ওর উপর ও রাগ উঠলো। কি ভয়ংকর আর আজব ঘটনা। কারন ছাড়া একটা অচেনা বুড়ি মহিলা একটা মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চায়। কিন্তু কেনো?

দুই দিন রাগে আর ক্ষোভে আমি কারও সাথে কথা বলিনি। ব্যাপারটা আমার মাথায় গিজ গিজ করছিল। কোন কিছুতেই মন বসছিল না। মহিলা যদি মুসলিম হতো তাহলে মেনে নিতাম সে রক্ষনশিল মুসলিম কিন্তু সে হিন্দু । কোনভাবেই মিলাতে পারছিলাম না। হঠাৎ কেনো অচেনা মহিলা আমাকে এতোটা ভয়াবহ ভাবে ধাক্কা দিল।

আর আমি যখন রিপ্লাই দিয়েছি সে ও ভয়ে তাকায়নি জোরে হেঁটে চলে গেছে। তাহলে কী?

তবে অল্প কিছু দিনেই সেখানকার চারপাশের অনেক চিত্র এবং মানুষের মানসিকতা দেখে বুঝলাম। ভালোবাসাহীন শুস্ক হৃদয় এমন করেই কারও জীবনে ধংস হয়ে নিজের জীবনের ক্ষোভ প্রকাশ করে। শুধু কি রাস্তার ঐ মহিলা আমাদের সমাজে প্রেমিক প্রেমিকা স্বামি স্ত্রী সাথে সুন্দর বোঝা পড়ার কিংবা ভালোবাসাময় দৃশ্য যেন এই সব মানসিক রোগীদের সহ্য হয় না।কেনো জানি আমরা সবাই একটা দূর্ভাগা অসুখি মন নিয়ে ঘুরে বেড়াই। কারন ছাড়াই
কেউ কেউ বিধ্বংসী হয়ে উঠে।

এই নারী হয়তো কোনদিনই এভাবে স্বামীর কাছে এমন নির্ভরতা কিংবা ভরসা পায়নি। ভালোবেসে কোনদিন হাত ধরে পুকুর ঘাটে নামায়নি। এক সাথে কোনদিন বাজারে যায়নি। নিজের পছন্দের শাড়িটা কিনে দেয়নি।আদর করে কোনদিন কাছে ডেকে বসায়নি।
নিতান্ত দাসী বাদির মতো ঘরে পুষে রেখেছে। খাবার দিয়েছে। নিত্যনৈমিত্তিক চাহিদা পূরন করেছে। কিন্তু ভালোবাসা ছুয়েঁ দেখেনি। ভালোবাসার মতো ভাষার চর্চা ও এই আধ পেট খাওয়া গ্রাম বাসীরা জানেও না। বাংলাদেশে এখনও অনেক গ্রাম আছে মধ্যযুগেই পড়ে আছে। নারীর প্রতি সঠিক আচরন করা হয়তো নারীরাও বুঝতে শিখেনি।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যেন নারীদেরই আগ্রহ নেই।
নারীবাদী নই। আমরা একটু মানবতাবাদী হই। একজন মানুষের সাথে একটা মানুষের আচরনই করি।

নাহ। পৃথিবীর সবাই তো ভালোবাসার কাঙাল। সবাই কি সব ভালোবাসা পায়। তাইতো অনেক পরিচিত পুরুষকে দেখি নিজের বউকে লুকিয়ে রাখে আবার অনেক নারীকেও দেখি স্বামী বা প্রেমিকদের লুকিয়ে রাখে। আসলে ওদের দোষ নয়। দোষ পরিবেশ আর পরিস্থিতির। আর মানুষের মানসিকতার