শতবর্ষী জাপানি শ্রমজীবী নারী

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 30 Sept 2016, 07:07 PM
Updated : 30 Sept 2016, 07:07 PM


একদা এই যান্ত্রিক ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যেতে চাইতাম। কোটি মানুষের হারানো আরা না পাওয়ার বেদনাতুর জীবনের নিত্যনৈমিত্যিক গল্প গুলো কেমন একঘেয়েমি হয়ে উঠে ছিলো। প্রতিদিন কর্পোরেট দুনিয়ার খেলাঘর। হাজিরা খাতায় সাইনের টেনশন। কাগজ ফাইলে নিরাপত্তা রক্ষার টেনশন, বাইরে বের হলে ছিনতাই, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার টেনশন, ম্যারিড না আনম্যারিড সে কৈফিয়তেরর টেনশন। হয়তো এই জীবন আর বহন করতে পারছিলো না। কর্পোরেট রঙিন জীবনের সুখ ও অসহ্যকর হয়ে উঠে ছিল।
যার আকাশ দেখা, মানুষের জীবনে গল্প খোজাঁ, যে স্বপ্ন দেখে কবিতাদের নিয়ে তার কি আর টাকা পয়সার হিসাব নিকাশ। শেয়ার বানিজ্য, প্রমোশন, ট্রান্সফার এইগুলোর চিন্তা ভালো লাগে।

দূর আকাশের তারারা একদিন মনের খবর জেনে নিলো। জীবনের প্রয়োজনে বরের কাছে ক্যাথি প্যাসিফিক নামক পাখির মতো প্লেনে চড়ে চলে গেলাম হোক্কাইডো আইল্যান্ড। পৃথিবীর ওয়ান্ডার ল্যান্ড খ্যাত ঐ ভূমিতে চোখ ধাধানো প্রকৃতির রূপ।

একদিন পাহাড়ের একটি স্কুলে চাকরি হলো। দূর পাহাড়ের জাপানি শিশুদের সাথে এক অপার্থিব আনন্দময় স্বর্গীয় সুখ। এপৃথিবীর সব সুখ আর সাধারন মানুষ দেখতে দেখতে জীবন কাটে। প্রতিদিন পাশের ঘুমন্ত মানুষটা নাকি বিজ্ঞানী। অতো সময় নেই তার সাধারন মানুষকে দেওয়ার।

আমি তাই একা একা ঘুড়ে বেড়াই জীবনের পথে। প্রায় দিন নাকাজিমা নামের এই সবজি বিক্রেতার সাথে দেখা হয়।আমাদের সৌজন্য হাসি বিনিময় হয়। জিজ্ঞেস করে, " দোকো কারা কিমাসতাকা?

কোথা থেকে এসেছো?
ও নমায়ে নান দেসকা?
নাম কী তোমার?
আমি উত্তর দিয়ে যাই। এমন করে ভাব হয়ে যায়। সে আমাকে আপেল খাওয়ায়।কলা খাওয়ায়। মাঝে মাঝে আমি তার ছবি তুলি। আহা কি সুন্দর জীবন!

সে আমাকে আশে পাশে ঘোরাঘুরির মতো যে সব জায়গা আছে তা দেখায়। প্রতিদিন কী কী বিক্রি হয়েছে মজা করে বলে। আমার জানা মতে জাপানিদের বৃদ্ধ ভাতা ভালো। সে কেনো শ্রমের কাজ করছে। সেদিন ঘর থেকে বৃদ্ধার শতবর্ষী স্বামী বের হয়ে এলো। জাপানিরা কাজ ভালোবাসে। তাই কাজ করছে ভালো থাকার জন্য। ভেবে অবাক হলাম। আমি কাজ থেকে পালাতে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলাম। আজ এই বৃদ্ধদের কাছ থেকে জানা হলো জীবনের আরেক নাম শ্রম।

একদিন বৃদ্ধা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "নান সাই দেসকা?
মানে তোমার বয়স কতো?
আমিও উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করি অই কতসু দেসকা?
আপনার বয়স কতো?
সে বলে, "হেয়াকু ইচি। "
মানে একশ এক বছর।
আমি নিজের গায়ে চিমটি কাটি। কেমনে সম্ভব!!!
দেখলাম তার এই সবজি বিক্রেতার আবার লাল রংয়ের গাড়িও আছে। এটা ড্রাইভ করে সে তার স্বামীকে হাসপাতালে, জিমে, পার্ক এবং শপিংমলে যায়।

নিয়মিত কাজে মনোযোগ মানুষের আয়ু বাড়ায়।মানুষকে বেচেঁ থাকতে উদ্ভুদ্ধ করে। জীবনের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তাই সবাই শ্রম করুন।শ্রমজীবীরা সম্মানের সাথে আনন্দের সাথে দীর্ঘদিন বেচেঁ থাকে।