মেহের আফরোজ শাওনের অসাধারণ সিনেমা ’কৃষ্ণপক্ষ’ এবং দুফোঁটা অশ্রু

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 6 Oct 2016, 07:56 PM
Updated : 6 Oct 2016, 07:56 PM

গতকালকে একলা ঘরে বসে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক এবং বিজ্ঞানী ড.হুমায়ুন আহমেদ স্যারের "কৃষ্ণপক্ষ" উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি দেখলাম। পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন সিনেমাটি এতোটা ভালোবেসে তৈরি করেছেন যা অনেক হৃদয়ে ভালোবাসার ঝড় বইবে। আমি নিজে কতোটা সময় ধরে কেদেঁ কেটে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা।
আমাদের সমাজে বোনের জামাই কিংবা মেয়ের জামাইর শশুর বাড়ির লোকজনের সাথে আচরনের ভয়াবহ সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। হয়তো প্রতিনিয়ত এই সত্য গুলো অনেক পরিবারের অনেক মেয়ে এবং মেয়ের পরিবারকে সহ্য করে যেতে হয়।

কিন্তু সমাজ রক্ষা কিংবা সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় কেউ মুখ ফোটে প্রকাশ করে না।  ড. হুমায়ুন আহমেদ তার কলমে সে দৃশ্য রচনা করে গেছেন। বহু বছর পর তার সিনে ভাষা দিয়েছেন পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের অনেক বোন এই ভাবেই কষ্ট পায়।আর কষ্ট মানিয়ে নেয়ার বোবা যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

এক দরিদ্র বোন বিয়ের সময় তার ছোট ভাইকে সঙেগ নিয়ে আসে। সে ছোট ভাইটি হলো নায়ক রিয়াজ। বোন তানিয়া আহমেদের সংসারে দুলা ভাই আযাদ আবুল কালাম অনেক ধরনের মানসিক নির্যাতন করে। ছোট শিশু ভাইটিকে আদরের পরিবর্তে তালা দিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়।

শুরু থেকেই তাদের সংসারে ছোট শিশু শ্যালক কে সে মেনে নিতে পারেনি। অনেক ঘাত প্রতিঘাত আর সময় অতিক্রম করার পর একদিন রিয়াজকে তার দুলা ভাই চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।

এইদিকে সে ভালোবেসে গোপনে বিয়ে করে নায়িকা অরুকে। যে চরিত্রে আছে বানিজ্যিক ধারার নায়িকা মাহিয়া মাহি। নিজের সংসার টিকিয়ে রাখতে বোন তানিয়া আহমেদ নিদারুন দু:খ কষ্ট আর মানসিক নির্যাতনকে বুকে চেপে সহ্য করে যায়।

নিয়তির খেলায় ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর মূহূর্তে তিনি হঠাৎ স্বামী স্বামিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি হয়ে উঠে। বুকের ভিতরে তিলে তিলে জমানো কষ্ট গুলো ঝাপিয়ে উঠে। প্রচন্ড ঘৃনা বেড়িয়ে আসে।সেদিন স্বামীটি বুঝতে পারে পারে সে যে দিনের পর দিন কি অমানবিক আচরন করেছে।

তানিয়া আহমেদের মুখে কি অসাধারন সব সংলাপ আর দৃশ্য। কিন্তু দুলা ভাইয়ের সংসারে বোঝা হয়ে থাকা তরুনটি যখনই ভালোবাসার ছোয়াঁ পেলো। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন পেলো ঠিক তখনই চিরদিনের জন্য বিদায় নেয়।

এক সড়ক দূর্ঘটনা তার জীবনের সব জটিলতা আর স্বপ্নকে নিয়ে দূর আকাশে মিলিয়ে যায়। সিনেমাটিতে আমাদের সড়ক দূর্ঘটনা ঘটার কারনটাও নিখূতভাবে দেখানো হয়েছে।শেষের দৃশ্যে চিত্র নায়িকা মাহির অভিনয় এবং পরিচালকের মুন্সিয়ানায় সত্যি অসাধারন এক সিনেমা জন্ম নিয়েছে।

জীবনঘেঁষা এই সিনেমাটি আমাদের সমাজ সংসারের চরম গোপন সত্যটিকে প্রকাশ করেছে। যে সত্য অনেক মানুষের একান্ত আবেগ আর দুু:খ কষ্টকে নাড়া দিয়ে যাবে।দুফোটা অশ্রু ঝড়বে আপন হয়ে।