ডাস্টবিনে ডুবে আছে চিটাগাংয়ের বালুচরা

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 26 Nov 2016, 03:11 PM
Updated : 26 Nov 2016, 03:11 PM


(বালুচরা বাজারের কাছ থেকে তোলা)

বিখ্যাত সূফী সাধক বায়েজিদ বোস্তামির নামানুসারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি পরিচিত থানার নামকরন করা হয় বায়েজিদ থানা। এই থানার জনসংখ্যা প্রায় ২,১১,৩৫৫ জন। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মোট সংখ্যার প্রতি বর্গকিলোমিটার লোক সংখ্যার বসতি ১২,০২২.৫জন বসবাস করে। এই থানার সাথেই খুব পরিচিত আরেকটি থানা হাটহাজারি। ১৪ টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে এই হাটহাজারি থানা। লোকসংখ্যা প্রায় ৪,৩১,৭৪৮ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৭৫৩ জন লোক বসবাস করে। পর্যটনের আকর্ষন হিসেবে আছে চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয় এবং হালদা নদী।

আর এই দুই থানার মাঝখানের বিশাল ৯২.৫ একর জায়গা জুড়ে আছে বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের অধীনে বিজ্ঞান গবেষনাগার চিটাগাং বিসিএসআইআর।আর এই গবেষনাগারের অফিসের অংশ পড়েছে বায়জিদ থানার বালুচরা বাজারে আর আবাসিক এলাকা পড়েছে হাটহাজারি থানার নতুন পাড়া এলাকায়।দু:খজনক হলেও সত্যি এই পুরো নতুন পাড়া এবং বালুচরা বাজার ডুবে আছে ডাস্টবিনে।


(গবেষনাগারের মেইন গেটের সামনের ডাস্টবিন)

একটি দেশের সরকারী গবেষনাগারের চারপাশে যে সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ থাকা উচিত তা সেখানে নেই। গবেষনাগারের প্রধান গেটের সাথেই বিশাল এক ডাস্টবিন। সে রাস্তা ধরে নতুন পাড়া আবাসিক এলাকায় যেতে যতোটুকু রাস্তা আছে পুরোটা জুড়ে শুধু ডাস্টবিন আর ময়লা আবর্জনার স্তুপ। ঘনবসতি পূর্ন মানুষের এই এলাকায় ভালো কোন রেস্তোরা বা হোটেল নেই। শহরে যোগাযোগ করার মতো পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ মানুষের জীবন মান ততোটা উন্নত নয়। যে কারনে পরিবেশের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জ্ঞান হয়তো তাদের নেই। কি পরিমান নোংরা পরিবেশ তা চোখে না বিশ্বাসযোগ্য হবে না। সেই সাথে ড্রেনেজ সমস্যা। সাধারণ বৃষ্টিজলে নোংরা আবর্জনা রাস্তায় ভাসতে থাকে।বৃষ্টিপাতের সময় ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন। স্বাভাবিক জীবন চিন্তা করা অসম্ভব।
অথচ ভেতরেই মনোরোম পরিবেশের বিশাল এই গবেষনাগারে প্রতিনিয়ত কতো রকম গবেষনার কাজ হচেছ। বিজ্ঞানীরা তাদের সর্বোচচ শ্রমটুকু দিচেছ তাদের আবিস্কারের পিছনে। এই জায়গার বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের সুনাম কুড়িয়ে এনেছে। আরও সূযোগ সুবিধা পেলে এই দেশের ছেলে মেয়েরা অনেক বড় সম্মান বয়ে ক্ষমতা রাখে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন কতোটুকু দেখভাল করছে তা নিয়ে আছে অনেক প্রশ্ন।


(গবেষনাগারের দেয়ালের সাথে ডাস্টবিন)

স্থানীয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং যথাযথ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চিটাগাংয়ের বাইরের কোন নতুন বিজ্ঞানী সেখানে কাজ করতে চায় না।সেখানে পোষ্টিং হওয়ার পর স্থানীয় নানা সমস্যার কারনে অনেকেই চাকরি ও ছেড়ে দিতে চায়। সেখানে কিছু বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য অনেকেই নিজেদের দায়িত্বে নিরব ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়। নতুন পাড়া আবাসিক এলাকার সাথে সংরক্ষিত এলাকার সংযুক্ত করতে এবং সাধারণ জনগনের যাতায়াতের একটা রাস্তা গেছে ক্যান্টনমেন্টের দিকে। তবে জানা যায় সে রাস্তাটা ক্যান্টনমেন্টের। যা সকল সাধারনের জন্য উন্মুক্ত।জনসাধারণের নিয়মিত যাতায়াতের এই রাস্তার মোড়েই অবৈধ স্থাপনা এবং ময়লা আবর্জনার আরেক স্তুপ। পায়খানা আর প্রস্রাবের গন্ধে সহজ যাতায়াত দূর্বিষহ। নিয়ম কানুন ছাড়াই রেখে দেওয়া হয় বাস ট্রাক। রিকসা ওয়ালাদের রিকসা রেখে বিশ্রাম করার জায়গা। এই জায়গাগুলো মনিটরিংয়ের অভাবে একটু রাত হলেই নিরব জায়গা, গাঁজাখোর আর মাদকাসক্তদের আসরে পরিনত হয়।


(গবেষনাগারের সংরক্ষিত এলাকা)
যেহেতু গবেষনারকে ঘিরে অনেক গাছপালা আর নিরব জায়গা আছে তাই স্থানীয় এক শ্রেনীর সন্ত্রাসীদের জুয়ার আসর পাতার উপযুক্ত জায়গাও। তাদের ভিতরে এই বোধটুকু নেই সরকারের সম্পদ একটি দেশের সম্পদ। যেহেতু বিশাল এলাকা জুড়ে অনেক গাছ পালা। স্থানীয় নিম্ন কিছু ছ্যাঁচরা চোর গাছ চুরির মতো ঘটনাও ঘটায়। কেউ কেউ নিজেদের ইচ্ছেমত গরু ছাগল চড়ায়। অথচ ঠিক এই গবেষনাগার কে কেন্দ্র করে কতো সভা সেমিনার হয়। অনেক বিদেশি অতিথি আসে গবেষনাগার ভিসিট করতে এবং গবেষনার প্রয়োজনে। আশে পাশের নোংরা পরিবেশ এবং যাতায়াতে অব্যবস্থাপনা বিদেশিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি কতোটুকুইবা উজ্জ্বল থাকে।

এই বিষয়ে গবেষনাগারের বর্তমান পরিচালক মিসেস মাহমুদা খাতুনের সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, 'এখানে বিজ্ঞানীরা বেশ ভালো কাজ করে।আমি সর্বোচচ চেষ্টা করছি দেশের সম্পদ এবং নামকরা এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার কাজটি সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে। কিন্তু এই বছর জানুয়ারিতে আমি দায়িত্ব গ্রহন করার পর থেকে রহস্যজনক ভাবে তিনবার সন্ত্রাসী হুমকি এবং হামলার শিকার হই।শুধু আমি নই। ফেব্রুয়ারীতে ১২ জন বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ার কে প্রান নাশের হুমকি দেওয়া হয়। আমি প্রায় প্রতিদিন নিজে বের হই সংরক্ষিত এলাকা ভিসিটে।গবেষনা প্রতিষ্ঠানের বাইরের কিছু সমস্যা যা সবার জীবন যাত্রার সাথে জড়িত হলে ও তা দেখভালের দায়িত্ব আমাদের এখতিয়ারে পড়েনা। তাই এই সম্পর্কিত প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি। আর অত্যন্ত পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে আমি আমার পরিচালনার কাজটি করে যাচিছ। সবার সহযোগীতা এবং প্রচেষ্টায় অল্প সময়ে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান ও দিতে পেরেছি।এই ক্ষেত্রে কোন অশুভ শক্তিই ভয় ভীতি দেখিয়ে সরাতে পারবে না। এই দেশ আমাদের। এই দেশের সৌন্দর্য ও রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের। তাই সকলের আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করছি।'


(মিসেস মাহমুদা খাতুন তার অফিসে)

নয়নাভিরাম এবং মনোরোম গবেষনাগার কে কেন্দ্র করে বায়জিদ থানার বালুচরা আধুনিকায়নে এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা একটি অত্যন্ত সুন্দর আকর্ষনীয় পর্যটন এলাকা গড়ে উঠতে পারে। দেশের সম্পদ রক্ষার এবং বিদেশিদের কাছে যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে আমাদের সকলের এগিয়ে আসতে হবে। শুনেছি এই শহরে মেয়র আছে।মেয়রদের নগরের পিতা বলা হয়। আশাকরি নগর পিতার কানে যাপিত সকল সমস্যার কথা পৌছবে।
নাগরিক সমস্যা সমাধানে তিনি আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসবেন।

আশাকরি বালুচরা বাজার ডাস্টবিন থেকে রক্ষা পাবে। অন্ধকার থেকে মুক্ত হবে চেনা এই শহর। প্রশাসন তার সবচেয়ে সুন্দর মনোবৃত্তি এবং উৎকর্ষতা প্রদর্শন করবে।

নুরুন নাহার লিলিয়ান
সাহিত্য সম্পাদক
মহীয়সী নারী বিষয়ক নিউজ পোর্টাল।