শিখা প্রকাশনীতে উপন্যাস ‘অরোরা টাউন’ প্রকাশে বিলম্ব এবং বিড়ম্বনা

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 22 Feb 2017, 03:53 AM
Updated : 22 Feb 2017, 03:53 AM

যে ব্যক্তি নিজের মনের ভাষাগুলো কল্পনা আর বাস্তবতার নিরিখে কলমের কালিতে প্রকাশ করে সেই হয়তো লেখক। অর্থাৎ যিনি লিখেন তিনিই লেখক। যদিও আজকাল তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে লেখকদের জন্য কলমের প্রয়োজন হয়না। প্রয়োজন হয় একটা ভাল ডিসপ্লে সহ ভাল মানের মোবাইল নয়তো ল্যাপটপ। ডেস্কটপ কম্পিউটারের সময় তো চলে গেছে অনেক আগেই। যাইহোক এই দেশে লেখক হতে হলে অনেক গুলো সাধারন কথা এবং দৃশ্যপট হজম করার মানসিকতা নিয়ে লেখালেখির জগতে থাকতে হবে। তাছাড়া অনেকটা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো। অবশ্য সবার অভিজ্ঞতা এক নয়। একজন লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে আপনাকে মাটির মানুষ হয়ে যেতে হবে। সীমাহীন ধৈর্য নিয়ে হাসি মুখে থাকার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

না। প্রকাশনা জগতে আমি কিন্তু নতুন নই ।প্রচলিত অর্থে প্রতিষ্ঠিত লেখক বলতে যা বুঝায় তা হয়তো নয় । কিন্তু লেখার প্রতি ভালবাসা আর আকর্ষণ সব সময় আমাকে এর কাছেই ফিরিয়ে এনেছে । ১৯৯৯ সাল থেকে বিভিন্ন পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে লিখছি। প্রথম বই প্রকাশ ২০০৬ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে। প্রথম বইটির পড়ে দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থা শিখা প্রকাশনী ডেকে নিয়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় উপন্যাস প্রকাশ করে । এরপর চাকরি আর নানা ব্যস্ততায় বই প্রকাশ না করলেও পত্রিকা আর অনলাইনে লেখা নিয়মিত ছিল । তারপর দীর্ঘ বিরতি। নয় বছর পর চতুর্থ উপন্যাস 'অরোরা টাউন' এই বই মেলায় প্রকাশ হওয়ার কথা । নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাণ্ডুলিপি জমা দেই । যথারীতি জানুয়ারিতে কাভারের কাজ শেষ হয়ে যায় । আমার দীর্ঘ দিনের পরিচিত এবং আস্থাশীল প্রকাশনা শিখা প্রকাশনী থেকেই প্রকাশ হওয়ার কথা । আজ বইমেলার ২১তম দিন। সব কিছু যথা সময়ে হলেও বইমেলায় উপন্যাসটি আসেনি। এর মধ্যে মোড়ক উন্মোচনের প্রস্তুতি সহ সব জায়গায় প্রচারনার কাজও চলতে থাকে । মোটামুটি কিছু পাঠক তো প্রচারনার প্রসারতা আর বিষয়বস্তুর আকর্ষণে তৈরি হয়ে যায় । যেহেতু শুরু থেকেই বই মেলায় আসার কথা অনেক পাঠক কিনতে গিয়ে ফিরে এসেছে । শুধু তা নয় দীর্ঘ দিন আমি প্রবাসে ছিলাম তাই অনেক প্রবাসী ও বইমেলা উপলক্ষ্যে অন্য বইয়ের সাথে আমার বইটিরও খোঁজ নিয়ে ফিরে গেছে । যেহেতু উপন্যাসের পটভূমি জাপানের হোক্কাইডো আইল্যান্ড। তাই জাপান প্রবাসীদের কাছেও আগ্রহের বই । যথা সময়ে বইটি না আসার কারনে যে ক্ষতি হল তা কি শুধুই লেখকের নাকি প্রকাশকেরও? এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রকাশনা কতৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করলেও কোন কারণ দেখায়নি । জানানো হয় খুব শীঘ্রই বইটি মেলায় আসছে । উল্লেখ করা যায় আমি বাংলাদেশের অনেক লেখকের তুলনায় অনেক সৌভাগ্যবান যে শুধু পাণ্ডুলিপি নির্বাচনে আমার বইগুলো প্রকাশ হয়েছে । কোন প্রকাশনার সাথে কোনোরকম অর্থ লেনদেন করতে হয়নি । কিন্তু অনেক লেখক আছেন মোটা অংকের টাকা দিয়েও যথাসময়ে বই প্রকাশ করতে পারে না । আবার বই বাজারজাত করার দায়িত্বও লেখকের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ।

আবার উল্টা ঘটনা ও শোনা যায় প্রকাশকের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকার কারনে যে লেখকের ১০০ কপিও বই বিক্রি হয় না তাকে বড় অঙ্কের টাকা অগ্রিম সম্মানী দেওয়ার কথাও । আসলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং লেখক তৈরীর ক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা না থাকায় যে যার মতো করে সর্বোচ্চ সুবিধা গুলো ভোগ করছে ।
তথ্য প্রযুক্তির সহজ লভ্যতার কারনে এখন অনেকেই ফেসবুক এবং ব্লগে লিখেন। অনলাইনে জনপ্রিয়তার সাথে প্রিন্ট প্রকাশনায় নিজেকে লেখক হিসেবে দেখতে চান । তাই টাকা-পয়সাসহ কিংবা ছাড়া বই প্রকাশে ঝাঁপিয়ে পড়েন ।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গুলো কি যথাযথ ভাবে পাণ্ডুলিপি বাছাই, বানান, এবং বাজারজাতসহ সকল ধরনের দায়িত্ব পালন করছে? বইমেলাকে কেন্দ্র করে দিনে দিনে বাংলাদেশে বৃহৎ বাজার তৈরি হচ্ছে। চাই লেখক আর প্রকাশকের সুন্দর বন্ধন । তাদের যথাযথ কাজের সমন্বয়ে বৃহৎ পাঠক সমাজ তৈরি হতে পারে । দেশের অর্থনীতিতে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি থেকে বৃহৎ আয়ের উৎস হতে পারে । সেক্ষেত্রে লেখক কিংবা প্রকাশকের তেমন কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না । সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন আর নীতিমালা এখন অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রকাশনা শিল্পের উন্নয়নে দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের মর্যাদা রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে । তাহলেই দেশ সত্য আর সুন্দর পথে অগ্রসর হবে।

নুরুন নাহার লিলিয়ান
নিবাহী সমপাদক
মহীয়সী নারী বিষয়ক নিউজ পোটাল।
Email :nurunnahar327@gmail.com