লেখকের জীবনে পাঠকের ভালোবাসা

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 13 April 2017, 03:47 AM
Updated : 13 April 2017, 03:47 AM

ফটো ক্রেডিট: সুনায়না ইসলাম

একজন লেখকের জীবনে পাঠকের ভালোবাসা হলো মহা মুল্যবান গুপ্ত সম্পদের মতোএকটা বিল্ডিংয়ের শক্ত পিলার গুলোর মতোযে কোন দুর্যোগে লেখককে বাঁচিয়ে রাখে পৃথিবীতে হাজার হাজার লেখক আছেন নানা ভাষায় প্রতিটি লেখক তার সময় এবং অভিজ্ঞতাকে নিজের অনুভূতিতে কলমে কিংবা কিবোর্ডে তুলে ধরে কেউ কেউ হয়তো লেখক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে লিখে, কেউ মনের আনন্দের জন্য অথবা কেউ কেউ অজানা কারণে যে হয়তো নিজেও এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে না

কবে থেকে আমি গল্প উপন্যাসের পাঠক আমার মনে নেই তবে মনে আছে আমি বড় বোনের কাছে থাকা সমরেশ মজুমদার, শরৎ চন্দ্র, সমাসেট কিংবা টলস্টয় এর সব বই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম অদম্য কৌতূহল যা এখনও আছে এমন করে কৌতূহলী হতে গিয়েই একদিন ভাবলাম এই যে যেমন গল্প আমি পড়ি ঠিক তেমন অনেক কাহিনী আমার অভিজ্ঞতায় নিজের লেখা ডায়রি থেকে কিছু কিছু নিয়ে একটা গল্প লিখে ইত্তেফাকে দিয়েছিলাম একদিন সকালে দেখি লেখকের নামের জায়গায় আমার নাম বার বার নামটা দেখছিলাম

এরপর পড়াশুনার ব্যস্ততা কিন্তু অভ্যাস বলে কথা ফাঁকে ফাঁকে প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখেই যাই লেখা চলতে থাকে তিন বেলার খাবারের মতো নিয়ম করে

তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী অবস্থায় বান্ধবীদের অনুরোধে একটা পান্ডুলিপি জমা দিয়েছিলাম আগামী প্রকাশনীতে আহা কোনদিন ভুলবোনা ধ্রুব দা আমার প্রচ্ছদকারক হয়েছেন যেমন করে আমি বলেছি ঠিক তেমন করেই করেছেন আমি একটি সুন্দর বইয়ের মালিক হয়ে গেলাম এরপর কয়েকমাস পর একদিন দুপুরে শিখা প্রকাশনীর থেকে কল এলো পান্ডুলিপি জমা দিলাম একজন নতুন এবং নামহীন লেখককে ডেকে নিয়ে বই প্রকাশ অনেক ভাগ্যের ব্যাপার

পরপর আরও তিনটি বই আমার হয়ে গেল এরপর অনেক বড় বিরতিপ্রায় বছর অনেক অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জীবন এগিয়ে যেতে লাগলো পাখির মত উড়ে উড়ে চলা জীবনে স্থিরতা পেলাম না কিন্তু সব কিছুর পর মানুষকে কোথাও থামতে হয় নতুন করে পুরোনোকে ফিরে পেতে এর মধ্যে সময়ের ইতিহাসে তথ্যপ্রযুক্তি লেখার জগতকে অনেক সহজ করেছে ফেসবুকে বাংলা চলে এল বাংলায় নিজের মনের অনুভূতি প্রকাশের শান্তি বুঝাবার নয় আবার মনে হল একটা পান্ডুলিপি যা আমার সাথে সাথে গ্রামশহর আর দেশবিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটা কে কাগজে রূপ দেই

সব কিছু ঠিকঠাক পনেরদিন পার হয়ে গেল বই নেই শিখা প্রকাশনীর স্টলে কারণ একটা রহস্য হয়ে গেছে মজার সব নাটকীয়তা আমি ব্লগে সবার মতো শেয়ার করি আমার উপন্যাস অরোরা টাউন আসছে সবাই স্টল থেকে ফিরে যায় তারপর বাতাসের কাছে জানলা প্রেস থেকে ফাইনাল কপি হারিয়ে গিয়েছিল তারপর অনেক ঘটনার পর এই বই মেলায় ২৫ তারিখে আসে আমারও এমন ধৈর্যশীল পাঠক আছে জানা ছিল না ফেসবুকে সাহিত্য গ্রুপে পাওয়া কিছু আপু প্রতিদিন বার বার ফিরে গিয়েও শেষে বইটি কিনে আমাকে জানায় এর মধ্যে প্রথম পাঠক যাকে কোনদিন দেখিনি তার নাম সুনায়না ইসলামআমার ফেসবুক বন্ধুমেয়েটি প্রচুর পড়াশুনা করে, সে সাহিত্য প্রেমী আমার বইটি কিনে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে ইনবক্সে আমাকে প্রথম সারপ্রাইজ দেয় অনেক ধরনের প্রতিক্রিয়া নানা রকমের মানুষ, নানা রকমের ভাবনা ক্যান্টনমেন্ট নিবাসী সুনায়নার মতো পুরনো ঢাকার মুক্তা খাগড়া ছড়ির তানিয়া, জাপান প্রবাসী সাকিলা, আমেরিকা প্রবাসী নুসরাত যারা সবাই অপরিচিত মানুষের আবেগ অনুভূতি গুলোর কাছে সত্যি আমার হৃদয় আপ্লুত হয়সব ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা যা যা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা দিয়ে যায় নতুন কিছু ভাবতে শেখায়

একজন লেখকের জীবনে পাঠকের ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি প্রাপ্তি কিছু হতে পারে নাযদিও আজকাল লেখা বিষয়টা আর শিল্প সাধনা নয়শিল্প বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে জানি না এই ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা তবে অনুভব করলাম এত দীর্ঘ সময় দূরে থাকার পরও কেউ কেউ আগের মতোই আছে আসলে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা নিজ মহিমায় টিকে থাকে নিয়মিত নিজ উদ্যোগে যখন কেউ বইটির খোঁজ নেয় আমি সত্যি অবাক হই মনেহয় কি হবে অন্য ক্যারিয়ারের অন্ন আহার একভাবে হবেই পুরোটা সময় দেই পান্ডুলিপির কাছে যদি কোন দিন নিজেকে হারিয়ে ফেলযদি কোন একদিন নিজেকে অজানা কারণে খুঁজে না পাই হয়তো এই যে পাঠকের ভালোবাসা তা আমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে একশত জন পাঠক হয়তো একদিন হাজার হবে একদিন লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে আজকাল লেখক হওয়ার একটা ভূত আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় যে ভূতটা কেবলই পাঠকের ভালবাসা চায় চাওয়ার এই পথটায় লেখা এক ওষুধ যা হৃদয় কে সুস্থ রাখে তাই আজকাল সব অসুস্থতার মাঝে আমি হয়তো সুস্থ আছি সুস্থতা আছে বলেই বেঁচে থাকাটা আছে নিদারুণ পাঠকের ভালোবাসা আছে বলে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা আছে বলে

যেকোন প্রশ্ন বা যোগাযোগ-

nurunnahar327@gmail.com