একদিন জাপানি আইনুদের গ্রামে (পর্ব- ১)

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 1 May 2017, 04:26 AM
Updated : 1 May 2017, 04:26 AM

.

জাপানি আইনুদের কথা অনেক জাপানিরাই জানে না। অবাক করার মতো হলেও এটাই সত্যি। পৃথিবীতে কতো রকমের জাতি আছে। কতো রকমের মানুষ আছে। কতো রকমের সংস্কৃতি আর জীবনাচরণ আছে। সব তো আর সবার জানার কথা নয়। জাপানি সিনিয়ররা আইনুদের সম্পর্কে জানলেও নতুন প্রজন্মের কাছে এই জাতি নিয়ে তেমন কোন গুরুত্ব নেই। ধারণা করা হয় জাপানের পুরনো সময়ের অনেক ভাষা এবং সংস্কৃতির অনেক কিছুই আইনুদের কাছে থেকে পাওয়া। কিন্তু কেন জানি জাপানিরা এখন তেমন কোন আগ্রহ দেখায় না এই জাতি সম্পর্কে।

.

তখন শীতের সময়। এমন একদিন আমি এবং আমার স্বামী সব কাজ দ্রুত শেষ করে ঘুমিয়ে গেলাম। কারণ পরেরদিন সকাল পাঁচটায় আমাদের জাপানি দাদা-দাদি আমাদেরকে জাপানি আইনুদের গ্রাম দেখাতে নিয়ে যাবে। ঘুরাঘুরির ব্যাপারে আমার তীব্র আগ্রহ। আমার ক্লান্তিহীন আগ্রহ দেখতে জাপানি দাদা-দাদি ভীষণ আনন্দ পায়। তাই তারাও তাদের দেশ দেখানোর জন্য একের পর এক ভ্রমণ পরিকল্পনা করেন। যত পরিশ্রমই করি না কেন, যত ক্লান্ত থাকি না কেন। যখন তারা পরিকল্পনা করেন আমরা না করি না।

পাঁচটা বাজার দশ মিনিট আগেই দেখি তাদের গাড়ি নিচে অপেক্ষা করছে। বাড়তি শীতের পোশাক এবং খাবার দাবার সব গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। আমরা তখন জাপানের হোক্কাইডো আইল্যান্ডের সাপ্পরো সিটিতে থাকি। আমাদের বাসার নাম সানিসাইড হাউজ। সেই সানিসাইড হাউজের পাশেই একটা টানেল। টানেলে ভিতর দিয়ে গাড়ি চলতে লাগলো।

.

শীতের সকাল। কিছুতেই ঘুমের ঘোর কাটেনা। কিছু দূর যেতেই এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল চা পর্ব। জাপানি দাদা রিউহে সাইতো রান্না করতে ভালবাসে। তিনি ফ্রেঞ্চ খাদ্য এবং সংস্কৃতি খুব ভালবাসে। নতুন নতুন ড্রিঙ্ক, ফ্লেভার ভাল লাগার বিষয়। সেদিন সে আপেল ফ্লেভারের চা তৈরি করেছে। ঘুমের ঘোরে আপেল চা পান করতে ভালই লাগছিল।

চা এর সাথে শুরু হল আইনুদের গল্প। আমাদের দাদী চিয় সাইতো খুব সহানুভূতিশীল আইনুদের ব্যাপারে। তিনি নিজেদের দেশ এবং পুরো ব্যবস্থাপনার উপর কিছুটা সমালোচনাও করলেন। এই দিকে সাই সাই করে দাদা রিউহে সাইতো তুষাড়ে ঢাকা পথে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।

দাদির হাতে মানচিত্র এবং বেশ কিছু বই। বইগুলোতে দেখলাম ইংরেজিতে জাপানি আইনুদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিষয়ক অনেক কিছু আছে।

.

The Ainu জাপানিজরা লিখে The Aynu আবার Russian ভাষায় যা Ajny লেখা হয়। ইন্ডিজেনাস পিপল হিসেবে আইনুদের মনে করা হয় জাপানিদের আদি মানুষ। এক সময়ে এই জাতিকে জাপানের উত্তর-পশ্চিমের হনশু দ্বীপে এবং রাশিয়ার সাখালিন, কুরিল দ্বীপ এবং কামছা্টকা পেনিনসুলাতে বসবাস করতো।

ধারণা করা হয় জাপানের মেইজির সময়ে বা তার পরবর্তী সময়ে ১৮ শতকে ৮০০০০ হাজার আইনু জাতি ছিল। এর মধ্যে ১৮৬৮ সালে ১৫০০০ হাজার হোক্কাইডোতে, ২০০০ হাজার রাশিয়ার সাখালিনে, ১০০ কুরিল দ্বীপে ছিল। সময়ের সাথে সাথে তারা ছড়িয়ে পড়ে। এবং জাপানিদের সাথে মিশে যায়। এদের অনেকেই তাদের পূর্ব ইতিহাস বা পূর্ব পুরুষ সম্পর্কে কিছু জানে না। ধারণা করা হয় আইনুরা মাছ ধরত এবং শিকারীকরে জীবিকা নির্বাহ করতো। শ্যামন মাছ আর হরিণ শিকার ছিল তাদের প্রিয় কাজ।

.

কিন্তু তখন জাপানের মেইজি সরকারের পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক পালা বদলের পর আইনুদের ভাগ্যেও অনেক পরিবর্তন হয়। অনেকেই আইনুদের দাস-দাসি করতে বাধ্য করত। যা ছিল আইনুদের প্রতি জাপানিদের করা খুব অন্যায় কাজ।

.
(চলবে)