একজন তাজিন আহমেদের মৃত্যু এবং আমাদের মিডিয়া জগৎ

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 27 May 2018, 08:17 AM
Updated : 27 May 2018, 08:17 AM


প্রয়াত অভিনেত্রী এবং সাংবাদিক তাজিন আহমেদ জল

অনলাইন,প্রিন্ট মিডিয়া, আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন নিউজে আর ইউটিউবে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের লুকানো জীবন যুদ্ধ আর মৃত্যুটা শুনলে যে কারও চোখের পানি এনে দিবে ।

এক সময় নিউজ পেপার আর টেলিভিশনে চাকরি করেছেন। নিজের প্রোডাকশন হাউজও ছিল । উনার মা অমোঘ নিয়তি কিংবা চক্রান্তের শিকার হয়ে চেক জালিয়াতির অভিযোগে গাজী পুরের কাসিমপুর কারাগারে জেল খাটছে। আগামি মাসে শাস্তি শেষ হবে। এর মাঝে একমাত্র সন্তানকে হারালেন।

বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ফেসবুক আপডেটে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং  অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর ফেসবুক লাইভ থেকে শোনা যায় হাসপাতালের খরচ কে বা কারা বহন করবে এ নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব ছিল। শেষে অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকি এবং অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিম সব দায়িত্ব নেন। তারপর তার দাফন হয়।

মিডিয়া জগতে অনেক ধনী শিল্পী আছেন। অনেক ক্ষমতাবান লোকজন রয়েছেন। কেউ কি তাকে অর্থনৈতিক ভাবে একটু সাহায্য করতে পারতেন না?

১৯৯২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা সাধারণ মানুষরা একজন সুশীল, মেধাবী আর কর্মদক্ষ তাজিন আহমেদকে চিনতাম।

শিক্ষিত এবং কর্মদক্ষ তাজিন আহমেদের একান্ত জীবন যুদ্ধের গল্প আমরা জানতাম না। সেই ছোট বেলা থেকে তাজিনের অভিনয় দেখি। উনার লেখা পড়ি । একজন দর্শক কিংবা পাঠক হিসেবে উনার প্রতি সম্মান দেখানো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।


মা-বাবার সাথে ছোট তাজিন আহমেদ জল

এটা সত্য যে মিডিয়ায় যারা কাজ করে অধিকাংশই নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। যত রঙিন ভুবন তত প্রহসনের গল্প। যারা অনলাইন পত্রিকা ,প্রিন্ট মিডিয়া বা টিভিতে কাজ করে বেশির ভাগেরই বেতন খুব সামান্য। দূর থেকে কালারফুল মনে হলেও মিডিয়া ভীষণ যুদ্ধের জায়গা।

খালেদা আক্তার কল্পনা, রাণী সরকারসহ আরও অনেকের দু:খের কাহিনী জেনেছি আমরা। প্রশ্ন হচ্ছে শিল্পী সংগঠনগুলো কী করে?  অনেক শিল্পীরই দামি বাড়ি-গাড়ি আছে,  তারা বিদেশ ভ্রমণেও যান। তারা কীভাবে সহকর্মীদের পাশে না দাঁড়িয়ে, সামাজিক দায়িত্ব পালন থেকে দূরে থাকেন?

২০০২ সালে এক চাইনিজ মেয়ের সঙ্গে  কবি জসিম উদ্দিন রোডে মামার বাসা যাচ্ছিলাম। পথে পপ গায়ক আজম খানের বাসা । মেয়েটাকে বললাম, "এটা আমাদের দেশের সুপার স্টার পপ গায়কের বাড়ি।"

চাইনিজ মেয়েটি ভাঙ্গা চোরা বাড়ির দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল ,"তোমাদের বিখ্যাত পপ গায়কের বাড়ির এমন গরীবি দশা কেন? আমাদের দেশের শিল্পীদের বাড়ির আশেপাশের অনেকখানি এলাকা জুড়ে পুলিশ পাহাড়ায় থাকে। শিল্পীর সম্মান সবার উপরে।"


স্বামী রুমি রহমানের সাথে প্রয়াত তাজিন আহমেদ

আমাদের দেশে কেউ কোনো সেক্টরে শিল্পী হতে চাইলে তাকে অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে হয়। এখনও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা এখানে তৈরি হয়নি। অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ অভিমানে হয়তো নিভৃতে থেকেছেন। উনার খুব কাছের মানুষরা ইচ্ছে করলেই উনাকে সহযোগিতা করতে পারতেন।

অতীতে অনেক শিল্পীকে দেখা গিয়েছে যথেষ্ট স্বাবলম্বী হওয়ার পরও সরকারি অনুদান নিতে। আসলে সবাই  অন্যের সহানুভূতি নেওয়ার জন্য হাত পাততে পারেনা। সবার ব্যক্তিত্ব এক রকম থাকে না। তবু একজন শিল্পীর বিপদে অনেক ভাবেই তাকে সাহায্য করা যায়। কনসার্ট, নাটকসহ অনেক কিছুই আছে। শুধু দায়িত্বশীল মানুষের উদ্যোগের অভাব।