রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম চল্লিশ পেরিয়েছি আমরা। আর এই চল্লিশ বছরে আমাদের অর্জন কম নয়। ঘনত্বের দিক দিয়ে আমাদের জনসংখ্যা বিশ্বের অন্যতম।
দুর্নীতিতেও কয়েক বার আমরা সেরা হয়েছি। তবে আমাদের ছেলেরা ক্রিকেট খেলে এবং আমাদের গার্মেন্টস কর্মীরা পোষাক বিপ্লবের মাধ্যেমে এই দেশ কে নিয়ে গেছেন ভিন্ন উচ্চতায়।
গর্ব করার আরো অনেক কিছুই আমাদের রয়েছে।
শিল্প সাহিত্যে ঐতিহ্য সব মিলিয়ে ভাল আছি আমরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও মানুষে মানুষে সম্প্রীতি রয়েছে বলেই আমরা উতরে যাচ্ছি যে কোন বাধা।
তবে কয়েক বছর আগে আমাদের মুহাম্মদ ইউনূস যখন নোবেল পুরস্কার পেল সারা বিশ্বে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হল। মূলত তার ক্ষুদ্র রিন এবং গ্রামীন বাংকের সাফল্যর হাত ধরেই পুরস্কার দেয় নোবেল কমিটি।
সারাদেশে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা।
তবে সেই আনন্দ স্থায়ী হয়নি। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভাবছে মুহাম্মদ ইউনূসের এই পুরস্কার পাওয়ায় হয়ত শেখ মুজিব সাহেবের অবদান ভুলে যাবে নতুন প্রজন্ম!
তাছাড়া হাসিনার ১৯টি ডিগ্রি অর্জন এর পরও কেন আজও তাকে নোবেল দেওয়া হলনা এই নিয়ে দলের মোসাসাহেবদের ঘুম হারাম।
পত্র-পত্রিকায় এই নিয়ে বির্তক চলছে আজও। দেখা যাচ্ছে অন্য ইস্যুর মত এই ইউনুস ইস্যুতেও দেশের প্রধান দল দুটির অবস্থান দুই মেরুতে।
মুহাম্মদ ইউনূসের হারিয়ে যাওয়া সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে ঘোষনা করে ছিলেন বিরোধী দলের প্রধান বেগম জিয়া।
সম্প্রতি তিনি বলেছেন,দুর্নীতির জন্য শেখ হাসিনাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া যেতে পারে–!
অথাৎ নোবেল নিয়ে রাজনীতি থামেনি। চলছে ,চলবে। মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতিবিদদের রোষের স্বীকার হয়েছেন।
ভদ্রলোককে নিয়ে এই কাদা ছোড়াছুড়ির খবর আজ বিশ্বের সবর্ত্র আলোচনার খোরাক হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রভাবশালী আমেরিকান দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে নিয়মিত কলাম লেখক নিকোলাস বলেন, "বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ঈর্ষান্বিত। কারণ তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।"
এসব দেখে বিরক্ত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলে ছিলেন, নোবেল পুরস্কার কি ছেলের হাতের মোয়া – ..!
সবচেয়ে বড় মোসা সাহেবি করে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম । তিনি আদালতে বলেছেন, দেশে
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা!
কত বড় মাপের মোসা সাহেব যে সরকারী কর্মকর্তারা হতে পারেন তা বোঝা গিয়ে ছিল এই কথায়।
তবে নোবেল না পেলেও আমাদের প্রধান মন্ত্রী বেশ কিছু পুরস্কার অর্জন করে নিয়েছেন। তার তালিকা দেখুন-
১। ডক্টর অব লজ – (১৯৯৭) =বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় = যুক্তরাষ্ট
২।ডক্টর অব লজ – (১৯৯৭) = ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় = জাপান
৩।ডক্টর অব লিবারেঠ আর্টস (৯৭) = ডান্ডি আবার্তে বিঃবিঃ = ব্রিটেন
৪।ডক্টর অব লিটারেচার (৯৯) = বিশ্বভারতী বিঃবিঃ = ভারত
৫। ডক্টর অব ল = ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি = অস্ট্রেলিয়া
৬।ডক্টর অব লজ (৯৯) = ঢাকা বিঃ বিঃ = বাংলাদেশ
৭।ডক্টর অব লজ (৯৯) = ক্যাথলিক বিঃ বিঃ = বেলজিয়াম
৮। ডক্টর অব সাইন্স (২০০১) = বঙ্গবন্ধু কৃষি বিঃবিঃ = বাংলাদেশ
৯। ফেলিক্স হোফে বোইনি (৯৮) = ইউনেস্কোর
১০। সেরেস পদক (৯৯) = এফ এ ও
১১। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পদক (৯৭) = ভারত
১২। পল হ্যারিস ফ্যালো (৯৭) = রোটারি ফাউন্ডেশন
১৩। মাদার তেরেসা পদক (৯৭) = ভারত
১৪। গান্দী পদক (৯৮) = ভারত
১৫। পার্ল এস বার্ক পদক (২০০০) = ম্যাকন ওমেনস কলেজ = যুক্টরাষ্ট
১৬। রাষ্ট্র প্রধান পদক (৯৭) = লয়ন্স ক্লাব = যুক্টরাষ্ট্র
১৭। পার্সন অব দ্য ইয়ার (২০০০) = আফ্রো এশিয়ান লইয়ার্স ফেডারেশন
১৮। ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০১০)= ভারত
১৯। জাতিসংঘ পদক (এমডিজি) (২০১০)= নিউইয়র্ক, যুক্টরাষ্ট্র
অবশ্য অনেকেই বলে থাকেন এসব অর্জন করেছেন লবিং এর মাধ্যেমে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। ভিন্ন মত থাকতেই পারে তবে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি হাসিনার এই অর্জনে খুশি। আমি আরো খুশি হবো যদি তিনি যদি সত্যি নোবেল প্রাইজ পান।
কিন্তু তার দলের কর্মীরা কী বলছে?
আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, "রাজনীতিতে আমি শেখ হাসিনার সঙ্গে ২৬ বছর ধরে আছি। আমি মনে করি তার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত।"
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার শেখ হাসিনারই প্রাপ্য ছিল। কিন্তু চক্রান্ত করে তাকে সেই নোবেল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তবে এই প্রসংগে আমিনী সাহেব বলেছেন , শেখ হাসিনা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন !
টিভি টক শো গুলোতেও চলছে নোবেল নিয়ে নানান মুনীর নানা মত।
সরকারী দল ইউনুসকে জাতীয় শত্রু বলে অভিহিত করেছেন, অর্থমন্ত্রী আবদুল মাল মুহিত কয়েক দিন আগে বলেছেন ইউনুসের নেতিবাচক প্রোরচনার জন্যই দেশে নতুন করে বিদেশি বিনোয়োগ হচ্ছে না!!
মির্জা ফখরুল অবশ্য বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নোবেল না পাওয়ায় ড. ইউনূসকে নিয়ে গাত্রদাহ হচ্ছে ……..।
এত কিছুর পরও মোসাসাহেব ও হাইব্রিট নেতা ও সুবিধালোভি বুদ্ধিজীবীরা শেখ হাসিনাকে বিশ্বনেত্রী, বঙ্গ ভাষাকন্যা, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত, ডটার অব পিস, গণতন্ত্রের মানসকন্যা ইতাদি উপাধীতে ভূষিত করে তাকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার জন্য অব্যাহতভাবে দাবি জানিয়ে আসছে।
কিন্তু কথা হল এই নির্লজ্জ গলাবাজি করে আর ইউনুসকে বেকায়দায় ফেলে আসলেই কি নোবেল অর্জন করা যাবে?
এটা কি সম্ভব??
উত্তর হল না এবং না।
বরং এতে করে দেশের ভাবমূর্তি বরং প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এই স্থুল রাজনীতির জন্য একটি ভাল চলতে থাকা গ্রামীন ব্যাংককে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে।
আশা করছি সরকারের শুভ বুদ্ধি উদয় হবে। নোবেল নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হবে।