অসৎ ব্যবসায়ী, ভোক্তা অধিকার এবং বাণিজ্যমন্ত্রী

ওলি
Published : 17 July 2011, 08:26 AM
Updated : 17 July 2011, 08:26 AM

বিডিনিউজে প্রকাশিত বাণিজ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্য হয়তো অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান সম্প্রতি বলেছেন যে ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী শুধু মুনাফার জন্য ব্যবসা করেন। যখন মন্ত্রী এ কথা বলেন তখন বোঝা যায় যে অবস্থাটা কতটা ভয়াবহ। তবে, সরকার কি করছে? ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ কতটুকু?

বর্তমান সরকারের সময়ে সংসদে পাস হওয়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গঠিত হয়।জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রথম মহাপরিচালক হলেন অতিরিক্ত সচিব আবুল হোসেন মিয়া। অতিরিক্ত সচিব আবুল হোসেন মিয়াই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত এ অধিদপ্তরে নিযুক্ত প্রথম কর্মকর্তা। তবে, অধিদপ্তরের কার্যক্রম সীমিত এবং তা ভোক্তাদের আস্থা অর্জনে এখনও সক্ষম হয়নি।

মহাপরিচালকের ক্ষমতা ও কার্যাবলী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ২১ ধারায় বর্ণিত আছে। আইনের ২১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, "এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ভোক্তা সাধারণের অধিকার সংরক্ষণ, ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ এবং ভোক্তা-অধিকার লঙ্ঘনজনিত অভিযোগ নিষ্পত্তি করিবার লক্ষ্যে সমীচীন ও প্রয়োজনীয় বলিয়া বিবেচিত সকল কার্যক্রম মহাপরিচালক গ্রহণ করিতে পারিবেন"।পণ্যের বিক্রয় বা সরবরাহের ক্ষেত্রে ওজন বা পরিমাপে কারচুপি করা হচ্ছে কি-না তা তদারকি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কোনো পণ্য বা ঔষধে ভেজাল মিশ্রণ করা হচ্ছে কি- না তদারকি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ মহপরিচালকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। পণ্যের ওজন বা পরিমাপে কারচুপি করা এবং ভেজাল মিশ্রণ করা বাংলাদেশে একটি সাধারণ প্রথায় পরিণত হয়েছে এবং ভোক্তারা কমবেশি সবাই তার ভুক্তভোগী।

ভোক্তা অধিকার আইনের ১০ (১) এ বলা হয়েছে, "এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, প্রত্যেক জেলায় জেলা ভোক্তা-অধিকার সংরৰণ কমিটি নামে একটি জেলা কমিটি থাকিবে"। এছাড়াও আইনে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু, এই কমিটিগুলো আদৌ গঠিত হয়নি কিংবা তাদের কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হয় না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে ভোক্তা সরাসরি কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন না । ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। উপরন্তু, অভিযোগ দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে যদি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা না হয়, তাহলে সে মামলা আদালতে আমলযোগ্য হবে না।

বিশ্বের উন্নত দেশে এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতেও ভোক্তা আইন যথেষ্ট কার্যকর। কনজিউমারিজমের বিকাশের সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা ভোক্তা অধিকারেরর ব্যাপারে সংবেদনশীল হয়েছেন। পাশ্চাত্য দেশে সরকারগুলো এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেছে। তবে, ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়নের ব্যাপারে বাংলাদেশ এখনও যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।