ক্ষমাবাজি

ওলি
Published : 20 July 2011, 10:44 AM
Updated : 20 July 2011, 10:44 AM

পত্রিকার পাতায় অনেক পাঠকই খবরটা দেখে শংকিত হয়েছেন। ক্ষমা মহৎ গুণ, কিন্তু এভাবে হত্যাকারীদের দলীয় বিবেচনায় ক্ষমা করে দিলে এই গুণ আর মহৎ থাকে? সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতার ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটিয়ে অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ট্যাক্স ফাঁকিবাজ থেকে শুরু করে খুনিরা যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পেয়ে যায়, তখন সুশাসনের যে বারোটা বেজে যায় তা সহজেই অনুমেয়।

আসলে দোষটা রাষ্ট্রপতির কতটুকু তা খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে। রাষ্ট্রপতি শুধু সিগনেচার করেন। তিনি সিগনেচারের মালিক। সরকারি সিদ্ধান্তগুলো যে গুলোতে তার সই লাগে সেগুলোতে সিগনেচার করাই তার প্রধান কাজ। বাংলাদেশীয় মডেলের সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির বেশি কিছু করার নেই। সুযোগ থাকলেও এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সিগনেচার করতেন কি-না সে প্রশ্ন কেউ করতে পারেন। তবে, রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের খুনিকে ক্ষমা করে ক্ষমাবাজির এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।

শ্রদ্ধেয় বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুশাসন বিষয়ক একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, 'দেশ এখন বাজিকরদের হাতে। ভর্তিবাজি, নিয়োগবাজি, টেন্ডারবাজি, দলবাজি, মতলববাজির রকমফের দেখে মানুষ দিশেহারা।' এখন তার সাথে যোগ হয়েছে, 'ক্ষমাবাজি'।

রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের হিড়িক পড়েছিল কিছুদিন আগে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা আছে মামলা প্রত্যাহারের। এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই মামলা প্রত্যাহার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন স্ক্যান্ডালের খবর ছাপা হয়েছে পত্রিকাগুলোয়। এবার তার সাথে যোগ হয়েছে খুনের মামলায় সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্তের রাষ্ট্রপ্রতির ক্ষমা প্রদর্শনের ঘটনা।

আসলেই কি সরকার আদতে ক্ষমাশীল? দুনিয়ার তাবৎ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন মৃত্যুদণ্ড বাতিলের পক্ষে ওকালতি করে। ১৫ই আগস্টের ঘটনার নায়কদের ফাঁসি কার্যকর না করার আহবান জানিয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সরকার কিন্তু তাতে কান দেয়নি। কিন্তু, অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের খুনীর আবেদনে কাজ হয়েছে কারণ সে দাবী করতে পেরেছে, "আমি তোমাদেরই লোক"।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে সরকার দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার আশা পুরোপুরি ত্যাগ করেছে। হুড়োহুড়ি করে সংবিধান সংশোধনীসহ সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডগুলো তারই ইঙ্গিতবহ। "যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ"- প্রাচীন এই প্রবাদের সত্যতা প্রমাণে যেন সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে।