আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয়

ওলি
Published : 15 March 2012, 09:44 AM
Updated : 15 March 2012, 09:44 AM

আমি শিরোনামটি ধার করেছি বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং ডেইলী স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের কাছ থেকে। তার মূল লেখাটি অবশ্য ইংরেজীতে । ১২ই মার্চের বিরোধীদলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার এবং সরকারী দলের অগণতান্ত্রিক আচরণের ব্যবচ্ছেদ করেন মাহফুজ আনাম দি ডেইলি স্টারের মঙ্গলবারে প্রকাশিত লেখা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরকে জিম্মি করায় যে আওয়ামীজোটের রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে তাই ফুটে উঠেছে শ্রদ্ধেয় সম্পাদকের লেখায়।

১২ই মার্চের মহাসমাবেশকে ঠেকাতে গিয়ে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাতে সরকারের দেউলিয়াপনা ফুটে উঠার পাশাপাশি সাধারণ জনগণের দুর্ভোগের বাড়িয়ে তুলেছে। সরকার যেভাবে দলীয় গুণ্ডাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে, তীব্র ভাষায় তার সমালোচনা করেছেন এই শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক। সরকার মুখে গণতান্ত্রিক বুলি আওড়ালেও কাজে যে কতটা গণতান্ত্রিক, তা সরকারদলীয় লোকদের কাজেই প্রমাণ হয়েছে।

মন্ত্রীদের নাশকতার আশংকা যে কতটা অন্তসারশূন্য তাও লেখায় তুলে এনেছেন দেশের সবচেয়ে সুনামধন্য ইংরেজী পত্রিকার এই সম্পাদক। মন্ত্রীরা বারবার করে একই কথা বললেও তা সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ঠেকেনি। প্রমাণ ছাড়া এধরণের অভিযোগ সরকারের দেউলিয়াত্বকেই প্রমাণ করেছে।

কি ঘটেছে গত সাড়ে তিন বছরে? ভুমিধস বিজয়ে চার-পঞ্চমাংশ আসনে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসা দলের কেন এমন দুরবস্থা হল? বেশ কয়েকটি প্রশ্ন দিয়ে লেখাটি শুরূ হয়েছে। কখন একটি সরকার রাজধানীতে পৌছাবার সব ধরনের ট্যান্সপোর্ট বন্ধ করে দিয়ে সিটিকে অবরূদ্ধ করে? কোন অবস্থায় সব ধরনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয? কখন সরকার এমন অবস্থার আতংক তৈরী করে যে মালিক দোকানের ঝাপি তুলে রাখে লুটপাটের আশংকায়? কখন একটি দেশের সরকার নিজের জনগণকে দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনে বাধা প্রদান করে? কখন সরকার দলীয় নেতারা টেলিভিশনে চরম মিথ্যা বলে যখন বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন? কখন ক্ষমতায় থাকা দল পেটোয়া বাহিনীকে জনগণের উপর লেলিয়ে দেয় এই ভয়ে যদি তারা বিরোধীদলের সমাবেশে যোগ দিয়ে বসে? কোন অবস্থায় একটি নির্বাতি সরকার চরম নিপীড়নমুলক ব্যবস্থার আশ্রয় নেয় বিরোধীদলকে একটি সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া উদ্দেশ্যে?

পরবর্তীত প্যারাতেই তিনি প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন। নিজেদের সম্পর্কে আস্থাহীনতার কারণেই সরকারি দল এমনটি করেছে। জনভিত্তি আছে এমন একটি দল যারা জনসমর্থন সম্পর্কে সুনিশ্চিত এবং যারা তাদের নীতির কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রত্যয়ী, আওয়ামীলীগ যদি সেরকম দল হত তাহলে তারা কোনভাবেই বিএনপির সমাবেশ ভ-ুলের চেষ্টা করত না। মহাসমাবেশের দুইদিনপূর্ব থেকেই তারা যা শুরূ করেছিল তাতে তাদের বিরোধীদের প্রতি জনসমর্থন সম্পর্কে ভীত একটি দল বলেই মনে হয়েছে যারা তাদের বিরোধীদের প্রতি জনসমর্থন প্রকাশ পায় এরকম সমাবেশ হতে দিতে নারাজ। শক্তির এরকম প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে আওয়ামীলীগকে দূর্বলই মনে হয়েছে।

ট্রাজেডী হচ্ছে বিরোধীদের শায়েস্তা করতে গিয়ে আওয়ামীলীগ সাধারণ জনগণকে অপরিসীম ভোগান্তির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সাধারণ জনগণের ভোগান্তির বিবরণ দিয়েছেন এভাবে

১. সাধারণ জনগন যাদের এই রাজনৈতিক কর্মসুচীর সাথে দূরতম সম্পর্ক নেই তারা তল্লাশী, দূর্ব্যবহার, গালাগালের শিকার হওযার পাশাপাশি ঢাকায় প্রবেশ করতে পারেননি কারণ ক্ষমতাসীনররা ভয় পেয়েছিলেন যে যদি তারা সমাবেশে যোগ দেয়।

২. চাকরির সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্য গমনেচ্ছুরা এমনকি পাসপোর্ট এবং টিকেট প্রদর্শনের র্পও ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি

৩. লঞ্চ চলাচলে ব্যাপকতর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।

৪. দেশব্যাপী চলা গণগ্রেপ্তার এবং সন্দেহবশত: গ্রেপ্তারের কথা বলাই বাহুল্য।

দি ডেইলী স্টারে যাত্রীদের উপর সরকারদলীয় পেটোয়া বাহিনীর হামলার ছবি বেরিয়েছে। তাদের একমাত্র অপরাধ তারা ঢাকায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। জনগনের মৌলিক অধিকারের উপর আক্রমণের এই ধরণের ঘটনার নজির খুব একটা নেই। এই কি শাসকদলীয় গণতন্ত্রের নমুণা?

মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে দায়িত্বপালনে বাধা দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানান সম্পাদক তার লেখায়। কয়েকটি টিভি স্টেশনকে মহাসমাবেশটি সরাসরি সম্প্রচারে বাধা দেওয়া হয়। কয়েকটি চ্যানেল যারা জনদূর্ভোগের খবর সম্প্রচার করছিল, বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তখন তাদের হুমকি দেয়। ক্যাবল অপারেটরদের সমাবেশ চলাকালীনসময়ে সম্প্রচারে বিঘœ সৃষ্টি করা হয়। এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র মিডিয়ার স্বাধীনতারই লংঘনই তা নয়, বরং জনতার জানার অধিকারের উপরও আঘাত।

খালেদা কর্তৃক হরতাল আহবানের সমালোচনা করেন সম্পাদক। নৈতিকভাবে তার হরতালবিরোধী অব¯থানের কথা উঠে এসেছে লেখায়। কিন্তুু, লেখকের মতে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারটি আওয়ামীলীগ সহজে উড়িয়ে দিতে পারেন না । এইখানে ক্ষমতাসীনরা ভুল এবং বিরোধীরা রয়েছে সঠিক অবস্থানে। সবার উপস্থিতিতে নির্বাচন চাইলে ক্ষমতাশীনদের এই দাবী মানতে হবে। বিরোধীদের সব দাবির মুলে রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বাচানো এরকম অভিযোগের ফল হীতে বিপরীত হতে পারে বলে লেখক আশংকা প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের নিন্দা জানান তার লেখায়। তথাপি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বতী সরকারের দাবি যৌক্তিক।

পরিশেষে বলা যায় ডেইলী স্টার সম্পাদকের এরকম লেখ্ওা সরকারীদলের নৈতিক পরাজয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিরোধীদলের মহাসমাবেশকে ঘিরে ক্ষমতাসীনদের আচরণ অগণতান্ত্রিক, বেআইনী এবং অ-স্থায়িত্বশীল। এধরনের আচরণ ভোটারদের কাছে ভূল বার্তা পৌছাবে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপারে বলে লেখায় সতর্ক করছেন বিজ্ঞ সম্পাদক।