নিহত শ্রমিকদের মামলার আসামি করে কি দায় এড়ানো যাবে?

ওমর ফারুক ইমন
Published : 9 July 2017, 08:39 PM
Updated : 9 July 2017, 08:39 PM

গাজীপুরের কাশিমপুরে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেডে বয়লার বিষ্ফোরণে নিহত তিন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, 'ডাইং সেকশনে কর্মরত অপারেটর আবদুস সালাম, এরশাদ ও মনছুরুল হক কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে বয়লার ঠিক আছে কিনা দেখতে চালু করেন'। জয়দেবপুর থানার ওসির বক্তব্য 'এই তিন শ্রমিক বয়লার অপারেট করছিলেন তাদের কারণেই বিষ্ফোরণ, মালিক পক্ষের কেউ সেখানে ছিলেন না তাই তাদের মামলার আসামী করা হয়নি'। অথচ কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবু শিহাব জানিয়েছেন 'অনুমতি ছাড়া কারখানায় প্রবেশই সম্ভব নয়, অনুমতি নিয়েই বয়লার পরীক্ষা করছিলেন তারা।' ঘটনার দুইদিন পরে দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

যেখানে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে শ্রমিকদের অনুমতি লাগে, সেখানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বয়লার চালু করা অসম্ভব। এ ঘটনায় আহত বয়লার অপারেটর হারুনুর রশিদের বক্তব্যে উঠে আসে কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলার চিত্র। হারুনুর রশিদ বলেন, 'পুরোটাই কারখানা কর্তৃপক্ষের কারণে হয়েছে। বয়লার রক্ষণাবেক্ষনে সমস্যা ছিল। ঘটনার আগে বেশ কয়েকবার সেফটি বাল্ব সিগন্যাল দিলেও (বিপদ সংকেত) কর্তৃপক্ষ বয়লার চালানো বন্ধ করেনি।'

কারখানার ব্যবস্থাপক ও বয়লার অপারেটরের বক্তব্যেই কর্তৃপক্ষের গাফিলতির চিত্র ফুটে উঠেছে। মামলায় কর্তৃপক্ষকে কোনভাবেই অভিযুক্ত করা হয়নি। উল্টো মামলায় নিহত শ্রমিকদের আসামী করে কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে জয়দেবপুর থানার ওসি বলেছেন 'তদন্তে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।' এখন প্রশ্ন আসে 'সঠিক' তদন্ত ছাড়া কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করা হয়নি তাহলে নিহত শ্রমিকদের অভিযুক্ত করা হল কেন ?

পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের তথ্য অনুযায়ি, চলতি বছরের এপ্রিলে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেডের বয়লারের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়ে চিঠি দেয়া হয় প্রধান কারখানা পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে। দুইমাস পেরিয়ে গেলেও তারা আর চিঠির উত্তর দেয়নি। এরমধ্যেই গত মাসের ২৪ তারিখে বিষ্ফোরিত বয়লারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার একমাস আগেই ফি জমা দিয়ে নবায়নের আবেদন করতে হলেও কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে ঘটনার দিন। বয়লার নবায়নের জন্য আবেদনের কাজটিও নিশ্চয় শ্রমিকের নয়। এখানেও কর্তৃপক্ষ তাদের অবহেলা আর গাফিলতির প্রমাণ দিয়েছে। যার ফলে অকালে ঝরেছে ১৩টি প্রাণ।

তাহলে কি আমরা প্রশ্ন রাখতে পারি 'দায় মুক্তি' দিতেই নিহত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এ মামলা?