দেশ পরিচালনায় পাগল এবং শিশু

অমিত
Published : 6 June 2011, 02:40 PM
Updated : 6 June 2011, 02:40 PM

অতি সম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সবচাইতে আলোচিত বিষয় হল "তত্ত্বাবধায়ক সরকার"। এ ও এক সরকার ব্যাবস্থা যার জন্মই হয়েছিল অবিশ্বাস নামক এক মানবিক চরিত্র থেকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি এবং এর প্রয়োজনীয়তাই বা কি কারনে এরকম না না প্রশ্ন আসতে পারে যেগুলোর ব্যাখা না না "পন্থী" দৃষ্টিকোণ থেকে দেয়া যেতে পারে। আমি সাধারনত সরকার ব্যাবস্থা কিংবা রাজনীতি নিয়ে তেমন চিন্তা ভাবনা বা সোজা কথায় মাথা ঘামাই না। যারা আমার বিগত লেখাগুলো দেখে থাকবেন তারা হয়ত ব্যাপারটি লক্ষ করে থাকতে পারেন। কিন্তু এবার আমি লিখছি কারন কেন জানি "তত্ত্বাবধায়ক সরকার" নামক বিষয়টির মধ্যে আমি একধরনের রসিকতা খুঁজে পাচ্ছি।

বস্তুত তত্ত্বাবধায়ক সরকার হল সেই তৃতীয় শক্তি যে প্রথম এবং দ্বিতীয় শক্তির বিশ্বাসভাজন (আপাত) এবং যার প্রধান দায়িত্ব একটি নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার (যাকে আমরা নির্বাচন বলি) মাধ্যমে বিজিত শক্তির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

এখানে কিছু ব্যাপার থেকে যায়, ১। বিশ্বাসভাজন, ২। তৃতীয় শক্তি এবং ৩। নিরপেক্ষতা। তিনটি ব্যাপারী একে অপরের সাথে সমপৃক্ত। কিন্তু প্রশ্ন হল; ১। বাংলাদেশের মত রাজনৈতিক প্রভাব সর্বত্র দেশে কি আদৌ নিরপেক্ষ প্রধান বিচারপতি পাওয়া সম্ভব?, ২। যিনি প্রধান বিচারপতি তিনি যদি নিরপেক্ষই হবেন তাহলে তার পক্ষে প্রধান বিচারপতি পদে আসা সম্ভব?, ৩। এই ধরনের একজন ব্যাক্তির পক্ষে নিরপেক্ষতার আভরণ জড়িয়ে তৃতীয় শক্তি হিসাবে প্রথম এবং দ্বিতীয় শক্তির মধ্যে একজনকে নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে বিজিত করা সম্ভব? সাধারন দৃষ্টিকোণ থেকে তিনটির উত্তরই না হওয়া উচিৎ। তাহলে যা দাঁড়াল তত্ত্বাবধায়ক সরকার কখনই নিরপেক্ষ হতে পারে না। কারন তাহলে তাকে নিয়োগ দানকারীর প্রতি বর্তমান অদৃশ্য দায়বদ্ধতাকে অবজ্ঞা করতে হবে। যা তিনি করতে পারেন না, কারন তা শর্তে থাকে না।

আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে আমরা না -ই বা বলি কিভাবে? কারন সেই বিশ্বস্ততার জায়গাতেও যে আমাদের ঘাটতি আছে। আমাদের দেশের বর্তমান বা বিগত সরকার এমন কোন দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য রেখে
যেতে পারেন নাই যাকে ধরে আমরা বলতে পারি যে দলীয় সরকারের অধীনেও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।

এই যখন অবস্থা, তাহলে আমরা আমজনতা কোথায় যাব? আমরা কোন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখব? যে দেশে আইনই হল আইন ভাঙ্গা সেদেশে নতুন আইন করে কি লাভ আমাদের? অবশ্য আমাদের সাধারন মানুষের পাওয়া না পাওয়ায় কার কি এসে যায়।

পরিশিষ্ট হিসেবে এটুকু বলতে পারি এদেশকে যদি কেউ বাঁচাতে পারে তবে তারা হল পাগল এবং শিশু। কারন দেশের এই দুই শ্রেণীর লোকজনই বোধহয় নিরপেক্ষতার আদর্শ লিপি মেনে চলে। এই দুই শ্রেণীর মানুষই কেবল পারে এই দেশকে এবং কিছু সংখ্যক লোক বাদে দেশের বাকি মানুষদের বাঁচাতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলুন কিংবা দেশ পরিচালনাই বলুন এই দুই শ্রেণীর মানুষের জাতির আজ বড় প্রয়োজন।