বাংলাদেশে ভারতীয় চলচিত্র এবং গুনীজনদের আর্তনাদ

অরীত্র আহমেদ
Published : 27 Dec 2011, 08:53 AM
Updated : 27 Dec 2011, 08:53 AM

সকালে ঘুম থেকে একটু দেরী করে উঠলাম।দেখি সূর্য মামা আপন শক্তিতে জ্বলে উঠেছে।প্রথম আলোর আগের সংখ্যাটা দেখি টেবিলের ওপরে পরে আছে।টেনে নিয়ে বসলাম(বেড টির বদলে বেড পেপার[বাসি]),দেখলাম আমাদের দেশের কিছু অতীব ভদ্রলোক ভারতীয় ছবির আগমন এর কারনে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ভারতের চিত্র প্রযোজক দের লুঙ্গি বেধেঁ গালি দিচ্ছেন(ভদ্র গালি),মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।কেন রে বাবা?পরে ভাবলাম ঠিক ই তো কথা।গালি দেয়াই দরকার।পক্ষে বিপক্ষে যুক্তির যুদ্ধ শুরু হলো মাথার মধ্যে।ভাবলাম লেখা টাকে লিখেই ফেলি।কবে আবার আবুল ব্লগিং এর ওপর সেন্সির বসিয়ে টাকা মারবে কে জানে।

১.আমাদের শিল্পের ধংস ?
পক্ষেঃ ভারতীয় ছবি গুলো তুলনা মুলক ভাবে চলমান এবং তাদের বেশ ভালো একটা বাজার রয়েছে বাংলাদেশে ইন্টারনেট এবং পাইরেসির কল্যান এ।তাই তাদের প্রবেশ আমাদের বাজার ধধংস করবে এটা অনেকটাই সত্য।

বিপক্ষেঃ আমাদের ছবি শিল্প বলতে আমি মনপুরা,খোঁজ-দ্যা সার্চ,হুমায়ুন স্যার এর কিছু ছবি,অতীত এ হয়ে যাওয়া কিছু সত্যকারের ব্যবসা সফল ছবি,মুক্তিযুদ্ধ বিষক কিছু ছবি(অবশ্যই মেহেরজান না) এবং এই ধরনের ছবিকে বুঝি।আমাদের তথাকথিত সাকিব খান যাকে কতিপয় বাংলাদেশি পরিচালক নাকি কিং খান বলে ডাকেন তার ছবি কে আমি এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে পারলাম না বলে দূঃখিত।তার সাথে আমাদের দেশের হাতির ন্যায় বিশাল দেহ ধারিনী নায়কা দেরকেও বুকে পাথর রেখে উপরের লিষ্ট থেকে বাদ দিলাম।তাহলে আমাদের শিল্প কি আসলেও ধংস হচ্ছে?

২.গুনগত মান এর কি হবে?
ভারতের চলচিত্র নির্মাতারা ছবি বানাচ্ছেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে।বাংলাদেশে এখন এমপেগ-৪ এর ব্যবহার হয়না(খোঁজ-দ্যা সার্চ বাদে),ভারতে একটা সাধারন ড্রামা সিরিয়াল ও এমপেগ-৪ এ করা হয়।আমি নিজেও যে কোন ভিডিওগ্রাফি নিয়ে কাজ করলে এমপেজ-৪ ব্যবহার করি।

কোনটাকে আমি গুনগত মান বলবো?ক্রমাগত ভারতীয় ছবি নকল করে ছবি বানানো যেখানে নায়ক সাকিব খান?কয়েকদিন আগে রাজশাহী উপহার সিনেমা হল ক্রস করে নিউমার্কেট যাওয়ার সময় দেখলাম বস নং ১ নামে একটা মুভির পোস্টার ঝুলানো।বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা তামিল মুভি ডন নং ১ থেকে নকল করা।শাহরুখ কাহ্ন এর রা ওয়ান কে নকল করে মার্কেট এ আসছে বজ্র হৃদয়।এক আপনারা গুনগত মান বলছেন?

দূঃখিত আমি বলতে পারলাম না।ছোট বেলা থেকে জেনেছি নকল করা ঠিক না।আমি সাধু সেটা বলছি না।তবে নকল এর ও লিমিট আছে।

৩.আমাদের ভূমিকা?
এক ছেলেকে বলতে শুনলাম খোঁজ দ্যা সার্চ মুভিটা নাকি পুরাই কমেডি কমেডি লাগে দেখতে।বর্জন করলো আমাদের বিশাল আকারে দর্শক।কেউ জানলো না যে এই ছবিটা আমাদের শিল্পতে তৈরী করা সর্বাধুনিক ছবি।কাহিনীতে জোর নেই মানলাম।তবে সেটার উন্নতির জন্য উৎসাহ কি দিয়েছি আমরা?আমার প্রিয় ব্লগার দারাশিকো ভাই দেখলাম একটা পজেটিভ রিভিউ দিয়েছেন।ঊনি বুঝেছেন।বাকিরা কি বুঝেছেন?

নিজেদের শিল্পকেই উৎসাহ দেন না আবার ভারতীয় ছবি আসলে লুঙ্গি খুলে চিল্লাচিল্লি করেন কেন?

৪.সুধী সমাজ কী করছেন?
আমাদের সূধিসমাজ দেখলাম সমাজে কোথাও কিছু উলটা পালটা ঘটলেই মাঞ্জা মেরে নেমে পরেন লেখা লেখি করে সেই উলটা পালটার গুষ্টি উদ্ধার করতে।সাকিব খান এর এতো জঘন্য ছবি গুলো কি আপনাদের চোখে পড়ে না?নাকি মনপুরা,খোঁজ দ্যা সার্চ দেখার সমইয় আপনাদের হয়নি?তাহলে কিসের ভিত্তিতে আপনারা সুধি সমাজ?দেশের সূ(ভালো) কিসে সেটাই না বুঝলে নামের আগের সুধি টা কেটে দেবেন দয়া করে।

৫.ভারতীয় ছবি কি আসলেও আসা উচিত?
ভারতীয় ছবি কেন আসা উচিত আর কেন নয় সেটাও ভাবার বিষয়।অনেকেই এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু হিসাবে দেখছেন,আগে তাদের বলছি।ভারত এর সাথে আমাদের রাজনৈতিক ভাবে যাই থাকনা কেন শিল্প তার মধ্যে পরে না।এটি সম্পূর্ন আলাদা একটা জিনিস।শিল্প বোঝার বিষয়।অনুভব করার বিষয়।এটাকে নিয়ে গবেষনা করার বিষয়।এটা তর্ক বিতর্কের উর্ধ্যে।এটা নোংরা রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারেনা।কখোনই না।

আনন্দ পাওয়ার অধিকার সবার আছে।হলে এর অনুপ্রবেশ না হয় আন্দোলন করে থামালেন।কিন্তু আসলেই কি এর প্রবেশ ঠেকাতে পারবেন আপনারা?নরটন অ্যান্টিভাইরাসের প্রতিষ্টাতা কোম্পানি সিমেন্টেকের একটা রিপোর্ট এ পরেছিলাম ইন্টারনেট থেকে যেসব লিগাল এবং পাইরেটেড মুভি ডাউনলোড হয় তার শতকরা ৩৫% হলো ভারতীয় ছবি।সারাবিশ্বের ছবি ব্যবসার ৩০% আর্থিক লেনদেন হয় ভারতীয় ছবি থেকে।এসব বলছি এটা বোঝানোর জন্য যে তাদের খুব শক্তিশালী একটা মার্কেট আছে।আমি নিজেও অনেকবার ভারতীয় মুভি ডাউনলোড করেছি নেট থেকে।যদি আমাদের সমাজ এটাকে গ্রহন করতে পারে সেটাকে হলের পর্দায় কেন আসতে দেয়া যাবে না?

যদি হলের পর্দায় এদের আস্তে দিতে না চান তবে সারা বাংলাদেশের সব ডিভিডির দোকান থেকে ভারতীয় মুভি সরিয়ে নিন।পারবেন?পারবেন প্রায় লক্ষাধিক সাইট বন্ধ করতে যেগুলা থেকে ভারতীয় মুভি ডাউনলোড করা যায়?

আর হল মালিকদের কি দোষ?তারা কি সাকিব খানের কোয়ালিটি লেস জিনিস দিয়ে অল্প কিছু আয় করে ব্যপক লস দিবে?তাদের কি লাভ?আমি নিজেই দেখেছে একের পর এক হল মালিকরা লসের কারনে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে।তারা কি একটা পয়সাও আশা করে না তাদের লাখ লাখ টাকা ব্যায় করে তৈরী করা হল থেকে?ভারতীয় ছবি যদি আমাদের অর্থনীতি তে সামান্য একটু অবদান রাখতে পারে সমস্যা কি?আমার বিপক্ষেও অনেকে যুক্তি দেখাবেন।ভাইরে যুক্তির পসরা সাজায়ে লাভ টা কি?আসেন না দেশের জন্য কিছু করি।অযথা যুক্তির বহর লাগিয়ে লাভ আচ্ছে?

***
অরীত্র আহমেদ
প্রোগ্রামার,ব্লগার
www.oritro.com
oritromax@gmail.com
+8801750034242