ফেসবুক ও বাংলাদেশ

অরীত্র আহমেদ
Published : 11 Jan 2012, 09:13 AM
Updated : 11 Jan 2012, 09:13 AM

আমাদের দেশ এর প্রযুক্তি গত খাত গুলোর অবস্থান আমাদের কাছে খুব একটা পরিষ্কার নয়।আমাদের প্রযুক্তিগত ক্ষেত্র যে অনেক পিছিয়ে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।এখনো আমার ধারনা বাংলাদেশের শতকরা ৫০% ভাগ ফেসবুক ব্যবহার কারী ইন্টারনেট বলতে ফেসবুক কেই বোঝে।শতকরা ৭০% ফেসবুক ব্যবহার কারী ফেসবুক শুধু মাত্র ব্যবহার করেন চ্যাটিং এর জন্য।তাদের কাছে সোস্যাল নেটওয়ার্কিং মানেই ফেসবুক।আসুন আরো বিস্তারিত জানি।

আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় আইএসপি(ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার)(en.wikipedia.org/wiki/Internet_service_provider) হলো গ্রামীন ফোন।আমি এ পর্যন্ত অনেক নেট ব্যবহারকারী কে দেখছি যারা ইন্টারনেট এর সঠিক ব্যবহার করতে জানেন না।যারা জানেন তারা এর সঠিক ব্যবহার করছেন।আর আমাদের দেশের বেড়ে চলা একটি নতুন জিনিস হলো ফেসবুক। ফেসবুকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এ ভালোর চেয়ে এখন খারাপ দিকটাই পরিলক্ষীত হচ্ছে বেশি।

ফেসবুকের সঠিক লক্ষ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে যাচ্ছি।আমি ক্লাস রুমে দেখছি অনেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে ফেসবুকে চ্যাট করছেন।সেটাতে যে তাদের পরা লেখার ক্ষতি হচ্ছে সেটা তাদের কে বোঝাবে?

সোস্যাল নেটওয়ার্কিং এর আভিধানিক সংজ্ঞাঃ
A social networking service is an online service, platform, or site that focuses on building and reflecting of social networks or social relations among people, who, for example, share interests and/or activities. A social network service consists of a representation of each user (often a profile), his/her social links, and a variety of additional services. Most social network services are web-based and provide means for users to interact over the Internet, such as e-mail and instant messaging. Online community services are sometimes considered as a social network service, though in a broader sense, social network service usually means an individual-centered service whereas online community services are group-centered. Social networking sites allow users to share ideas, activities, events, and interests within their individual networks. It is also used in today's modern times to meet new people and form relationships such as dating.

বাংলায় অর্থঃ একটি সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি অনলাইন মাধ্যম,ক্ষেত্র কিংবা সাইট যেখানে মূলত গুরুত্ব দেয়া হয় লোকজনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ অথবা সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর,যেখানে উদাহরন সরূপ সবাই তাদের আকর্ষন অথবা কর্মকাণ্ড শেয়ার করতে পারবে।(শুধু মূল সংজ্ঞা টা দিলাম)

এখন আমরা ফেসবুকে কি করছি?কয়জন আছেন যারা ফেসবুকে তথ্য শেয়ার করেন?কিংবা নিজেদের আইডিয়া শেয়ার করেন?

আমার হোষ্টিং এর সমস্যার কারন এ র‍্যাকস্পেস নামের একটা বিশ্বখ্যাত হোষ্টিং কোম্পানীর এক এক্সপার্ট এর সাথে কথা বলেছিলাম আমি।হংকং এ থাকেন তিনি।তার সাথে কাজের কথা বলার পর খাজুরে আলাপ করেছিলাম কিছুক্ষন।তিনি জানালেন যে বাংলাদেশে ফেসবুকের ব্যবহার দেখে তিনি বিষ্মিত।তিনি ভেবে পান না মানুষ ঘন্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকে বসে কি করে?আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন যে আমাদের দেশে চাকূরীর বাজার কেমন?আমার জবাব শুনে তিনি বললেন তাও এরা ফেসবুকে বসে কি করে?চাকুরী কি বেশি জরূরী নয়?

আমি তার কথার জবাব দিতে পারিনি।আমি ভেবেছি।উত্তর পাইনি।আসলেই আমাদের মনে হয় অনেক সময়।তাই বাহিরের দেশে টুইটার জনপ্রিয়।আমাদের এখানে ফেসবুক।

আমি টুইটার ব্যবহার করি শুনে আমার এক বন্ধু বলেছিলো,কিছু নাই।ঘোড়ার এক জিনিস।তুই ঐটা কেন ব্যবহার করিস?

পর্নোগ্রাফী এবং ফেসবুক,সাথে ইন্টারনেট

সবাই মোটামুটি প্রভা স্ক্যান্ডেল এর ব্যপারে অবহিত।আমার এক চাইনিজ ফ্রেন্ড,যে একটা গবেষনা প্রতিষ্টানে চাকরী করে,তার হিসাব অনুযায়ী এই ভিডিও টা নেট থেকে ডাউনলোড হয়েছে ২৭ লক্ষ বার।ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে ১ লক্ষের কিছু বেশি।

অবাক লাগলো শুনে।আমি ওকে আবার জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হলাম।না আসলেই তাই।আমার মনে হয় আমাদের ব্লগ হিষ্ট্রিতে সবচেয়ে সেরা পোষ্টেও ১ লক্ষ ভিজিট হয়নি।কেন হয়নি মাথায় ঢূকলো না।
গঠন মূলক একটা ব্লগ পোষ্টের তুলনায় পর্নোগ্রাফির প্রচার বেশি,প্রমানিত হলো।

ফেসবুকের ক্যাঁচাল এবং বাস্তবের প্যাদানী

ফেসবুকে প্রায় দেখা যায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কমেন্টস যুদ্ধ লাগে।কিছু ক্ষেত্রে ফলাফল দেখা যায় উলটা।ভার্চুয়াল সেই গাঞ্জামের মাইর পরে বাস্তবের পিঠে।আমি নিজেও এমন একটা ঘটনা খুব কাছে থেকে দেখেছি।
অথচ গ্যাঞ্জাম তা ছিল ফেসবুকের মধ্যে।সেটাকে বাস্তব এ নিয়ে এসে অযথায় একটা শিক্ষা প্রতিষ্টানের পরিবেশ নষ্ট করা হলো।

ফেসবুক,নীতিবিরুদ্ধ সমাচার এবং প্রতিবাদ

বেশ কিছু সামাজিক ইস্যু নিয়ে ফেসবুকের গন জাগরন নেট স্ফিয়ারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।আমি আবিভূত হয়েছি মানুষের একটা দেখে।তিতাস,জাবি,কুয়েট এ সব ইস্যূতে ফেসবুক এবং ব্লগ পাড়া গুলো সরগম আছে এখনো।সাথে আজ(১১-১-২০১২) বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ(???) গোলাম আজম,যিনি রাজাকার থেকে সাধু হওয়ার আপ্রান চেষ্টায় অকৃতকার্য হয়ে ছাগু উপাধি নিয়ে বর্তমানে জেল হাজতের পথে রওনা হয়েছেন,এটীও একটি বড় সংবাদ।এখানে ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার বোঝা যাচ্ছ।মিশরের গনজাগরণের কথাও আমরা জানি।একটা ফেসবুক পেজ একটা দেশের অভ্যূথান এর কারন হতে,ভাবতে অবাক লাগে।তবে তারা সেটি করে দেখিয়েছেন।

আমার কথা হলো ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করবেন না।আমি করতে বলছিও না।শুধু বলছি সেটাকে গঠন মূলক কাজে ব্যবহার করুন।শুধু চ্যাট করে আর হাজার হাজার ছবি আপলোড করে নিজেকে জাহির করার কোন মানে নাই।

ছবির কথা যখন আসলো তখন একটা ঘটনা বলি।চট্টগ্রাম এর ঘটনা।৫ মাস আগের।আমার এক বান্ধবি আমাকে মাঝরাতে ফোন দিয়ে বলে "দোস্ত বিপদে পরছি।সাহায্য কর"।,আমি বললাম কি হইছে?বলে সে রেগুলার ফেসবুকে ছবি দিতো।দেড় বছরে প্রায় হাজার খানে ছবি দিয়েছে।এর মধ্যে একটা ছবিকে এডিট করে স্থানীয় এক ছেলে তাকে ব্লাক মেইল করছে।একটা গ্রুপ ছবি থেকে আমার বান্ধবীর সাথে এক ছেলের ছবি আলাদা করে নিয়ে এডিট করে এখন হুমকি দিচ্ছে সেটা এলাকাতে ছড়িয়ে দেবে।মেয়ের বাবা সরকারী চাকুরী করে।এলাকাতে তার বেশ সুনাম আছে।এখন ছবি ছড়িয়ে পরলে বিপদ।আমি পরে ওখানকার এক বড় ভাইকে ফোন দিয়ে বল্লাম।ভাইয়া বলল তুই চিন্তা করিস না।আমি দেখছি।পরে ভাইয়া সেই ছেলেকে ধরছে।তার কাছে আরো ২৫ টা মেয়ের ছবি পাওয়া গেছে এমন।সবাই কে সে ব্লাক মেইল করে ফোনে টাকা নেয়া থেকে শুরু করে আরো নানা রকম কুকাম করতো।সব উল্লেখ করলাম না।ভাইয়া চেয়ে ছিলো ওই ছেলেকে পুলিসে দিবে।আমি মানা করছি ওই মেয়ে গুলার কথা ভেবে।পড়ে ছেলেকে তার বাবা মার কাছে প্রমান সহ দিয়ে আসা হয়েছে।তার স্কুলে ভাইয়ারা গিয়েছিলো।সেখানে তাকে টি সি দেয়া হয়েছে।
সঙ্গত কারনে নাম এবং পরিচয় গোপন করে গেলাম।

এবার আমাদের কলেজ এর একটা ঘটনা বলি।আমাদের কলেজ ছিলো স্কুল এন্ড কলেজ।স্কুলের এক ক্লাস ৮ এর ছাত্র এক অভিনব বিজনেস পলিসি আবিস্কার করে।সে ফেসবুকে তার কিছু স্কুল ফ্রেন্ড কে বেশ কিছু চাইনিজ এবং ব্রান্ড সেটা বিক্রি করার অফার দেয়।তাদের কে ক্লাসে তাকার বদলে মায়ের গহনা আনতে বলে।সে এই পলিসি তে বেশ কিছু সেটা বিক্রি করে।তবে ক্লাসে সে এই বিষয়ে কোন কথা বলতো না।ক্লাশে শুধু লেনদেন হতো।সব আলাপ এবং ডিল হতো ফেসবুকে।আমাদের টেস্ট পরীক্ষার পর পর ই সে ধরা পরে।

ফটো ফ্রীক হওয়া ভালো তবে সেটার পরিনতির কথাও ভাবতে হবে।ফেসবুকে ছবি দেয়ার আগে প্রাইভেসীর ব্যাপারে ভাবুন এবং সেই হিসাবে সেটাপ করুন।যে কোন ভালো জিনিসের একটা খারাপ দিক থাকে।সেটার কথাও ভাবুন।

অরীত্র আহমেদ
প্রোগ্রামার,ব্লগার
www.oritro.com