শাপলা সপর্যিতার সাতটি কবিতা

sapla_soporjita
Published : 13 July 2016, 07:12 AM
Updated : 13 July 2016, 07:12 AM

ঋষির ঠোঁটে প্রেম

ফের উঠে আসে জল ছল ছল শব্দে সে প্রপাত।
মানুষের বুকে পাথর। অন্ধ ধারাজল। ঋষির ঠোঁটে প্রেম।
অবাধ লীলা সঙ্গম। কোনো এক অনামা পাখি
কবে বুঝি গর্ভে নিয়েছিল মানুষের বীজ। জন্ম দিয়েছিল মানুষ।
বুকে পাখির প্রাণ।
তাই আজন্ম পাখির মতো উড়ে উড়ে বেড়ালো জীবনভর।
ঢেউয়ে ঢেউয়ে জলপ্রপাতের ধারায়।
ভাঙলো ঘর। ভাঙলো বাড়ি। প্রেম, আলোর নিকেতন।
তারপর দীর্ঘপাখা মেলে চলে গেল…
কোথায় মথুরা বৃন্দাবন। আহা মানুষ।
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে অবশ-বিবশ।


ঘোড়সওয়ার

সন্দিগ্ধ সন্ধ্যায় পায়রা ওড়ে আকাশে। সুনির্দিষ্ট সময়, পারবে কি?
পৌঁছুতে নিয়ে যক্ষপ্রিয়ার কাছে? চিঠি অমরাবতী?
হায় মেঘের দেবতা কবে যেন দিয়েছিল রৌদ্র সকাল
রূপবতী রূপালি আকাশ মেঘে মেঘে এঁকেছিল
কত না রাজকন্যার মুখ, আলসে মায়াবী চাঁদের ছায়ায়
কত না জোছনার নুপূর নিক্কন। ক্লান্ত বেজে বেজে। অধীর অপেক্ষায়।
তবু কেন ঢেকে যায় আঁধারে পৃথিবীর মুখ?
কেন রাজার কুমার সাত সমুদ্রের পাতাল থেকে তুলে আনে
অথচ খুঁজে পায় না রাজকন্যার দেখা। আহ । এ কি বেঘোর মরণ।
জনমে জনমে মরণের পিছে পিছে
ঘোড়সওয়ার। সে এক মায়াবী জীবন!

দাহ্য

পরাক্রান্ত পৌষ-মাঘে বাস করি নিশিদিন
ওপারে পুরোহিত জ্বেলেছে আগুন

প্রতিটি অগ্নিকণায় জ্বলে জ্বলে উঠছে
হাজার নক্ষত্রের রূপালি দহন। পাশে পুড়ে পুড়ে খাক

কোনো নর, সাথে সধবা কোনো নারীর শেকড়
এইমাত্র যার অর্জিত হলো। আগুণের লেলিহান দোসর।

দেহগত নশ্বরতা স্বপন-জীবন আর মরণের মাঝখানে
অনাগত নক্ষত্র রাত, আগুনের সাথে দাহ্য
প্রতি সীমারেখা, অবিচল স্তব্ধ রাতে ।

রাতের জানালা

যেখানে জেগে থাকে এক রূপালি চাঁদ। ঢেলে জোৎস্নার মায়া সারারাত
তারই পাশে আমি জাগি। অমরাবতীর অপরূপ ছায়া নিয়ে।
সে এক নিশিথ প্রহর। ভুলেছ কি সোনার ছেলে । হাতে আড়বাঁশি আর মত্ত অর্ফিয়াস !
রাতের জানালা খোলা । যে প্রহরগুলো ভেঙে পড়েছিল সময়ের ক্ষণ গুনে গুনে
জানে কি সেই মেয়ে । যে জ্বেলেছিল আগুণ । আহা নিশুতি রাতে । সে কি আজ ঘুমায় পরম সুখে?
বুকের পাঁজরে জ্বালিয়ে দিয়ে এক ফালি বেদনার শিখা ! কিংবা শুয়ে থাকে চিৎ হয়ে
চেয়ে আকাশের পানে। উদ্বন্ধনে যেখানে ঝুলছে দিনের সখা ।
ব্যঙ্গমা আর ব্যঙ্গমী যে কথা বলেছিল একদিন নিশীথে গাছের শাখে ।
কোনোদিন তুমি হয়তো পড়বে তা ছাপার অক্ষরে ।

প্রেম প্রহেলিকা

এক ঘোর অমানিশা কেটে যায় অকস্মাৎ
শতাব্দীর গভীর গহ্বর হতে জল ছলছল কল্লোল তুলে
উঠে আসে প্রাণ। নিবিড় নিকষ ঘ্রাণ ও অন্ধকার । আলোড়িত সূর্যপ্রাচূর্যে।
কি বসনে প্রতিক্ষিত ছিল দিনগুলো তার
কি দরিদ্রহত জরাজীর্ণ ছিল রাত্রি প্রহরগুলো
কিছু আদিম ছত্রাক মনভরে কি যে সুখে করেছে সংসার সে মাটির দেহে
মৃত চামড়ার খোলসে। জ্বরে জীর্ণ সেখানে মধু আর মক্ষিকা
মদমত্ত সেখানে জীবনের ক্ষণকাল।
দ্বারে পথে প্রান্তে ভিখ মাগে সেথা বিপন্ন সহবাস।
প্রেম ছিল কোথা? কবে? কোন বিনাতারে?
যতনে ছিল প্রহেলিকা। আদরে প্রহসন। ভুল।
এক সূর্য প্রদক্ষিণকাল। ভুলগুলো সাথে করে গেছে। বেলা।
জীবন জীবন। কোথা ছিল পিঙ্গল চোখ আর তার নিরাভরণ!
কোথা রাত্রি জাগরণে হায় বর্ণালী প্রভা। কত শত মত আর জন।
দিকভ্রান্ত পথ। প্রেম। বিলাস। জীবন।
কোথা ঝরে গেছে ফুলবনে শাপলার পাতা।
দিনান্তে বেজেছে কোন সে দীপাসন্ন ঝংকার।
অধরে কি ফুটেছে কোন জলপদ্ম? নাভিতে ছড়িয়েছে কেউ মৃগ সুবাস!
ধূলায় গড়ালো তার অপরূপ সোনা। ক্ষ্যাপা কি পেল তার পরশ পাথর?
আমি ধূলিরে নিয়েছি তুলে। বুকের কাছে জলকণা।
তাতেই ফুটেছে কলি, সোনা সোনা ফুল। আলো করে।

হন্যমান কথকতা

তারপর ফিকে হয়ে আসে সব রোদ
সব সোনা গলে যায় আঁধারে
অরণ্যে প্রেতের তান্ডবনৃত্যে ওঠে ঝড়।
নেমে আসে দীঘল শীতরাত্রি। গভীরে লেখা হয় তার
আরও এক নতুন চাঁদ। মরণফাঁদ।
পোকা মাছি আর পতঙ্গের মতো
উড়ে যায় মানুষ ও বাদুর ।
উজ্জ্বল আলোকশিখা চোরাবালি মরীচিকা
টেনে এনে ফেলে দেয় গভীর অরণ্যে
অন্ধকারের সুরঙ্গে। সে আলোর গভীরে
কবে যেন কেউ ছুঁয়েছিল কেবলই নিজস্ব
অমরতা।মৃত্যুর মাঝে বসবাস। জানো কি তার
হন্যমান কথকতা?

হন্তারক

হন্তারকের মুখে মৃত্যুর কারুণ্য হাস্যম্পদ
প্রতারকের চোখে জল এক অদ্ভুত প্রচ্ছদ
পানশালার পরিকীর্ণ সীমানায় বসে অযাচিত ভোজন
পৃথিবীর সব কোমল ঘ্রাণকে আটকে দিয়েছে, সে
একটি যাদুর বোতল। রেখেছে পাতাল গর্ভে।
আর সুদীর্ঘ সুদীর্ঘ বছর ব্যাপী ফেনিয়ে তুলেছে প্রগাঢ় মদ…..