আমার আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচাল দর্শন

কাফি রশিদ
Published : 23 June 2012, 02:50 PM
Updated : 23 June 2012, 02:50 PM

আপুর ডেস্কটপ অথবা আম্মুর মুঠোফোনের বাটন টিপে যখন ইন্টারনেটে মোটামুটি আসক্ত হয়ে পরলাম সেদিন থেকে যেই বিষয়টা দেখে আসছি সেটা ধর্মীয় দ্বন্দ্ব।

নিজে কম্পু পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ভার্চুয়াল লাইফে যখন নিজেকে কিছুটা গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি কল্পনা করে ইমেইল চালাচালি করা শুরু করলাম তখন দেখলাম বাস্তব জীবনে কোন কাজকর্ম না করেই নবীকে দেখা কোন বিদেশীর স্বপ্নের বিবরণ সম্বলিত মেইল স্প্যামিং করে নিজের ভাগ্য ১০-১২ বছরের জন্য পরিবর্তন করা যায় B-) । কয়েকবার মেইল করে যখন দেখলাম সৌভাগ্যকাল আমার আয়ুর চেয়েও বেশী এগিয়ে গেলো তখন ভাগ্যকে গালি দিয়ে মেইল ত্যাগ করলাম। 🙁

এরপর ফেইসবুকে একটা আইডি যখন খুলে বসলাম তখন দেখলাম ধার্মিকেরা সামাজিক যোগাযোগের চে ধর্মীয় বাণী প্রচার করে নেকী কামাতেই ব্যস্ত। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মীয় পরিচয়টাকে রক্ষা করতে "মুসলিম হলে লাইক করতে হবে অথবা শেয়ার করতে হবে" জাতীয় পোষ্টে ক্লিকাক্লিক লাইক/শেয়ার করে যেতে থাকলাম। একসময় "শয়তানের অনুসারী হলে পোষ্ট-টা ইগনোর করবে" জেনেও ইগনোরের পাশাপাশি রিপোর্ট করা শুরু করলাম। এই জীবনে আর নেকী কামাই করা হবে না ভাবতে ভাবতে আঁতেলদের ব্লগে উঁকিঝুঁকি মারা শুরু করলাম।

ব্লগে এসে দেখি ক্রুসেড চলছে (এখানে আস্তিক-নাস্তিক ভার্চুয়াল যুদ্ধকে ক্রুসেড বলছি)। বুঝলাম এই ক্রুসেড আর শেষ হওয়ার নয়। আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচালের এই ব্যাপারটা আমার কাছে সবসময়ই কনফিউজিং। কাল্পনিক সত্ত্বাকে প্রমাণ করা যেমন অসম্ভব, ধার্মিকের ধর্মীয় বিশ্বাসকে মুছে ফেলাও তেমন অসম্ভব জেনেও সবাই যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। যুদ্ধের প্রডাক্ট হিসেবে যেসব বিষয় যা দেখছি সেগুলো সম্পর্কে আমার জানার খুব ইচ্ছা। অ্যামন কিছু বিষয় হলো,

বাচ্চাদের হিজাব পরিয়ে তোলা ছবি ফেইসবুকে শেয়ার করে (কেউ কেউ বাচ্চাদের জায়নামাজে বসিয়ে ছবি তুলে),
অথবা বিখ্যাত খেলোয়াড়ের মোনাজাত/সিজদাহরত ছবি শেয়ার করে (ওজিল, জিদান, বেঞ্জামো, আবিদাল),
অথবা অ্যারাবিয়ান হিজাব পরিহিত মহিলার সাথে ভারতীয় অর্ধনগ্ন মডেলের ছবি পাশাপাশি বসিয়ে শেয়ার করে,
অথবা বিখ্যাত কোন অভিনেত্রীর হিজাব পরা ছবি শেয়ার করে (অভিনেত্রী নাকি পর্নস্টার আমার সন্দেহ আছে!),
অথবা পশ্চিমা অভিনেত্রী, নভোযাত্রী নারী, চন্দ্রজয়ী মানব কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ধর্মান্তরের মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে (অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, সুনিতা উইলিয়াম, আর্মস্ট্রং, অং সান সুচি),
অথবা পশু-পাখি, পাহাড়, সমুদ্র, মেঘের ছবি এডিট করে "আল্লাহ্‌" আকৃতি প্রদান করে তা ছড়িয়ে দিয়ে কিছু মুসলিম ইসলামের কতটুকু উপকার করেছেন, ঈমান কতটুকু শক্ত করেছেন, অথবা ধর্মকে কতটুকু হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করেছেন সেইটা এখনো বুঝতে পারছি না।

আবার ছোটখাটো একটা ফার্ম সাবার করে তৈরি খাবার দিয়ে পূর্ন করা আরব শেখ/আমীরদের ছোটখাটো মাঠ আকৃতির ডাইনিং টেবিলের ছবির সাথে সোমালিয়ান ক্ষুধার্থ শিশুর ছবি বসিয়ে,
অথবা নবীদের ব্যক্তিগত জীবনের অগ্রহণযোগ্য/আপত্তিকর বিষয়ে আক্রমণাত্মক পোষ্ট লিখে,
অথবা ধর্মে বিশ্বাসীদের কাজকর্মের উদাহারন দিতে গিয়ে কিছু ধর্মান্ধের অনৈতিক কাজের উদাহারন দিয়ে কিছু নাস্তিক মুসলিমদের ধর্মের পথ হতে কতটুকু সরিয়ে আনতে পেরেছেন সেইটাও বুঝতে পারছিনা।

আমার ধারণা লাভের মধ্যে যা হয়েছে তা হলো আমি এই বিষয়ে পোষ্ট দিতে পারছি, সাধারণ ব্লগাররা হিট কামাতে পারছেন, আস্তিকেরা সুবহানআল্লাহ্‌/আলহামদুলিল্লাহ বলে "নেকী" উপার্জন করতে পারছেন আর নাউজুবিল্লাহ বলে চিৎকার করতে পারছেন, আর নাস্তিকেরা আস্তিকদের চিৎকার কে "শীৎকার" নাম দিয়ে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছেন!