অন্য রকম ব্যাটম্যান মুভি: দি ডার্ক নাইট

saif_samir
Published : 26 Sept 2008, 05:11 AM
Updated : 26 Sept 2008, 05:11 AM


জোকারের ভূমিকায় হিথ অ্যান্ড্রু লেজার (১৯৭৯-২০০৮)

ব্যাটম্যান। রিয়ালিস্টিক সুপারহিরো। তার নেই কোনো ঐশ্বরিক ক্ষমতা। আছে উন্নত প্রযুক্তি আর শারীরিক কৌশল। এই নিয়েই তিনি গোথাম সিটির ডার্ক নাইট। ক্রুসেডর। শহরকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করাই তার দায়িত্ব।
—————————————————————–
ডার্ক নাইটের সাফল্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার জোকার — হিথ লেজার। প্রেসক্রিপশনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবনে মৃত্যুর পর তিনি যতোটা না আলোচিত হয়েছেন তার চেয়ে বহুগুণ আলোচিত হয়েছেন ডার্ক নাইটের মুক্তির পর। জোকার চরিত্রে অভাবনীয় অভিনয় করেছেন তিনি। চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যাওয়া বলতে যা বোঝায় করেছেন সেটাই।
—————————————————————-

…….
ব্যাটমান ও জোকার
…….
ব্রুস ওয়েন/ ব্যাটম্যান (ক্রিশ্চিয়ান বেল) লেফটেনান্ট জেমস গর্ডন (গ্যারি ওল্ডম্যান) ও ডিস্ট্রিক এ্যার্টনি হার্ভি ডেন্টের (অ্যারন একহার্ট) সহায়তায় গোথাম সিটির অপরাধ নির্মূল করছিল। কিন্তু শিগগির ব্যাটম্যান আবিষ্কার করে এক সাইকোপ্যাথ ক্রিমিনাল জোকারকে। শহরের অপরাধ জগতে সে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। আবার সে-ই তাদেরকে একে একে হত্যা

…….
র‌্যাচেল ডয়েস চরিত্রে অভিনয় করেছেন ম্যাগি গিলেনহাল (জন্ম. ১৯৭৭)
……..
করতে থাকে। জোকারের লক্ষ্য গোথাম সিটিকে নারকীয় করে তুলে ব্যাটম্যানকে হত্যা করা। ব্যাটম্যান জোকারকে ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে গ্রহণ করে, যা তার নীতিবিরুদ্ধ। ব্যাটম্যান তার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শত্রু জোকারের মোকাবেলায় সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে যায়। দি ডার্ক নাইট (The Dark Knight)-এর গল্পটি এমনই।

১৯৩৯ সালে বব কেইন বিল ফিঙ্গারের সহায়তায় সৃষ্টি করেন কার্টুন চরিত্র ব্যাটম্যান। আরেক কার্টুন হিরো সুপারম্যান দিয়ে ১৯৭৮ সালে শুরু হয়

…….
কুশলীদের সঙ্গে ছবির পরিচালক
……..
কমিক বুক মুভি কালচারের যাত্রা। ১৯৮৯ সালে ব্যাটম্যান মুভিটির মাধ্যমে ডিসি কমিকসের ব্যাটম্যানকে নতুন করে বড় পর্দায় নিয়ে আসে ওয়ার্নার ব্রাদার্স। এরপর মুক্তি পেতে থাকে ব্যাটম্যান রিটার্নস (১৯৯২), ব্যাটম্যান ফরএভার (১৯৯৫), ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন (১৯৯৭) ও ব্যাটম্যান বিগিনস্ মুভিগুলো। সর্বশেষ এই বছর রিলিজ পেল ১৮০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের মুভি দি ডার্ক নাইট। ব্রিটিশ ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার নোলান মুভিটির পরিচালক। এর আগে ব্যাটম্যান বিগিনস্ মুভিটি তিনিই পরিচালনা করেছিলেন। দি ডার্ক নাইট ব্যাটম্যান বিগিনসেরই ফলোআপ। কিন্তু দি ডার্ক নাইটের আগে আর কোনো ব্যাটম্যান মুভি এমনকি অন্য কোনো সুপারহিরো মুভিও এতোটা গভীর হতে পারেনি। বাকি ব্যাটম্যান বা সুপারহিরো মুভিগুলোর মতো ডার্ক নাইট কোনো অ্যাকশন প্যাকেজ নয়। মুভি ক্রিটিকের ভাষায় বলা যায় এটি একটি 'ডার্ক মুভি'। তাই আপনি যদি ব্যাটম্যানের আহামরি ক্যারিশমা দেখার জন্য ডার্ক নাইট দেখতে বসেন নিশ্চিত আপনাকে হতাশ হতে হবে। এটা ঠিক ডার্ক নাইটের ভালো গল্পটিকে আরো জমজমাট করতে পারতো শক্তিশালী অ্যাকশন দৃশ্য। অবশ্য সবকটি চরিত্রের অসাধারণ অভিনয়ও কিন্তু বিশাল প্রাপ্তি। ডিরেক্টর এখানে ড্রামা এবং অ্যাকশনের মধ্যে ড্রামাকেই বেছে নিয়েছেন। কমিক বুক মুভির জন্য কাজটি দুঃসাহসিক যা আগে কেউ করেনি। কিন্তু ক্রিস্টোফার নোলান সফল হয়েছেন। এটাই দি ডার্ক নাইটের বিশেষত্ব।

ব্যাটম্যান মুভি ইতিহাসে দি ডার্ক নাইটই প্রথম মুভি যার টাইটেলে 'ব্যাটম্যান' শব্দটি নেই। মুভির কাহিনীকার ডেভিড এস.এস. গয়ার গল্পের মূল থিমটি কমিক বুক ব্যাটম্যান: দি লং হলোউইন থেকে নিয়েছেন। পরে ক্রিস্টোফার নোলান কাহিনী পুনর্বিন্যাস করেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো আল পাচিনো ও রবার্ট ডি নিরো অভিনীত ১৯৯৫ সালের ক্রাইম থ্রিলার মুভি হিট নোলানকে দি ডার্ক নাইট নির্মাণে প্রভাবিত করে।

নিউ ইয়র্ক সিটির একটি IMAX থিয়েটারে ১৪ জুলাই ২০০৮-এ দি ডার্ক নাইটের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার শো হয়। দি ডার্ক নাইট ১৮ জুলাই আমেরিকায় রিলিজ পাবার আগে ১৬ জুলাই অস্ট্রেলিয়ায় রিলিজ হয়। ইউকেতে রিলিজ হয় ২৪ জুলাই। কিন্তু ইউকেতে রিলিজের এক সপ্তাহ পেরোতেই BBFC বা British Board of Film Classification-এর কাছে জমা হয় ৭০টি অভিযোগ। অভিযোগের কারণ মুভিটিকে ইউকেতে 12A সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। যার অর্থ ১২ বছরের নিচের ছেলে-মেয়েরা কোনো গার্ডিয়ান ছাড়াই মুভিটি দেখতে যেতে পারবে। কিন্তু অভিভাবকরা অভিযোগপত্রে জানান ডার্ক নাইটকে 15 সাটির্ফিকেট দেয়া উচিত ছিল, কারণ মুভিটি অনুর্ধ্ধ ১২ বছর বয়সীদের জন্য অতিরিক্ত ভায়োলেন্ট। আমেরিকায় মুভিটিকে রেটিং দেয়া হয়েছে PG-13, যার মানে অভিভাবকদের সবোর্চ্চ সতর্ক করা হচ্ছে যে মুভিটিতে এমন কিছু বিষয় আছে যা ১৩ বছরের নিচের বাচ্চাদের জন্য অনুপযুক্ত। আসলে মুভিটির দর্শকসংখ্যা যেন আরো বাড়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের এমন ব্যাবসায়িক চাপেই BBFC ডার্ক নাইটকে 12A রেটিং দিয়েছে। কিন্তু অভিভাবকরা বুঝতে পারছেন বড় পর্দার ব্যাটম্যান এখন আর কমিকস পড়ুয়া শিশুদের জন্য নয়।

কেউ যদি প্রশ্ন করে পরবর্তী ব্যাটম্যান মুভির পরিচালক কে হলে ভালো হয়? মুভি ক্রিটিকরা এক বাক্যে রায় দেবেন ক্রিস্টোফার নোলানই। ব্যাটম্যান বিগিনস্-এর পর দি ডার্ক নাইটেও তিনি জটিল কিছু কার্ড খেলেছেন — এমনকি 'জোকার' কার্ডটিকে খেলেছেন ট্রাম্প হিসেবে! অবশ্য ডার্ক নাইটের জোকার কোনো গোপাল ভাঁড়ের কাজ করে না। ডিরেক্টর টিম বার্টনের ১৯৮৯ সালের 'ব্যাটম্যান' মুভির মতো জোকার (জ্যাক নিকলসন) চরিত্রটি এখানে ফানি নয়। কোনো প্লাস্টিক মুখোশ ছাড়াই অসাধারণ মেকআপে ক্রিস্টোফার নোলান হিথ লেজারকে বানিয়েছেন ক্রেজি জোকার। এই জোকার মাস্টারমাইন্ড ক্রিমিনাল — এক শব্দে শয়তান! এই মুভিটি দেখতে বসে আপনার বারবার মনে হবে প্রধান চরিত্রে কে — ব্যাটম্যান (ক্রিশ্চিয়ান বেল) নাকি জোকার (হিথ লেজার)? যদি হিরো শব্দটির সংজ্ঞা আপনি পুণ্যার্থে না নিয়ে পারফরম্যান্সের জন্য ব্যবহার করেন তবে আপনি ভোটটি হিথ লেজারকেই দিবেন। তাছাড়া আপনি যদি অভিনয় ভালোবাসেন নিশ্চিত আপনি সুপারহিরো ব্যাটম্যানের পাশাপাশি শয়তান জোকারটিকেও নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলবেন। হয়তো তাই একদল শিল্পী-কর্মী-ভক্ত হিথ লেজারের অস্কার নমিনেশন নিশ্চিত করতে পিটিশন করছেন। যদিও গত ২২ জানুয়ারি, ২০০৮ হিথ লেজারের আকস্মিক মৃত্যু এসবের অন্যতম প্রভাবক। কিন্তু সত্যিই তিনি দি ডার্ক নাইটে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। ২৮ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ান এই অভিনেতা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

২০০৭ সালের এপ্রিলে শিকাগোতে দি ডার্ক নাইটের শুটিং শরু হয়েছিল। কয়েক দফায় মোট ১৩ সপ্তাহ শুটিং চলে। শিকাগোতে শুটিং চলাকালে মিডিয়া ও জনপ্রচার এড়াতে 'ররিস ফার্স্ট কিস' শীর্ষক অন্য আরেকটি মুভির শুটিং হচ্ছে বলা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ররি আসলে নোলানের ছেলের নাম। একই বছর সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডে একটি অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিংয়ে কনওয়ে উইকলিফ নামে এক টেকনেশিয়ান গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তাই লেজারের পাশাপাশি উইলিফের স্মরণে ডিরেক্টর মুভিটি উৎসর্গ করেন।

ব্যাটম্যনের এবারের ব্যাট সুটটির ডিজাইন ব্যাটম্যান বিগিনস্ থেকে প্রযুক্তিগতভাবে আরো উন্নত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কস্টিউমটির ওজন হয়েছে ৮ পাউন্ড। যা ক্রিশ্চিয়ান বেলের জন্য আরো আরামদায়ক ও কম গরমদায়ক। টু-ফেস অর্থাৎ হার্ভি ডেন্টের পুড়ে যাওয়া মুখের মেকআপও হয়েছে চমৎকার। যা দেখে দর্শকদের পেট মোচড় দিয়ে উঠবে। দি ডার্ক নাইটের মুগ্ধকর মিউজিক কম্পোজ করেছেন ব্যাটম্যান বিগিনসেরই কম্পোজারদ্বয় মি. হ্যান্স জিমার ও জেমস নিউটন হাওয়ার্ড। মুভির শুটিং শুরুর আগেই তারা কম্পোজিশন শুরু করেছিলেন। শুটিংয়ের সময়ই তারা নোলানের হাতে তুলে দেন ১০ ঘণ্টার মিউজিক সমৃদ্ধ একটি আইপড। ওখান থেকেই ডিরেক্টর তার মুভির জন্য মিউজিক বেছে নেন।

দি ডার্ক নাইটের শুরুটা হয় একটা ব্যাংক ডাকাতি দিয়ে। জোকারই সেই ডাকাতির নায়ক। জোকারের প্ল্যান অনুসারে তার সহযোগীরা ডাকাতির সময় একে অন্যকে মেরে ফেলতে থাকে। সর্বশেষজনকে কার্যসিদ্ধি শেষে জোকার নিজেই হত্যা করে। এভাবেই ডার্ক নাইটে জোকারের আবির্ভাব। এই দৃশ্যটিসহ আরো তিনটি দৃশ্যে ক্রিস্টোফার নোলান IMAX ক্যামেরা ব্যবহার করেন। ১৫ বছর ধরে নোলান IMAX ফরমাটে ছবি শুট করার ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। কিন্তু মুভির এই প্রথম দৃশ্যের এডিটিংয়ে দুর্বলতা আছে।


আই ম্যাক্স ক্যামেরায় ছবি শ্যুট হচ্ছে, পেছনে পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান
—————————————————————–
দি ডার্ক নাইটের শুরুটা হয় একটা ব্যাংক ডাকাতি দিয়ে। জোকারই সেই ডাকাতির নায়ক। জোকারের প্ল্যান অনুসারে তার সহযোগীরা ডাকাতির সময় একে অন্যকে মেরে ফেলতে থাকে। সর্বশেষজনকে কার্যসিদ্ধি শেষে জোকার নিজেই হত্যা করে। এভাবেই ডার্ক নাইটে জোকারের আবির্ভাব। এই দৃশ্যটিসহ আরো তিনটি দৃশ্যে ক্রিস্টোফার নোলান IMAX ক্যামেরা ব্যবহার করেন। ১৫ বছর ধরে নোলান IMAX ফরমাটে ছবি শুট করার ইচ্ছা পোষণ করছিলেন।
—————————————————————-
জোকারের ব্যাংক ডাকাতির সমাপ্তিতে একটি স্কুল বাস পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাংকের দেয়াল ভেঙে প্রায় অর্ধেক ভেতরে ঢুকে পড়ে। জোকারের নির্দেশে শেষ ডাকাতটি (যাকে জোকার হত্যা করে) এই কাজ করেছিল। কিন্তু জোকার যখন টাকার ব্যাগগুলো বাসে চাপিয়ে গাড়িটি ওখান থেকে চালিয়ে রাস্তায় বের করে আনে তখন বাসের গায়ে কোনো ক্ষতির চিহ্নই দেখা যায়নি। যা একেবারেই অসম্ভব! আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে জোকার যখন বাসটি নিয়ে অন্যান্য স্কুল বাসের লাইনের মধ্যে ঢুকে পড়ে তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাচ্চাদের শোরগোল শোনা যায়, অথচ একটু খেয়াল করলেই দেখবেন একটি বাসেও কোনো স্টুডেন্ট নেই! নোলানের দৃষ্টি কি তার ১৫ বছরের শখ IMAX-এর লেন্সে ব্যস্ত রাখতে গিয়ে এসব এড়িয়ে গেছে? কে জানে! এবার ডার্ক নাইটের একটি কন্টিনিউটি সমস্যা দেখুন। একটি দৃশ্যে লুসিয়াস ফক্স (মরগ্যান ফ্রিম্যান) যখন ব্রুস ওয়েনকে (ক্রিশ্চিয়ান বেল) ব্যাটম্যানের জন্য কিছু নতুন ইকুইপমেন্ট দেখাচ্ছিল তখন দুর্ঘটনাবশত ব্রুসের হাতের অস্ত্রটি থেকে একটি ব্লেড ছিটকে যায়। কিন্তু ব্রুস যখন অস্ত্রটি আবার বক্সে রেখে দেয় দেখা যায় ব্লেডটি আবার ফিরে এসেছে! তাজ্জব কি বাত! কারণ ইতিমধ্যে ব্লেডটি অস্ত্রে আর রিলোড করা হয়নি! মুভিটিতে এ জাতীয় আরো কিছু ত্রুটি আছে। তাছাড়া শেষ দৃশ্যের এডিটিংও যথার্থ হয়নি। কুছ পরোয়া নেই! বড় ডিরেক্টর এই সব ছোট-খাট বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে কেন? তা না হলে মুভি ক্রিটিকরা আছেন কী করতে!

…….
'ব্যাটপডে' ব্যাটমান
………
ব্যাটম্যান বিগিনসে র‌্যাচেল ডয়েস চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কেটি হোমস। কিন্তু দি ডার্ক নাইটে এই চরিত্রে দেখা যায় ম্যাগি গিলেনহালকে। বলা হয়েছিল শেডিউল জটিলতার কারণে কেটি হোমস ডার্ক নাইটে অভিনয় করতে পারেননি। আসল কথা হলো পারিশ্রমিক নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় হোমস ডার্ক নাইট থেকে সড়ে দাড়াঁন। যদিও কমিক বইয়ে র‌্যাচেল ডয়েস চরিত্রটি নেই কিন্তু ক্রিস্টোফার নোলান এবং তার ভাই ও কো-স্ক্রিপ্ট রাইটার

……..
লস অ্যানজেলেসে ব্যাটপডের জনপ্রদর্শনী। ছয় মাস অনুশীলনের পর ছবিতে নাথান ক্রাউলির নকশা করা এই বাহন চালিয়েছেন স্ট্যান্টম্যান জা পিয়েরে গয়।
………
জনাথন নোলান চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন ব্রুস ওয়েন ও হার্ভি ডেন্টকে নিয়ে ত্রিভুজ প্রেমের আমেজ তৈরি ও কাহিনীকে পূর্ণতা দিতে। কিন্তু ম্যাগিকে যতটা আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা যেত ততোটা করা হয়নি। তিনি স্রেফ ঘুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন। অনেকটা জোকার যেমন তার সহযোগী ডাকাতদের ব্যবহার করেছিল।

ডিস্ট্রিক এ্যাটর্নি হার্ভি ডেন্ট ও পরবর্তীতে টু-ফেসের ভূমিকায় অ্যারন একহার্ট চমৎকার অভিনয় করেছেন। অবশ্য এই চরিত্রে ডিরেক্টরের প্রথম পছন্দ ছিল ম্যাট ডেমন। কিন্তু সেই আইডিয়া বাতিল করে একহার্টকেই বেছে নেন। একহার্ট সিদ্ধান্তটিকে সঠিক প্রমাণিত করেছেন। এই মুভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংলাপটি বলেছেন হার্ভি/একহার্টই। 'ইউ ঈদার ডাই অ্যা হিরো অর লিভ লং এনাফ টু সি ইওরসেলফ বিকাম ভিলেন' — যা ডার্ক নাইটের থিমেরই প্রতিনিধিত্ব করে। মজার ব্যাপার 'হোয়াইট নাইট' হার্ভি ডেন্ট নিজেই পরে ভিলেন 'টু-ফেসে' পরিণত হয়।

……..
টিম বার্টনের ছবিব্যাটম্যানের (১৯৮৯) জোকার জ্যাক নিকলসন। হিথ লেজারকে সাবধান করেছিলেন জোকারের ভূমিকায় অভিনয়ের ব্যাপারে।
……..
নিঃসন্দেহে দি ডার্ক নাইটই এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ ব্যাটম্যান মুভি। এর প্রধান কৃতিত্ব অবশ্যই ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার নোলানের। নিজের চিন্তাধারা, সৃজনশীলতার উপযুক্ত ব্যবহার করেছেন তিনি। ডার্ক নাইটের সাফল্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার জোকার — হিথ লেজার। প্রেসক্রিপশনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবনে মৃত্যুর পর তিনি যতোটা না আলোচিত হয়েছেন তার চেয়ে বহুগুণ আলোচিত হয়েছেন ডার্ক নাইটের মুক্তির পর। জোকার চরিত্রে অভাবনীয় অভিনয় করেছেন তিনি। চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যাওয়া বলতে যা বোঝায় করেছেন সেটাই। তার কথা বলার ভঙ্গি, শরীরের ভাষা, কণ্ঠস্বর সবই অসাধারণ। কিন্তু তাই বলে ১৯৮৯ সালের ব্যাটম্যান মুভির জোকার জ্যাক নিকলসনের সঙ্গে তুলনা করতে যাওয়াটা অনুচিত হবে। দুজনেই নিজ নিজ

……..
অসাধারণ মেকআপে হিথ লেজার। জ্যাক নিকলসনকে আত্নস্থ করে জোকার চরিত্রে নতুন মাত্রা এনেছেন তিনি।
……..
পথে শ্রেষ্ঠ। পারতপক্ষে হিথ লেজার জ্যাক নিকলসনকে মডেল করেই চরিত্রটি আত্নস্থ করেছিলেন। ডার্ক নাইটের ব্যাটম্যান ক্রিশ্চিয়ান বেল ডিরেক্টরের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। হাস্কি ভয়েস, সাদা চোখ ও অত্যাধুনিক ব্যাট সুটের পেছনে তাকে দারুণ মানিয়েছে। হিথ লেজারের মতো অভিনয় দেখানোর সুযোগ হয়তো তার ছিল না কিন্তু যেটুকু করেছেন তা যথেষ্ট। অ্যারন একহার্ট অভিনয় করেছেন চুটিয়ে। কিন্তু টু-ফেস চরিত্র রূপদানে তার উৎসাহ সম্ভবত একটু বেশিই ছিল, সচেতন চোখে ধরা পড়ে। ম্যাগি গিলেনহালের পারফরম্যান্স চলনসই। মাইকেল কেইন ও মরগ্যান ফ্রিম্যান নিজেদের নামের স্বাক্ষর রেখেছেন। লেফটেনান্ট জেমস গর্ডন পরে পুলিশ কমিশনার হিসেবে গ্যারি ওল্ডম্যান ছিলেন পারফেক্ট। পর্দায় গোথাম সিটিকে খানিকটা নিউ ইয়র্কের মতো লাগলেও এটাই ছিল ব্যাটম্যান মুভির সেরা গোথাম সিটি। হং কংয়ের চিত্রায়ণও ভালো হয়েছে। ২ ঘণ্টা ৩২ মিনিটের মুভির প্রথম ঘণ্টায় সংলাপ একটু বেশি হলেও পপকর্ন নিয়ে বসতে হবে না। কারণ মুভির গভীরতা নিয়ে ভাবনা আপনাকে সুন্দর সঙ্গ দিবে। এক সময় হয়তো জোকারের মতো আপনিও বলে উঠবেন — হোয়াই সো সিরিয়াস?

রেটিং: ৫/৫

বন্ধুদের কাছে লেখাটি ইমেইল করতে নিচের tell a friend বাটন ক্লিক করুন: