পরিবর্তন এবং রি-ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ

এহসান ইমদাদ
Published : 26 Dec 2010, 02:44 PM
Updated : 26 Dec 2010, 02:44 PM

প্রথমত ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ না হয়ে কেন রি-ব্র্যন্ডিং বাংলাদেশ? দারিদ্র, বন্যা এবং ম্যাক্রোক্রেডিট নিয়ে যে ব্র্যান্ড পৃথিবীর কাছে আছে তা থেকে বেরিয়ে এসে ঘুরে দাঁড়াতে হবে আমাদের বাংলাদেশকে রি-ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে। আর তা হতে পারে; দক্ষ কর্মশক্তি রফতানির দেশ বাংলাদেশ, বিদেশী বিনিয়োগের দেশ বাংলাদেশ, হানিমুন পর্যটনের দেশ (পার্বত্য চট্টগ্রাম) বাংলাদেশ। স্লোগান হতে পারে "বাংলাদেশ- ট্রুলি দি হার্ট অব এশিয়া। এশিয়ার ভৌগলিক ম্যাপকে ষ্কেল দিয়ে মাপলে সর্ব পশ্চিমে সিরিয়া, সর্ব পূর্বে জাপান, উওরে মোংগলীয়া এবং দক্ষিনে ইন্দোনেশীয়া। পূর্ব, পশ্চিম, উওর, দক্ষিন বিবেচনায় এশিয়ার ম্যাপে ঠিক মধ্যখানে বাংলাদেশ অবস্থিত। অর্থ্যাৎ এশিয়ার হৃদয় হচ্ছে বাংলাদেশ।

যে সকল বিদেশী বাংলাদেশে থেকেছেন, তারা একটা কথা প্রায়ই বলেন বাঙালীর আতিথেয়তা নিয়ে, "বাঙালীর হৃদয়টা অনেক বড়"। সুতরাং ভৌগলিক ও জাতিগত বিবেচনায় "বাংলাদেশ- ট্রুলি দি হার্ট অব এশিয়া"  নিশ্চয়ই যুক্তিযুক্ত। অথবা ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বলা যেতে পারে "বাংলাদেশ- সিম্পলী ডিজিটাল"। মালয়েশীয়ার, "মালয়েশীয়া-দি হার্ট অব এশিয়া", ভারতের, "ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া" স্লোগানসমূহ তাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।

সফলভাবে কান্ট্রি ব্যান্ডিং করতে পারলে সে দেশের "প্রডাক্ট ব্র্যান্ডিং" অথ্যাৎ  "মেইড ইন বাংলাদেশ" এর কাজটিও অনেক সহজ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সরকার উন্নত বিশ্বের উন্নয়নে ভূমিকা পালনকারী অনাবাসী হাজারো নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশীর সহযোগিতা নিতে পারেন। আমাদের মনে রাখতে হবে মালয়েশীয়া, ইন্দোনেশীয়া, ভারতের উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল সেসব দেশের অনাবাসীরা যারা উন্নত দেশে তাদের অবদানের স্বাক্ষর রেখেছেন। রি-ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ কঠিন কাজ, তবে করা সম্ভব। এই কাজটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে "বিউটিফুল বাংলাদেশ" নামে এক ব্যর্ত্থ ব্র্যান্ডিং এর উদযোগ নেয়া হয়েছিল দেশের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে। সে কাজটি চরম ব্যর্ত্থতায় পর্যবসিত হয়েছে কারণ কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং পেশাজীবিদের কাজ ।

প্রশাসনে দুশো বছরের পুরানো নিয়ম, কানুন, রীতি, নীতি, প্রথা
ব্র্যান্ডিং এর সাথে দেশের দৈহিক কাঠামো এবং আইন কাঠামোরও পরির্বতন প্রয়োজন। বিগত প্রফেশনাল এনআরবি কনফারেন্স এ কয়েকজন আলোচকের মতে, "সচিবালয়-ই বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়"। কিন্তু এর জন্যে তারা বিসিএস অফিসারদের পুরোপুরি দায়ী করেন নি। মূলত দায়ী করেছেন দেড় দুশো বছরের পুরোনো  নিয়ম, কানুন, রীতি, নীতি, প্রথা  ইত্যাদিকে। নিচের উল্লেখিত ৭ লাইনের একটি বাক্য কোন বাছাই করে নেয়া হয়নি। এটি সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ের নোটিস থেকে র্যানডাম নেয়া হয়েছে।
"(g) Officers recruited directly to a Cadre and Sub-Cadre of the Bangladesh Civil Service through the Bangladesh Public Service Commission or an authority competent to make selection for such appointment through an earlier open advertisement shall rank senior to those directly recruited to the same Cadre and sub-Cadre through a subsequent open advertisement even though the latter may be appointed earlier than the former." Excerpted from
GOVERNMENT OF THE PEOPLE'S REPUBLIC OF BANGLADESH, MINISTRY OF ESTABLISHMENT, Regulation Branch, Section-II, NOTIFICATION, Dhaka, the 8th July 1985, No.S.R.O.324-L/85/ED(R-II)S-19/81-151
রাষ্ট্রের নাম গনপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ, প্রজাতন্ত্রের মানুষ যদি উপরের কলনিয়াল ইংরেজির (ইংল্যান্ড বা আমেরিকার ইংরেজি নয়) এই কঠিন ও পেচানো ভাষা না বোঝে তবে এই ভাষায় কার জন্যে লেখা হছ্? আজকের পৃথিবীতে যেখানে আইনের ভাষা পর্যন্ত সহজ করা হছে সেখানে আমাদের প্রশাসনিক ভাষা এখনো দুর্বোধ্য ও জটিল। পরিবর্তনের প্রতি অনীহা আমাদের প্রতিনিয়ত পিছিয়ে নিয়ে যাছে। বাংলাদেশ এখন আর বৃটিশ কলোনি না এবং বিসিএস অফিসাররাও ইংলিশম্যান নন। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ এবং পৃথিবীর ১১ বৃহত্তম জনশক্তিসম্পন্ন দেশ। এই বৃহৎ দেশের পনেরো কোটি জনসাধারণ বিসিএস অফিসারদের ক্লায়েন্ট এবং বিদেশীরা প্রসপেক্ট। বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে তুলে ধরা, শ্রমবাজার তৈরি করা (বিশেষ করে রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে- কর্মাশিয়াল উইং বা কাউন্সিলর এর মাধ্যমে নয়), দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আনা, বিদেশী পর্যটক আনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানো তাঁদেরই কাজ। কিন্তু তাদেরকে দোষ দেব না। দোষ দেবো দেড় দুশো বছরের পুরোনো রীতি, নীতি, আইন, কানুন, প্রথা ইত্যাদিকে। এ কারণেই ক্ষমতা সেন্ট্রালাইজড এবং আমাদের প্রশাসন আজ এত ধীর গতিসম্পন্ন। দেশ পরিচালনায় রাজনীতিবিদের কথা বেশি করে শুনতে হবে, তাঁদের মতামতকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

সিঙ্গাপুর মানুষের তৈরি একটি দেশ এবং পৃথিবীর পরির্বতনের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের পরিবর্তন করে চলেছে। আজ উন্নত বিশ্বের একটি দেশ। ষাট দশকের কথা। পুরো আইল্যান্ডে চাকুরি নেই, চারিদিকে অভাবের হাতছানি, জনগনের নেই কোন ভবিষ্যৎ। আইল্যান্ডটির টিকে থাকাই প্রশ্নবোধক হয়ে ওঠে। ঠিক তথনই সিঙ্গাপুরের সিভিল সার্ভেন্টরা হাতে তুলে নেয় টেলিফোন, প্রতিনিয়ত এবং অনবরত ফোন করতে থাকে অন্যান্য দেশে অবস্থিত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিসমূহের সিইও, এমডিদের। রীতিমত হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে সিঙ্গাপুরে আসার জন্যে, সিঙ্গাপুরে যেকোনো ব্যবসা খোলার জন্যে, হোক তা অয়েল রিফাইনারি, জাহাজ নির্মান, হাই টেক, লো টেক, রিপেয়ারিং, সোজা কথায় সবার জন্যে শুধু দরজাই খোলে নি স্বাগত জানিয়েছিল লাল গালিচা দিয়ে। যেমনটি আমেরিকাও করেছে বহু বছর। তবে সিঙ্গাপুরের সরকারী কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রম এবং দেশের প্রয়োজনে নিজের ঠুনকো আত্মসম্মানকে (বাংলাদেশে বৃটিশ কর্তৃক শেখানো তথাকথিত প্রেসটিজ) বিসর্জন দেবার কাহিনী বিরল।

পৃথিবীতে আমরা সবাই সেলসম্যান। একজন নবীন কবিকে পত্রিকা সম্পাদকের কাছে তার কবিতা খাওয়াতে হয়, একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে বিশ্বদরবারে তার দেশকে প্রমোট করতে হয় অনেক কারণে, বিদেশী বিনিয়োগ থেকে শুরু করে জিওপলিটিক্যাল এবং ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসির জন্যে। একজন ডাক্তারকে চেম্বার গরম করার জন্যে অনেক রোগী আনতে হয়, একজন চার্টাড একাউনটেন্টকেও ক্লায়েন্ট আনতে হয়, একজন গাড়ির সেলসম্যানকে  ক্রেতার  কাছে নিজেকে এবং তার পণ্যকে শুধু আকর্ষণীয় নয় প্রয়োজনীয়/আকাংখিত করে তুলতে হয়, সুতরাং পৃথিবীতে আমরা সবাই সেলসম্যান। শোনা যায় নোবেল প্রাইজ পেতে কবি ও সমাজ সেবকদেরও লবিং করতে দেখা গেছে। সেটাও একধরনের সেলস। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্যে আমাদের দক্ষ সেলসম্যান হতে হবে। তবে সেলস এ আরো বেশি দক্ষ হতে হবে সরকারী কর্মকর্তাদের। মনে রাখতে হবে সেলস ইউনিভার্সিটির পড়াশোনাকে অন্য যেকোনো বিষয় থেকে অধিকতর গুরত্ব সহকারে দেখতে হবে। কারণ এখানে আছে, সেলস ষ্কিল, সেলস সাইকোলজি, নেগোসিয়েশন সায়েন্স, ইনট্রিগিটি সেলিং, ইন্টারন্যাসনাল সোসাল এরিনা, এটিকেট, ম্যানার, প্রবিং ষ্কিল, শ্রবন ষ্কিল ইত্যাদির মত আরো অনেক কঠিন বিষয়। তবে "ট্রাষ্ট ইজ দি কারেন্সি¡ অব অল গ্রেট রিলেসনশিপ"।

আজকের পৃথিবীতে সময় মানে অর্থ, সময় মানে উৎপাদন, সময় মানে কাল নয়, পরশু নয়, সময় মানে "এখন"। সিদ্ধান্ত চেয়েছে বিদেশ থেকে? উওর আজই দেয়া ভাল। কাল সুযোগ অন্যকে দিয়ে দেয়া হতে পারে। এমনই দ্রুত গতিশীল পৃথিবীতে বাস করছি আমরা। আজকের আমেরিকা, জাপান  ৯টা ৫টার প্রডাকটিভ সময় যেন মিটিং এর জন্যে বিগ্নিত না হয় সে জন্যে সকাল ৭টা -৯টা মিটিং এর কাজ সেরে ফেলে ব্রেকফাষ্ট মিটিং এর নামে। আর আমরা দেখি দুপুর এগারোটায় (উন্নত বিশ্বে এগারোটা প্রায় দুপুরই, জীবন যেখানে শুরু ভোর ৫টায়) চা/কফি সংবাদপত্র সদ্য সেরে নিয়ে ডেপুটি সচিব 'সচিব মহোদয়' এর জন্যে একটি কঠিন, দুর্বোধ্য, অব্যবহৃত শব্দসমেত  প্রাচীন ইংরেজিতে একটি অতি দীর্ঘ চিঠি ড্রাফট করছেন। এটি আবার পাঠানো হবে বিদেশে। মাত্র পাঁচ হাজার বৃটিশ এসেছিল ত্রিশ কোটি ভারতীয়দের শাসন করতে, তাই সে সময় যে কোন কাজ অনুমোদন এর জন্যে প্রায় চল্লিশজন অধিনস্ত ভারতীয় কর্মচারীর সই নেয়া হোত, যেন কোন সিদ্ধান্তে ভুল হলে অধিন্তদের দায়ী করা যায়। এছাড়াও ক্ষমতা সেন্ট্রালাইজড রাখার একটা বিষয় তো আছেই। এতগুলো সই নিতে প্রশাসনের গতি অবশ্যই মন্থর হোত, কিন্তু সে সময়  উড়োজাহাজে করে ৯ ঘন্টায় ইংল্যান্ড যাওয়া যেতো  না। যাওয়া যেত সমুদ্রপথে এবং সময় লাগতো দুই মাস। বৃটিশরা আর নেই তবুও আমাদের প্রশাসনে আজও এমনই চল্লিশটা সই লাগে।

আজও বাংলাদেশে পাঁচ মিনিটের জন্যে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রায় দুই মিনিট ব্যয় করা হয় মাননীয় প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সভাপতি, সহকর্মীবৃন্দ, সুধীমণ্ডলী, অমুক ভাই, তমুক ভাই, ইত্যাদি ইত্যাদি অতঃপর উহাদের বিভিন্ন বিশেষণ বাবদ গড়ে সর্বমোট ১১৫ টি শব্দ। বৃটিশ তথাকথিত সাহেবরা এখন আর পরাধীন বাংলার জেলাপ্রশাসক বা পুলিশসুপার নন অথচ আজও জেলা শহরগুলোতে জেলাপ্রশাসক ও পুলিশসুপারদের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি করা হয়। এসবের উৎপত্তি বৃটিশদের শেখানো প্রভু-ভৃত্য সর্ম্পক চিরস্থায়ী রাখার বাসনায়। এছাড়াও আছে আরো শত শত বর্ণ, শ্রেণিবৈষম্যমূলক আচরণ, যেমন, বসের ব্যাগটি বহনের জন্যে ব্যাগ বহনকারী, বসদের চেয়ারে তোয়ালে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামনে সোফা, মাঝে চেয়ার, পেছনে মাদুর। আরো আছে চাকুরিতে বয়স সীমা বেঁধে দেয়া, পুঁথিগত ডিগ্রীকে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বড় করে দেখা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে ডিঙিয়ে শুধু বয়ঃজ্যেষ্ঠতার কারণে প্রোমোশন।

আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এইসব দেড় দুশো বছরের পুরোনো  বৃটিশ কলনিয়াল  রীতি, নীতি, আইন, কানুন, প্রথা,  থেকে। সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোকে আধুনিক ও গতিশীল করে তুলতে হবে। শতকরা আশি ভাগ সমস্যা সমাধান করাতে হবে নিচের দিকের বিসিএস এবং অন্যান্য অফিসারদের মাধ্যমে। তাদের হাতে ক্ষমতা দেয়া হোক, নবীনরাও প্রমান ককুক তাদের কর্ম দক্ষতা। পক্ষান্তরে তাদেরও মনে রাখতে হবে সরকারী চাকুরী কোন চিরস্তায়ী বন্দোবস্ত নয়। যে কোন প্রাইভেট চাকুরীর মতই প্রডাকটিভ না হলে তাদেরও চাকুরী যেতে পারে।

পনেরো কোটি শক্তি

বাংলাদেশের আছে পনেরো কোটি জনশক্তি এবং সঠিকভাবে দেশে ও বিদেশে কাজে লাগাতে না পারলে তা রূপান্তরিত হবে বিশাল এক  লাইয়েবিলিটিতে।  দ্রুত এই জনসম্পদকে বিশ্বমানের জনশক্তিতে পরিণত করা আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ। বর্তমানে গার্মেন্টস নয় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ। দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও বাজারজাতের মাধ্যমে দেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে। রাষ্ট্রদূতদের প্রবাসে আরাম আয়েশ কমিয়ে এবং জিওপলিটিক্যাল ডিপলোমেসি পেছনে রেখে অর্থনৈতিক ডিপলোমেসি পুরো মাত্রায় চালাতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ রাষ্ট্রদূতদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ

বিদেশী বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল। তথাকথিত "ওয়ান স্টপ সপিং" বোর্ড  অব ইনভেষ্টমেন্ট এর ব্যর্থতা (অবশ্য এ জন্যে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক জটিলতাও দায়ী), সচিবালয়ের দুরদর্শিতা এবং প্রবাসে বাংলাদেশের রাষ্টদূতদের ব্যর্থতা ফুটে ওঠে। এমনকি প্রবাসীদের পাঠানো দশ বিলিয়ন ডলারের ১০% ও ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেষ্টমেন্ট এ যাচ্ছে না। এই ব্যর্থতা কার? তবে এখন সকল 'ব্লেইম গেইম' পেছনে ফেলে  আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্রগ্রাম

পৃথিবীর অনেক দেশেই দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আছে, তবে নেই সুন্দরবন আর রোমান্টিক তিন জেলা সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্রগ্রাম। তৈরি করা যেতে পারে "মংলা-সুন্দরবন পোর্ট সিটি" । এতে মংলা পোর্ট-এর গুরূত্ব যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা। বর্তমানে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার পোকোনোজকে বলা হয় নববিবাহিত দম্পতিদের পর্যটনের তীর্থ স্থান। আকারে আরো বড় খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পোকোনোজকে সহজে হার মানাতে পারে। ওখানেও প্রস্তাবিত "সুন্দরবন-মংলা পোর্ট সিটির মত ২৪ ঘণ্টা খোলা হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেষ্টুরেন্ট, ক্যাসিনো, হাসপাতাল, ক্লাব, কমেডি ক্লাব, বার, ডেন্সিং, জীম, খেলাধুলা, বিভিন্ন রাইড, কনসার্ট, ইত্যাদি ব্যবস্থা করলে ফারইস্ট অঞ্চলে যারা আসেন তারা পার্বত্য চট্ট্রগ্রামও ঘুরে যাবে।

বাংলাদেশের চায়না ও ভারত স্ট্র্যাটিজি

ইন্ডিয়া নিয়ে জুজুবুড়ির ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। এ নিয়ে রাজনীতি যারা করেন তারা কখনোই বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন না। এছাড়াও ১৯৪৭ সালে যেই সব মুসলমান ভারত ছেড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) এ এসেছিলেন, তাদের ভেতর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ আজও ভারতবিদ্বেষী একটা মনোভাব পোষণ করেন জেনারেশনের পর জেনারেশন ধরে। ভারত এগিয়ে যাছে, বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবার বা কোন প্রকার ষড়যন্ত্র করার সময় তাদের নেই। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন ২০৩০ সালের ভেতর ভারত পৃথিবীর ৩য় অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। ভারতের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে আমাদেরও জায়গা করে নিতে হবে দ্রুতগামী সেই ওয়াগানে। নইলে আমেরিকার পাশে থেকে মেহিকোর মত আমরাও পিছিয়ে পড়বো। আমাদের ভাবতে হবে আমরা কি আমেরিকার পাশের কানাডা হবো না মেহিকো হবো, অর্থ্যাৎ ভারত এর পাশে। প্রায় দুশো বছর পর মেহিকোর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফকস (১৯৯৪ সালে) তার দেশবাসীকে বোঝাতে পেরেছিলেন যে অতীত দুঃখ ভুলে গিয়ে (ক্যালির্ফোনিয়া, টেকসাস, নিউ মেহিকো, ও এরিজনা হারাবার) আমেরিকার সাথে অর্থনৈতিক পাটনারশিপে যাবার প্রয়োজনীয়তা।

এহসান ইমদাদ : উন্নয়ন গবেষক, ব্যবসায়ী,  প্রেসিডেন্ট: ওয়ালস-ইমদাদ-ওয়াইনবার্গ গ্রুপ।