বিচার বিভাগ: তুলসী বনের বাঘ

Published : 13 Nov 2008, 09:17 AM
Updated : 28 Dec 2010, 06:33 PM

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে  যেহেতু নাগরিকের  শেষ আশ্রয় স্থল আদালত সে কারণে এ নিয়ে কথা বলা বা আলোচনা সমালোচনা করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর। রেখা-টানা সীমানা, মাপা শব্দ কাঠামোর বাতাবরণ কামনা করে এ সব বিষয়ের আলোচনা। এর অন্যথা হলেই ভয় আদালত অবমাননার। আর অবমাননার চর্চা  এদেশে খুব একটা কম  হয়নি। তাই বিচারপ্রার্থীর  চাপা কান্না প্রকাশ করার সাহস আমাদের দেশের  গুণী বিদ্বানদের মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না । আদালত, বিচার বিভাগ নিয়ে অনেক সত্য কথা আছে। যে সত্য কঠিন , আর কঠিনেরে ভালোবাসা সহজ নয়। তাই অনেক বিড়ম্বনা ।

মহাপুরুষ ও মহা পুস্তকের ধারণা অনুসারে সত্যকে গ্রহন করার সাহস না থাকলে কোন দর্শন,ধর্ম কর্মকে ধারন করা যায় না। এত কথার অবতারণার হেতু এই যে , গত ২৩ ডিসেম্বরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)সেবা খাতে তাদের এক জরিপের ফলাফলে বিচার বিভাগেই বেশি দুর্নীতি হয় বলে তথ্য প্রকাশ করে। জরিপের তথ্যে বলা হয়,প্রতিটি খানাকে গড়ে ৭ হাজার ৯১৮ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে বিচার বিভাগে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে উচ্চ আদালতে। এ জরিপের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত, প্রচারিত হলে এর প্রতিক্রিয়া এসেছে নানাভাবে নানা মাধ্যমে। মানহানি মামলা ঠুকেছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ নিন্দা জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের । আবার কেউ প্রশ্ন তুলেছেন জরিপ প্রক্রিয়ার উপরেই । গোল বেধেছে তখনই যখন এ জরিপটিকে একেবারেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে জরিপটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রসূত  বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। অথচ বিচার বিভাগের  দুর্নীতির অনেক তথ্য প্রমান রয়েছে। খোদ বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগে উচ্চ মাত্রায় দুর্নীতি  রয়েছে বলে বিভ্ন্নি ধরনের বক্তব্য রেখেছেন। অথচ ট্রান্সপারেন্সির জরিপ প্রকাশের পর  অনেক মাননীয় জনেরই বক্তব্য অনুয়ায়ী মনে হচ্ছে বিচার বিভাগে কোন দুর্নীতি নেই। একেবারে দুধে ধোয়া তুলসী পাতা। তবে টিআইবির জরিপ অনুযায়ী বিচার বিভাগে সর্বাপেক্ষা দুর্নীতি বেশি কিনা তা নিয়ে কথাবার্তা থাকতে পারে।

গত ১১ নভেম্বরে প্রধান বিচারপতি এ বিএম খায়রুল হক বলেন,"বিচারব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত আজ প্রশ্নবিদ্ধ। উচ্চ ও নিম্ন কোন আদালত সম্পর্কেই মানুষের ধারণা ভাল নয়।" বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট মিলনায়তনে নতুন নিয়োগ পাওয়া সহকারী জজ ও বিচারিক হাকিমদের ১০১ তম বিচার প্রশাসন মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

গত ১২ নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সম্মেলনে বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন,"অনেক বিচারকের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের প্রমান রয়েছে।"ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,"আমার কাছে ইনফরমেশন আছে আপনাদের (জজ)অনেকে নাজিরের সঙ্গে টাকা পয়সা লেনদেন করেন। আমি তাদের নামও বলতে পারবো। কিন্তু আমি তা করবো না ।"

গত ১১ ডিসেম্বর সাভারে "আমাদের মানবাধিকার কার্যক্রম; গ্রাম থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন" শীর্ষক সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, "বিচার ব্যবস্থায় বৈষম্য রয়েছে। এতে দরিদ্রদের স্থান নেই ।"

গত বছরের এপ্রিল মাসে  মেহেরপুর পৌর টাউন হলে মেহেরপুর আইনসহায়তা কমিটি আয়োজিত লিগ্যাল এইডস বিষয়ক সেমিনারে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছিলেন,"বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ায় অনেক বিচারক আইনের তোয়াক্কা না করে খেয়াল খুশিমতো কাজ করছেন। "এ সেমিনার অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন  মেহেরপুরের জেলা ও দায়রা জজ জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা।

উল্লেখিত প্রতিটি মন্তব্যই  বিভিন্ন সংবাদ ও গণমাধ্যমে বড় শিরোনামে  প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। অথচ জরিপের ফলাফলকে উপলক্ষ্য করে টিআইবির বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে  দুইটি এবং কুমিল্লার আদালতে একটি মানহানির মামলা করা হয়। কুমিল্লার আদালতের মামলায় প্রথমে টিআইবি প্রধান এম হাফিজ উদ্দিন খানসহ তিন  জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাও জারি করা হয়। পরে অবশ্য বাদি প্রসেস ফী (পরোয়ানা পাঠানোর সরকারী কোর্ট ফী)যথা সময়ে দাখিল করেন নি বলে  মামলাটিই খারিজ করে দেন সংশ্লিষ্ট বিচারক।

বিচার বিভাগে সৎ ,দক্ষ, নির্লোভ, মানবিক গুণসম্পন্ন  লোক কমতে থাকলেও   এ ধরনের ব্যক্তিত্ব যে একেবারেই অনুপস্থিত তা বলা যাবে না । আর টিআইবির জরিপ ফলাফলে তারা ব্যথিত হবেন এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু সত্য মেনে নিয়ে তা থেকে উদ্ধারের পথ অনুসন্ধানের দায়িত্বও আমাদের বিচার বিভাগীয় ব্যক্তিবর্গের।

প্রতি সপ্তাহেই গনমাধ্যমে বিচারকসহ বিচার  বিভাগীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চ, নিম্ন আদালতের বিভিন্ন শাখার কর্মচারী কর্মকর্তারা নতুন,পুরানো ,চেনা অচেনা  নানা কায়দা পদ্ধতিতে  বিচার প্রার্থীদের কাছ থেকে বিকল্প পথে বিভিন্ন অংকের উৎকোচ বখশিশ  হিসাবে গ্রহন করেন। মামলা তালিকায় (কজ লিষ্ট )মামলা শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারিত হয় বাঁকা পথে। উভয় আদালতেই  বিচারকের আদেশ দেখতে ,সত্যায়িত কপি (সইমুহুরি নকল) পেতে নির্ধারিত  পরিমানের চাইতে বিপুল পরিমান খরচ গুনতে হয়। মামলার নথিপত্র আটকে রেখে উচ্চ ,নিম্ন দুই আদালতেই কর্মচারীদের ঘুষগ্রহণ মিথে পরিণত হয়েছে। আদালতের বিভিন্ন দপ্তরে নির্ধারিত অর্থের চাইতে অনেক বেশি অর্থ আদায় , জাল কাগজপত্র দাখিল করে জামিন করানো , দুর্নীতির মাধ্যমে জামিন করানো, এতো নৈমিত্তিক ঘটনা। মামলা দায়ের থেকে মামলার রায় ঘোষণার পরেও  আদালতের কর্মচারীদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয় বিচার প্রার্থীকে। মামলায় শাস্তির  রায় আটকে রেখে সাজা প্রাপ্তের কাছ থেকে আদালত কর্মচারীর  মাসোহারা গ্রহন, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের যোগসাজশে  সরকার ঘোষিত কুখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এমনকি আইনে স্পষ্ট বাধা থাকা সত্ত্বেও পলাতক আসামিদের অব্যাহতি করানো , ডাকাতিসহ খুনের মামলা রাজনৈতিক হয়রানি বলে হাকিমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়া, মূল আসামির অব্যাহতির  তদবিরের খবর গণমাধ্যমে দৈনিক সংবাদপত্রসহ অন্যান্য গনমাধ্যমে প্রকাশিত, প্রচারিত হয়েছে। মামলার বাদি কিম্বা বিবাদীর পক্ষ নিয়ে রায় ঘোষণার খবরও রয়েছে। সংবাদকর্মীদের চোখ এড়িয়ে যাওয়া ঘটনার কথা না হয় বাদই দেয়া গেল। অগুনতি ঘটনার মধ্যে স্বয়ং বিচারকদের চরিত্র নিয়ে ব্যতিক্রমী এবং তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনার দু' একটি উদাহরন দিলে আমাদের সবার চক্ষু ও কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন হতে পারে। গত বছরের ১০ অক্টোবরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্থান পাওয়া ঘটনাটির কথা হয়তো অনেকের মনে আছে। ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের তৎকালীন একজন  বিচারক নিজেই রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য না নিয়ে বার বার তাদেরকে আদালত থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। জনগুরুত্ব সম্পন্ন ,স্পর্শকাতর মামলার দ্রুত বিচারের জন্য এ ট্রাইবুনাল গঠন করা হলেও আসামিদের পক্ষ নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার একটি কৃষক পরিবারের তিন সদস্য হত্যা মামলার সাক্ষীদের এভাবে ফিরিয়ে দেয়ার খবর দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে বিচারক বিব্রত বোধ করে মামলাটির বিচার না করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নথিপত্র ফেরত পাঠান।

আবার এ মামলাটিতেই আসামি পক্ষ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের একটি আদেশ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট  কর্মচারীদের যোগসাজশে আদেশ হওয়ার পর দীর্ঘ ছয় মাস আটকে রাখে বলে বাদি অভিযোগ আনেন। মামলাটির এখনও বিচার চলছে । মিরপুরের ব্যবসায়ী আফতাবউদ্দিন হত্যা মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদৎসহ শাহাদৎ-বাহিনীর সদস্যদের রাজনৈতিক হয়রানির কারণে মামলা হয়েছে  বলে তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। যথারীতি মামলাটি প্রত্যাহার করাও হয়। অভিযোগ ওঠে প্রত্যাহারের এ প্রক্রিয়াটিতে বিপুল পরিমান ঘুষ লেনদেন হয়। পরে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সরকারের উঁচু মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।বাধ্য হয়ে ঢাকার পরিবেশ আপীল ও মহানগর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক  একজন বাদে অপর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে বলে ঢাকার একটি আদালত আদেশ দেন।এ মামলায় এ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ আইনজীবী নিজের দুর্নীতির কথা এড়িয়ে যেয়ে   দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আদালতের পেশকার সহ আসামিদের আইনজীবীদের দায়ী করেন।এ ঘটনায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌশলি ওই বিশেষ কৌঁসুলিকে দায়ী করেন। এ আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধেও সাধারণ আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীদের রয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ এবং অভিযোগের পক্ষে রয়েছে তথ্য প্রমান। আদালতের দুর্নীতি নিয়ে অনেক প্রবীণ আইনজীবী বলে থাকেন, এক শ্রেনীর আইনজীবী বিচারকদের  দুর্নীতি করতে প্ররোচিত করেন। আর কতিপয় বিচারক আইনজীবীদেরকে দুর্নীতিতে জড়ানোয়  বাধ্য করেন।

সম্প্রতি কথিত রাজনৈতিক হয়রানির মামলার প্রত্যাহার ও এ উপলক্ষ্যে দুর্নীতির  আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে।

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়  জ্যেষ্ঠ বিচারককে   ডিঙ্গিয়ে কনিষ্ঠ বিচারকের  পদোন্নতির উদাহরণও আমাদের বিচার বিভাগে রয়েছে। তারিখের পর তারিখ ,কিন্তু নিষ্পত্তি নেই । মামলার বোঝা যেমন বাড়ছে উচ্চ আদালতে ,তেমনই বাড়ছে নিম্ন আদালতে। নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন বিচার প্রার্থীরা। ফৌজদারি মামলায় ১২ বছরে একজন সাক্ষীও আদালতে আসেনি সাক্ষ্য দিতে । এ রকম প্রচুর মামলা ঝুলে আছে। কোন কোন আদালতের বিচারকগণ নির্দিষ্ট সময়ে আসন গ্রহন করেন না,বিচার কাজ শুরু করেন না। বিচার প্রার্থী ও আইনজীবীদের মূল্যবান শ্রম ঘন্টার অপচয় হয়। মামলার আদেশ নিজে না লিখে পেশকারকে দিয়ে আদেশ লেখান। বেশ কিছূ বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা তারা বিচার কাজে প্রয়োজনীয় সময় না দিয়ে একাই একাধিক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করেন। গণমাধ্যমে এ সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হলেও বিষয়টির সুরাহা হয় না। রায় দেয়ার জন্য নির্ধারিত তারিখে কয়েকজন  বিচারক রায় না দিয়ে রায় ঝুলিয়ে রাখেন বিশেষ উদ্দেশ্যে এমনও অনেক নজীর রয়েছে। এ কারণে বিচার প্রার্থী ও আইনজীবীদের ক্ষোভও মাঝে মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মাননীয় প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার ,আইনসচিব মহোদয়ের কাছে এসব বিষয়ে  অনেক অভিযোগও জমা পড়ে।

বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি,যেমন আদালতের বেশ বড় অংশের  কর্মচারীদের অতিরিক্ত লোভের  কারনে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের যেমন হতাশা বেড়েছে তেমনি কতিপয় বিচারকের অবিচারিক আচরনের ,কতিপয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের এবং আইনজীবীদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কারো কারোর অনিয়ম দুর্নীতির কারণেও  বিচার বিভাগের প্রতি আপামর জনতার আস্থা কমেছে। যার দায় দায়িত্ব আমরা কেউই এড়াতে পারবো না। এ সব কিছুর জন্য আমাদেরকে জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের উপ-রেজিষ্ট্রার টিআইবির কাছে তাদের জরিপ পদ্ধতি ও  সুপ্রিম কোর্টে কারা কারা এ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তা জানতে চিঠি পাঠিয়েছেন। এর আগে অধস্তন আদালতের বিচারকদের সংগঠন জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন টিআইবির প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে অভিহিত করে । সংগঠনটি জানায় "প্রতিবেদনের কোথাও বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ না এনে বিচার বিভাগকে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত  হিসেবে চিহ্নিত করা গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে টিআইবি।" সংগঠনটির মহাসচিব একটি প্রতিবাদপত্রে জানান, "আদালতের আইনজীবী, মোহরার, কর্মচারীগন বিচার বিভাগের অন্তর্ভূক্ত নন। অথচ তাদেরকে বিচার বিভাগের অন্তর্ভূক্ত দেখিয়ে দুর্নীতির এই সূচক দেখানো হয়েছে ।"এ বিষয়ে বলতে হয়, আদালতের কর্মচারী গন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় জুডিশিয়াল ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে অথবা সাংবিধানিক ভাবে নিয়োগ পান না ঠিকই। তবে বিচারকগণই এদের নিয়োগ দেন। এদের কাজ কর্মের দেখভাল অথবা তাদের চাকরির সমস্ত বিষয় বিচারকরাই দেখে থাকেন। তাই  কর্মচারীদের অপকর্মের দায় দায়িত্ব বিচারকরা মোটেও এড়াতে পারেন না। কারন তাদের আসনের নীচে বসেই এ সব কর্মচারীরা মামলার নথি গায়েব থেকে শুরু করে উৎকোচের দাবীতে বিচার প্রার্থীদের সমস্ত রকম হেনস্থা করে থাকেন।