একজন ইমারতের মানবধর্মের ইমারত!

কৌশিক আহমেদ
Published : 27 Dec 2010, 04:37 PM
Updated : 27 Dec 2010, 04:37 PM

গতরাত্রিতে ঝুপ বৃষ্টি। বছরের প্রথম বৃষ্টি। প্রিয় বৃষ্টি দেখে নেশার মত লাগলো শরীরে। প্রথম বৃষ্টিতে ভিজি বরাবর। কিন্তু এবার শীত বৃষ্টিতে মিলেমিশে গেছে। উষ্ণ হয়ে ওঠা বিছানা আর ছাড়তে ইচ্ছে করলো না। ভাবছিলাম ট্যাক্সি ড্রাইভার ইমারতের কথা। শাহবাগ থেকে উঠলাম বাকী, সাখাওয়াৎ, মিনার, শরৎ ও আমি। এক প্যাকেট চানাচুর হাত বদল হচ্ছিল সবার। রাত্রী গভীর হলে ট্যাক্সিওয়ালারা শংকিত থাকে আরোহীদের নিয়ে। চানাচুর খেতে দিলে সে ভয়ে হয়তো খাবে না এমন ভেবে তাকে দিতেই সে সানন্দে নিল, মিনার ভাই ভয় দেখালেও সে ভয় পায় না। ইমারতের হলুদ ক্যাব চলছে অথচ মিটার স্থির। সোনারগাঁতে এসে সেটা আমার চোখে পড়লো। সেটা দেখিয়ে মজা করে বললাম, দেখলেন, আমরা কত ভালমানুষ! সেও মজা করে বললো, আমি যে আরো ভালমানুষ সেটাও তো বুঝেছেন নিশ্চয়ই!

আমি তাকে শরৎকে দেখিয়ে বলি, আপনার সৌভাগ্য যে আপনার গাড়ীতে ভবিষ্যতের একজন হুমায়ুন আজাদ আছে। সে বলে, হুমায়ুন আজাদের বাড়ীও আমি চিনি। আমি তাকে বলি, আপনি কি মাও সেতুং কে চেনেন! সে চেনে না। কিন্তু ফিডেল ক্যাস্ট্রোকে চেনে। আমি বললাম ভবিষ্যতের একজন ক্যাস্ট্রো আছে পেছনে। শরৎ জিজ্ঞেস করে, আপনি কি ডঃ ইউনুসকে চেনেন? সে চটজলদি উত্তর দেয়, তারে আমি ভাল করে চিনি, সে এ গাড়ীতে নাই! আমরা একচোট হাসি। তারপরে জিজ্ঞেস করি, এই যে এত নেতা ধরলো, এখন কি নতুন নেতা বানাতে হবে? সে বলে, আমাদের কোন নেতা দরকার নাই। সব নেতা খারাপ। নেতা ছাড়াই ভাল থাকবো। আমি বলি, কিন্তু দেশে ইসলামী শাষণ এলে একটা সৎ শাষন দেখা যেতে পারে। সে বলে তেমন নেতা তো নাই! আমি বলি, জামাত আছে, সে বলে সব শয়তান। আমি বলি তাহলে শাষনব্যবস্থা ইসলামিক হোক এটা আপনি চান না! তার জামাত ইসলামীর চামদাড়ী দেখে আমার মনে হয়েছিল সে ইসলামীক শাষণব্যস্থার পক্ষের সমর্থক হতে পারে। ইমারত আমাদের অবাক করে বলে, কোন ধর্ম নয়, শাষণ ব্যবস্থায় মানবধর্ম দেখতে চাই, যেখানে সবাই যার যার ধর্ম শ্রেষ্ঠ বলবে। কোন একটাকে শ্রেষ্ঠ বলা হবে না।

বাকী, সাখাওয়াৎ আর মিনার ভাইকে নামিয়ে দিয়ে আমরা আরো সামনে এগুই। মিনার ভাই নেমে যাবার সময় বলে, ড্রাইভার সাহেবের এড্রেস সংগ্রহ করে রাইখেন! আমি আর শরৎ তার ফোন নম্বার নেই। দুই মোবাইল থেকে দুটো মিসকল দেই। তার নাম জিজ্ঞেস করি, সে বলে তার নাম ইমারত; আমি চমৎকৃত হই তার নাম শুনে। কখনও শুনেছি বলে মনে পড়ে না। তার নম্বর সেভ করে রাখি। ইমারত আমাদের মিসকল দুটি বের করে বলে কি নামে সেভ করবো? আমরা বলি যেটার শেষে 8 সেটা এস নামে সেভ করেন, আর যেটার শেষে 9 সেটা কে নামে।

বাইরে বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন। ভাবছি ইমারতের নম্বর সেইভ করে কি লাভ হয়েছে! অন্য একদিন যে গোলাম মুস্তাফার সাথে পরিচয় হয়েছিল, সেও তো বিদায়ের সময় বলেছিল, হারিয়ে যাবেন নাতো! কিন্তু আমি তার সাথে তো আর দেখা করিনি! আদৌ কি করবো! এই ইমারতের সাথেই বা কি আর কখনও দেখা হবে, তাকে কি কারণে প্রয়োজন!