ভরযুবতী ও বেড়াল

shagufta_tania
Published : 28 Dec 2008, 10:13 AM
Updated : 28 Dec 2008, 10:13 AM

চৈত্রমাসের দুপুর — সারা আকাশ কালো করে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। কারেন্ট চলে গিয়ে ঘটাং ঘটাং শব্দ করতে করতে মাথার ওপর পাখাটা বন্ধ হয়ে গেল। রঙ্গন চুপচাপ শুয়ে শুয়ে শোবার ঘরের ছাদ দেখছিল। পায়ের কাছে তুলতুলে বিড়ালছানা ঘুমাচ্ছে, রঙ্গন ওর নাম দিয়েছে 'তুলোট'। অবশ্য ইদানীং মনে হচ্ছে ওর নাম হওয়া উচিত ছিল 'উদরপরায়ণ'। ভরপেট খেয়েদেয়ে ভাতঘুম দিচ্ছে পড়ে পড়ে। রঙ্গন বসে বসে চুল আঁচড়াচ্ছিল। তার চুল প্রচুর — অনিঃশেষ সেই ভার দীর্ঘক্ষণ জট ছাড়াতে হয়। অসুখের পর চিরুনী ভরে ভরে চুল উঠছে ওর।


অলঙ্করণ: সাগুফতা শারমীন তানিয়া

আয়নার রঙ্গনের মিশমিশে চুল, নজরুলের একটা পুরনো গানে ছিল না, 'চাঁচড় কেশ' — ঐ রকম, ঘন আর ঢেউ খেলানো। রঙ্গন তার জন্যে খুব মানানসই নাম। ফুলের গুচ্ছের মতো তার মুখ হাসি-হাসি। এমনকি যখন সে হাস্যমুখী নয়, তখনো তার দুইচোখে হাসির বাতি জ্বলতে থাকে।

বাইরে দুদ্দাড় বাতাস দিচ্ছে। বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে। কার একটা লাল ব্লাউজ উড়ে এসেছে বারান্দায়।

পুরো একমাস জন্ডিস-এ ভুগলো রঙ্গন। এই একমাস সে বাড়িতেই ছিল। হল থেকে চলে এসেছে অসুখ শুরু হবার সাথে সাথে।

বাড়িতে থাকতে রঙ্গন ভালোবাসে। হলের সারি-সারি বাটির ডাল আর গিলা-কলিজার ঝোল, হলের বারোয়ারি অন্তর্বাস, বুয়াদের অবিরাম কলহ থেকে মুক্তি। শুধু তাই না — কেমন যেন একটা আন্তরিক স্বস্তির আবহাওয়া আছে ঘরে। গলার টোপাজ বসানো সরু চেনটা খুলে রেখে ভুলে গেলেও ক্ষতি নেই। মনে করে ঠিক সময়ে খেতে না বসলেও বরাদ্দের কমতি নেই।

যদিও এবারের বাড়িতে থাকাটায় আনন্দ ছিলনা। শুয়ে শুয়ে পৃথিবীর আহ্নিক গতি টের পাওয়া, বেলের শরবত-ডাবের পানি আর হলুদ-মরিচ ছাড়া স্টু। কাহাতক খাওয়া যায়!

বাইরে আবার হারেরেরে করে বৃষ্টি এলো। একটা ইউক্যালিপ্টাসের মাথা নড়ছে প্রবলবেগে। রঙ্গনের চাচি খুব রাঁধতে ভালবাসেন। আজকে তার ঘরে ইলিশ উৎসব। বছরে একবার উনি গোটাদিন নানানপদের ইলিশ রান্না করেন। ইলিশ-ভাত, ইলিশের তেল-কলিজা, দুধকচু-ইলিশের মাথা, সরিষা-ভাপা ইলিশ। আর এবার হয়তো রঙ্গনের জন্যে আলাদা করে অল্প নুন-হলুদে নতুন ইলিশের লালচে ঝোল।

রঙ্গনের জানালা দিয়ে দমকে দমকে ইলিশ মাছ ভাজার সুবাস আসছে। রঙ্গণের খাটের পাশে খাতা-কলম। সে খাতাটা টেনে নিয়ে লিখলো:

'দোল দোল দুলুনি/ রাঙা মাথার চিরুনি/
বর আসবে এ্যাখনি/ নিয়ে যাবে ত্যাখনি।'

এরপর কিছুক্ষণ কলম কামড়ালো। তারপর লিখলো 'আম্মার জন্যে কোনোদিন ডাইরী লিখতে পারলাম না। আম্মার অভ্যাস হচ্ছে আমার সব কিছু লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া। শুধু তাই না, এরপর সেবিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা। রীতিমত স্প্যানিশ ইনকুইজিশন।'

একঘণ্টা পর রঙ্গন গোসল-টোসল করে একটা লাল আর বেগ্‌নী চুন্‌রী শালওয়ার কামিজ পরে দিব্যি সেজেগুজে চাচির ঘরে খেতে এলো। চাচি জিজ্ঞেস করলেন, 'কীরে শরীর এখন কেমন? মাথাটাথা ঘুরাচ্ছে আর? সব খাবি তো?'

গোসলের সময় মাথাটা একটু হালকা লাগলো।' ইলিশের ডিম দিয়ে রাঁধা ঝিঙেভাজির বাটি ঠেলে দিলেন চাচি। রঙ্গনের পাতে পড়লো ইলিশমাছের গাদা-এককোয়া ভাজা রসুন-ভাজা মরিচ — আস্ত পেঁয়াজ। একেবারে বাদলের ভোজ। 'বাদলা দিনে এমনি ভোজ/ খাটলে মাঠে জুটবে রোজ একটা কবিতার লাইন গেঁথে গেল রঙ্গনের মাথায়। কার কবিতা? স্মৃতি হাতড়াতে থাকলো রঙ্গন। বিমল ঘোষ মৌমাছি।

রঙ্গনের সাথে তুলোটও এসেছে। সারা শরীরে খুশির হিল্লোল তুলে মাছের কাঁটা খাচ্ছে।

রঙ্গন ভাত খেলো প্রায় জন্ম-উপোসীর মতো। হলে থাকতে থাকতে তার খুব নোলা হয়েছে। ভালমন্দ রান্না দেখলেই হাত ধুয়ে বসে পড়ে।

নিজের রুমে ফিরে এসে খাতাটা টেনে নিয়ে রঙ্গন লিখলো — "সুশীল বালক ভাল রান্না করে, প্রায় চাচীর মতো ভালো। একদিন ঘরে তেমন কিছু নাই, সুশীল বালক আলু দিয়ে ছোলার ডাল রাঁধলো। মোড়ের দোকানের পরোটা। খেয়ে বুঝতেই পারলামনা ডালে মাংস নেই।"

এটুকু লিখে রঙ্গন ফিক করে হেসে ফেললো। সে 'সুশীল বালক' লিখতে গেল কেন? আসল নাম লিখলে কি ক্ষতি হতো? এতেই দ্যাখোনা, সন্ধ্যার মধ্যে আম্মা ওকে আরেক ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে জিজ্ঞেস করবেন — সুশীল বালকটা কে?

বাড়িতে থেকে থেকে আর পাকা পেঁপে-বেল এইসব পথ্য খেয়ে খেয়ে রঙ্গনের রঙ খুলেছে খুব। একটু কৃশ হয়েছে সে, তাকে এখন বেশ বাহারী দেখায় আয়নাতে। তার চোখের মনি একটু ছাইছাই। মাথার চুল ঘিরে এলো চুলের বৃত্তটুকুর রঙ লালচে। রঙ্গন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আয়নায় তাকিয়ে থাকতে পারে। তুলোট ভাতঘুম দিচ্ছে। জানালার বাইরে আকাশ আবার কালো… গাছপালার রেখাগুলি সাদা হয়ে এসেছে। আবার ঝড় উঠবে।

বাতাস শুরু হলো। ঘরের ভেতর প্রায় কাঁপিয়ে গেল একবার। পুরনো আমলের বাড়ি। কড়িকাঠ… গরাদের জানালা… খড়খড়ি … ছাদের থামগুলিতে সুড়কির পদ্মফুল। গীর্জায় ঘণ্টা বাজছে… ঘণ্টার নির্জন ধ্বনি ডেকে যাচ্ছে কোন এক অনুপস্থিতকে।

তুলোট জেগে উঠে আয়না দেখতে লাগলো ঘুমচোখে। আয়লায় লাল-বেগ্‌নী চুন্‌রী কাপড় পরা রঙ্গন ঝলমল করছে। তুলোট নিচু হয়ে নিজের একটা থাবা চেটে নিয়ে বল্লো — আয়না দেখতে আমারও খুব ভাল লাগে।'

— কী? কী বললি?'

তুলোট আর কোনও কথা বলবার গরজ দেখালো না । জানালা দিয়ে নেমে গেলো কার্নিশে, কবেকার পরিত্যক্ত একটা মাছের ল্যাজা টেনে নিয়ে খেতে লাগলো।

রাতে যখন তুলোট রঙ্গনের কাঁথার নিচে ঢুকবার জন্যে গুঁতোগুঁতি করছে, রঙ্গন তাকে কোলে নিল। কি সুন্দর জোলো নীল চোখ। যেন গোল গোল নীল আরশী বসানো। রঙ্গন আরশীর দেশে প্রায় ঢুকে যেতে যেতে বললো — তখন তুই কি বলেছিলি?' তুলোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার পর ঘুমিয়ে পড়লো। তার ছোট্ট কোমল নাক দিয়ে শব্দ হতে লাগলো পোঁ পোঁ।

২.
দরজায় দাঁড়িয়ে রঙ্গনের মনে হলো ওর ফুস ফুস-প্লীহা-যকৃত সব ছুটে যাচ্ছে সেজানের দিকে। সৌর বর্ষের মাত্র একটা মাস সে সেজানকে দেখেনি। অথচ তার মনে হচ্ছে — আবার প্রথমদিন থেকে সব শুরু করতে হবে।

ঘরে পরিচিত গন্ধ। তার্পেন্টাইন এর। তিসির তেলের । টোস্ট বিস্কুটের। আর ঘামের। রঙ্গন একটা কমলা ব্লাউজ-শাদা শাড়ি পরেছে। শাদা শাড়িতে নীল সুতায় পিঁপড়ে সারি পাড় বোনা। সেজান একবার মুখ তুলে মডেলকে ছাপিয়ে তাকে দেখলো। বয়স্ক এক মহিলার নগ্ন পিঠ। পুরাতন বইয়ের পৃষ্ঠার মতো আর্দ্রতা-শূন্য।

রঙ্গন অন্য ঘরে চলে এলো। এখন মনে হচ্ছে স্টুডিওতে ফর্সা কাপড় পরে আসাটা ঠিক হয়নি।

ঠিক একঘণ্টা পর সেজান ঢুকলো। মুখে অপ্রস্তুত হাসি।

৩.
আমার রক্ত সম্পর্কের দাদামশাই এর নাম হোপ্ প্যাট্রিক গ্লেউয়িস্। নীলক্ষেতে তেহারি খেতে খেতে এইসব মনে পড়ে আমার। বিষম খাই। আমার মুখ লাল হয়ে ওঠে। (বন্ধুরা আমাকে ডাকে সাহেব সেজান।)

হোপ প্যাট্রিক গ্লেউয়িস্ এর পোস্টিং ছিল শান্তাহার-এ। রেলওয়ের চাকরী। কলকাতা থেকে তখন আসাম যেতো মন্‌সুন রেলওয়ে। আমার দাদামশাই ছিলেন তার হর্তাকর্তা।

রেলওয়ে কোয়ার্টার। প্রাসাদের মতো বাড়ি। বেলে পাথররঙা। তার দখিনমুখী ঢালাও বারান্দা। মোরাম বিছানো গাড়ি-চলার পথ কম্পাউন্ডের ভিতর। পেছনের মাঠে টেবিল টেনিস খেলবার বাঁধাই টেবিল-ক্লাবঘর। নদীর বাতাস আসতো ক্লাবঘর এ হু হু করে। পাচক-আয়া-মালি-হাউস কিপার-ন্যানী…। রম্ রম্ করছে ঘর। সপ্তাহে একদিন আসতো মেথর, সাফসুতরো করতে।

মেমসাহেব মারা গেছেন ক্রান্তীয় ম্যালেরিয়ায়। ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে সাহেবী স্কুলে। দ্যা বুচার… দ্যা বাটলার… দ্যা ক্যান্ডলস্টিকমেকার। প্রাতরাশে স্ক্র্যাম্বল্‌ড্‌ এগ্‌স্‌। রাতে কখনো চাপাতি আর কারি। ঢালা বারান্দার চারদিকে দেহাতি লোকজন জমতো। প্যারাফিন ল্যাম্পের আলো। সাহেব নেটিভদের ভাষা জানতেন। গল্প করতে ভালবাসতেন।

রবিবারের চার্চ। সন্ধ্যামণির ঝাড়। চার্চ আর কবরখানার পাশে নদী, নদীটা এখন আর নাই। নাম ছিল ক্ষীরনদী। রুপকথার মতো নাম। বানের মৌসুমে এই ছোট্ট ঘোলা ইয়েলো-অকার নদীই হয়ে উঠতো রূপতরাসী রাক্ষুসি তলিয়ে যেতো রেলপথ। দাদামশাই এর উপর ভার পড়তো বাঁধ দেবার, সারা গ্রামের লোকজন বেগার খাটতো সেসময়।

সাহেব এর সন্তানরা দিব্যি মেসওয়াক করতো শ্যাওড়ার ডাল দিয়ে, সপ্তাহে একদিন। সাপার টেবিল-এ বসতো রীতিমত ফিটফাট টাই এবং কলার এ। হোমওয়ার্ক করতো। বড়টি চলে গেল নৈনিতাল-এ বোডিং স্কুলে।

গোল বাঁধলো দাঙ্গার সময়। যখন ক্ষীর নদী লাল হয়ে উঠলো জবাই করা মানুষে। নারী-পুরুষ-শিশু। রেলওয়ের পাশের বাঁধ-এ ডাঁই করা অজস্র মৃত মানুষ। সাহেব এর কম্পাউন্ডেও উন্মত্ত লোক চলে এলো। তার রূপসী ন্যানীর জন্যে। সাহেব পুলিশ ডাকলেন। গোলমাল তখনকার জন্যে মিটে গেল।

এর মধ্যে ঠিক কবে কখন সাহেব এই নেটিভ মহিলাকে দেখেছিলেন নিরিখ করে, কবে তাঁর ভাল লেগেছিলো তার সজল রূপ, সে আমি বলতে পারবো না। সাহেব তাকে বিয়ে করেন। তার নাম হয় রুথ্ হেনরিয়েটা গ্লেউয়িস।

দেশভাগের পরও হোপ প্যাট্রিক গ্লেউয়িস এর চাকুরীর মেয়াদ ছিল চারপাঁচ বছর। যখন সাহেব দেখলেন — চাকুরী আছে ঠিকই, কিন্তু ভারত সরকার অন্য সাহেবদের পয়সা কড়ি নিয়ে চলে যেতে দিচ্ছেনা — তখন সাহেব চাকুরী নিলেন ইস্ট পাকিস্তান রেলওয়েতে। পোস্টিং হলো মোগলটুলী, চট্টগ্রাম।

ভেতরে ভেতরে কবে সাহেব ফিরে যেতে মনস্থ করলেন — তা রুথ্ হেনরিয়েটা জানেন না। একদিন দেখলেন বাড়ির নম্বর প্লেট 'টি৭১০', অদূরে অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ, রবিবারের চার্চ, কসাইখানা, বিশ্বযুদ্ধের পরিত্যাক্ত ট্যাংক (জলাভূমিতে নিমজ্জমান), সাহেবের সাধের ব্রমেলিয়াড্স্-এর ভেতর আটকা পড়ে যাওয়া কালো ব্যাঙ… সবই আগের মতোই আছে। শুধু সাহেব নেই।

সাহেব এর জাহাজ যখন জেনোয়া অব্দি পৌঁছেছে — তখন ম্যাল্‌কম প্যাট্রিক গ্লেউয়িস-এর স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

বার্থ সার্টিফিকেট এ লেখা থাকে — born on আর ব্যাপ্‌টিজমাল সার্টিফিকেট এ থাকে — 'said to be born on'। সাহেব-এর মেমশিশুরা সবাই (এডিথ, এডওয়ার্ড, এলসি) জন্মেছে ভারতে, তাদের বার্থ সার্টিফিকেট নেই, আছে ব্যাপ্টিজমাল সার্টিফিকেট… জন্মনিবন্ধীকরণ সনদপত্রের এইসব ঝামেলায় যখন সাহেব বিপর্যস্ত, রুথ হেনরিয়েটা ততদিনে ফিরিঙ্গিবাজারের দিকে একটা ঘর নিয়েছেন। পুরোদমে রক্ষিতা।

সব রূপকথার শেষেই আছে — তারপর তাহারা সুখেশান্তিতে বাস করিতে লাগিল। আমার দাদী রুথ হেনরিয়েটাও তাঁর রূপকথার শেষ দেখলেন — এক ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ম্যালকম গ্লেউয়িসকে অবশ্য আবদুল মালিক হতে হয়।

এই গল্প আমি একজীবনে একজনকেই বলেছি — ভাঙা ডানার পালকে যে সবার আগে চুন-হলুদের সেঁক লাগিয়ে দেবার কথা। আমার স্ত্রী। বদ্রু জাহান মালিক। (আশ্চর্য, আর্ট কলেজে পড়তে আসা মানুষকেও জাত বৃত্তান্ত কুরে কুরে খেতে পারে! বদ্রু আর আমি যতবার ঝগড়া করেছি — সে আমাকে শুনিয়েছে — 'তোমার তো জাতের ঠিক নাই!'

আমার কনুই ধরে নাড়া দিল রঙ্গন, 'সেজান, সেজান, রিকশায় ওঠো।'

রিকশায় উঠে রঙ্গন ঘোষণা করলো — 'আমরা সোয়ারিঘাট যাচ্ছি।'

প্রেম করবার অদ্ভুত সব জায়গা বের করে রঙ্গন। আর্মানিটোলা চার্চ, কেরানীগঞ্জ, সোয়ারীঘাট, বাদামতলী।

এক আকাশ আলোর ভেতর প্রায় কুড়ি পঁচিশজন লোক প্রায় নাঙ্গা হয়ে লুঙ্গি কাচছে — রঙ্গন সেখানে দাঁড়িয়ে বললো — সেজান তুমি আমাকে বিয়ে করবে?' আমি প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তর দিই — 'না।'

রঙ্গন হেসে ফেল্লো — 'আমি জানতাম, এরকম কিছু বল্লে তুমি উত্তর না দিয়ে থাকতেই পারবে না। গত একঘন্টা তুমি কোনো কথা বলোনি।'

হায় অপ্রাপ্তবয়স্কা!

বাকি রাস্তা আমি আর কোনো কথা বলিনা। রঙ্গনও তেমন কিছু বলেনা। রোদের উত্তাপে তার মুখ অল্প লাল রঙ্গন গুনগুন করে গান গাইছিল — নজরুলসংগীত। … তুমি বাকি আধখানা চাঁদ ধরার মনিদীপ/ বাসন্তী রং শাড়ি পরো, খয়েরী রঙের টিপ…।

এই মেয়েটা কেন আমার কাছে আসে? কোথা থেকে এমন উন্মাদের মতো ভালবাসা নিয়ে আসে? আমার অনিকেত-উঞ্ছ জীবন দেখে তরুণ একটা হৃদয়ের করুণা ক্ষরণ হতেই পারে, কিন্তু করুণা জেগে থাকে কতকাল? রঙ্গন যেভাবে পত্রে-পুস্পে এমন বসন্ত দিনকে ছাপিয়ে উঠেছে… যেমন ফুলের ঝুমঝুমি বাজিয়ে অজান্তেই ডেকে চলেছে ফসলের মৌসুমকে — ঐ আয়োজনের পাশে আমি কতো বেমানান তা কি সে দেখে না?

আসল কারণটা অবশ্য আমি কাউকে বলতে পারবোনা। কথাই তো বলি এত কম যে, লোকে আমাকে অনুপস্থিত ভেবে নিতে পারে। আমার জীবনে প্রেম তার সকল বিস্ময়-সকল বিস্ফোরণ নিয়ে এসে আবার চলেও গেছে। আর তাকে ডাকা চলে না।

আমি দেখেছি কত আভায় ঝিকমিক করে প্রিয়নারীর চোখ, কত কাছ থেকে দেখেছি রোমকূপে কদম ফোটা, কত নিবিড় পরিচয় আমার তার ঘ্রাণের সাথে, তার রজঃস্রাবের সাথে, তার বিন্দু বিন্দু করে পুরে উঠতে থাকা স্তনের সাথে। ঐসব আবার নতুন করে যাপন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শিল্পী হিসেবে আমি বেদম অলস।

আমার বন্ধুরা ক্যানভাসের রোমকূপ ফোটাতে তেলরঙে একই ছবি দুতিনবার আঁকে। আমি ক্যানভাসে তার করি একরঙে প্রথমে পুরোটা লেপে দিয়ে। ছবি আঁকি একবার। যা আঁকি তা মুছিনা। শোধরাই না।

৪.
রঙ্গন তুলোটকে প্রায় ঠেসে ধরে শুয়ে পড়লো। তুলোট হাঁচোড় পাঁচোড় করে ছাড়িয়ে নিল নিজেকে, সে শরীরের উত্তাপ ভালবাসে ঠিকই, কিন্তু নিজের মর্জিমতো। যখন তার মন ভালো থাকে , তখন সে ক্ষুদে ক্ষুদে থাবা দিয়ে রঙ্গনের শরীর খামিরের মতো দলে, ওর ওড়নার ডগা চিবায় ক্রমাগত। বেচারী মাকে পায়নি বেশিদিন!

অসুখের পর থেকে রঙ্গনকে গভীর অবসাদে পেয়েছে, সে দ্রুত ঘুমে তলিয়ে যায়। স্বপ্নের ভিতর তার মন ঘুরেফিরে নেড়েচেড়ে দেখে সকল পুরাঘটিত। অতীত এবং বর্তমান।

চকমকি ঠুকে ঠুকে ফুলকি জ্বেলে দেখে, একটা অবিন্যস্ত ঘরে সে আর সেজান চুপচাপ শুয়ে আছে। বন্ধ পুস্তকের দু'খানি বিপরীত পৃষ্ঠার মতো, মুখোমুখি। উপাতিত। পৃষ্ঠাদুটো জুড়ে অজস্র গল্প। আলাদা।

ঘুমের ভেতর পাশ ফিরতে ফিরতে রঙ্গনের মনে পড়ে, ব্যথার স্মৃতি মানুষের শরীরকে যেমন দীর্ঘক্ষণ সচকিত রাখে — সেইরকম যেন ছিল সেজানের ভেতর — শরীরে শরীর মিলতেই রঙ্গণের আকাশময় বাজি পুড়ছিল, আর সেজানের শরীর পাপিষ্ঠের মতো কাঁদছিল। কেন?

তুলোট জেগে ওঠে। সে ছোট্ট বেড়ালছানা, তার পেটটি ছোট, তার ঘনঘন খিদে পায়। পায়ে পায়ে সে তার দুধের বাটির কাছে যায়, শ্লুপ-শ্লুপ শব্দ করে দুধ খায়। রঙ্গন শুয়ে শুয়ে বেড়ালের শরীরের রেখার অশেষ রূপ দেখতে থাকে। ঘুমের ভেতর ছড়া কাটছিল কেন রঙ্গন? তাও 'হাতকড়া দিয়ে হাতে/নিয়ে যায় চাষাড়াতে/ তারিখটা আষাঢ়ের উনিশে!'

খাওয়াদাওয়া শেষে নিজের গোঁফ চেটেপুটে সাফ করে তুলোট এসে রঙ্গনের গায়ে গদি-হেলান দিয়ে বসে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। পলকবিহীন, স্বস্তিবিহীন, বিচারকের চোখে। রঙ্গন প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিল, এমন সময় তুলোট ঘোষণা করলো — 'এখানে থেকে এক মাইল দূরে একটা খুব সুন্দর বেড়ালী আছে।'

— তুই কী করে জানলি?'

— আমি গন্ধ পাচ্ছি। প্রতিদিন পাই।'

— যাবি তার কাছে?'

— যাব একদিন। কিন্তু ও যদি আমাকে না ডাকে, তাহল মিশবো না। ব্যাটা-বেড়াল নিজের থেকে কাছে যায় না।'

রঙ্গন ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে মনে করতে পারলো, সে সেজানকে টেনেছিল নিজের দিকে। সে সে। তার পাশে শুয়ে ফুলেফুলে ঘুমোয় ছোট্ট মদ্দা-বেড়াল। চোখের ওপর একটা থাবা তুলে, যেন আড়াল করছে রৌদ্র থেকে।

৫.
অনেকগুলি কাজ জমেছিল, শেষ কলাম একধারসে। যখন কাজ করি, তখন করি দৈত্যের রোষে। তারপর ফুরিয়ে যাই।

আমাদের চারজনের একটা গ্রুপ ছিল আর্টকলেজে এ। 'ব্লু-রাইডার' গ্রুপের অনুকরণে প্রথমে আমরা এর নাম দিলাম — নীল ঘোড়া। ভালো লাগলোনা বেশিদিন। সিকার্ট ছিলেন আমার প্রিয় শিল্পী, 'ক্যামডেন-টাউন গ্রুপ' এর অনুকরণে নাম দিলাম 'আজিমপুর গ্রুপ' (আমরা চারজনই থাকতাম আজিমপুর-এ)। শেষমেশ বদ্রু জাহান বল্লো — নাম দাও 'হাঁসজারু'। আমরা তো 'ব্যাকরণ মানি না'।

হাঃ হাঃ। তখন হাঁস ছিল সজারু। বদ্রু খোঁপায় কাশীগাদা ফুল পরতো মেরুন শাড়িজামার সাথে মিলিয়ে। খুব ভালবাসতো নিজেকে আর আমাকে। 'কেমনে তা জানি না' হয়ে গেল হাঁসজারু। এখন বলাই বাহুল্য, গ্রুপটা আর নেই।

একটা এক্সিবিশন আছে আগামী মাসে। উদ্বাস্তু! আজিমপুর গ্রুপ এর। আধাশেষ কাজগুলি যত্ন করে শেষ করলাম। পোস্ট অফিস, এ গেলাম। ব্যাংক এ গেলাম। ফিরে যখন এলাম –তখন স্টুডিওতে রঙ্গন এসেছে। যত্ন করে পট ভরে চা বানিয়েছে।

আমি বুঝতে পারছি রঙ্গন আমার ভেতর শেকড় চালিয়ে চালিয়ে শক্ত মাটি খুজঁছে। একটু মাটি-জল মিললেই সে মেলে দেবে ক্রোম-ইয়েলো ফুল ফলের ডাল। আমি কোনও উৎসাহ পাচ্ছি না। শরীরের নৈকট্য নারীর ভেতর হয়তো বহু কিছু জন্ম দেয়, প্রেম-মায়া-যত্ন-নিষ্ঠা-সন্তান। কিন্তু আমি কেবল টের পাচ্ছি আমার ভেতর থেকে অনিঃশেষ বেরিয়ে আসছে পাঁকাল মাছ, মোরি ইল-এর মতো দীর্ঘ, পিচ্ছিল, বিষাক্ত, ঘড়েল হাসিমুখ।

রঙ্গন আমাকে ঘাঁটালো না।

একটু পর কাপডিশ সিংক-এ রেখে বিদায় হয়ে গেল। শরীরের সম্পর্ক যে প্রিয়জনকে আপনতর করেনা, হয়তো তাকে আপন করতে চাওয়াই ভুল — এরকম কিছু একটা ভেবে নিয়ে সে চলে গেল। পেছন থেকে তার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আমি যেন তার ধূসর চিন্তাটুকুও স্পষ্ট দেখতে পেলাম।

বেলা পড়ে আসছে। ছায়া দীঘল হচ্ছে। পাকা-ডুমুর রঙা রৌদ্র। ক্রোকোডাইল ব্লু আকাশ। সুপারি গাছটায় একটা দাঁড়কাক ডাকছে। আমি হাতের তেলোয় ডলতে ডলতে আমার কাগজের সিগারেট পাকালাম। যেন স্পষ্ট শুনতে পেলাম-পাশের ঘরে টুইন ওয়ান এ বদ্রু ছেড়ে দিয়েছে সিনেমার গান। কিশোর কুমার সন্ধ্যার জোনাকি নীল আকাশ কাঁপিয়ে গাইছেন — আজ হৃদয়ে ভালবেসে/ লিখে দিলে নাম তুমি এসে।' আমি দেখতেও পেলাম — আমার একুশ বছরের শ্যামলা স্ত্রী একটা জাফরানি শাড়ি পরে গুনগুন করতে করতে ঘর গোছাচ্ছে।

আমাকে কি রঙ্গন হঠকারী ভেবে নিল? ভাবুক। ভেবে চলে যাক।

আমার কী থাকবে? আবার সেই শূন্য! মাটির সরায় গোলানো রঙ — বার্নট-সিয়েনা, ন্যাকড়া, এরিন্মোর তামাক। সন্ধ্যার জানালা। সুপারি গাছে দাঁড়কাকের বাসা। আর চিঠি। বদ্রু জাহান এর অল্পবয়েসের চিঠি। আর এডিথ গ্লেউয়িস এর চিঠি। টিবিতে মারা যাবার আগ অব্দি তাঁর সারাজীবনের চিঠি, কালো-আদরণীয়া কল্যাণী বিমাতা রুথ হেনরিয়েটাকে। সারাজীবন এডিথ আমার দাদীকে চিঠি লিখে গেছেন। আর রুথ অপার্থিব আনন্দে-প্রাপ্তিতে সংরক্ষণ করে গেছেন সেই চিঠি।… কি করে সাহেব মদ্যপ এ পরিণত হন… কেমন করে ছোট্ট এডিথ পাব-এর বাইরে রোববারের রোদ্দুরে লেমনেড হাতে বাপের জন্যে অপেক্ষা করতেন… কেমন করে, কয়লা পোড়া গভীর কুয়াশায় পথ চিনে চিনে ইস্কুলে যেতেন — খোলাবাজার থেকে কিনতেন রুটি আর হেরিং মাছের আচার… কেমন করে লন্ডন হসপিটালের বিশাল সব রোস্টিং এর কড়াই থেকে কাঁই তুলে আনতেন — রান্নার জন্যে।

আমার দাদীর মোট সন্তান সংখ্যা ছয়। ম্যালকম বাদে। কিন্তু অন্তরঙ্গে দাদীর সন্তান ছিলো একটিই , তাঁর আর্য সন্তান। ম্যালকম প্যাট্রিক গ্লেউয়িস। অথচ বাইরের দাদী দিব্যি মেজবানী খেতে যাচ্ছেন, বাচ্চাদের ফ্লানেলের জামা পরিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন ফয়েজ লেক, নতুন সন্তান আসবে বলে ভার হয়ে আসছে তাঁর বুক, কলরব করে ভাইবোনরা ম্যালকমকে ডাকছে — রাঙাদা! রাঙাদা!

হাঃ হয়তো বদ্রু জাহান একদিক থেকে ঠিকই বলতো — আমার জাতের ঠিক নাই।' আমরা বংশানুক্রমে নিঃশব্দ দ্বিচারণে অভ্যস্ত।

৬.
রঙ্গন দিবানিদ্রার আয়োজন করছিল, কোলের কাছে লেজ গুছিয়ে তুলোটও সেইজন্যে তৈরি হচ্ছিল… চাচী এসে বল্লেন — এই তুই আমার পুলিগুলি বানিয়ে দে না!

— এখন হলো চৈত্রমাস, এখন কিসের পিঠা-উৎসব চাচী?' চাচী কোন কথা শুনলে না। আজ তাঁর ঘরে পিঠা উৎসব। জনা দশেক বাইরের লোকও আসবেন। চাচীর ঘর গুড়-নারিকেল-ঘনদুধের গন্ধে গুমোট।

রাতে পিঠা খেতে এসে রঙ্গণের মনে হলো — সে ঠিক একটা মাদী বেড়ালের মতো গন্ধ-সংকেত ছড়াচ্ছে। উল্টোদিকে বসেছে একটা হুলো। সন্দিগ্ধ চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে।

রঙ্গন জানেনা — এই সুমিষ্ট আয়োজনের লক্ষ্য সে। এঁরা তাকে দেখতে এসেছেন। জানলো একদিন পর। সন্ধ্যাবেলা।

জানালায় বিকেলের ফিকে নীল আকাশ, মেঠো হলুদ আলোর পোঁচ। শাদা নিস্তেজ চাঁদ উঠেছে। খোসা ছাড়ানো পেঁয়াজের মতো। সুগোল। নীলাভ শাদা। শীর্ণ রেখায় আচ্ছন্ন।

রঙ্গন ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল চৌকাঠে এসে পড়ে থাকা তেরচা আলোর দিকে। সন্ধ্যার গোলাপি আলো। কতদিন সেজানের স্টুডিওর বাইরে এমনি সন্ধ্যা নেমেছে। রঙ্গনের বুক ভরে উঠেছে ভালোবাসায়, ঘৃতকুমারীর শাঁসজলের মতো নিবিড়-আঠালো। (হয়তো সে বলতো — সকাল থেকেই আমার মাথায় একটা কবিতার লাইন ঘুরছে জানো, 'খড়কুটো খুঁজে ফেরে দুষ্টু চড়–ই।' — অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তর কবিতা।' বলেই সেজান আবার মগ্ন হয়ে যেত ছবি আঁকায়।)

একবার ভাবলো, সেজান এর স্টুডিওতে যায়… তারপর হাল ছেড়ে দিল। যাওয়া মানে সেই তো ফাটা ডিমের খোলার মতো বিনষ্ট-শূন্য সময়। হয়তো সেজান গরম ডালভাত নামিয়ে বলবে — খেয়ে যাও।' হয়তো একঝলক তাকিয়ে দেখবে, রঙ্গনের মুখে সেই হলদে টুনিবাল্ব জ্বলছে না, তার চক্ষু কোটরাগত, তার সবুজ শ্রী পাতুড়ির লাউ-পাতার মতো তোবড়ানো। কিন্তু সেজান কিচ্ছু বলবে না। তার ছবির মতোই তার চোখের দৃষ্টি কাঁটাতারে ঘেরা — ওপারে প্রবেশ নিষিদ্ধ। রঙ্গনের ঘরে ফুলদানিতে মা রেখে গেছে এক স্তবক চাঁপা। পিপঁড়ে উঠছে ডাঁটা বেয়ে।

রঙ্গন তুলোটকে দলাই মলাই করবে বলে খুঁজে বের করলো বটে, সে জন্ম-স্বাধীন নিজেকে অনায়াসে ছাড়িয়ে নিয়ে কার্নিশে ছুটলো। বিশাল চাঁদ উঠেছে, সে এখন জ্যোৎস্নায় বসে কেঁই কেঁই করে 'জেনানা'দের ডাকবে…

গভীর রাত্রে রঙ্গনের ঘুম ভেঙে গেল। এবং বুক ধড়াস করে উঠলো। তার পিরিয়ড শুরু হয়নি এক সপ্তাহ হয়!

তুলোট মাথা উঠিয়ে গোল গোল চোখ তুলে বললো — তাতে কী? আমাদের ভেতর এরকম কত হয়! এক ব্যাচ বেড়ালছানার ভেতর একেকজনের বাপ একেকটা বেড়াল!'

রঙ্গন এই ভীষণ দুশ্চিন্তার ভেতরও হেসে ফেললো। তুলোট শাদা-কালো বেড়াল, তার চোখ ঘিরে জলদস্যুদের কালো তাপ্পির মতো কালো রোম। রঙ্গন ওর রোমশ পেট হাতাতে লাগলো, তলোট কিছুক্ষণ উপভোগের শব্দ করলো ঘরর্‌।

— এখন কী করবো তুলোট?

— বাচ্চা জন্ম দেবার সময় একটুও শব্দ কোরো না, আমার মাও করেনি… যাতে চিল-শকুন-শেয়াল কুকুর কেউ না জানতে পারে তুলতুলে বিড়ালবাচ্চারা পৃথিবীতে এসেছে, বুঝলে? ছানারা তো নিজেকে বাঁচাতে পারবেনা…তাই।'

রঙ্গন অবিশ্বাসের চোখে তুলোট-এর দিকে তাকিয়ে রইলো। তুলোট নিজের শরীরটা আরামদায়ক অবস্থানে ছেড়ে দিতে দিতে রঙ্গনের হাত চেটে দিল — 'ভেবো না। তোমার বাচ্চার চোখ ফুটলে আমি ওদের দেখতে যাব।'

এতেও হলো না ভেবে, তুলোট যোগ করলো — 'তোমাকে আমার ভাল লাগে।'

রঙ্গনের জুতোর ভেতর তুলোট আজকেও ঢুকিয়ে রেখেছে মৃত টিকটিকি। প্রীতি উপহার। সকালে অবশ্য রঙ্গন চেচাঁমেচি করবে —

(বেড়ালের ভালবাসা পাবার পরও মানুষের সমস্যা মেটে না — এ বড় আশ্চয্যি… এইটা ভেবে নিয়ে তুলোট ঘুমোতে গেল।)

লণ্ডন, জানুয়ারি – ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮

কৃতজ্ঞতা স্বীকার — আমার বন্ধু ডেভিড এবং কাশ্মীর (বেড়ালছানা)