এক চোখে আমাদের ফাগুন অন্য চোখে আগুন…….তা ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে

পলাশ বসু২২৩৩
Published : 13 Feb 2013, 04:05 AM
Updated : 13 Feb 2013, 04:05 AM

বছর ঘুরে আবার ফাগুন এসে্ছে বাংলার দুয়ারে। ফাগুনের রং ছড়িয়ে যাক সবখানে। শিহরিত করুক, দোলা দিয়ে যাক সবার চিত্তকে। শীতের জড়তার খোলস অবমুক্ত করে গা ঝেড়ে প্রকৃতি তার স্বরুপে ফিরছে। এ এক অন্য রকম অনুভুতি। অন্য রকম ভালো লাগা। প্রকৃতির এ বৈচিত্র ও খেয়ালিপনা ছড়িয়ে পড়ুক সবার অন্তরে।

প্রকৃতির এ রূপের কোন তুলনা হয়না। বিশ্বে এমন দেশ কমই আছে যেখানে প্রকৃতি এমন উদার, অকৃতিমভাবে তার মহিমা প্রদর্শন করে। সত্যিই আমরা ধন্য। এমন বৈচিত্রপূর্ন ঋতুর দেশ আমার বাঙলা; ভাবতেই ভালো লাগার এক অবর্ণনীয় অনুভুতি আমার মন, মনন ও মগজে শিহরণ সৃষ্টি করে অন্য সকরের মতোই। অলোড়ন তোলে, ঢেউ এর দোলা দেয়।

এবারের ফাগুন এসেছে তার সত্যিকারের আগুন নিয়ে। এমন আগুন লাগা ফাগুন বাঙালীর জীবনে শেষ কবে এসেছিলো-মনে কি পড়ে তা? নিশ্চয় পড়ে। সেবারের ফাগুনের এসেছিলো বিরহের কবিতা, সুর আর গীত নিয়ে। তাতে তাল, লয়, সুর সবই ছিলো। তবে প্রলয় এনেছিলো তা সারা বাঙলায়। সে বিরহের করুণ সুর আজো হৃদয়ে বেদনা জাগায়। বাঙলার ঘরে ঘরে তা আহাকার আর শুন্যতা তেরী করে। মায়ের চোখ অশ্রুসিক্ত করে তোলে। অবছা চোখে সে যেন কি খুঁজে ফিরে!

বোন পথ চেয়ে থাকে তার প্রিয় ভায়ের পথপানে। এই বুঝি সে এলো। কিন্তু তার এ অপেক্ষা দীর্ঘ হতে থাকে।দীঘর্তর থেকে তম হয়।আমি ৫২ এর ২১, বাঙলা ৮ই ফাল্গুন এর রক্তঝরা অথচ সোনালী দিনের কথা বলতে চেয়েছি। সেবারের ফাগুন এসেছিলো বাঙলার দামাল ছেলেদের পরীক্ষা নিতে। মায়ের ভাষা রক্ষার চোয়ালবদ্ধ সে পরীক্ষা বাঙালী দিয়েছিলো জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে। তবুও মায়ের ভাষা রক্ষার সে সংগ্রামে আমার পূর্বসুরীরা কোন আপোষ করেনি। আমরাও কি তেমন প্রয়োজনের দিনে আপোষ করতাম? নিশ্চয় না। তবে, কিছু মীরজাফর বারংবার বাংলা মায়ের জঠরে বেড়ে উঠেছে আর বিভীষন সেজেছে। ধিক! তাদের।

সালাম, বরকত সহ অনেকে হারিয়ে গেলো না ফেরার দেশে। তবে, ইতিহাস হয়ে বেঁচে রইলো আমাদের মনিকোঠায় সারা জীবনের জন্য। তাই, এ যেন মৃত্যুকে হারিয়ে দিয়ে অমরত্বের স্থায়িত্ব কে আলিঙ্গন করে নেওয়া। বাঙালীর ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে এমন জীবন সংহারী ঢেউ এসেছে সময়ে-অসময়ে। কিন্তু বাঙালীরা কখনো হেরেছে কি?

এবারের ফাগুন ব্যতিক্রমী হয়ে এসেছে আমাদের জীবনে। সে আসার আগেই বাঙালীর চেতনায় লেগেছে অন্য দোলা। তাই এ ফাগুন কাটিয়ে দেওয়া আর দশটা ফাগুন এর মতো নয়। এ ফাগুনে বিরহের সুর নেই। আছে দ্রোহের আগুন। পুঁড়িয়ে ছারখার করে দিতে চাই বিশ্বাসঘাতক বেইমানদেরকে। তাই, শাহবাগে এ ফাগুন এবার পাবে ভিন্ন মাত্রা এবং আঙ্গিক। হাতে হাত রেখে, কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে মাথা উঁচু করে এ প্রজন্ম চত্ত্বরে বাংলার সূর্যসন্তানেরা বিশ্বাসঘাতক, রাজাকার আর দালালদের ফাসি দেওয়ার দাবিতে পুন: পুন: শপথ নিবে। মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার অদম্য প্রত্যয় নিয়ে এ ফাগুন এবার উদযাপিত হবে। সবাইকে ফাগুনের রক্তিম লাল পলাশের শুভেচ্ছা রইলো। রাজাকারমুক্ত বাংলায় সামনের ফাগুন আসুক তার মাতাল সমীরণ নিয়ে- এ আশা পোষন করছি। এ আশা নিশ্চয় বাতুলতা নয়?