এক.
পাপ ছাড়ে না বাপকে। এ চিরন্তন প্রবাদের সাথে বাঙালি মাত্রই পরিচিত। পাপ নিয়ে প্রতিটি ধর্মের হর্তাকর্তাদের বিশেষ বিধান তো রয়েছেই। ছেলেবেলায় ইতিহাস বইতে পড়তাম…সতিদাহ প্রথার কথা। অন্যদিকে বড় পীর আবুদল কাদের জিলানীর মায়ের কাছ থেকে শেখা সত্যবাদিতার পুরস্কারেরও কথা। তাই বলে শিক্ষাঙ্গনে হরহামেশা যত্রতত্র প্রহারের খবরও দেখতে হয়েছে সেই ছেলেবেলাতেই। আমি যখন ক্লাস সেভেন এ পড়তাম, তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর স্যার আমাদের ইংরেজী পড়াতেন। একবার মনে আছে, আমাদের ক্লাসে সবাইকে ইংরেজী গল্প মুখস্ত করতে বলা হয়েছিলো। প্রথম দিন স্যার পড়া নিতে আসলে, আমি ছাড়া কেউই পারলো না, স্যার কিছুই বললেন না, শুধু বললেন-কালও একই পড়া পড়ে আসবে সবাই। ক্লাস শেষে আমাকে ডেকে বললেন, কিছু লাল পিঁপড়া জোগাড় করে আনিস, আগামীকালের জন্য, আমি বললাম, ক্যান স্যার? স্যার বললেন, কাল যারা পড়া পারবে না, ওদের মাথায় লাল পিঁপড়া দিয়ে দেব। দুর্ভাগ্যক্রমে স্যারের মেয়েও আমাদের সাথে পড়ত, দ্বিতীয়দিন যখন স্যার পড়া জানতে চাইলেন, তখন স্যারের মেয়েও পড়া পারলো না, স্যার আমাকে ডেকে বললেন, ঐ লাল পিঁপড়াগুলো নিয়ে আয়, আমি বললাম, স্যার মাফ করে দেন, প্লিজ..স্যার আমার অনুরোধ রেখেছিলেন, সবাইকে মাফ করে দিলেন।
দুই.
এরপর সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একসময় যুক্ত হই ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্সের সাথে। বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, শারীরিক নির্যাতন এসব বন্ধে সারাদেশের ৬৪ জেলার শিশুদের নিয়ে কাজ করতে করতে একসময় অনক কিছুই দেখতে পেলাম, সব শিশুদের অভিযোগ, স্কুলে স্যাররা বেদম মারপিট করেন। বুদ্ধি আসলো, সারাদেশের শিশুদের বললাম, শিক্ষাঙ্গনে কত ধরনের শাস্তি দেয়া হয়, তা ছবিতে আঁকো। ৬৪ জেলার শিশুরা বড় বড় ক্যানভাসে আঁকলো ৩৭ ধরনের শাস্তির কথা। এরপর চাইল্ড পার্লামেন্টের জাতীয় অধিবেশনে এসব বিষয় তুলি ধরি, সেসময় বড় বড় দুই মন্ত্রী ঘোষনা দেন, শিগগিরই শিক্ষাঙ্গনে শারীরিক নির্যাতন বন্ধে আইন করবে সরকার। অবশেষে মহামান্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর..শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ আইনটি পাস করলেন। কিন্তু ধর্মীয় পুরোহিত এবং মোল্লা ঠাকুররা সবসময় ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজেদের অন্যায় কাজকে জায়েজ করে নেন, যেভাবে গত ১লা মে যাত্রাবাড়ির শ্যামপুর তালিমুল কোরআন মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার আক্তার কোমলমতী শিশুদেরকে ধর্মের নামে খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছেন!! হায় দেশ ভাবলে অবাক লাগে, এ কোন দেশ, এটা কী বাংলাদেশ, পাকিস্তান না সৌদি আরব??? ঐ মাদরাসায় শিক্ষা নিতে এসেছে কোমলমতী কিছু শিশু। যাদের বয়স ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। নিষ্পাপ শিশুগুলোকে হতে হলো পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার। গণমাধ্যমে কাজ করার সুবাদে এর আগেও প্রায়ই শুনেছি, অনেক হুজুর মেয়ে শিশুদের পড়ানোর কথা বলে গায়ে হাত দেন, কুপ্রস্তাব দেন, অনেক সময় মেয়ে শিশুরা নিজেদের ইজ্জতও বাঁচাতে পারে না। এ কলঙ্ক কোথায় রাখি?
তিন.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে আইন হওয়ার পরও কেন, জেসমিনের মতো মোল্লা ঠাকুরানী এসব গর্হিত কাজ করছে, এর যথাযথ বিচার হওয়া চাই। এমন বিচার যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর ধর্মের নামে ভন্ডামি করার সাহস না পায়।
লেখক: নিউজরুম এডিটর, রেডিও টুডে এফ এম ৮৯.৬