আমাদের গণতন্ত্র ও আমাদের ভাবনা…

মশিউর রহমান
Published : 9 April 2012, 04:17 AM
Updated : 9 April 2012, 04:17 AM

কিছু দিন যাবত বেশ গরম হয়ে আছে রাজনীতির মাঠ । সরকার পতনের লক্ষে মাঠে নেমেছেন বিরোধী প্রায় সব গুলু দল । তাদের কথা হল সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি যা তারা ক্ষমতায় আসার আগে করেছিল ।

কিন্তু বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তা মানতে পারছিনা, একটু অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই । আর সবার মত আমিও একমত যে সরকার একদম ই আমাদের আশা পূরণ করতে পারেনি, কিন্তু দেখুন না আজকে করা আন্দোলন করছেন ? বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার যারা বাংলাদেশ কে বিশ্ব চাম্পিয়ন করেছিলেন দুর্নীতিতে এবং তাদের সহচর স্বাধীনতার বিরোধী দল রাজাকার আলবদর রা যারা আমাদের দেশের জন্ম বিরোধী । কষ্ট লাগে এই সব নাটক দেখলে ।

এই আন্দোলন হওয়া উচিত ছিল আমাদের সাধারণ মানুষ এর মাধ্যমে যারা কেও চাকুরী করছেন, কেওবা ব্যবসাই কিংবা কেও ছাত্র ,এই আন্দোলন হওয়া উচিত আমাদের সকলের যারা ভোটের মাধ্যমে এই সরকার কে ক্ষমতায় এনেছিলাম ।

ওয়াল স্ট্রিট এর ঘটনা কি দেখেনি এই সরকার কোনো বিরোধী শক্তির ইন্ধন ছাড়াই কি ভাবে সাধারণ মানুষ নেমে এসেছিল রাস্তায়? হয়ত তা করতে পারব না কারণ আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার গুলু রাজনৈতিক দলগুলোর হাতের মুঠোয় । আমরা আমাদের কথাগুলো বলতে পারি না আমাদের দাবি আদায় করার ও কোনো জায়গা নেই।

আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন আছে, কী হবে আন্দোলনের বিষয়? আমাদের স্বার্থ নাকি রাজনৈতিক দল এর স্বার্থ নিয়ে আমরা আন্দোলন করব ? আমি মনে করি যা নিয়ে আন্দোলন হওয়া উচিত তা হল দ্রব্য মূল্যের উর্ধ গতি , মানুষ আজ দিশে হারা বিশেষ করে মধ্য শ্রেনীর জনগণ কারণ তারা চাহিদা এবং সাধ্যের মধ্যে কোনো সদস্য খুঁজে পাচ্ছে না । এই মাস থেকে আবার বিদুত এর মুল্য বাড়ানো হবে তাহলে এত টাকা বিনিয়োগ করে সল্প মেয়াদী বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার মানে কি ? নাকি পূর্ববর্তী সরকার এর মত এই সরকার ও দুর্নীতির পথ বেছে নিয়েছে টাকা কমানোর পথ হিসেবে ।

খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েও তিন বেলা ভাত ও ডাল দিয়ে খেতে পারছে না শত শত পরিবার, অনাহারে দিন কাটছে তাদের । তিন বছরেও সরকার সবার মুখে ভাত দিতে পারেনি। বরং ওই না খাওয়ার দলে আরো নতুন কিছু মুখ যোগ হয়েছে। বেকারত্বের হার দিন কে দিন বেড়েই চলেছে নতুন কর্মসংস্থান এর অভাবে।

রপ্তানি আয় আরো বাড়ানো সম্ভব হত যদি ঋণ এর পরিমান বাড়ানো যেত কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না কারণ ব্যাংকের কাছেই অর্থ সল্পতা তার উপর যোগ হয়েছে সরকার এর ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়া । এছাড়া বিদ্যুৎ এবং গাস এর নতুন সংযোগ না পাওয়া ও পুরনো সংযোগ গুলুতে সরবরাহ বন্ধ থাকায় উত্পাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে কোনো কোনো গার্মেন্টস ও কারখানায় ।

শেয়ার মার্কেট এর কথা নাই বললাম ডেকে এনে যেভাবে মানুষ কে ফকির করা হয়েছে তা অর্থনীতির ইতিহাসে বিরল । এই ঘটনার তদন্ত তো হয়ই নি বরং তার উপর ঘটনার মূল হোতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল পরিবর্তনের জন্য । এটা অনেক তাই শিয়াল এর হাতে মুরগি দান এর মত। তবে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে সেই দরবেশের অপসারণের মাধ্যমে এবং নতুন কিছু ভাল পদক্ষেপের । .

এই যখন অবস্থা তখন খারাপ লাগে এবং কষ্ট হয় যে যে দেশে মানুষ খেতে পারছে না সেখানে অপ্রয়োজনে বিমান বন্দর বানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তার জন্য আবার ওই খানের স্থানীয় জনগণ কে ক্ষতি পূরণ দেয়া হবে। এই ক্ষতি পূরণ আপনারা কি কৃষিতে দিতে পারেন না? কিনব বিধৃত এ দেয়া যায় না এই ক্ষতিপূরণ? তাহলে হয়ত কিছুটা কষ্ট লাঘব হত ।

কিন্তু এই কথাগুলোকে বলবে তাদের আমরা তো দুর্বল, আর যারা সবল তারা তো তাদের স্বার্থ উদ্ধার এই ব্যস্ত । আমদের বিরোধী দল শুধুই কেবল উত্সাহী তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এবং যুদ্ধ অপরাধীদের মুক্ত করতে যা আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনের দাবির সাথে কোনো সম্পর্ক নেই । আমি আপনি শুধু চাই জীবন ধারণ এর প্রয়োজনীয় জিনিস গুলু , যেটা ছাড়া আমার দিন কাটবে না। ক্ষমতায় কে আসলো কে গেল তা দিয়ে আমাদের দিন চলবে না ।

তাই আমার দাবি হল বিরোধী দল এর কাছে আপনাদের দায়িত্ব অনুগ্রহ করে আপনারা পালন করুন এই সরকার এর ব্যার্থতার ছবিগুলো প্রকাশ করুন আমাদের দাবি গুলু আদায় করুন। আমাদের সহায়তা থাকবে আপনাদের সাথে যেমনটা পেয়েছিলেন ঢাকার মহাসমাবেশে। ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন বন্ধ করে জনগনের জন্য আন্দোলন করুন , দেখবেন এই জনগণ এমনিতেই আপনাদের কে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে ।