জনাব মওদুদ আহমেদের বাচালতা: গণতন্ত্রের জন্য অশণি সংকেত

সুপ্রসন্ন
Published : 6 Nov 2012, 05:59 PM
Updated : 6 Nov 2012, 05:59 PM

বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ বলেছেন , খালেদা জিয়ার ভারত সফরের পরআওয়ামী লীগ আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে পারবেনা। মওদুদ বলেন "আমরা মনে করি- তার (খালেদার) এই সফরের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পরিক্পনা ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে "৫ নভেম্বর প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এইসব কথা বলেন।

জনাব মওদুদ , বাংলাদেশ কি ভারতের কোন অংগরাজ্য নাকি কোন স্বাধীন দেশ? আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে , আপনারা নাকি ক্ষমতায় আসার জন্য প্রভূ বদল করতে ভারত গিয়েছেন, আপনার বক্তব্যে তো আপনি আরো স্পষ্ঠ করে দিলেন। আপনি কি বলতে চাইছেন ভারত চাইলেই আমাদের দেশে যা খুশি তা করতে পারবে? আমাদের দেশে কোন সংসদ নেই, আমাদের দেশের কোন সংবিধান নেই ? ভারতের কথা মতোই কি আমরা চলি ? আপনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে এই কথা কোনদিন বলতে পারতেন না। আপনার এই কথার মাধ্যমে আপনি তো গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিলেন এবং সংবিধানের স্পষ্ঠত অবমাননা করলেন ।ক্ষমতার লোভে যে মানুষ এতো অন্ধ হতে পারে তা আগে আমার জানা ছিলো না , একটা কথা মনে রাখবেন ক্ষমতার মালিক জনগণ ভারত কিংবা আমেরিকা নয় । আপনি কি করে ভাবলেন যে ভারতকে রাজি করলেই ক্ষমতায় যাওয়া যাবে? আমাদের দেশ কি ভারত চালায়? ভোট কি এ দেশের জনগণ দিবে নাকি ভারত থেকে লোক ভাড়া করে এনে ভোট দেওয়াবেন। ক্ষমতায় গেলে তাদের কি কি সুবিধা দিবেন বলেছেন? নাকি এ দেশকে তাদের অংগরাজ্য বানাবেন বলেছেন?

আপনি একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী , সাবেক আইনমন্ত্রী, আপনি কি করে এই ধরনের কথা বললেন?আমার ভাবতেই অবাক লাগছে । আপনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর সহকারী আইনজীবি ছিলেন , আবার সেই আপনি অকপটে বলেন যে দেশের স্বাধীনতায় নাকি বঙ্গবন্ধুর কোন অবদান নেই, আরো অনেক কিছু ,পাগলেও তো এই কথা বিশ্বাস করবে না। এইসব কথা অন্যকারো মুখে শোভা পেলেও আপনার মুখে শোভা পায়না । শুধুমাত্র বিরোধীতার খাতিরে কেন এইসব উল্টা পাল্টা কথা বলেন?

দেশ যখন আছে সমস্যা হবে আবার তার সমাধানও হবে । হ্যাঁ আমাদের দেশে একটি সমস্যা চলছে , তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে । এ নিয়ে নানা জনের নানা মতামত আমরা দেখছি ।দেশের জনগণ চায় আপনারা আলোচনায় বসে তার সমাধান করূন , আপনাদের উপর দেশের জনগণ দায়িত্ব দিয়েছে দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য । আপনারা সংসদে অথবা সংসদের বাইরে বসুন , আলোচনা করূন । যে কোন এক পক্ষকে সামান্য ছাড় দিয়ে হলেও সমস্যার সমাধান করতে হবে । মনে রাখবেন এই সমস্যা কিন্তু আপনারা রাজনীতিবিদরাই সৃষ্ঠি করেছেন আর তা আপনাদেরই সমাধান করতে হবে ।দেশের জনগণ চায়না দেশের সমস্যায় বাইরের দেশ মাথা ঘামাক । বাইরের দেশ মাথা ঘামালে যে কি পরিণতি হয় তা তো আপনাদের চেয়ে ভালো আর কেউ জানেনা । বাইরের প্রভু এনে সমস্যা সমাধান করতে চাইলে তা দেশের জনগণ মেনে নেবে না । ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ঠ্র , আমরা চাই তাদের সাথে আমাদের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকুক । ৭১ –এ তারা আমাদের দেশের ২কোটি শরণার্থী আশ্রয় দেওয়া সহ ,মুক্তি যোদ্ধাদের ট্রেনিং দেওয়া , যৌথ অভিযান , তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশ্ব সফর ( বাংলা দেশের পক্ষে জনমত সংগ্রহের জন্য ) বাংলাদেশ কোন দিন ও ভূলবেনা । আমি মনে করি ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু । কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে । আর হযতো তারা আপনাদের সেই রকম কোন কথা বলে ও নি , আপনারাই বাড়িয়ে বলছেন ।

এই দেশের মানুষ সংগ্রাম করে অধিকার আদায় করতে জানে , তা হাজারো প্রমাণ আছে – ৪৭ , ৫২ , ৫৬, ৫৯ ৭১ , ৯০ সালের আন্দোলন তার প্রমাণ । অনেক সংগ্রাম করে পাওয়া এই স্বাধীনতা ওগণতন্ত্রকে রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব । সেই গণতন্ত্রকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিদেশী প্রভু ধরলে তা জনগণ ক্ষমা করবে না , সে যে দলই হোকনা কেন । আসুন গণতন্ত্রকে সম্মান করি । জনগণকে বোকা ভাবার কোন কারণ নেই ।