বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার: দায়বদ্ধতা কার?

সুপ্রসন্ন
Published : 25 Nov 2012, 10:56 AM
Updated : 25 Nov 2012, 10:56 AM

২০১০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিন বদলের অংশ হিসেবে আধুনিক চট্টগ্রাম গঠনের উদ্দেশ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছেন ৫টি ফ্লাইওভার এর। তখন অনেকে প্রশ্ন করেছিলেন চট্টগ্রামে এখন এতো ফ্লাইওভার এর প্রয়োজন আছে কি ? আমার উত্তর হ্যাঁ আছে , আজ না থাকলেও ক্লু আছে, আর এটি সেই ভবিষ্যত পরিকল্পনার একটি অংশ । প্রথমে শুরু হয় বহদ্দারহাঠ ফ্লাইওভার এর কাজ , ৬ মাস আগে একবার এর একটি অংশ ভেঙ্গে পড়ে এবং তাতে তেমন কোন ক্ষয় ক্ষতি হয়নি , তার পরও মানুষের মনে এক অজানা আতংকের সৃষ্টি হয়। তখন সিডিএ জবাব দিয়েছিলো যে অসাবধানতার কারণে নাকি এটি হয়েছিলো , আর জানা মতে নির্মাণ কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । কী সুন্দর উত্তর! এত বড় কাজ , যে রোড দিয়ে হাজার হাজার লোক যাতায়াত করে সে খানে এইরকম ঘটনার জবাব "অসাবধানতা"। গত কালের ঘটনা আর বলতে চাইনা তবে একটি কথা বলতে চাই আগের বার যদি তাঁদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে কি আজ এই রকম ঘটনা ঘটত? কেন তাঁদের বিরূদ্ধে সিডিএ ব্যবস্থা নেয়নি ? তাহলে গত কালের ঘটনার দায়ভার কাদের উপর পড়বে? আজ সিডিএ বা ঐ প্রতিষ্ঠান কি জবাব দিবে ? এতো গুলো প্রাণ এর জবাব কি হবে? চট্টগ্রাম বাসী আজ বাকরুদ্ধ, সবাই শুধূ অসহায়ের মতো চেয়ে আছে , বহদ্দার হাট এলাকায় যেতে যেতেই সবাই যেন হতবাক হয়ে যাচ্ছে ,শুধূ চুপচাপ চেয়ে থাকা , চারদিকে শুনশান নিরবতা আর হাজার মানুষের ঢল অথচ কোন আওয়াজ নেই , সবার মুখে চোখে একটাই প্রশ্ন আমরা এর সঠিক বিচার চাই , আমরা ফ্লাইওভার চাইনা । কোন দল হরতাল ঢাকেনি তার পরও ঐ এলাকার প্রায় দোকান পাঠ বন্ধ, এ যেন মানুষের নিরব প্রতিবাদ।

এবার আসি মৃতের সংখ্যা নিয়ে , মিডিয়া গুলো বলছে ৩টি ব্লক ভেঙ্গে পড়ে ১৫ -২০ জন নিহত হতে পারে , এ খবর আমাকে নয় ঐ এলাকা দিয়ে যারা নিয়মিত আসা যাওয়া করে তাদের কে শপথ করে বললেও বিশ্বাস করবে না । প্রত্যক্ষ যারা দেখেছেন তারা বলছেন কমপক্ষে ১০০ লোক মারা যাবে । আমিও তাই বলছি । কারণ আমি নিজেও মাঝে মঝে ঐখানে বসে আড্ডা দিতাম । গত কাল ঘটনার ২০ মিনিট আগে আমি ঐ দিক দিয়ে হেঁটে গিয়েছি , তখনও আমি ঐ খানে তরকারি বিক্রেতাসহ প্রায় ১৫০ লোকের সমাগম দেখেছি । এবং রাত ১০ টা পর্যন্ত এই রকম লোক সমাগম ঐ খানে থাকে । এক কথায় বলা যায় ঐ পুকুর পাড় ছিলো মানুষের মিলন স্হল । কেউ কারো সাথে দেখা করলে অপেক্ষা করত ঐ স্হানে । আর বিকেলে কিছু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আড্ডা ছিলো সেখানে । ছাত্র, শিক্ষক , উকিল , ডাক্তার , শ্রমিক, ড্রাইভার , সব রকম লোক বসত এখানে । তাই হতাহতের সংখ্যা যে বিশাল কা আমরা বুঝতে পারছি । হয়তো সরকার তার টেকনিক্যাল কারণে তা কমিয়ে বলছে । কিন্তু এই যে অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো কার জবাব কে দিবে , তার দায়ভার কে নিবে ? সংশ্লিষ্ট কাউকেই ফোনে পাচ্ছেনা সাংবাদিকেরা । কারো কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছেনা । সিডিএ'র চেয়ারম্যান এবং প্রধান প্রকৌশলী কোথায় ? তারা কি পদত্যাগ করবেন ? না করবে না , কারণ তাঁদের লজ্জা নেই । কিছুদিন আগে আইভরিকোস্টের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন , শুধুমাত্র এই কারণে যে , তার সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি যে পরি বারের প্রধান কে হবে শুধূ পূরুষ নাকি মহিলা সহ এক সাথে । এই সামান্য কারণে । কারণ তাঁরা জনগণের কথা ভাবে । আর আমাদের দেশে এত বড় ঘটনা ঘটার পরেও সবাই যার যার পদে বহাল আছেন। সিডিএ'র চেয়ারম্যান বহাল তবিয়তেই আছেন । আরে একশ জন মরলেও তার তাতে কি আসে যায় , ঐ খানে তো তার কোন স্বজন নেই , সে কি করে বুঝবে স্বজন হারানোর বেদনা ।

এমনকি এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে শোকজ করা হলো না , ঐ কোম্পানী কে তলব করা হলো না, আদালতও স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারের প্রতি রুলজারি করল না । সত্যি অবাক লাগে । এমন দয়াবান কেউ কি আছেন যে আদালতে রিট করবেন? এই মূহুর্তে এইরকম ব্যবস্থা নিবেন । নাকি আমরা সবাই ধনীদের নিয়ে ব্যাস্ত আর ১০০ জন মরলেও কি আসে যায় , ঐ খানে ওতা কোন নেতা বা বড় ব্যবসায়ী নেই। আমরা তো ব্যাস্ত এফবিসিআই এর সভাপতি , পরিচালক কে হল তা নিয়ে । গরীবের জন্য কোন আইন নেই , কোন সমবেদনাও নেই , মরো তোমরা আরো মরো তাতে উচু তলার মানুষদের কিছু আসে যায়না। তা না হলে এতো বড় ঘটনার পরও কেন চোখে পড়ার মতো কোন পদক্ষেপ নেই । আমি মনে মনে খুব আসা করেছিলাম যে , গতকাল রাতেই সরকার কাউকে না কাউকে বহিষ্কার করবে , ঐ কোম্পানীর বিরূদ্ধে মামলা করবে এবং এ বিষয়ে প্রেস নোট জারি করবে । হায়রে আশা , তাতেও গুড়ে বালি । আসলেই গরীবের কেউ নেই ।আর যারা আহত হয়েছেন তারা বরণ করে নিবেন সারা জীবনের পঙ্গুত্ব । এখন হয়ত একটা তদন্ত কমিটি হবে , আর কিছুদিন পর তা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে । কিন্তু নিহতের পরিবারের খবর কে নিবে? হয়ত তাদের পরিবারকে কিছু টাকা দেওয়া হবে , তাতেই কি দায়িত্ব শেষ ??? আমরা কি পারবো আমাদের বিবেক থেকে মুক্তি পেতে ? এত কথার একটাই মানে কার অবহেলায় এ রকম হলো , আমরা তার বিচার চাই । আমরা চট্টগ্রামবাসীরা এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি । নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি , আহতদের আরোগ্য কামনা করছি